জননীতি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
স্থূল অভ্যন্তরীন উৎপাদন, ২০০৮ অনুসারে সামরিক ব্যয়ের মানচিত্র

সাধারণত জননীতি বলতে জনকল্যাণ ও জনগণের সেবা নিশ্চিত করে এমন কতিপয় নিয়ম নীতি বুঝায় যা সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়। অর্থাৎ জননীতি হচ্ছে সরকার কর্তৃক প্রণীত এমন কিছু সিদ্ধান্ত যা জনগণের বৃহৎ কল্যাণের জন্য প্রণয়ন করা হয় এবং সামাজিক সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালন করে থাকে।[১] জননীতি হচ্ছে সেটাই যা সরকার করতে চায় বা চায় না।[২] সমস্ত সমাজের মাঝে মূল্যের কর্তৃত্বপূর্ণ বরাদ্দই হলো জননীতি।[৩]

বিস্তারিত তথ্য[সম্পাদনা]

বর্তমান বিশ্বের আধুনিক প্রাপ্তসমূহ জন-কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। আর তাই রাষ্ট্রীয় গঠন ও ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য এবং জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করা হয়। এ নীতি হচ্ছে সুপরিকল্পিত ও ন্যায়সঙ্গত কিছু পরিকল্পনা। আর এই নীতিগুলোকেই বলা হয় জননীতি। সরকার কোন কোন নীতিগ্রহণ বা অনুসরণ করে থাকে শুধু মাত্র তাই জননীতির আলোচ্য বিষয় নয় বরং সরকার কেন এসব নীতি গ্রহণ করে থাকে। তাও জননীতি আলোচনা করে। জননীতি যুক্তিসম্পন্ন পরিকল্পনা বিভিন্ন দল বা গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব, এলিটের পছন্দ, নিয়মতান্ত্রিক শক্তি, রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং প্রশাসনিক প্রভাবেরই সমষ্টি। সরকার একটি সমাজকে সংগঠিত করে অন্যান্য সমাজের সমস্যা সমূহকে বিবেচনায় রাখে। এছাড়া সমাজের সকল স্থরের জনগনের মধ্যে সকল প্রকারের সেবা ও সুবিধা বণ্টন করে। এজন্য সরকার জনগনের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই অর্থ কর আরোপের মাধ্যমে করা হয়। আর সরকার এসব কিছুইল জননীতি আচরণকে নিয়ন্ত্রণ, আমলাতন্ত্রকে সুসংগঠিত করে এবং সমাজের সকল স্তরের জনগনের মধ্যে সকল প্রকারের সেবা ও সুবিধা বণ্টন করে। এজন্য সরকার জনগনের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।

তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই অর্থ কর আরোপের মাধ্যমে করা হয়। আর সরিকার এসব কিছু জননীতি নির্ধারণ এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে করে থাকে। এভাবেই জননীতি আচরণকে নিয়ন্ত্রণ, আমলাতন্ত্রকে সুসংগঠিত করে এবং সমাজের সকল স্তরে সুযোগ-সুবিধা বণ্টন করে। সরকারের এ নীতি প্রনয়ণ ও বাস্তবানের উপর ভিত্তি করেই রাষ্ট্র তথা জনগনের সার্বিক কল্যাণ বিনীত হয়। জননীতি যেহেতু সমাজের বিরাজমান সমস্যার উপর ভিত্তি করে রচিত হয় এবং রাজনীতি বিজ্ঞান সমাজের বিদ্যমান ঘটনাবলী নিয়ে বিশ্লেষণ করে। সেহেতু রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে জননীতি বা সরকারী নীতি অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই সরকারী নীতি বা জননীতির পরিধি ওগুরুত্ব সম্পর্কে জানার আগে আমাদেএ জানতে হবে জননীতি বা সরকারী নীতি বিস্তার এবং জননীতির আলোচ্য বিষয়গগুলো কি? এগুলো নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

