প্রত্যেকের থেকে তাঁর সামর্থ্য অনুসারে, প্রত্যেককে তাঁর প্রয়োজন অনুসারে

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কার্ল মার্ক্স ১৮৬১ সালে।

"প্রত্যেকের থেকে তাঁর সামর্থ্য অনুসারে, প্রত্যেককে তাঁর প্রয়োজন অনুসারে" একটি শ্লোগান যা লুই ব্ল্যাংক প্রথম ১৮৫১ সালে ব্যবহার করেছিলেন।[১] পরে এই শ্লোগানের আগের একটি রূপ এটিয়েন গেব্রিয়েল মরেলির দ্য কোড অব নেচারে দৃশ্যমান হয়েছিল। এই শ্লোগানকে কার্ল মার্ক্স ১৮৭৫এ নিজের গোথা কর্মসূচির সমালোচনায় জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন।[২][৩] নীতিটি পণ্য, পুঁজি এবং সেবার মুক্ত উপলব্ধি এবং বিতরণ বোঝায়।[৪] মার্ক্সবাদী দর্শন তেমনিভাবে হয় এক উন্নত সাম্যবাদী ব্যবস্থায় উৎপাদিত পণ্য এবং সেবার উভয় দিক দিয়ে। সমাজবাদের পূর্ণ বিকাশ এবং অত্যুন্নত উৎপাদন শক্তি একে বাস্তবায়িত করার কথা বলে।[৫][৬]

উৎস[সম্পাদনা]

নিচে মার্ক্সের গোথা কর্মসূচির সমালোচনা থেকে পাঠটি দেওয়া হয়েছে:

In a higher phase of communist society, after the enslaving subordination of the individual to the division of labor, and therewith also the antithesis between mental and physical labor, has vanished; after labor has become not only a means of life but life's prime want; after the productive forces have also increased with the all-around development of the individual, and all the springs of co-operative wealth flow more abundantly—only then can the narrow horizon of bourgeois right be crossed in its entirety and society inscribe on its banners: From each according to his ability, to each according to his needs! (ইন এ হায়ার ফেজ অব কমিউনিস্ট সোসাইটি, আফটার দ্য এনস্লেভিং সাবর্ডিনেশন অব দ্য ইণ্ডিভিজুয়াল টু দ্য ডিভিজন অব লেবার, এণ্ড ডেয়ারউইথ অল্সো দ্য অ্যাণ্টি থিসিস বিটউইন মেণ্টাল এণ্ড ফিজিকাল লেবার, হ্যাজ ভ্যানিশড; আফটার লেবার হ্যাজ বিকাম নট অনলি এ মিন্স অব লাইফ বাট লাইফস প্রাইম ওয়ানট; আফটার দ্য প্রডাক্টিভ ফর্সেস হেভ অল্সো ইনক্রিজড উইথ দ্য অল-অ্যারাউণ্ড ডেভেলপমেন্ট অব দ্য ইণ্ডিভিজুয়াল, এণ্ড অল দ্য স্প্রিংস অব কোপারেটিভ ওয়েল্থ ফ্লো মোর এবাণ্ডেণ্টলি — অনলি দেন ক্যান দ্য ন্যারো হরাইজন অব বুর্জোয়া রাইট বি ক্রশড ইন ইটস এণ্টাইরিটি অ্যাণ্ড সোসাইটি ইন্সক্রাইব অন ইটস ব্যানার্স: ফ্রম ইচ একর্ডিং টু হিজ এবিলিটি, টু ইচ একর্ডিং টু হিজ নিড! (প্রত্যেকের থেকে তাঁর সামর্থ্য অনুসারে, প্রত্যেককে তাঁর প্রয়োজন অনুসারে)[৩][৫][৬]

