মার্কিন সামোয়ার ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মার্কিন সামোয়ায় ৮৫০ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম মানববসতি স্থাপিত হয়। ইউরোপীয় অভিযাত্রীরা অষ্টাদশ শতাব্দীতে সামোয়া দখল করলে এ থেকে পূর্ব সামোয়া (স্বাধীন সামোয়া রাষ্ট্র) ও পশ্চিম সামোয়া-য় (মার্কিন সামোয়া) বিভক্ত হয়।

সামোয়ার পলিনেশীয় অধিবাসীদের আদি ইতিহাস[সম্পাদনা]

পশ্চিমা শক্তি কর্তৃক অধিকৃত হওয়ার আগে পূর্ব সামোয়া ও পশ্চিম সামোয়ার ইতিহাস পরস্পরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল।

"তুই মানুয়া" সামোয়ার প্রাচীনতম বংশগুলোর একটি। সামোয়া ও মানুয়ার ঐতিহ্যবাহী মৌখিক সাহিত্য পর্যালোচনা করে জানা যায়,পলিনেশীয় রাজ্যগুলোর একটি বিরাট অংশ মানুয়া বংশের রাজারা শাসন করেছিলেন। কিংবদন্তি অনুযায়ী ফিজি, টোঙ্গা, উয়েভা, ফুতুনা, টোকেলাউ ও তুভালু অঞ্চলের উপর তাদের কর্তৃত্ব ছিল। [১] মানুয়াদের বংশলতিকা ও মৌখিক ইতিহাস মারফত জানা যায়, তারা সামোয়ার অন্যতম শক্তিশালী বংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পলিনেশীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক যোগাযোগব্যবস্থা সুদৃঢ় ছিল। ধারণা করা হয়, দক্ষতার সাথে বুনন করা মাদুর, তিমিমাছের দাঁত থেকে প্রস্তুতকৃত "তাবুয়া", লাল বর্ণের পাখা, রাজপরিবারের অভিজাতদের ব্যবহার্য সামুদ্রিক খোলসসহ বিভিন্ন দ্রব্যের আমদানি-রপ্তানি নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন করে সামোয়া রাজারা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন।

তুতুলিয়া ও আইনু দ্বীপের সাথে উপোনো দ্বীপের রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে উপোনো দ্বীপ স্বাধীন সামোয়ার অংশ হয়। "ফামাতাই" ব্যবস্থার মাধ্যমে গড়ে ওঠা এই সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন গোত্রপ্রধান সালানুয়া ও নাফামাসিনা।

পশ্চিমা মিশনারিদের আগমন[সম্পাদনা]

অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফ্রেঞ্চ অভিযাত্রী ও সামোয়ানদের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধের পর ফ্রেঞ্চরা সামোয়ানদের হিংস্র জাতি হিসেবে বর্ণনা করে। ১৮৩০ সালে লন্ডন মিশনারি সোসাইটির সদস্য জন উইলিয়ামসের নেতৃত্বে ধর্মযাজকদের একটি দল সামোয়া দ্বীপে খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তন করে। ১০০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে "সামোয়ান কনগ্রেগনিস্ট চার্চ" নির্মিত হয়। এটি ছিল দক্ষিণ প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রথম স্বাধীন আদিবাসী চার্চ।

সামোয়ান দ্বীপপুঞ্জের ইউরোপীয় ও উপনিবেশিক বিভাজন[সম্পাদনা]

১৮৭২ সালে পূর্ব সামোয়ার গোত্রপ্রধানদের সর্বাধ্যক্ষ সামরিক সুরক্ষার বিনিময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নৌঘাট প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেন। ১৮৭৮ সালে পাগো পাগো উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্র একটি কয়লা স্টেশন নির্মাণ করে এবং স্থানীয় একজন ব্যক্তিকে এর সচিব পদে নিয়োগ দেন। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় সামোয়ান গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়। একইসাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য ১৮৯৯ সালে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই গৃহযুদ্ধ ও ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ফলে সামোয়াকে আন্তর্জাতিক পরাশক্তিগুলো দুই ভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৮৯৯ সালের বার্লিন চুক্তি মোতাবেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব সামোয়ার মালিকানা পায়। এই পূর্ব সামোয়াই পরবর্তীতে মার্কিন সামোয়া নামে পরিচিতি পায়। পশ্চিম সামোয়া স্বাধীনতা লাভ করে এখন "সামোয়া" নামে পরিচিতি লাভ করেছে।