জননীতির বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

সরকারী নীতির পরিধিঃ জননীতির পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত। সরকারী নীতিতে কি কি অন্তর্ভুক্ত হয় সেটা নয় বরং কি কি অন্তর্ভুক্ত নয় সেটাই মূল বিষয়। নিম্নে সরকারী নীতির পরিধি পর্যায় ক্রমিকভাবে আলোচিত হলঃ

১) লক্ষ্য নির্ধারণে লক্ষ্য স্থির করা দিক নির্দেশনাঃ

বর্তমান জনকল্যাণমূখী রাষ্ট্রের সরকারকে আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করতে হয়। এ সকল কর্মকান্ড কীভাবে করবে, কখন করলে সুবিধা হয়, কি করা উচিত বা অনুচিত ইত্যাদি বিষয়ে একটি লক্ষ্য নির্ণয় করা হয়। সরকারী নীতি এই সকল বিষয়ের উপর দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

২) সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণঃ

যে কোন বিষয়ে লক্ষ্য স্থির করতে হলে তার একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। সরকারী নীতির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। কারণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ হলো অনেকগুলো বিকল্পের মধ্য থেকে একটি সঠিক ও বাস্তব সম্মত বিষয় নির্ধারণ। জননীতি সব সময় এ ধরনের বিষয়ের উপর জোর দিয়ে থাকে।

৩) নীতি বাস্তবায়নঃ

সরকার বাস্তবে যা করছেন তাই সরকারী নীতির বাস্তবায়ন। সরকার দেশে বিরাজমান ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেন। কিন্তু বাস্তবে তার ত্রুটি দেয়া দিলে ঐ নীতি বাস্তবতা বিবর্জিত বলে ধরা পূর্বে তাকে সরকারী নীতি বলা যাবে না। সরকারি নীতিই সরকারের বাস্তবায়ন অভিব্যক্তি।

৪) ইতিবাচক ও নেতিবাচকঃ সরকারের নীতি ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয়ই হতে পারে। কারণ সরকারের সকল নীতিই রাষ্টের কল্যাণে কাজ করতে সক্ষম হয় না। তবে তা সরকারি নীতির এখতিয়ার বহির্ভূত নয়।

যেমনঃ খাদ্য নীতি, সরকার নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান সংগ্রহ করার লক্ষ্য স্থির করলেন কিন্তু প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হতে পারে। ইহা সরকারী নীতির নেতিবাচক দিক।

৫) তথ্যঃ

একটি প্রকৃত ঘটনাকেই কেন্দ্র করে নীতি প্রণীত হয়। কারণ নীতি নির্ধারণে কতগুলো তথ্যের প্রয়োজন। সে জন্য প্রকৃত ঘটনা নয় বরং প্রকৃত তথ্যের উপর ভিত্তি করেই নীতি প্রনয়ণ করা হয়। যা সংগঠনের কার্যকারিতাকে নির্ভর যোগ্যতা প্রদান করে ।

৬) নমনীয়তাঃ সরকারী নমনীয় হওয়া উচিত যাতে প্রয়োজনের অনুযায়ী পরিবর্তন করা যায়। নীতি প্রণেতাদেরকে স্থায়ীত্বের কথা বিবেচনা করে নীতি নির্ধারণ করতে হবে। নীতির স্থায়িত্বের খুবই প্রয়োজন। দ্রুত পরিবর্তনশীল নীতি সংগঠনের স্থায়িত্বের পক্ষে অন্তরায়। তাই নমনীয়তা জননীতির বিষয়বস্তু।

৭) সফলতাঃ লক্ষ্যহীন নীতি কখনো সাফল্যের দিকে অগ্রসর হতে পারে না। যে নীতি সফলতা অর্জন করতে পারে না মূলত সে ধরনের নীতির কোন প্রয়োজন নেই। যে কোন দেশে সরকারী নীতি সাফল্য লাভ করতে পারে যদি সরকার সে ধরনের লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হয় যে তাকে সাফল্য লাভ করতে হবে এবং সেভাবে যদি নীতি বাস্তবায়ন করা হয়।

