দুর্গসিংহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

দুর্গসিংহ (আনুমানিক ১০২৫ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন পশ্চিম চালুক্য রাজা দ্বিতীয় জয়সিংহের (অপর নাম জগদেকমল্ল, রাজত্বকাল: ১০১৮-১০৪২ খ্রিস্টাব্দ) যুদ্ধ ও শান্তি-বিষয়ক মন্ত্রী (‘সন্ধি বিগ্রহী’)।[১] দুর্গসিংহ সংস্কৃত ভাষায় রচিত সুপরিচিত নীতিকথামূলক পঞ্চতন্ত্র কাহিনিগুচ্ছ কন্নড় ভাষায় গদ্য-পদ্য মিশ্রিত ‘চম্পু’ শৈলীতে অনুবাদ করেন। পঞ্চতন্ত্র গ্রন্থের এই কন্নড় সংস্করণটির কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু জৈনধর্মের আদর্শ-ঘেঁষা। এই সংস্করণের ৬০টি গল্পের মধ্যে ১৩টি গল্প মৌলিক রচনা। প্রতিটি উপাখ্যানই মূলে রয়েছে একটি নীতিবাক্য এবং প্রতিটি গল্পের শেষেই একটি সারসংক্ষেপ অংশ (‘কথা শ্লোক’) সংযোজিত হয়েছে। কন্নড় সংস্করণটিই আঞ্চলিক ভারতীয় ভাষায় এই গ্রন্থের প্রথম সংস্করণ এবং এই গ্রন্থের লেখক একজন মন্ত্রী হওয়ায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান (‘রাজনীতি’) সংক্রান্ত একটি গ্রন্থ লিখতে উদ্যত হয়েছিলেন।[১][২][৩] গবেষক আর. নরসিংহাচার্যের মতে, এই গ্রন্থের রচনাকাল আনুমানিক ১০২৫ খ্রিস্টাব্দ। তবে আধুনিক কন্নড় কবি ও গবেষক গোবিন্দ পাই পাণ্ডুলিপির শেষ স্তবক থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মনে করেন যে গ্রন্থটি সমাপ্ত হয়েছিল ১০৩১ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ।[১]

লেখকের পরিচয়[সম্পাদনা]

দুর্গসিংহ ছিলেন জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ। কথিত আছে যে তিনি ছিলেন স্মার্ত ভাগবত সম্প্রদায়ভুক্ত হিন্দু। উল্লেখ্য, এই সম্প্রদায় শিববিষ্ণু উভয় দেবতাকেই সমান গুরুত্ব সহকারে পূজা করে।[১][৪] তিনি ছিলেন কিসুকডু নাডুর (প্রাচীন কর্ণাটকের অপর নাম) আদি বাসিন্দা এবং বাস করতেন সয়্যদি ব্রাহ্মণ উচ্চশিক্ষা বিদ্যালয়ে (‘অগ্রহর’)।

পঞ্চতন্ত্র সাহিত্যের ইতিহাস[সম্পাদনা]

পঞ্চতন্ত্র গ্রন্থের মূল পাঠটি অধুনা লুপ্ত হলেও এটি যে ৩০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ (অথবা দুই বা এক শতাব্দী আগে বা পরে) সংস্কৃত ভাষায় রচিত একটি পৃথক রচনা, তার প্রমাণ পাওয়া যায়।[৫] গ্রন্থটির মধ্যে রচয়িতার নাম হিসেবে বিষ্ণু শর্মার নাম উল্লিখিত হয়েছে, কিন্তু তিনি যে বাস্তব চরিত্র এবং একজন কাল্পনিক গল্পকথক চরিত নন, তার কোনও প্রমাণও পাওয়া যায় না।[৬] দুর্গসিংহের অনুবাদটির ভিত্তি ছিল তথাকথিত ‘দক্ষিণী পঞ্চতন্ত্র’ — একটি সংস্করণ, যা সেই মূল গ্রন্থের অনেকটাই অনুরূপ যে গ্রন্থটিকে হিতোপদেশ এবং পঞ্চতন্ত্র গ্রন্থের অন্যান্য আঞ্চলিক ভারতীয় সংস্করণের সঙ্গে একই বর্গভুক্ত করা হয়।[৭]

কিংবদন্তি উৎস[সম্পাদনা]

দুর্গসিংহ (বা যে সূত্র থেকে তিনি এই কাহিনিমালা গ্রহণ করেছিলেন) পঞ্চতন্ত্র কাহিনিগুচ্ছের একটি নিজস্ব কিংবদন্তিমূলক গ্রন্থ-ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। তবে সাধারণভাবে মনে করা হয়, পঞ্চতন্ত্র প্রকৃতপক্ষে বৃহৎকথা গ্রন্থের একটি অংশ (যদিও মূল বৃহৎকথা-য় পঞ্চতন্ত্র অংশটি পাওয়া যায় না, পরবর্তীকালে কাশ্মীর বা উত্তর-পশ্চিম ভারতে রচিত একটি পাঠান্তরেই এই গ্রন্থে পঞ্চতন্ত্র-এর অংশীভূত উপাখ্যানগুলি যুক্ত করা হয়[৭])।

দুর্গসিংহের সংস্করণে বলা হয়েছে যে, হিন্দু দেবতা শিব যখন তাঁর পত্নী পার্বতীকে একটি মহৎ উপাখ্যান শোনাচ্ছিলেন তখন শিবের প্রধান পরিচর পুষ্পদত্ত সেটি আড়ি পেতে শোনেন। সেই কাহিনিটিই পরে রাজা শালিবাহনের সভাকবি গুণাঢ্য (যাঁকে পুষ্পদত্তের অবতার মনে করা হত) কর্তৃক পৈশাচী ভাষায় বৃহৎকথা গ্রন্থের আকারে পুনর্কথিত হয়। এছাড়াও দুর্গসিংহ উল্লেখ করেছেন যে, বসুভগ দত্ত (পঞ্চতন্ত্র গ্রন্থের বেশ কয়েকটি ‘দক্ষিণী’ পাঠান্তরে বিষ্ণু শর্মার বদলে বসুভগ দত্তের নাম উল্লিখিত হয়েছে[৬]) রচিত সংস্কৃত পাঠটি ছিল মূল পৈশাচী সংস্করণের ‘পাঁচটি কাহিনি’র সংকলন, সেই কারণেই এই গ্রন্থের নামকরণ করা হয় ‘পঞ্চতন্ত্র’।[১]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. Sahitya Akademi (1988), p. 1122
  2. Sahitya Akademi (1988), p. 1253
  3. Shastri (1955), p. 357
  4. Narasimhacharya (1988), p. 19
  5. Olivelle 1997, p xii-xiii.
  6. Olivelle 1997, p xii.
  7. Olivelle 1997, p xlii.

উল্লেখপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • Narasimhacharya, R (১৯৮৮) [1988]। History of Kannada Literature। New Delhi: Asian Educational Services। আইএসবিএন 81-206-0303-6 
  • Olivelle, Patrick (translator) (১৯৯৭)। The Pañcatantra: The Book of India's Folk Wisdom। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-955575-8 
  • Sastri, Nilakanta K. A. (২০০২) [1955]। A history of South India from prehistoric times to the fall of Vijayanagar। New Delhi: Indian Branch, Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-560686-8 
  • Various (১৯৮৮)। Encyclopaedia of Indian literature - vol 2। Sahitya Akademi। আইএসবিএন 81-260-1194-7 

টেমপ্লেট:পঞ্চতন্ত্র