মা মাটি মানুষ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, স্লোগানটির উদ্ভাবক।

মা মাটি মানুষ হল সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান ও পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বারা উদ্ভাবিত একটি রাজনৈতিক স্লোগান। স্লোগানের কথাটির অর্থ হল "মাতৃজাতি, মাতৃভূমি, এবং জনগণ"। স্লোগানটি ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচন এবং ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় পশ্চিমবঙ্গে খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এটি উক্ত রাজনৈতিক দলের প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক ও নির্বাচনী প্রচারে বহুল ব্যবহৃত হত৷ পরে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একই শিরোনামের একটি বাংলা বই লেখেন।[১] বেশ কয়েকটি বাংলা থিয়েটার দল (যাত্রাদল) এই স্লোগানটিকে শিরোনাম হিসাবে রেখে নাট্য (যাত্রাপালা) প্রযোজনা করে। থিমটিকে গৌরবোজ্জ্বল করতে একই শিরোনামে একটি গানও রেকর্ড করা হয়েছে। জুন ২০১১ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি সে সময়ে ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক স্লোগানের ছয়টির মধ্যে একটি ছিল।[২]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

একান্ত নম্রভাবে, আমরা বাংলার জনগণকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এটা বাংলার মা মাটি মানুষের জয়। এটাই বাংলার জনগণের জন্য উদযাপনের সময়।

২০১১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা[৩]

স্লোগানটি সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় তাদের 'যুদ্ধনাদ' হিসাবে উদ্ভাবন করেন।[৩][৪][৫] ঘটনাক্রমে, এটি তাঁর এবং তাঁর দলের পরিচিতিমূলক স্লোগানে পরিণত হয়।[৬] স্লোগানের তিনটি শব্দ মা, মাটি এবং মানুষ-এর অর্থ যথাক্রমে"মাতৃজাতি, মাতৃভূমি, এবং জনগণ" ছিল তিনটি শক্তিশালী আবেগপূর্ণ অনুভূতি।[২]

রাজনৈতিক প্রচার ও নির্বাচনসমূহ[সম্পাদনা]

স্লোগানটি উক্ত রাজনৈতিক দলের প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক ও নির্বাচনী প্রচারে বহুল ব্যবহৃত হত৷ প্রচারগুলি ছিল তদানীন্তন সরকারের সময়ে নন্দীগ্রাম গণহত্যা, সিঙ্গুর টাটা ন্যানো বিতর্ক, জমি অধিগ্রহণ ইস্যু, রিজওয়ানুর রহমান-এর মৃত্যু, সাচার কমিশনের প্রতিবেদন বিষয়ে, এমনকি নিত্যদিনের বিভিন্ন ইস্যু যেমন: পাওয়ার কাট, রেল দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে নিন্দাপূর্ণ প্রতিবাদ।[৭][৮] নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর ইস্যু এবং এই স্লোগানটি পশ্চিমবঙ্গের শাসক বামফ্রন্ট সরকার-এর বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস-এর প্রধান অস্ত্র ছিল।[৮]

প্রভাব[সম্পাদনা]

এই সহজ স্লোগানটি বামপন্থী দলগুলির নাট্যঘন দুর্বোধ্য ভাষার চেয়ে সাধারণ মানুষের কাছে বেশি প্রভাব ফেলেছিল। ভারতীয় সংবাদপত্র ডেইলি নিউজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্লোগানটি "তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ও পৌরসভা নির্বাচনে শাসক বামফ্রন্ট সরকার-এর পতনে পরোক্ষভাবে" সাহায্য করেছিল।[৯] বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে মমতা এই বিজয় মা মাটি মানুষকে উৎসর্গ করেন।[১০]

বিভিন্ন মাধ্যমে প্রসার[সম্পাদনা]

বই[সম্পাদনা]

স্লোগানটি জনপ্রিয় হওয়ার পরে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একই শিরোনামের একটি বাংলা বই লেখেন। এর কবিতাগুলির ধরন মূলত রাজনৈতিক ছিল। কলকাতার দে'জ পাবলিশার্স বইটির প্রকাশনা করে।[১]

গান[সম্পাদনা]