৮) অর্থনৈতিক উন্নয়ন :   আধুনিক সময়ে অর্থনৈতিক  সংকট দুর করার জন্য  'জনোনিতি ' কে  প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। The public policy is applied  to improve financial condition  for wicked  class . যেমন অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর জন্য কিছু অর্থ নীতির মাধ্যমে বরাদ্দ থাকে।


সরকারী নীতি বিশ্লেষণে আমরা বিষয় বস্তুর মাধ্যমে কতেকগুলো উপাদান দেখতে পাই যে জননীতির অন্তর্ভুক্ত। সেগুলো হলঃ

ক) policy Demand:

কোন সমস্যার উপর সরকারের পদক্ষেপ নেয়ার দাবি। যেমন সরকারী কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির দাবি বিবেচনা কল্পে বেতন ও মঞ্জুরি কমিশন গঠন।

খ) Policy Decision:

সরকার কোন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত বা কার্যক্রম কীভাবে নেবেন তার আইন ভিত্তিক বর্ণনা বা সিদ্ধান্ত।

গ) Policy Statement:

নীতি বিষয়ক সিদ্ধান্ত অনেক সময় statement আকার প্রকাশিত হয়। যেমনঃ কমিটি বা মন্ত্রীপরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়াই এ ধরনের বিশ্বের অনুদান দেয়া হয়।

ঘ) Policy out put:

যে কথা বলা হয়েছে তা সঠিকভাবে পালন করা হয়েছে কিনা, তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে মিল আছে কিনা তা যাচাই করা। যেমনঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ হয়েছে কিনা তা যাচাই করা।

ঙ) Policy Out come: ইহা Policy out put এর একটি consequence যেমনঃ বিনামূল্যে বই সরবরাহের সাথে শিক্ষার হার বাড়ছে কি না দেখা।

চ) Policy analysis and policy advocacy ইহা হল কি করা উচিৎ এবং নীতি গ্রহণের ফলাফল কি তা যাচাই করা।

পরিশেষে বলা যায় যে, জননীতির পরিধিত্ব বা বিষয়বস্তু ব্যাপক ও বিস্তৃত। কারণ, কল্যাণ মূলক নীতিমালা উদ্ভবের ফলে সরকারের কর্মকান্ডের ক্রমশ বৃদ্ধির হয়েছে। ফলে সরকারকে নতুন নতুন নীতিগ্রহণ করতে হয়। তাই সরকারী নীতির সীমা বা পরিধি নির্ণয় করা কঠিন ব্যাপার। তাই বলা যায় যে, যেহেতু এর পরিধি বা বিষয়বস্তু ব্যাপক এবং সরকারের গৃহীত সকল সিদ্ধান্তের সাথেই তা জড়িত তাই এটা একটা বহুবিষয়ক ব্যাপার।

জননীতির গুরুত্ব[সম্পাদনা]

যে কোন দেশের সকল কার্যকারিতা নির্ভর করে, সমন্বিত প্রচেষ্টার উপর। সুষ্ঠু নীতি ব্যবহারের ফলে সমন্বয়ের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। একটি দেশ তার লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার কাজে নীতিসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সামাজিক ক্রিয়াকর্ম সম্বন্ধে ধারণা লাভ[সম্পাদনা]

Dror এর মতে, জননীতি মানুষকে পশু থেকে স্বতন্ত্র দান করেছে। আধুনিক উন্নয়নশীল সমাজগুলো লক্ষভিমুখী ক্রিয়া কল্পে লিপ্ত থাকে। জননীতি এসব সামাজিক ক্রিয়াকর্ম সম্পর্কে মানুষকে ধারণা লাভে সাহায্য করে। Dror বলেন-

Public policy marking necessary became a local social activities.

২) নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নঃ

সরকারী কিংবা বেসরকারি নীতি সকলের আলোচনার পর গৃহীত হয়। তাই প্রত্যেক ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম। কারণে এখানে শুধু নীতি নির্ধারণ করলে চলবে না সাথে তা বাস্তবায়ন করতে হবে.

৩) নীতির কাঠামোঃ

নীতি হল সকল নির্বাহীদের সিদ্ধান্তের ফল। নীতির কাঠামো নতুন নীতি প্রনয়ণে সাহায্য করে এবং ব্যবস্থাপনা সকল সদস্যদের নিকট নির্দেশনা হিসেবে কাজ করে। পুনঃ পুনঃ সংগঠিত সমস্যাসমূহ সমাধান করার কাজে পূর্বের নীতি সমূহ বিশেষভাবে সাহায্য করে। ইহা ব্যবস্থাপনা সময়ের অপচয় রোধ করে।

সরকারের নীতিমালা সম্পর্কে জানা[সম্পাদনা]

একটি সমাজের জন্য সরকার কি কি নীতিমালা গ্রহণ করেছে। এসব নীতিমালার উদ্দেশ্য কি। এসব নীতিমালা থেকে জনগন কতটুকু উপকৃত হবে তা জননীতির মাধ্যমে জানা যায়। আবার এসব নীতিমালার গুরুত্ব অনুধাবন করে কল্যাণমূলক নীতিগুলোকে গ্রহণ করা সকলেরই দায়িত্ব। কারণ, জনগনের সহায়তায় বা শহযোগীতায় জননীতি বাস্তবায়ন হতে পারে। তাই জননীতি সম্পর্কে যদি জ্ঞান না থাকে তবে কল্যাণমূলক নীতিগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া সম্ভব হবে না। আবার অনেক নীতির মূল-আন্তির সমালোচনাও করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে আনিসুজ্জামান বলেন যে, “সরকারী নীতির গুরুত্ব এত বেশি যে এক কথায় জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সরকারী নীতিমালা নিয়মকানুন কর্মকান্ড আমাদেরকে ঘিরে রেখেছে।

বিভিন্ন সেক্টরগত নীতি সম্পর্কে ধারণা[সম্পাদনা]

রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে জননীতি অধ্যয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন সেক্টরগত এর নীতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক এবং জানা যায় বিস্তারিত। যেমনঃ

ক) শিক্ষানীতিঃ জননীতির মাধ্যমে সরকারের শিক্ষারত প্রত্যাশা এবং ব্যয় ও প্রচেষ্টা সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা যায়।

খ) স্বাস্থ্যনীতিঃ স্বাস্থ্যই সম্পদ। সবার জন্য স্বাস্থ্য। প্রত্যেক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রেই কামনা করে এবং এজন্য সরকার তার স্বাস্থ্য নীতি ঘোষণা করে থাকে।

গ) কৃষিনীতিঃ

এর মাধ্যমে কৃষি সামগ্রির দাম ও কৃষি ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হতে সরকারের মনোভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।

ঘ) শিল্পনীতিঃ বিরাষ্ট্রীয়করণ নীতি শিল্পক্ষেত্রে গতিশীলতার সাক্ষ্য বহন করে। একটি দেশের উন্নয়ন সে দেশের শিল্প উন্নয়নের উপর নির্ভরশীল। তাই নীতি সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক।

৬) অংশগ্রহণঃ একটি দেশে সরকার বহুবিধ সমস্যার সমাধান থাকে। এই কর্মকান্ডে জনগন তাদের মতামত এর জন্য শহযোগীতার মাধ্যমে অংশগ্রহণ করতে পারে। যদি জনগণের নীতিমালা সম্পর্কে জ্ঞান থাকে। রাজনীতি বিজ্ঞাননে অংশ গ্রহণ এর বিভিন্ন আলোচ্য বিষয় এর মধ্যে জননীতির সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। এবং বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতি সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করা যায়। এতে সরকারেরও শহযোগীতা হয়।

