দক্ষিণ কোরিয়ায় মঙ্গোলীয়রা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দক্ষিণ কোরিয়ায় মঙ্গোলীয়রা
মোট জনসংখ্যা
৩০,৫২৭ (২০১৬)[১]
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল
সিউল
ভাষা
মঙ্গোলীয়, কোরীয়[২]

বিশ্বের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা মঙ্গোলীয় অভিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মঙ্গোলীয়র নিবাস দক্ষিণ কোরিয়ায়। [৩][৪]

জনসংখ্যা[সম্পাদনা]

২০০৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ২০,০০০ মঙ্গোলীয় দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজ করতেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপানইউরোপে বসবাসরত মোট মঙ্গোলীয় জনসংখ্যার তুলনায়ও বেশি ছিল।[৩] পাঁচ বছর পরে, এই অভিবাসীদের সংখ্যা ৩৩,০০০-এ পৌঁছায়, যা পুরো মঙ্গোলিয়ার জনসংখ্যার ১.২ শতাংশ। [২] দক্ষিণ কোরীয় সরকারের শুমারি অনুযায়ী, গ্রামে বসবাসরত প্রতি ২ টি মঙ্গোলীয় পরিবার থেকে অন্তত ১ জন দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজ করেন।[৫]

কোরীয় সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এদের মধ্যে ৪০ শতাংশ অবৈধ অভিবাসী; অনেকে ধারণা করেন, এদের ৭০ শতাংশই অবৈধ অভিবাসী হতে পারে।[১][৬] মঙ্গোলীয়দের সাথে কোরীয়দের সাদৃশ্য থাকায় তারা অন্যান্য দেশের অবৈধ অভিবাসীদের তুলনায় সহজেই কর্তৃপক্ষের শ্যেনদৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারেন। কোরিয়ায় মঙ্গোলীয় অভিবাসীদের সংখ্যা এতোই বেড়ে গেছে যে, সউলে অবস্থিত মঙ্গোলীয় দূতাবাসও তাদের আর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারছে না; ফলাফল,মঙ্গোলীয়রা নিজেরাই পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য দালাইন সালখি ("সামুদ্রিক হাওয়া")-র মত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। [৪]

অভিবাসনের কারণ[সম্পাদনা]

দক্ষিণ কোরিয়ার অধিকাংশ মঙ্গোলীয় অভিবাসী ভারী শিল্পে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।[৭] কেউ কেউ সিউল এবং দোংদ্যামুনের নিকটবর্তী জুংগুর 'মধ্য এশিয়ার গ্রাম'খ্যাত এলাকাগুলোতে রেস্তোরাঁ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মুদির দোকান চালান। [৮][৯][১০] মঙ্গোলীয় অভিবাসীদের দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন কারখানায় কাজের সুযোগ পেতে হলে কোরিয়ার শ্রম মন্ত্রণালয়ের বিধান অনুযায়ী কোরীয় ভাষায় দক্ষতা পরীক্ষায় ন্যূনতম ১২০ নম্বর পেতে হয়। তবে তুলনামূলক কম নম্বর নিয়ে কৃষি, মৎস্যচাষ ও নির্মাণশিল্পে কাজের সুযোগ মেলে। এই পরীক্ষায় অংশ নেয়ার আকুতিও তাই অনেক বেশি; ২০০৭ সালে কিছু প্রার্থী মে মাসের পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশন করার জন্য উলান বাতরের সেন্ট্রাল স্টেডিয়ামের বাইরে প্রায় চার দিন ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে শোরগোল তুলেছিল। সে বছর ১৪,৯২৯ জন পরীক্ষার্থী (৯,৮৯২ জন পুরুষ ও ৫,০৩৭ জন নারী) পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করেন, এর মধ্যে ১৪,৬০৬ জন পরীক্ষায় অংশ নেন, ৪৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী (৬,৪৮৭ জন) ১২০ নম্বরের বেশি স্কোর করেন এবং ৯১ শতাংশ পরীক্ষার্থী কৃষি,মৎস্যচাষ ও নির্মাণশিল্পে কাজ করার জন্য ন্যূনতম স্কোর অর্জন করেন। [১১][১২]