যদিও মার্ক্সকে প্রায় এই শ্লোগানের স্রষ্টা আখ্যা দেয়া হয়, তবে এই শ্লোগান ১৮৫১র লুই ব্ল্যাঙ্কের সমাজবাদী আন্দোলনে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।[৭] বাক্যের শ্রেয়ত্ব ফরাসি ইউটোপিয়ান এটিয়েন গেব্রিয়েল মরেলিকে প্রদান করা হয় যিনি নিজের ১৭৫৫র কোড অব নেচারে বলেছিলেন যে "পবিত্র এবং মৌলিক নিয়ম যা সমাজের সকল প্রতিবন্ধকতা গুড়িয়ে ফেলবেই"

১ম. কোনো কারোর কাছে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা পুঁজি পণ্য হিসাবে থাকবে না, সেই বস্তুগুলিকে বাদ দিয়ে যা তাঁর প্রয়োজন, আনন্দ এবং দৈনন্দিন কর্মের জন্য লাগে
২য়. প্রতিটি ব্যক্তি সরকারি ব্যক্তি হবে, সরকারি খরচে চালিত, আশ্রিত এবং দখল হওয়া
৩য়. প্রতিটি ব্যক্তি সম্প্রদায়ের কার্যে নিজের বিশেষ অবদান বাড়াবে নিজের সামর্থ অনুসারে, প্রতিভা অনুসারে এবং বয়স অনুসারে; এই ভিত্তিতে তাঁর দায়িত্ব নির্ণিত হবে, বিতরণের নিয়মসমূহের আধারে.[৮]

কোনো কোনো বাক্যের উৎস নূতন নিয়ম বলা হয়।[৯][১০] প্রেরিতদের কার্য্যে জেরুজালেমের বিশ্বাসসমূহের সম্প্রদায়ের লোকদের জীবনধারা সাম্প্রদায়িক (ব্যক্তিগত দখল না থাকা) ছিল এবং এই কথা ব্যবহৃত হয়েছিল: "পরে যাহার যেমন প্রয়োজন, তাহাকে তেমনি দেওয়া হইত" (διεδίδοτο δὲ ἑκάστῳ καθότι ἄν τις χρείαν εἶχεν):

কার্য ৪:৩২–৩৫: ৩২. আর যে বহুসংখ্যক লোক বিশ্বাস করিয়াছিল, তাহারা একচিত্ত ও একপ্রাণ ছিল। তাহাদের একজনও আপন সম্পত্তির মধ্যে কিছুই নিজের বলিত না; কিন্তু তাহাদের সকল বিষয় সাধারণে থাকিত। ৩৩. আর প্রেরিতেরা মহাপরাক্রমে প্রভু যীশুর পুনরুত্থান বিষয়ে সাক্ষ্য দিতেন, এবং তাহাদের সকলের উপরে মহা অনুগ্রহ ছিল। ৩৪. এমন কি, তাহাদের মধ্যে কেহই দীনহীন ছিল না; কারণ যাহারা ভূমির অথবা বাটীর অধিকারী ছিল, তাহারা তাহা বিক্রয় করিয়া, বিক্রীত সমপত্তির মূল্য আনিয়া প্রেরিতদের চরণে রাখিত; ৩৫. পরে যাহার যেমন প্রয়োজন, তাহাকে তেমনি দেওয়া হইত।

তর্ক[সম্পাদনা]

মার্ক্সের মতে এটি প্রযোজ্য হবে তেমন এক সমাজে যেখানে প্রযুক্তিগত বিকাশ এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের ফলে সামগ্রীর উৎপাদনে শারীরিক শ্রমের দরকারই থাকবে না। অর্থাৎ, "শ্রম জীবনের মাধ্যম নয়, পরে জীবনের মুখ্য প্রয়োজন হবে"।[১১] মার্ক্সের মতে, তেমন সমাজে মানুষ কোনো সামাজিক বাধ্যতা না থাকায় শ্রম করবে কারণ শ্রম হবে আনন্দদায়ক এবং সৃষ্টিশীল এক কর্ম। মার্ক্স "প্রত্যেকের থেকে তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী" সকলে যেভাবে পারে সেভাবে শ্রম করতে হয় বলে কেবল বোঝাননি, বরঞ্চ বুঝিয়েছেন যে সকলের নিজের প্রতিভা শ্রেষ্ঠভাবে বিকাশ করতে হয়।[১২][১৩]

