প্রথমে ব্যবহার নয়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
প্রথম ব্যবহার নেই

প্রথমে ব্যবহার নয় বা No First Use (NFU) হচ্ছে এমন একটি অঙ্গীকার বা নীতি যেখানে পারমাণবিক ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো যুদ্ধবিগ্রহের সময় ততক্ষণ পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র প্রথমে প্রয়োগ না করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রতিপক্ষ পারমাণবিক শক্তিশালী রাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে তাদের আক্রমণ পরিচালিত করে। পূর্বে এই ধারণা রাসায়নিক এবং জৈবিক অস্ত্র প্রয়োগের ক্ষেত্রেও বলবৎ ছিল।

চীন ১৯৬৪ সালে প্রথম এই "প্রথমে ব্যবহার নয়" নীতি পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়; যা তারা আজও পালন করে আসছে। আর ভারত ২০০৩ সালে প্রথম এই নীতি গ্রহণ করে।[১]

কিন্তু ন্যাটো সোভিয়েত হুমকিকে কারণ দেখিয়ে বারংবার এই নীতি প্রত্যাখান করে আসছে।[২] ১৯৮২ সালে লিওনিদ ব্রেজনেভ রাশিয়ার হয়ে প্রথম এই নীতির বিরুদ্ধে একটি আনুষ্ঠানিক বিরোধীতা দাখিল করেছিল।[৩] এছাড়া ২০০০ সালে রাশিয়ান সেনাবাহিনীর সামরিক তত্ত্বে এটা উল্লেখ করা হয় যে, কোন দেশ যদি শুধু সাধারণ অস্ত্র দিয়েও বৃহত্তরে পরিসরে রাশিয়ার উপর আক্রমণ শুরু করে, তাহলে রাশিয়া বিনা বাধায় সেসব দেশের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগের ক্ষমতা রাখে।[৪]

এই নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রাষ্ট্রসমূহ[সম্পাদনা]

চীন[সম্পাদনা]

১৯৬৪ সালে পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জনের পর প্রথম দেশ হিসেবে চীনই এই নীতি প্রণয়ন এবং অঙ্গীকারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।[৫] স্নায়ুযুদ্ধের (কোল্ড ওয়ার) সময় চীন সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা তাদের পারমাণবিক ভান্ডার সীমিত রাখবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে তাদের অস্ত্র ভান্ডার সম্প্রসারণের প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে।[৬][৭] চীন দৃঢ়তার সাথে বারংবারই তাদের এই "প্রথমে ব্যবহার নয়" নীতির ঘোষণা সাম্প্রতিক সময়সহ ২০০৫, ২০০৮, ২০০৯ এবং ২০১১ সালে উল্লেখ করে এসেছিলো। এছাড়াও চীনের সাথে দ্বিপক্ষীয়ভাবে "প্রথমে ব্যবহার নয়" নীতিতে পৌছানর জন্য এবং বাকি পাঁচ পারমাণবিক শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোকে এই নীতিতে আওতাভুক্ত হতে প্ররোচিত করার জন্য চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ধারাবাহিকভাবে আহ্বান করে আসছে এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবারই এই নীতি অবলম্বনে অস্বীকৃতি জানিয়ে এসেছে।[৮][৯][১০][১১]

ভারত[সম্পাদনা]

১৯৯৮ সালে ভারত দ্বিতীয়বার পোখরান-২ নামের পারমাণবিক বিস্ফোরণের সফল পরীক্ষার পরেই "প্রথমে ব্যবহার নয়" নীতি অবলম্বন করে। ১৯৯৯ সালে ভারত সরকার কর্তৃক প্রকাশিত হওয়া এক দালিলিক বিবৃতিতে[১২] বলা হয় যে, পারমাণবিক অস্ত্র শুধু পারমাণবিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্যই এবং ভারত সর্বদা "কেবল প্রতিশোধস্বরুপ" হিসেবেই নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগ করবে। ঐ নথিপত্রে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারত কখনই প্রথম পারমাণবিক আঘাতের প্রবর্তন করবে না কিন্তু ভারতের উপর পারমাণবিক আক্রমণ পরিচালিত হলে প্রতিশোধ হিসেবে ভারত পাল্টা পারমাণবিক আক্রমণ চালাবে আর এই পাল্টা আক্রমণের আদেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী অথবা তার মনোনীত করা কোন উত্তরসূরীই অনুমোদন করবে।[১২] যুক্তরাজ্যের "জাতীয় গবেষণা উন্নয়ন কর্পোরেশন" এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০১-২০০২ সালের দিকে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির সত্ত্বেও ভারত "প্রথমে ব্যবহার নয়" নীতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলো। এছাড়াও ভারত প্রয়োজনের অতিরিক্ত আণবিক অস্ত্র বানানো থেকে নিজেদের বিরত রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

এছাড়া ২০১০ সালে দিল্লীর জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে ভারতের প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশংকর মেনন "প্রথমে ব্যবহার নয়" নীতির পরিবর্তে ভুলবশত "অ-পারমাণবিক রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যবহার নয়"[১৩] কথাটা উল্লেখ করেন। যদিও তার এই বক্তব্যের বিরোধীতা করে অনেকে এটা ব্যক্ত করেছেন যে, এই নীতির কোন পরিবর্তন সাধিত হয় নি; এটা শুধু তার বক্তৃতার আভিধানিক ভুল ছিল মাত্র।[১৪] এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সাধারণ নির্বাচনের সময়ও "প্রথমে ব্যবহার নয়" নীতির উপর গুরুত্বারোপ করেন।[১৫] ২০১৩ সালে পাকিস্তান ট্যাকটিকাল পারমাণবিক অস্ত্র বানিয়ে ভারতকে তাদের "প্রথমে ব্যবহার নয়" নীতি থেকে সরিয়ে আনার রিপোর্ট প্রকাশিত হলে এর প্রত্যুত্তরে ভারতের রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা সমিতির আহ্বায়ক শ্যাম সরণ এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেন যে, ট্যাকটিকাল বা স্ট্র্যাটেজিক যে উপায়েই ভারতকে পারমাণবিক আক্রমণ করা হোক না কেন, ভারত ব্যাপকভাবে সেই আক্রমণগুলোর প্রতিশোধ নিবে।[১৬][১৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "PIB Press Releases"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৭-০৪ 
  2. NATO's Nuclear Weapons: The Rationale for 'No First Use' | Arms Control Association - July/August 1999 - Jack Mendelsohn
  3. Schmemann, Serge (নভেম্বর ৪, ১৯৯৩)। "Russia Drops Pledge of No First Use of Atom Arms"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১২ 
  4. No First Use of Nuclear Weapons meeting: paper by Yuri Fedorov, 'Russia's Doctrine on the Use of Nuclear Weapons' ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে - Pugwash Meeting no. 279 London, UK, 15–17 November 2002
  5. "Key Issues: Nuclear Weapons: Issues: Policies: No First Use Policy"। Nuclearfiles.org। ২০১২-০২-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-৩০ 
  6. "No-First-Use (NFU)"Nuclear Threat Initiative। ২০১০-০১-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  7. "Statement on security assurances issued on 5 April 1995 by the People's Republic of China" (পিডিএফ)। United Nations। ৬ এপ্রিল ১৯৯৫। S/1995/265। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০১২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  8. Chinese nuclear forces, 2010. Bulletin of Atomic Scientists
  9. Tim Johnson, McClatchy Newspapers (২০০৯-০১-২০)। "China renews pledge of 'no first use' of nukes | McClatchy"। Mcclatchydc.com। ২০০৯-০৪-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-৩০ 
  10. "China states 'no first use' nuke policy"। UPI.com। ২০০৯-০১-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-৩০ 
  11. "China Security"। Chinasecurity.us। ২০১২-০২-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-৩০ 
  12. "Draft Report of National Security Advisory Board on Indian Nuclear Doctrine"। Indianembassy.org। ডিসেম্বর ৫, ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০১৩ 
  13. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৭ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১৮ 
  14. [১]
  15. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৮ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১৮ 
  16. Bagchi, Indrani। "Even a midget nuke strike will lead to massive retaliation, India warns Pak — The Economic Times"। Economictimes.indiatimes.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-৩০ 
  17. "Analysis: New Pakistani Tactical Nuclear Weapons — Implications And Ramifications"Space Daily। ২০১৩-০২-১৬।