ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন
সংক্ষেপেবিএমএমএ
প্রতিষ্ঠাকাল২০১১[১]
ধরনবেসরকারি সংস্থা
উদ্দেশ্যনারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য হ্রাস
অবস্থান
এলাকাগত সেবা
উত্তরপ্রদেশ ভারত
মূল ব্যক্তিত্ব
জাকিয়া সোমন, নূরজাহান সাফিয়া নিয়াজ
ওয়েবসাইটhttps://bmmaindia.com/

ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন বা বিএমএমএ হল একটি স্বায়ত্তশাসিত, ধর্মনিরপেক্ষ, অধিকার-ভিত্তিক গণসংগঠন যার নেতৃত্বে আছেন জাকিয়া সোমন। এই সংস্থা ভারতে মুসলিম মহিলাদের নাগরিকত্বের অধিকারের জন্য লড়াই করে।[১] ২০১১ সালের জানুয়ারিতে বিএমএমএ গঠিত হয়।[১] সংস্থাটি মুম্বাইতে অবস্থিত।[২]

গত ছয় বছরে ১৫টি রাজ্যে ৩০,০০০-এর বেশি সদস্য বিএমএমএ-তে নথিভুক্ত হয়েছেন।

মুসলিম ব্যক্তিগত আইনে সংস্কারের বিষয়ে মুসলিম মহিলাদের নিয়ে বিএমএমএ, ১০টি রাজ্যে, একটি সমীক্ষা[৩][৪] চালিয়েছে, যার বিষয় হলো-পরিবারের মধ্যে ন্যায়বিচার খোঁজা'[৫] এতে প্রকাশিত হয়েছে, যে ৪,০০০ জনেরও বেশি মহিলার মধ্যে জরিপ করা হয়েছিল, তাঁদের ৮২%[৬] -এর নামে কোন সম্পত্তি নেই এবং ৭৮% গৃহবধূ আছেন যাঁদের নিজস্ব কোন আয় নেই।

ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জাকিয়া সোমন বলেন, "এটি বেশ প্রকাশ্যে এসেছে যে ৯৫.৫% দরিদ্র মহিলা অল ইণ্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের কথাই জানেন না, তবুও সরকার এবং জনগণ মুসলিম সম্প্রদায়ের এই স্বঘোষিত নেতাদের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি মেনে চলে"।

ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন (বিএমএমএ) এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা নুরজাহান সাফিয়া নিয়াজ হিজাবের মতো অভ্যাসগুলিকে সমর্থন করেন না। এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যাতে তিনি বিশ্বাস করেন যে তাঁর ব্যক্তিগত স্থান লঙ্ঘন করা হয়েছে, এমন উদাহরণ তিনি দিয়েছেন, যেখানে সম্পূর্ণ অপরিচিত - যুবক এবং বৃদ্ধ পুরুষ এবং একজন অল্পবয়সী মহিলাও - জনসমক্ষে তাঁর কাছে এসেছেন এবং তাঁর পোশাকের পছন্দে অব্যাহতি (হিজাবের) ও সাহসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।[৭]

শনি শিঙ্গণাপুর মন্দিরের ঘটনায় বিএমএমএ হিন্দু মহিলাদের সমর্থন করেছে।[৮]

প্রচারণা[সম্পাদনা]

তিন তালাক নিষিদ্ধ[সম্পাদনা]

বিএমএমএ 'তিন তালাক' (মৌখিক তালাক) প্রথা নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে।[৯] মুসলিম ব্যক্তিগত আইন নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আবেদনও করেছে তারা।[১০] অবশেষে, ভারতে তিন তালাক নিষিদ্ধ করা হয়। ২০১৯ সালের ৩০শে জুলাই, ভারতের সংসদ তিন তালাকের অনুশীলনকে বেআইনি এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করে এবং এটিকে ২০১৯ সালের ১লা আগস্ট থেকে শাস্তিযোগ্য আইনে পরিণত করেছে।[১১]

হাজী আলী দরগার অভ্যন্তরীণ গর্ভগৃহে মহিলাদের প্রবেশ[সম্পাদনা]

বিএমএমএ মুম্বাইয়ের হাজি আলি দরগার অভ্যন্তরীণ গর্ভগৃহে মহিলাদের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞাকেও চ্যালেঞ্জ করেছিল এবং ২০১৬ সালের ২৬শে আগস্ট তিন বছরের আইনি লড়াইয়ের পরে, বোম্বে হাইকোর্ট, মহিলাদের প্রবেশের অনুমতি দেয় এবং নিষেধাজ্ঞাকে অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করে।[১২]

বহুবিবাহ, মুতাহ বিবাহ, মিসয়ার বিবাহ এবং নিকাহ হালালা বিলোপ[সম্পাদনা]

২০১৪ সালের ২৩শে জুন, বিএমএমএ একটি খসড়া প্রকাশ করে, 'মুসলিম বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ আইন' যাতে সুপারিশ করা হয় যে বহুবিবাহকে ভারতের মুসলিম ব্যক্তিগত আইনে অবৈধ ঘোষণা করা হবে।[১৩]