নিজেকে তলার খোপের সাম্যবাদে থাকা বক্তব্য বলে সোভিয়েট সংঘ "প্রত্যেকের থেকে তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী প্রত্যেককে তাঁর কর্ম অনুযায়ী" অনুসরণ করেছিল।[১৪]

মুক্তিবাদী ঈশ্বরাধ্যয়ন একে খ্রীষ্টানদের ন্যায়ের মতের সাথে সুসংগত বলে, পরে অনেক খ্রীষ্টান বলেন যে প্যারাবেল অব দ্য ট্যালেন্টস "প্রত্যেকের থেকে তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী" বোঝায়, কিন্তু "প্রত্যেককে তাঁর প্রয়োজন অনুযায়ী" সূচিত করে না।[১৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Louis Blanc, Plus de Girondins, 1851, p. 92.
  2. Graeber, David (২০১৩)। The Democracy Project: A History, a Crisis, a Movement (ইংরেজি ভাষায়)। New York: Spiegel & Grau। পৃষ্ঠা 293–294। আইএসবিএন 9780812993561ওসিএলসি 810859541 
  3. Marx, Karl (১৮৭৫)। "Part I"গোথা কর্মসূচির সমালোচনা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-১৫ 
  4. Busky, Donald F. (জুলাই ২০, ২০০০)। Democratic Socialism: A Global Survey (ইংরেজি ভাষায়)। Praeger। পৃষ্ঠা 4। আইএসবিএন 978-0275968861Communism would mean free distribution of goods and services. The communist slogan, 'From each according to his ability, to each according to his needs' (as opposed to 'work') would then rule 
  5. Schaff, Kory (২০০১)। Philosophy and the problems of work: a reader (ইংরেজি ভাষায়)। Lanham, Md: Rowman & Littlefield। পৃষ্ঠা 224আইএসবিএন 0-7425-0795-5 
  6. Walicki, Andrzej (১৯৯৫)। Marxism and the leap to the kingdom of freedom: the rise and fall of the Communist utopia (ইংরেজি ভাষায়)। Stanford, Calif: Stanford University Press। পৃষ্ঠা 95আইএসবিএন 0-8047-2384-2 
  7. The entry "Blanc, Louis" of Encyclopædia Britannica and David Graeber The Democracy Project (2013, pp. 293–294) cite the work Organisation du travail (The organization of work, 1840 [1839]) as the origin of the quote.
  8. Gregory Titelman, Random House dictionary of popular proverbs & sayings (1996), p. 108.
  9. Joseph Arthur Baird, The Greed Syndrome: An Ethical Sickness in American Capitalism (1989), p. 32.
  10. Marshall Berman, Adventures in Marxism (2000), p. 151.
  11. Part 1, Critique of the Gotha Programme, http://www.marxists.org, quoting Marx/Engels Selected Works, Volume Three, p. 13-30.
  12. Bli︠a︡khman, Leonid Solomonovich; Shkaratan, Ovseĭ Irmovich (১৯৭৭)। Man at Work: The Scientific and Technological Revolution, the Soviet Working Class and Intelligentsia (ইংরেজি ভাষায়)। Progress। পৃষ্ঠা 155। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৬-২৪ 
  13. Johnson, Hewlett (১৯৬৮)। Searching for light: an autobiography (ইংরেজি ভাষায়)। Joseph। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৬-২৪ 
  14. Geoffrey Jukes (১৯৭৩)। The Soviet Union in Asia (ইংরেজি ভাষায়)। University of California Press। পৃষ্ঠা 225আইএসবিএন 978-0-520-02393-2 
  15. Finley, Tom। "The Parable of the Talents and the Parable of the Minas (Matt. 25:14-30 and Lk. 19:11-27)" (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০১৮