৭) জনমত গঠনঃ জননীতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেনীর লোকদের এর গুরুত্ব সম্পর্কে জ্ঞান দিয়ে জনমত গঠন করা সম্ভব হয়। আর এর জনমত যে দিকে থাকে। সাধারণত তার অনুকূলেই জননীতি নির্ধারণ করা হয়। তাই জনমতমূখী কর্মসূচি প্রনয়ণের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করার জন্য জননীতি অধ্যায়নের গুরুত্ব অপরিসীম।

৮) কোন নীতিকে গ্রহণ করা হবেঃ একটি সমস্যা সমাধানে অনেকগুলো পথ থাকতে পারে। তার মধ্যে কোন পথটি অনুসরণ করা হবে বা কোন নীতিটা অধিক কার্যকর ইত্যাদির জন্য পর্যাপ্ত পরিমান তথ্যের প্রয়োজন হয়। আর এসব তথ্যাদি বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে জননীতি নির্ধারণ করতে হয়। তাই জননীতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা যায়।

৯) নীতি বিশ্লেষণ সম্পর্কে জ্ঞান লাভঃ নীতি বিশ্লেষণ নীতি প্রণয়নের কারণ ও তার প্রভাব সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে। অর্থাৎ নীতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি সরকার কেন, কখন, কীভাবে নীতি প্রনয়ণ করলে তার প্রকৃত রহস্য ও তথ্য আর তা জননীতির মাধ্যমেই জানা সম্ভব।

১০) বৈজ্ঞানিক কারণঃ

বাস্তবিকই সরকারী নীতি অধ্যয়ন করা হয় বৈজ্ঞানিক কারণে। একটা সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে হলে সরকারের নীতিটা হওয়া চাই বাস্তব সম্মত বা বিজ্ঞান সম্মত। তাই আধুনিক সমাজের অবস্থা সম্পর্কে জানতে হলে সরকারী নীতি সম্পর্কে জানতে হবে।

১১) রাজনৈতিক কারণঃ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নেই এমন রাষ্ট্র পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া মশকিল। সরকারী নীতিতে দেখা যায়, যদি কোন নীতি ব্যর্থ হয় তবে তার মূল কারণ হিসেবে ধারণা করতে পারি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। তাই একটি দেশের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যটি কি ধরনের ও তা কীভাবে অর্জন করা যায় এবং সরকারী নীতির সাথে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কতটুকু সম্পর্কযুক্ত তা জানার জন্য সরকারী নীতির গুরুত্ব অপরিসীম।

১২) জনসংখ্যার সুষ্ঠু ব্যবহারঃ জনসংখ্যা সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য প্রতিটি সরকার বিভিন্ন নীতিমালার প্রনয়ণ করে। তাই বর্তমানে কি উন্নত উন্নয়নশীল প্রতিটি দেশেই মানব সম্পদের উন্নয়নের উপর অধিক গুরুত্বারুপ করা হয়েছে।

১৩) সময়ের প্রতি দায়িত্বশীলঃ জননীতি প্রশাসকদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কার্য সম্পন্ন করতে অনুপ্রাণিত করে সময় সচেতন করে তোলে। যে ক্ষেত্রে একই সমস্যা পুনঃ পুনঃ দেখা দেয়া, সেক্ষেত্রে প্রত্যেকে সময় নতুন করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় না। ফলে, কর্মচারীদের একই প্রশ্ন উত্তরদানের জন্য ব্যবস্থাপককে বিরক্ত না করে সময়ক্ষেপণ করতে হয় না।