২০২২ সালের ১২ই ডিসেম্বর, বিএমএমএ দ্বারা দায়ের করা একটি জনস্বার্থ মামলায়, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র এবং ভারতের আইন কমিশনকে বহুবিবাহ এবং তার সঙ্গে মুতাহ বিবাহ, মিসইয়ার বিবাহনিকাহ হালালার মতো অন্যান্য প্রথাগুলি বাতিল করার অনুরোধ জানিয়ে নোটিশ জারি করে, কারণ এই প্রথাগুলি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪, ১৫, ২১ এবং ২৫ এর অধীনে ভারতের মুসলিম মহিলাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে।[১৪]

মহিলা কাজী[সম্পাদনা]

২০১৬ সালে, ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন (বিএমএমএ) প্রতিষ্ঠা করে দারুল উলূম নিসওয়ান, যার উদ্দেশ্য ছিল মহিলা কাজীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে তাঁরা প্রয়োজনীয় দক্ষতার সাথে মোল্লাদের দ্বারা কর্তৃত্বের সেই সবঅপব্যবহারকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন, যেগুলির সাহায্যে মোল্লারা ফতোয়া জারি করে আসছে, একতরফা তিন তালাককে সমর্থন করছে এবং 'নিকাহ হালালা' র মতো অভ্যাস প্রচার করছে। এগুলি প্রায়ই শোষণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের রাস্তা খুলে দেয়।[১৫]

'বহুবিবাহে নারী'দের নিয়ে প্রতিবেদন[সম্পাদনা]

২০২২ সালের ডিসেম্বরে, বিএমএমএ ভারতের ১১টি রাজ্য জুড়ে যেসব নারীর স্বামী বহুগামী বিবাহে রয়েছে তাঁদের ওপর একটি গবেষণা চালায়। এর ওপর ভিত্তি করে 'বহুবিবাহে নারীর অবস্থা এবং আইনি সুরক্ষার প্রয়োজন' একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ৮৪% উত্তরদাতা বলেছেন বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হওয়া উচিত, এবং ৭৩% মনে করেন দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণের জন্য একজন স্বামীকে শাস্তি দেওয়া উচিত। সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে ৪৫% স্বামী তাঁদের প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন, যদি তাঁরা তাঁর দ্বিতীয় বিয়েতে অসম্মত হন। প্রচুর সংখ্যক নারী বলেছেন যে তাঁরা বিশ্বাসঘাতকতা, মর্যাদার ক্ষতি এবং আত্মসম্মান হারানোর অনুভূতি অনুভব করেন যখন তাঁদের স্বামী, স্ত্রী বর্তমান হওয়া সত্ত্বেও, অন্য নারীকে বিয়ে করেছেন। জরিপে দেখা গেছে যে অনেক মহিলা গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন এবং ২৮৯ জন মহিলার মধ্যে ৫০% বিষণ্ণতা, নিজেকে দোষারোপ করা এবং আত্মহত্যার প্রবণতার মতো মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন।[১৪][১৬]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "About"Bharatiya Muslim Mahila Andolan (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০১-২৭ 
  2. Hasan Suroor (৬ জানুয়ারি ২০১৪)। India's Muslim Spring। Rupa Publications। পৃষ্ঠা 52। আইএসবিএন 978-81-291-3164-5 
  3. "Muslim Women's Views on Muslim Personal Law"Economic and Political Weekly। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০১-২৭ 
  4. Dhar, Aarti। "Muslim Women Want Reforms in Personal Laws, Study Reveals"The Wire। ২০১৬-০২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০১-২৭ 
  5. "Muslim women to mullahs: We are here, reform personal law or else… - Firstpost"Firstpost (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০১-২৭ 
  6. "89% Muslim women want government hand in codification of law: Study | Latest News & Updates at Daily News & Analysis"dna (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০১-২৭ 
  7. Kohli, Namita (২০২২-০৩-০৪)। "I can see the pitfalls of supporting practices such as hijab: Noorjehan Safia Niaz"The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-২৭ 
  8. "United for a cause: Muslim group backs Hindu women in Shani Shingnapur temple row"CatchNews.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০১-২৭ 
  9. "Ban 'triple talaq', says Muslim women's group"ABP Live। ২০১৬-০২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০১-২৭ 
  10. "Muslim women petition PM on personal law - Times of India"The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০১-২৭ 
  11. "'Historic' day as India outlaws 'triple talaq' Islamic instant divorce"The Guardian 
  12. "Noorjehan Safia Niaz: Mumbai Heroes"Mumbai Mirror। ২০১৭। 
  13. The Hindu. No second wife, please
  14. "Muslim women's body demands reform in family law, legal protection"Hindustan Times। ২১ ডিসেম্বর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ 
  15. Dhawan, Himanshi (২০ আগস্ট ২০২৩)। "How a female qazi is changing lives of India's Muslim women"Times of India 
  16. Shaikh, Mustafa (২১ ডিসেম্বর ২০২০)। "Women's rights group releases book on polygamy, asks for criminal action"India Times। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২২