পশমিনা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পশমিনা শাল

পশমিনা হচ্ছে কাশ্মিরী উল থেকে প্রস্তুত চাদর। সর্বপ্রথম ভারতের কাশ্মিরে এই পোশাক তৈরী শুরু হয়[১][২] । পশমিনা শব্দটি ফারসি শব্দ পাসমিনা থেকে এসেছে যার অর্থ উল থেকে প্রস্তুত[২] এবং কাশ্মিরী ভাষায় এটাকে বলা হয় নরম সোনা[৩]। কাশ্মিরী জাতের ছাগল থেকে এই উল সংগ্রহ করা হয়। এই জাতের ছাগলের বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। কাশ্মির অঞ্চলের চ্যাংথাং প্লাতু'র চ্যাংথাই ছাগল, কারগিল এলাকার মারলা এবং উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশের চেঙ্গু ছাগল ও নেপালের ছায়াঙ্গারা ছাগল থেকে পশমিনা উল সংগ্রহ করা হয়। কাশ্মির এবং নেপালে হস্তচালিত তাঁতে পশমিনা শাল তৈরী করা হয়।[১][৪]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

পশমিনা ছাগল, লাদাখ

হিমালয় অঞ্চলে হাতে তৈরী শাল ব্যবহৃত হয় যা পশম বা পশমিনা নামে পরিচিত। ৩য় খ্রিস্টপূর্বাব্দে এবং ১১ শতকে লিখিত আফগান পুঁথিতে কাশ্মিরে উলের শাল তৈরীর কথা উল্লেখ আছে। তবে ১৫ শতকে ঐতিহাসিক পশমিনা শিল্পের ভিত্তি স্থাপন করেন কাশ্মিরী শাসক জয়নুল আবিদিন, তিনি মধ্য এশিয়া থেকে তাঁতীদের নিয়ে আসেন এবং এখনো তার মাজারে পোশাক নির্মাতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।[৫][৬]

হাজার বছর ধরে নেপালে এবং কাশ্মিরে কাশ্মিরী শাল তৈরী হয়ে আসছে। পাহাড়ী ছাগল থেকে পশমিনা এবং কাশ্মিরী উল সংগ্রহ করা হয়। পশমিনা সুতা কাশ্মিরি সুতার চেয়ে সরু[৭] তাই পশমিনার সাহায্যে খুবই হালকা পোশাক তৈরী করা সম্ভব।

উৎপাদন[সম্পাদনা]

পশমিনা ছাগলকে কাশ্মিরী বলা হয় চ্যাংথাই। শীতের শেষে বসন্তে পশম সংগ্রহ করা হয়। একটি ছাগল থেকে আনুমানিক ৮০-১৭০ গ্রাম উল পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালে ছাগলগুলো খালি চামড়ায় বেঁচে থাকতে সক্ষম। শীতে পূণরায় এদের শরীরে পশম গজায়। চিরুনির মাধ্যমে এই উল সংগ্রহ করা হয়। পশমিনা ছাগল শুধু ঘাস নয়, ঘাসে শিকড় পর্যন্ত খেয়ে ফেলে। লাদাখ অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী পশমিনা উল প্রস্তুত করে চ্যাংপা নামের এক সম্প্রদায়। তারা নোমাডিক জনগোষ্ঠীর লোক এবং কাশ্মিরের চ্যাংথ্যাং প্লাতুতে বসবাস করে যা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৩,৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। শীতকালে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা -৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়। চ্যাংপা জনগোষ্ঠী এই উচ্চতায় বসবাস করে এবং মাংসের জন্য ভেড়া ও উলের জন্য পশমিনা ছাগল পালন করে।

পশমিনা রপ্তানী[সম্পাদনা]

লাদাখ থেকে রপ্তানী হওয়া পশমিনার সঠিক হিসাব বের করা কষ্টসাধ্য কারণ প্রতিবছর পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে পশমিনা বিভিন্ন ভাবে রপ্তানী করা হয়।[৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Franck, Robert R. (অক্টোবর ২০০১)। Silk, Mohair, Cashmere and Other Luxury Fibres। Woodhead Publishing। পৃষ্ঠা 142। আইএসবিএন 1-85573-540-7। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-০৮ 
  2. "Pashmina." The Oxford English Dictionary. 2nd ed. 1989.
  3. Shakyawar, D B; Raja, A S M; Ajay, Kumar; Pareek, P K; Wani, S A। "Pashmina Fibre - Production, Characteristics and Utilization" (পিডিএফ)Indian Journal of Fibre and Textile Research। Indian Journal of Fibre and Textile Research। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০১৫ 
  4. Morse, Linda; Lidia Karabinech; Lina Perl; Colby Brin (অক্টোবর ২০০৫)। Luxury Knitting: The Ultimate Guide to Exquisite Yarns। Sterling Publishing। পৃষ্ঠা 12। আইএসবিএন 1-931543-86-0। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-০৮ 
  5. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; ebpasm নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  6. "Pashmina Shawls: Kashmiri"। Kashmir.net। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  7. "Pashmina Technical Data - Department of Animal Husbandary, Government of Jammu and Kashmir"। ৪ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  8. Prem Singh Jina (১৯৯৬)। Ladakh: The Land and the People। Indus Publishing। পৃষ্ঠা 258–। আইএসবিএন 978-81-7387-057-6। সংগ্রহের তারিখ ৫ আগস্ট ২০১২