অভিবাসী শ্রমিকদের পাশাপাশি মঙ্গোলীয়রা অন্যান্য উদ্দেশ্যেও দক্ষিণ কোরিয়ায় আসেন। ২০০৮ সালের হিসাবমতে, প্রতি বছর প্রায় ১৭০০ জন মঙ্গোলীয় উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় আসতেন। [২] কিছু মঙ্গোলীয় নারী ইন্টারন্যাশনাল ম্যারেজ এজেন্সির মাধ্যমে কোরীয় পুরুষদের বিয়ে করার সুবাদেও দক্ষিণ কোরিয়ায় আসেন ; তাদের গড় বয়স মাত্র ২৪.৫ যেখানে তাদের স্বামীদের গড় বয়স ৪৪.৫ এবং তাদের অনেকেই তাদের স্বামীদের তুলনায় বেশি শিক্ষিত। [১৩]

আন্তঃজাতিগত সম্পর্ক[সম্পাদনা]

দক্ষিণ কোরিয়ায় বসবাসকারী মঙ্গোলীয়রা কোরীয় সামাজিক কাঠামোর বয়সভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাসকে তাদের জন্মভূমির সাথে একটি বড় সাংস্কৃতিক পার্থক্য এবং কোরীয় সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার পথে বড় বাধা হিসাবে উল্লেখ করেছেন। মঙ্গোলিয়ায় পাঁচ বছরের বড় কাউকেও 'তুমি' করে বলা যায়, অথচ দক্ষিণ কোরিয়াতে এক বছরের বড় হলেও তাকে 'আপনি' করে সম্বোধন করতে হয়। অন্যরা দাবি করেন, কোরীয়রা এশীয়দের তুলনায় পাশ্চাত্যের মানুষজনকে বেশি সম্মান করে থাকেন। [৪] ২০০৭ সালে সংঘটিত একটি অগ্নিকাণ্ডে চারজন মঙ্গোলীয় অভিবাসী ১১ জন কোরিয়ানের জীবন বাঁচান। কোরিয়ার অভিবাসন মন্ত্রণালয় তাদের কোরিয়ায় বসবাস ও কাজ করার আনুষ্ঠানিক অধিকার প্রদান করে।[১৪]

শিক্ষা[সম্পাদনা]

দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি স্কুল আছে, যেখানে মূলত মঙ্গোলিয়ার অভিবাসী শ্রমিকদের শিশুরা পড়াশোনার সুযোগ পায়। 'দ্য ইন্টারন্যাশনাল মঙ্গোলিয়ান স্কুল' নামের স্কুলটি সিউলের গোয়াংজিন জেলায় অবস্থিত। ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসে মাত্র ৮ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ স্কুলের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই অবৈধ অভিবাসীদের সন্তান, যারা সাধারণ সরকারি স্কুলগুলোতে পড়ালেখার সুযোগ পায়নি। [১৫] ২০১১ সালে ক্লাস ওয়ান থেকে নাইন পর্যন্ত এখানে ৮০ জনের মতো শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতো।[১৬]