মা মাটি মানুষ থিমটিকে গৌরবোজ্জ্বল করতে একই শিরোনামে একটি গানও রেকর্ড করা হয়েছে। বাংলা ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দুর প্রধান কণ্ঠশিল্পী অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপরে এই গানটি রচনা করেন। গানের প্রথম দুটি পঙ্‌ক্তি ছিল: "এটা মা মাটি মানুষের দিন। এটা মা মাটি মানুষের গান।"[১১]

চলচ্চিত্রের পোস্টার[সম্পাদনা]

২০০৯-এ, স্লোগানটি বাংলা চলচ্চিত্র কৃষ্ণ-এর পোস্টারে ব্যবহৃত হয়েছিল। চলচ্চিত্রের পরিচালক শঙ্কর রায় একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, "হ্যাঁ, আমরা তৃণমূলের স্লোগান দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম, আমাদের কাছে যার অর্থ দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।"[৪]

থিয়েটার[সম্পাদনা]

অনেক বাংলা থিয়েটার দল (যাত্রাদল) এই জনপ্রিয় স্লোগানটিকে শিরোনাম হিসাবে রেখে নাট্য (যাত্রাপালা) প্রযোজনা করে। [১২] ২০০৯-এ, পশ্চিমবঙ্গের 'উত্তম অপেরা' একটি যাত্রাপালা মঞ্চস্থ করে, যার নাম ছিল, মা মাটি মানুষ কাঁদছে... অগ্নিকন্যা আসছে। একই বছরে, 'শিল্পীলোক অপেরা' মা মাটির লড়াই নামে আরেকটি যাত্রাপালা মঞ্চস্থ করেছিল।[৪]

রাজনৈতিক পত্রিকা[সম্পাদনা]

ফেব্রুয়ারি ২০১১-এ, তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের মতাদর্শ আরও মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে তাঁদের দলীয় পত্রিকা মা মাটি মানুষ প্রকাশ করে, যা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'মস্তিষ্কপ্রসূত'। পত্রিকাটির মুখ্য সম্পাদক সুব্রত বক্সী সেসময় পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার সদস্যও ছিলেন।[১৩]

সমালোচনা[সম্পাদনা]

  • পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন-মুখ্যমন্ত্রী এবং সিপিআইএম-এর বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নেতা স্লোগানটিকে একটি "যাত্রা" বলে কটাক্ষ করেন। ঘটনাক্রমে, ১৯৭০-এর দশকে একই শিরোনামে একটি নাটক লেখা হয়েছিল, যখন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস-কে পরাজিত করেছিল।[২]
  • এপ্রিল ২০১১-এ, পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতিবিদ গৌতম দেব অভিযোগ করেন যে, মমতা স্লোগানটি বাংলাদেশ থেকে "চুরি" করেছেন। তিনি বলেন যে, এই একই স্লোগান ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের সময় বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর রাজনৈতিক দল 'বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টি' প্রচলন এবং ব্যাপকভাবে প্রচার করেছিলেন।[১৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Ma Mati Manush book"। ১২ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০১৩ 
  2. "Mamata Banerjee: Its a victory for 'maa, maati, manush'"Economic Times। ১৩ মে ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৩ 
  3. "Mamata slogan invades stage and screen"The Telegraph (Calcutta)। Calcutta, India। ২৫ নভেম্বর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৩ 
  4. Amitava Nag। Silhouette। Silhouette Magazine। পৃষ্ঠা 103। GGKEY:YZLCKEXH49Q। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৩ 
  5. "Signature slogan of Mamata Banerjee"। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৩ 
  6. "Didi perfects the art of the impossible"The Times of India। ৩ জুন ২০১০। ১১ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৩ 
  7. "Singur, Nandigram Were Way to Writers' for Mamata"Outlook। ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৩ 
  8. "Ma, Mati, Manush — CPM invokes Mamata's slogan"DNA (News)। জুন ১০, ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০১৩ 
  9. "Green signal for Ma-Mati-Manush"Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০১৩ 
  10. "'Ma Mati Manush' song at traffic intersections"। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০১৩ 
  11. Bandyopadhyay, Mouparna (১৮ জুন ২০০৯)। "It's maa, mati, manush and Mamata for Bengal's theatre groups"indianexpress.com। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১১, ২০১৩ 
  12. "Party unveils Ma-Mati-Manush"Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৩ 
  13. "Briefs"The Statesman। ১৩ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৩ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]