পুষ্পকমল দাহাল প্রচণ্ড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(পুষ্পকমল দাহাল থেকে পুনর্নির্দেশিত)
পুষ্পকমল দাহাল
पुष्पकमल दाहाल
নেপালের প্রধানমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৮ আগস্ট ২০০৮ – ২৫ মে ২০০৯
রাষ্ট্রপতিরামবরণ যাদব
পূর্বসূরীগিরিজা প্রসাদ কৈরালা
উত্তরসূরীমাধব কুমার নেপাল
নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি'র অধ্যক্ষ
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
মে, ১৯৯৯
পূর্বসূরীপদ শুরু করা হয়
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1954-12-11) ১১ ডিসেম্বর ১৯৫৪ (বয়স ৬৯)
ঢিকুর পোখরি, নেপাল
রাজনৈতিক দলনেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (৪তম মহাধিবেশন)
(১৯৮৩ এর আগে)
নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (মসাল) (১৯৮৩–১৯৮৪)
নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (মসাল) (১৯৮৪–১৯৯১)
নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (একতা কেন্দ্রী) (১০৯১–১৯৯৪)
একীকৃত নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) (১৯৯৪–বর্তমান)
প্রাক্তন শিক্ষার্থীত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়
ধর্মনাস্তিক

পুষ্পকমল দাহাল (নেপালি: पुष्पकमल दाहाल; জন্মনাম: ছবিলাল দাহাল; ১১ ডিসেম্বর, ১৯৫৪), সাধারণভাবে প্রচণ্ড (নেপালি: प्रचण्ड নামে পরিচিত, হচ্ছেন নেপালের সাম্যবাদী রাজনীতিবিদ এবং নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান। তিনি বর্তমানে নেপালের প্রধানমন্ত্রী[১] তিনি ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালেও নেপালের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

প্রচণ্ড ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ থেকে একীকৃত নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) বা সংক্ষেপে নেকপা (মাওবাদী)কে সাম্যবাদী বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন। আসন্ন গৃহযুদ্ধকালীন সময়ে, ১৭,০০০ নেপালি মারা যান। অবশেষে ২০০৮ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং নেকপা (মাওবাদী) শক্তিশালী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। আগস্ট ২০০৮-এ নেপালের সংবিধান সভা প্রচণ্ডকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে।[২] তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল রোকমানাগুড় কাটোয়ালকে বরখাস্তের চেষ্টা করার পর প্রেসিডেন্ট রাম বরন যাদব তার এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করলে তিনি ৪ মে ২০০৯ তারিখে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেন।[৩]

দাহাল ব্যাপকভাবে তার ছদ্মনাম "প্রচণ্ড" হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত, যে নাম তিনি তার গেরিলা দিনগুলোতে গ্রহণ করেছিলেন। নেপালি এবং কিছু অন্যান্য ইন্দো-আর্য ভাষায় প্রচণ্ড শব্দটি একটি বিশেষণ যা "ভয়ংকর" হিসেবে অনুবাদ হয়।[৪]

মাওবাদী বিদ্রোহ[সম্পাদনা]

প্রচণ্ড পোখারায় একটি র‍্যালিতে বক্তব্যরত

৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬, বাবুরাম ভট্টরাঈ, নেপালি কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা পরিচালিত সরকারকে ৪০ দফা দাবী সংবলিত একটি তালিকা পেশ করেন এবং হুমকি দেন সরকার যদি তা না মানে তবে তারা গৃহযুদ্ধ শুরু করবেন। তারা "জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ও জীবিকার" এর সাথে সম্পর্কিত আরো দাবী জুড়ে দেন যেমন "নেপালি শিল্প, ব্যবসা ও আর্থিক ক্ষেত্রে বিদেশি পুঁজির আধিপত্য বন্ধ রাখতে হবে"। এছাড়াও "বৈষম্যমূলক চুক্তিসমূহ রহিত করতে হবে যা মূলত ১৯৫০ সালে স্বাক্ষরিত ভারত-নেপাল শান্তি ও বন্ধুত্ব চুক্তিকে ইঙ্গিত করে। তারা এই দাবিও করেন যে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণে যে জমি আছে তা বাজেয়াপ্ত করে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে।[৫] তার পরে, ২৬ এপ্রিল ২০০৬ পর্যন্ত, প্রচণ্ড সিপিএন (এম) এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ এলাকা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সামরিক প্রচেষ্টা চালান, বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলে ও পশ্চিম নেপালের দিকে।