মার্কিন উপনিবেশ[সম্পাদনা]

১৯০০ সালে তুতুলিয়া দ্বীপের অনেক গোত্রপ্রধান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে "তুতুলিয়া সমর্পণ চুক্তি" স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেন। ১৯০৪ সালে মানুয়া দ্বীপের শেষ সার্বভৌম রাজা তুই মানুয়া এলিসারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মানুয়া সমর্পণ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ১৯২৯ সালে অনুমোদন আইন পাস করে মার্কিন কংগ্রেস চুক্তিগুলোকে বৈধতা প্রদান করে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিম সামোয়ায় মাউ আন্দোলন সংঘটিত হয়। এ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী যোদ্ধা এবং লিওন গ্রামের বাসিন্দা স্যামুয়েল সেইলেলে রিপলি পূর্ব সামোয়ায় মাউ আন্দোলন সংঘটিত হয়। ১৯২১ সালে মাউ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ১৭ জন গোত্রপ্রধানকে আটক করে কঠোর শ্রমদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন সামোয়ায় অবস্থানকারী মেরিন সদস্যরা সংখ্যায় স্থানীয় সামোয়ানদের ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এটি স্থানীয় সামোয়ান সংস্কৃতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। ১৪ বছর কিংবা তারও বেশি বছরের সামোয়ান পুরুষদের মার্কিন সেনাসদস্যরা প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। উভয় বিশ্বযুদ্ধে সামোয়ানরা প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে।

বর্তমান অবস্থা[সম্পাদনা]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর "অর্গানিক আইন ৪৫০০" পাসের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মার্কিন সামোয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ শাসনাধীন করার চেষ্টা করে।কিন্তু গোত্রপ্রধান তুইয়াসাসোপো মারিওটার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে কংগ্রেসে এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

ইতোমধ্যে নৌবাহিনীর পরিবর্তে স্থানীয়রা গভর্নর নিয়োগ দেওয়া শুরু করেন। মার্কিন সামোয়ানরা একটি সংবিধান প্রণয়ন করেন, যা ১৯৬৭ সালের ১ জুলাই হতে কার্যকর হয়। সংবিধানটি মার্কিন সামোয়ানদের স্বায়ত্তশাসনের পথ প্রশস্ত করে।

দ্বীপগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হতে অনীহা প্রকাশ করেছে। মার্কিন সামোয়ার সাথে নিউজিল্যান্ডের সমুদ্রসীমার বিষয়টি অনেকগুলো চুক্তির মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়েছে। তবে টোঙ্গা এবং স্বাধীন সামোয়ার সাথে এখনো কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।

মার্কিন সামোয়ায় কর্মসংস্থান[সম্পাদনা]

মার্কিন সামোয়ায় তিন ধরনের কর্মসংস্থান প্রচলিত। প্রতিটিতেই গড়ে ৫,০০০ মানুষ কাজ করেন। এগুলোর মধ্যে আছে সরকারি খাত, বেসরকারি খাত এবং টুনা ক্যানারি। এখানে কোনো সক্রিয় সেনাবাহিনী নেই। মার্কিন সামোয়ার খুব কমসংখ্যক অধিবাসীই মার্কিন ফেডারেল সরকারে কাজ করেন। অধিকাংশ সরকারি চাকরিজীবী সরাসরি মার্কিন সামোয়ার স্থানীয় সরকারে কাজ করছেন। স্টারকিস্ট কোম্পানি প্রতিবছর সামোয়া থেকে কোটি কোটি টাকার টুনা মাছ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১১ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০২০