আন্দালুসের ফিতনা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কর্দোবা খিলাফত (সবুজ), আনুমানিক ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ

আন্দালুসের ফিতনা (১০০৯–১০৩১) দ্বারা কর্ডোবা খিলাফত ভেঙে পড়ার পূর্বে ঘটিত গৃহযুদ্ধ ও অস্থিতিশীল সময়কে বোঝায়। ১০০৯ সালে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এর সূচনা হয়। এই অভ্যুথানের পর আলমনজুরের ছেলে আবদুর রহমান সেনচুলোর হত্যাকাণ্ড, খলিফা দ্বিতীয় হিশামের ক্ষমতাচ্যুতি ও দ্বিতীয় মুহাম্মদের ক্ষমতারোহণের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের পর সমগ্র আন্দালুস বেশ কয়েকটি তাইফা রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ফিতনার ফলে ১০৩১ সালে কর্দোবা খিলাফত বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে বিভিন্ন রাজ্যের শাসকরা খলিফা পদের দাবি করতেন।

অস্থিরতার সময়জুড়ে বিভিন্ন মুসলিম রাজ্যকে উত্তরের খ্রিষ্টান রাজ্যগুলো দাপ্তরিক ও সামরিক দিক থেকে সাহায্য করে। কর্দোবা ও এর শহরতলীগুলো যুদ্ধের সময় লুঠতরাজের সম্মুখীন হয় এবং মদিনাতুজ জাহরাআলকাজার ডি লস রেয়েস ক্রিস্টিয়ানসের মত বিভিন্ন সুন্দর স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায়। সাময়িকভাবে মালাগায় রাজধানী স্থানান্তর করা হয়। বিশ বছরের কিছু কম সময়ের মধ্যে কর্ডোবা খিলাফতের উত্তরসুরি হিসেবে ১০টি ভিন্ন খিলাফত গড়ে উঠে।

কারণ[সম্পাদনা]

৯৭৬ সালে দ্বিতীয় আল হাকামের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত কর্দোবা খিলাফত শক্তিশালী ছিল। উত্তরের খ্রিষ্টান রাজ্যসমূহ একে সম্মান ও ভয় করত। তার মৃত্যুর সময় তার ছেলে দ্বিতীয় হিশাম শিশু অবস্থায় ছিলেন। ফলে উজির আলমনজুর সহজে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ পান। বিভিন্ন মুসলিম গোষ্ঠীর ঐক্যবদ্ধ অবস্থায় খিলাফত শক্তিশালী ছিল। কিন্তু গৃহযুদ্ধের ফলে তা বিনষ্ট হয়। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে আলমজুর বার্বা‌রদের অন্যান্য গোষ্ঠীর উপর স্থান দেন। আলমনজুরের ছেলে আবদুল মালিক আল মুজাফফর পিতার উত্তরসুরি হন। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সরকারি নিরাপত্তার অবনতি হয়। ১০০৮ সালে আবদুল মালিক মারা যাওয়ার পর তার ভাই আবদুর রহমান সেনচুলো ক্ষমতালাভ করেন। তিনি খিলাফতের প্রকৃত উত্তরাধিকারী ঘোষণা করার জন্য দ্বিতীয় হিশামকে রাজি করাতে সক্ষম হন।

গৃহযুদ্ধ[সম্পাদনা]

লিওনের পঞ্চম অলফেনসোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত সেনচুলোর অনুপস্থিতির সুযোগে দ্বিতীয় হিশামের চাচাত ভাই দ্বিতীয় মুহাম্মদ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। সেনচুলো দ্রুত কর্দোবায় ফিরে আসেন কিন্তু দীর্ঘ অভিযানের ফলে তার বার্বা‌র সেনাবাহিনী ক্লান্ত ছিল এবং অনেকে দল ছেড়ে চলে যায়। ফলে তিনি দ্বিতীয় মুহাম্মদের কাছে বন্দি হন। পরে তার মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

এই ঘটনার পর দ্বিতীয় মুহাম্মদের ক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন প্রতিপক্ষ গোষ্ঠী গড়ে উঠে এবং তাকে আরেক উমাইয়া গোষ্ঠী যার নেতৃত্বে ছিলেন সুলাইমান ইবনুল হাকাম, তাদের বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়। বার্বা‌রদের সাহায্যপুষ্ট সুলাইমান দ্বিতীয় মুহাম্মদকে বন্দী করতে সক্ষম হন এবং ১০০৯ সালে খলিফা হন। এসব ধারাবাহিক ঘটনা হামুদি রাজবংশকে প্রকৃত খিলাফতের অধিকারী দাবি করতে উৎসাহিত করে। তারা কর্ডো‌বা শহরের দিকে অগ্রসর হয়। সুলাইমানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তারা ১০২৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল।

১০২৩ সালে উমাইয়া বংশের পঞ্চম আবদুর রহমান খলিফা হন। একটি নতুন আরোপিত করে নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়ায় বিদ্রোহে তার পতন হয়।

১০৩১ সাল পর্যন্ত দুইজন উমাইয়া ও একজন হামুদি খলিফা শাসন করেছেন। এরপর কর্দোবার অভিজাতরা খিলাফতের বদলে স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করেন। তবে কিছু রাজ্য খিলাফতের দাবি করেছিল।

ফলাফল[সম্পাদনা]

এসব ধারাবাহিক বিশৃঙ্খলার ফলে খিলাফত ভেঙে তাইফা রাজ্যের সৃষ্টি হয়। উত্তরের খ্রিষ্টান রাজ্যগুলো উভয় পক্ষকে সেনাসহায়তা দিয়ে বিদ্রোহের পক্ষে সমর্থন দেয়। পরের সময়গুলো শান্তিপূর্ণ ছিল না। খিলাফতের বিলুপ্তির পর স্বাধীন তাইফাগুলো পরস্পর লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। এই অনৈক্যের সুযোগে খ্রিষ্টান রাজ্যগুলো রেকনকোয়েস্তার গতি বৃদ্ধি করে। পরবর্তীতে আলমোরাভি রাজবংশ এসে আন্দালুসকে পুনরায় একত্রিত করে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]