৪০ দফা দাবী পরবর্তী রাজনৈতিক আলোচনা থেকে ২৪ টিতে নামিয়ে আনা হয়েছে।[৬]

বাবুরাম ভট্টরাঈয়ের সাথে সম্পর্ক[সম্পাদনা]

২০০৪-এর শেষদিকে এবং ২০০৫ সালের শুরুতে, প্রচণ্ড ও বাবুরাম ভট্টরাঈয়ের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে।[৭] পার্টি ভেতরে ক্ষমতা ভাগাভাগির মতানৈক্যের কারণে এটির জনশ্রুতি ছিল। ভট্টরাঈ প্রচণ্ডের অধীনে ক্ষমতা একত্রীকরণের অসন্তুষ্ট ছিলেন। এক সময়, প্রচণ্ড পার্টি থেকে ভট্টরাঈকে বহিষ্কার করেন, যদিও তাকে পরে পুনর্বহাল করা হয়।[৮] পরে তাদের পার্থক্যের অন্তত কিছু কমে আসে যা তাদের ঐক্যকে সম্ভব করে।[৯][১০]

১ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ সরকারের উপর রাজার সরাসরি কর্মের পর, সিপিএন (মাওবাদী) দল দলের ভবিষ্যৎ নীতি সম্পর্কে গুরুতর আলোচনায় মিলিত হন। তখন পর্যন্ত, কমরেড প্রচণ্ড কমরেড কিরণ এবং অন্যদের বিশ্বাস ছিল যে, তারা শুধু রাজার সরকারের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে ক্ষমতায় আসতে সক্ষম হবেন। সিনিয়র নেতা ভট্টরাঈ পার্টির এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, যদিও এটি এটি পার্টির আলোচ্য সূচিতে এসেছিলো। তিনি অন্যান্য 'মূলধারার' দলগুলোর সঙ্গে যুক্ত হবার ওপর জোর দেন। তিনি অন্য দলের সাথে একত্রে কাজ করে রাজতন্ত্র বিলোপের প্রস্তাব করেন এবং জোর দিয়ে বলেন, এটা উপযুক্ত সময় অন্য দলগুলোর সাথে কাজ করে একটি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার। তিনি বলেন, একই কৌশলে দলের জন্য একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং একটি সময়ের জন্য একটি বহুদলীয় ব্যবস্থার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে, যেহেতু অন্য দলগুলো একটি গণপ্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা অবিলম্বে গ্রহণ করছে না। চেয়ারম্যান প্রচণ্ডসহ ঊর্ধ্বতন নেতাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ শুরুতে তার মতামত অস্বীকার করেছিল এবং রাজার সঙ্গে একত্রে কাজ করার একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

পার্টি সিদ্ধান্ত অমান্য করার জন্য ভট্টরাই ও তার সমর্থকদের শাস্তি প্রদান করা হয় এবং তাদের পদ স্থগিত করা হয়। কিন্তু ১ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ রাজার ঘোষণার পর, পার্টি উপলব্ধি করে যে, যে নীতি তারা গ্রহণ করেছিল তা ছিল ভুল। অবিলম্বে একটি বৈঠকে ভট্টরাঈয়ের শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় এবং চুনবাং-এ অনুষ্ঠিত (রোল্পার একটি গ্রাম) একটি বৈঠকে পার্টি ভট্টরাঈয়ের ধারণা নিয়ে আলোচনা করেন। যার পরে, পার্টি বরং একটি লোকতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রের চেয়ে একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের জন্য কৌশলের সঙ্গে এগিয়ে আসে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "নেপালের প্রধানমন্ত্রী হলেন প্রচণ্ড"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ 
  2. "Ex-rebels' chief chosen as Nepal's new PM", Associated Press (International Herald Tribune), 15 August 2008.
  3. "Nepal PM quits in army chief row"। BBC News। ৪ মে ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০০৯ 
  4. "Prachanda"Encyclopedia Britannica। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৬In 1980 Prachanda (a nom de guerre meaning “fierce”) was tasked with... 
  5. Baburam Bhattarai, "40 Point Demand", South Asia Intelligence Review, 4 February 1996
  6. "Maoists Demand Interim Constitution," ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে Kathmandu Post, 28 April 2003
  7. Singh Khadka, "Nepal's Maoist leadership divisions", BBC News, 6 May 2005.
  8. "Official expelled from Maoist party"Television New Zealand। ১৫ মার্চ ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১১ 
  9. Charles Haviland, "Meeting Nepal's Maoist leader", BBC News, 16 June 2005.
  10. Sanjay Upadhya, "Nepal: Maoists hide more than they reveal", Scoop, 16 February 2005.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]