স্কুলটি সউল মেট্রোপলিটন শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে কলেজ পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর অনুমোদন পেয়েছিল। কিন্তু অর্থ ও পরিসরের সংকুলান না হওয়ায় এটি প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাদান কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রেখেছে। তবে ২০১১ সাল থেকে তারা কলেজ নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু করে। স্কুলটি মঙ্গোলিয়ার পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মঙ্গোলীয় ভাষা ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের কোরিয়ান ভাষা শিখতে সাহায্য করে। ২০১০ সালে এখান থেকে পাশ করা ১৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন মঙ্গোলিয়ায় ফিরে গিয়ে কলেজে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, আর বাকিরা দক্ষিণ কোরিয়ারই বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয়। দক্ষিণ কোরীয় শিক্ষকরা উল্লেখ করেন, এসব শিক্ষার্থীরা সাধারণত কোরিয়ার স্কুলজীবনের সাথে ভালোভাবেই মানিয়ে নিতে পারে, তবে তারা জাতিগত কারণে হয়রানির শিকার হওয়া এবং বিশেষত ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলগুলোতে, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে কোরীয় ভাষা ব্যবহারের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকে। [১৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "체류외국인 국적별 현황", [[:টেমপ্লেট:Asiantitle]], South Korea: Ministry of Justice, ২০০৯, পৃষ্ঠা 262, সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৩-২১  ইউআরএল–উইকিসংযোগ দ্বন্দ্ব (সাহায্য)
  2. "'Korean Dream' fills Korean classrooms in Mongolia", The Chosun Ilbo, ২০০৮-০৪-২৪, ২০০৮-০৯-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-০৬ 
  3. "Mongolians, Koreans share ancient bonds", Taipei Times, ২০০৩-১০-১৩, সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-১৭ 
  4. "Sea Breeze Helps Korea's Mongolians Speak with One Voice", The Chosun Ilbo, ২০০৫-০৩-২৯, ২০০৮-০৫-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৯-০৫ 
  5. Han, Jae-hyuck (২০০৬-০৫-০৫), "Today in Mongolia: Everyone can speak a few words of Korean", President Roh Moo-hyun: Summit Diplomacy, Republic of Korea: Office of the President, সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. Chae, Seong-jin (২০০৩-১০-১০), "도심속의 "몽골 타워" (The "Mongol Tower" in the heart of the city)", The Chosun Ilbo, ২০০৫-০২-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-১৭  অজানা প্যারামিটার |url- status= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  7. Phillips, Simon (২০০৭-০৬-১৯), "A Mongolian Migrant Worker's Story", Korea Times, সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-১৭ 
  8. "No melting pot, but Seoul still flavoured with several dashes of migrant communities", Korea.net, ২০০৬-১২-১৯, সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  9. "A Little Corner of Overseas in Seoul", The Chosun Ilbo, ২০০৭-০৪-০৫, ২০০৭-০৪-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-১৭ 
  10. Koehler, Robert (২০০৬-০৪-১৯), "The Silk Road Leads to Seoul: Dongdaemun's Central Asia Village and Namyangju's Mongolian Cultural Village", Seoul Magazine, ২০০৭-০৬-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-১৭ 
  11. Sh., Batmonkh (২০০৭-০৬-২৭), "13,000 Qualify to Enter Korea", UB Post, ২০০৭-০৮-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-১৭ 
  12. "Chaos reigns in registration process", The Mongol Messenger, ২০০৭-০৫-২২, সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-১৭ 
  13. "Asia Women Network Supporting Married Migrant Women's Human Rights" (পিডিএফ), Asian Workers News, পৃষ্ঠা 7, 2006-12-10, ২০১১-০৭-২৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ 2009-02- 06  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  14. "Mongolians save the life of Korean Official", mongolia-web.com, ২০০৭-০৪-১৯, ২০১১-০৭-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৭-৩০ 
  15. 송화선 (২০০২-১২-২৬), "몽골 아이들 '배움의 갈증 목말라요'", Weekly Donga Magazine (365), পৃষ্ঠা 66–67, সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৭-৩১ 
  16. 김지은 (২০১১-০২-১০), "한예종·재한몽골학교, 다섯번째 '아트캠프'", Nate News/Newsis, ২০১২-০৩-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৭-৩০ 
  17. Park, Angela (২০১০-০৭-২৭), "Mongolian students face new challenges", Joongang Ilbo, সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৭-৩০