টোটো
টোটো ভারতের এক অতি ক্ষুদ্র জন গোষ্ঠী। পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদূয়ার জেলার উত্তর প্রান্তে ভুটান সীমান্তে তোর্ষা নদীর ধারে টোটোপাড়া গ্রামে এঁদের বাস। টোটোরা তাঁদের এই গ্রামের বাইরে অন্য কোথাও বাস করেননা। গত শতাব্দীর মাঝামাঝি একটি সমীক্ষায় দেখাগেলো টোটো উপজাতি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ১৯৫১ সালের জনগণণায় এঁদের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়ে ছিলো ৩২১-এ। পরবর্তী দশকগুলোতে টোটোদের রক্ষা করার জন্য সরকার কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করে। ২০০১ সালের জনগণনায় এঁদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৮৪।[১]
টোটোরা বৃহত্তর ইন্দো-মঙ্গলীয় জনগোষ্ঠীর একটি বিচ্ছিন্ন শাখা।[২] এঁরা ১৩টি গোষ্ঠী বা গোত্রে বিভক্ত। সমোগোত্রীয় বিবাহ টোটো সমাজে নিষিদ্ধ। টোটো ভাষা বৃহত্তর ভোট-বার্মা ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্গত। টোটো ভাষার নিজস্ব কোনো লিপি নেই, তবে অনেকে বাংলা লিপি ব্যবহার করেন। বর্তমান টোটো প্রজন্মের মানুষেরা বাইরের মানুষের সাথে বাংলা এবং নেপালী দুই ভাষাতেই কথাবার্তা চালাতে পারেন। টোটোপাড়া এবং পার্শবর্তী স্কূল গুলোতে বাংলা এবং নেপালী ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হয়।[৩]
মাত্র ২০০০ একর পরিসীমার টোটোপাড়া গ্রামটি টোটোদের একমাত্র বাসভূমি়। জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের সন্নিকটে অবস্থিত এই গ্রামটির প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি মনরম । ভুটান সীমান্ত বরাবর দাঁড়িয়ে আছে তাদিং পাহাড় । এই পাহাড়ের ঢালেই টোটোদের গ্রাম। পাহাড় ঘেরা এই গ্রামটি টোটো সংস্কৃতি এবং ধর্মের এক অবিছেদ্দ অঙ্গ।
টোটোপাড়া গ্রামটি ছয়টি পাড়ায় বিভক্ত়। এগুলি হলো পঞ্চাযতগাঁও, মণ্ডলগাঁও, সুব্বাগাঁও, মিত্রঙগাঁও, পূজাগাঁও এবং ধুমচিগাঁও ।[৪] টোটোপাড়ায় একটি নেপালী বসতি আছে। ১৯৯০ সালে টোটোপাড়ায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। পরে, ১৯৯৫ সালে হোস্টেল সহ একটি উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে টোটো পাড়ায় একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
টোটোদের মধ্যে কৃষিজীবীই বেশি। এঁরা পশুপাখিও পালন করেন। এক সময় টোটোর উচ্চমানের কমললেবু উৎপাদন করত। টোটোদের সমাজ পিতৃ তান্ত্রিক। এঁদের সামাজিক কাঠামো বেশ মজবুত। এঁদের মধ্যে সম গোত্রে বিবাহ হয়না। তবে এক পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকতে পারে। টোটোর অন্য বর্ণে বিবাহ করেনা। কেউ তা করলে তাকে সমাজ থেকে বহিস্কার করা হয়।
টোটোরা প্রকৃতিবাদী। প্রকৃতির সব কিছুই তাঁদের উপাস্য। টোটোদের একটি নিজস্ব ধর্ম রয়েছে। অবশ্য অনেকে নিজেদের হিন্দু বলেও পরিচয় দেন। এঁদের প্রধান দেবতা - ইশপা। এঁরা মহাকাল, মহকালী (ঈশপা) পুজো করেন। একখন্ড পাথর কে মহাকাল রূপে এবং দুটো ঢোলককে মহকালী রূপে পুজো করা হয় । পুজোতে 'ইউ' নামক এক প্রকার পানীয় দেবতাকে উৎসর্গ করা হয়।[৫]
টোটোদের প্রতিটি গোত্রের একটি করে উপাস্য গোত্র দেবতা রয়েছে, আবার প্রতিটি পরিবারের জন্য রয়েছে একটি করে পারিবারিক দেবতা। টোটোদের প্রচলিত গ্রাম-শাসন সংগঠনে গোত্রের আলাদা কোনো স্থান নেই। প্রতিটি পরিবারের প্রধানের সেখানে সমান অধিকার। গ্রাম-শা ষ নের জন্য যে সাধারণ সভা রয়েছে তার নাম 'লাচি-জাংওয়া'। টোটোদের ধর্মীয় সভার সর্ব্বোচ্চ কর্তা - ধর্মীয় প্রধান 'কাজি' আর অ-ধর্মীয় সভার সর্ব্বোচ্চ কর্তা হচ্ছেন - গাপু ।
টোটোরা বাসগৃহ কে বলে 'নাকো-শা'। টোটোদের বাসগৃহগুলি মাটি থেকে ৫-৬ ফুট উঁচু মাচা র ওপর তৈরি করা হয়। কাঠ বাঁশ ও ওডলা গাছের বাকলের রশি দিয়ে তৈরি হয় এই গৃহ। এই বাসগৃহগুলির নিচে টোটোরা গৃহপালিত পশু যেমন গরু, শূকর ইত্যাদি পালন করেন।
চাষ-আবাদের ক্ষেত্রে টোটোরা খুব একটা দক্ষ নন। তার ওপর জমির অভাব ও জমির উর্বরতার অভাবে টোটোরা সারা বছরের খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে পারেননা। টোটোরা চাল, ভুট্টা, মারউয়া, কাউন ইত্যাদি খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করেন। খাদ্য সংগ্রহের ব্যাপারে ওঁরা এখনো অরণ্যের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল।
পাদটীকা
[সম্পাদনা]- ↑ Chowdhuri, (2005), "The Totos", in Sarit Kumar Chaudhuri and Sucheta Sen Chaudhuri (eds.) Primitive tribes in contemporary India: concept, ethnography and demography, Volume 1, Delhi, Mittal Publications. আইএসবিএন ৮১-৮৩২৪-০২৬-৭
- ↑ ঘোষ, সমিত (২০০৯) উত্তরবঙ্গের ইতিহাস, কলকাতা: পত্রলেখা
- ↑ Majumdar, Bimalendu, (1998), The Totos : Cultural and Economic Transformation of a Small Tribe in the Sub-Himalayan Bengal, Kolkata, Academic Enterprise. আইএসবিএন ৮১-৮৭১২১-০০-৯
- ↑ Sanyal, Charu Chandra, (1973) The Meches and the Totos - Two Sub-Himalayan Tribes of North Bengal. A North Bengal University publication
- ↑ মজুমদার, বিমলেন্দু (১৯৭৯) আদিবাসী প্রতিবেশী কলকাতা: সাক্ষরতা প্রকাশন
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |