সিঙ্গাপুর–ভিয়েতনাম সম্পর্ক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম

সিঙ্গাপুর–ভিয়েতনাম সম্পর্ক বলতে গণপ্রজাতন্ত্রী সিঙ্গাপুর এবং ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে বোঝায়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে এই দুইটি দেশ তাদের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে। কমিউনিস্ট-বিরোধী নীতিমালার কারণে সিঙ্গাপুর ভিয়েতনামের একত্রীকরণের পূর্বে দক্ষিণ ভিয়েতনামকে সমর্থন করতো। ১৯৭৩ সালের ১ অগাস্ট থেকে সিঙ্গাপুর উত্তর ভিয়েতনামের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা করে। ভিয়েতনামের একত্রীকরণের পরে, সিঙ্গাপুর ভিয়েতনামের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে। কম্বোডিয়া-ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় এই সম্পর্কের অবস্থার অবনতি ঘটে। তবে তা পরবর্তীতে পুনরুজ্জীবীত হয়।

সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক বর্তমানে জোরদার হয়েছে। এই সম্পর্ক এখন বহুমুখী। উভয় দেশই আসিয়ানের সদস্য।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

বিংশ শতাব্দীতে সিঙ্গাপুর–ভিয়েতনাম সম্পর্কের সূচনা ঘটে। সেসময় ভিয়েতনামের জাহাস সিঙ্গাপুরে রপ্তানি হত এবং সিঙ্গাপুরের বাজারে ভিয়েতনামের পণ্য বিক্রয় হত।

হং কং সরকার ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি হো চি মিনকে মুক্তি দিলে তিনি সিঙ্গাপুরে বাস করতে শুরু করেন। কিন্তু ১৯৩২ সালে সিঙ্গাপুরের পুলিশ বাহিনী তাকে আটক করে এবং হং কং-এ পাঠিয়ে দেয়। ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে জাপান ভিয়েতনামে অবস্থিত তাদের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করে সিঙ্গাপুরকে আক্রমণ করে। এর ফলে ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের দখল নেয় জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সিঙ্গাপুরকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে ফ্রান্স ভিয়েতনামে সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠাতো ভিয়েতনামের স্বাধীনতা আন্দোলনকে দমন করতে।

১৯৫৪ সালের জেনেভা কনফারেন্সে সিদ্ধান্ত হয় ভিয়েতনামকে দ্বিখন্ডিত করার। ভিয়েতনামের উত্তর অংশকে উত্তর ভিয়েতনামকরণ করা হয়, এই অংশের নেতৃত্বে ছিল ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টি। অপরদিকে ভিয়েতনামের দক্ষিণ অংশকে দক্ষিণ ভিয়েতনামকরণ করা হয়। দক্ষিণ ভিয়েতনাম মূলত কমিউনিস্ট-বিরোধীদের নেতৃত্বে ছিল। সিঙ্গাপুরের নীতিমালা সেসময় কমিউনিস্ট-বিরোধী থাকায় স্বভাবতই সিঙ্গাপুর দক্ষিণ ভিয়েতনামকে সমর্থন করে। ১৯৬৫ সালে মালয়েশিয়ার কাছ থেকে সিঙ্গাপুর স্বাধীনতা লাভ করার কিছুকাল পরে প্রথম এশীয় দেশগুলোর অন্যতম হিসেবে দক্ষিণ ভিয়েতনাম সিঙ্গাপুরকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি প্রদান করে।

১৯৭৩ সালের আগস্টে সিঙ্গাপুর উত্তর ভিয়েতনামের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের সূচনা করে। ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনামের একত্রীকরণের পর সিঙ্গাপুর ভিয়েতনামের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। ১৯৭৮ সালে প্রথমবারের মত ভিয়েতনামের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ফ্যাম ভান ডং সিঙ্গাপুর সফর করেন।

১৯৭৮ সালে ভিয়েতনাম কম্বোডিয়ায় সৈন্যদল পাঠানো শুরু করে। ফলে কম্বোডিয়া-ভিয়েতনাম যুদ্ধের সূচনা হয়। সিঙ্গাপুর কম্বোডিয়ায় ভিয়েতনাম-বিরোধী সংগ্রামের সমর্থন করে এবং একটা আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইন আয়োজন করে ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে। ফলে সিঙ্গাপুর–ভিয়েতনাম সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ভিয়েতনাম সৈন্যদল প্রত্যাহার করা শুরু করলে ও দেশটির আসিয়ানের যোগদানের পরে পুনরায় সম্পর্কের উন্নতি স্বাভাবিক হয়। এরপরে কয়েকদফায় দেশ দুইটির সরকার প্রধান সাক্ষাৎ করেন। ২০০৪ সালে ভিয়েতনামের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ফান ভান খাই সিঙ্গাপুর সফর করেন এবং “একবিংশ শতাব্দীর জন্যে সমন্বিত সহযোগিতা কর্মসূচী” শীর্ষক একটি যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন। ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং ভিয়েতনাম সফর করেন এবং ভিয়েতনামের সাথে কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি করেন। ২০১৫ সালে ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ-এর মৃত্যুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে যোগদান করেন। একই বছরে সিঙ্গাপুরের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানেও তিনি অংশ নেন।