১৪) সামঞ্জস্য বিধানঃ সরকারী নীতিসমূহ বিভিন্ন কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানে যথেষ্ট সহায়তা করে থাকে। প্রতিটি কর্মচারী যদি প্রতিষ্ঠানের নীতিসমূহ সম্বন্ধে অকাত থাকে তাহলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য সাধনে সুবিধাজনক হয়।

১৫) স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কঃ সরকার স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন নীতিমালার গ্রহণ করে জননীতি অধ্যয়নের মাধ্যমে এসব কর্মকান্ড সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।

১৬) নির্ভরশীল চলকঃ জননীতি অধ্যয়নের ফলে কতিপয় নির্ভরশীল চলক সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। যা অর্থ-সামাজিক অবসর অবস্থান জানতে সাহায্য করে। সমাজের মধ্যে রাজতান্ত্রিক অবস্থার ধরন এবং তার সাথে অন্যান্য অবস্থার সম্পর্কে জানার জন্য জননীতি অধ্যয়ন করা হয়।

১৭) অ-নির্ভরশীল চলকঃ একটি সমাজে কেবল নির্ভরশীল চলকই থাকে না পাশাপাশি অ-নির্ভরশীল চলকও থাকে। এ অ-নির্ভরশীল চলক সম্পর্কে ধারণা জন্য জননীতি অধ্যয়ন প্রয়োজন।

১৮) দেশে বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে ধারণাঃ জননীতি অধ্যয়ন আমাদেরকে দেশের সাম্প্রতিক কালের এবং সুদূর অতীতের বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে জ্ঞান দান করে। ফলে এই সমস্যার সমাধানের জন্য নতুন জননীতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। জননীতি অধ্যয়ন করলেই এই সমস্যার জন্য কোন ধরনের জননীতি বাস্তবায়ন করতে হবে তা জানা যায়।

১৯) মানব সম্পদ উন্নয়নঃ জনসংখ্যা সমস্যাকে মানব সম্পদে রূপান্তরিত করার জন্য জননীতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কারণ, সঠিক জননীতির ফলেই মানব সম্পদের উন্নয়ন করা যায়।

২০) অধিকার সম্পর্কে সচেতনঃ নাগরিকগণ তাদের অধিকার সম্পর্কে হতে পারে জননীতি অধ্যয়নের মাধ্যমে। যেমনঃ বসবাসের অধিকার, নিরাপত্তার অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার ইত্যাদি।

২১) অন্যান্য কারণঃ উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো ছাড়াও জননীতি অধ্যয়নের আরও অনেক ধারণা রয়েছে। তা নিম্নে দেয়া হলো-

১) আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কোন নীতি গ্রহণ করা হয় কোনটি গ্রহণ করা হয় না তা রাজনীতির মাধ্যমে জানা সম্ভব।

২) সরকারের আর্থিক নীতি (মুদ্রা নীতি, রাজস্ব নীতি) সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য জননীতি অধ্যয়ন করা প্রয়োজন।

৩) জনম্যান ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য জননীতি অধ্যয়ন আবশ্যক।

৪) সরকারের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালার জননীতির আলোচনার বিষয় বস্তু। একজন রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে এসব জানা প্রয়োজন।

৫) জাতীয় প্রতিরক্ষা নিয়েও জননীতি আলোচনা করে।

৬) প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার ও পরিবেশ নীতি সম্পর্কে জননীতি থেকে জ্ঞান লাভ করা যায়।

এতক্ষণের আলোচনা থেকে এ কথায় আসতে পারি যে, কোন দেশের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে জানতে হলে কিংবা কীভাবে সরকারী নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করা হয়। এই জন্যই জননীতি অধ্যয়নে গুরুত্ব অপরিসীম।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মিয়া, মোঃ জামান (২০১৭)। জননীতি পরিচিতি। দুরন্ত। 
  2. Dye, Thomas R. (১৯৭৮)। Understanding Public Policy 
  3. Easton, David (১৯৫৩)। The Political System। Continuum।