জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায়
জন্ম(১৮৯৭-০২-১৭)১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৭
মৃত্যু৯ এপ্রিল ১৯৭০(1970-04-09) (বয়স ৭৩)
পেশারসায়নবিদ
কর্মজীবন১৯৪২–১৯৭০

অধ্যাপক ড.জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায় (১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৭ – ৯ এপ্রিল ১৯৭০) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি রসায়নবিদ। ভারতে উপক্ষার সংশ্লেষণ গবেষণায় অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন তিনি। [১] কলকাতা ময়দানে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের আড্ডার জ্ঞানত্রয় -এর অন্যতম সদস্য এবং প্রিয় শিষ্য। অন্য দুজন ছিলেন জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়[২]

জন্ম ও শিক্ষা[সম্পাদনা]

জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায়ের জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুরে তিল্লীগ্রামে। পিতা পূর্ণচন্দ্র রায় ছিলেন একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং ভারতে দিয়াশলাই শিল্পের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবসায়ী। [৩] অতি অল্প বয়সে তার মা'য়ের মৃত্যু হয় এবং পিতা ব্যবসার জন্য বেশির ভাগ সময়ই বাইরে থাকতেন। সেকারণে তার বাল্যকাল কেটেছে রাজশাহীর মাতুলালয়ে। কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হলেও পড়াশোনার চেয়ে তার খেলাধুলা ও নাটকে আগ্রহ বেশি ছিল। [৪] তবে মেধাবী জ্ঞানেন্দ্রনাথ স্কুলের পরীক্ষায় প্রথম হতেন। টাইফয়েডে ভুগে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং ভাল ফলই করেন। তারপর কলকাতায় এসে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভরতি হন। পড়াশোনার সঙ্গে এখানে কলেজ ক্রিকেট, হকি এবং ফুটবল খেলায় অংশ নিতেন। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএসসি পাশের পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স কলেজে ভরতি হন এবং ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে রসায়ন শাস্ত্রে এমএসসিতে প্রথম হন এবং স্বর্ণপদক লাভ করেন ।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তাকে অল্প বয়সেই বিজ্ঞান কলেজের রসায়ন বিভাগে লেকচারারের পদে নিযুক্ত করেন। অধ্যাপনার সঙ্গে তিনি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের তত্ত্বাবধানে জৈব রসায়ন গবেষণা শুরু করেন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ঘোষ ভ্রমণবৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ডে যান এবং ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে নোবেল পুরস্কারজয়ী জৈব রসায়ন বিজ্ঞানী স্যার রবার্ট রবিনসনের অধীনে গবেষণা করতে থাকেন এবং ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে স্যার রবিনসনের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন। গবেষণাপত্রটি ছিল 'যোজ্যতার আধুনিক ইলেকট্রনিক তত্ত্ব'-এর ভিত্তিরূপ। এছাড়া ও তার সবচেয়ে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান ছিল বারবেরিন ও ব্রাজিলিন নামক উপক্ষারের সংশ্লেষণ। তার বিভিন্ন গবেষণা পত্র ও উপক্ষারের উপর উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ডিএসসি ডিগ্রি প্রদান করে। [৪] জ্ঞানেন্দ্রনাথ পরে অস্ট্রিয়ার গ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড.ও গ্রেগলের সঙ্গে মাইক্রোঅ্যানালিটিক্যাল রসায়ন বিষয়ে কাজ করেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে পালিত স্কলারশিপ নিয়ে আবার ম্যানচেস্টার যান। প্রথমে অধ্যাপক স্যার রবিনসনের সঙ্গে এবং পরে অক্সফোর্ডে কাজ করেন। স্কলারশিপ শেষ হলে তিনি ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫ নভেম্বর লাহোরের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। পূর্বে ম্যানচেস্টারে অবস্থানকালে তার সঙ্গে মিস ডরোথী ব্রডহার্স্ট-এর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর তাকে বিবাহ করে লাহোরে নিয়ে আসেন। এখানে দীর্ঘসময়ের অধ্যাপনার পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ড্রাগস অ্যান্ড ড্রেসিং দপ্তরের অধিকর্তা হন। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রধান ভেষজ ও রাসায়নিক দ্রব্য তৈরির জন্য সারা দেশে বহু কেন্দ্র গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেন। পরে তিনি ভারত সরকারের শিল্প ও সরবরাহ বিভাগে সহ-অধিকর্তা নিযুক্ত হন এবং ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ওই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা কেমিক্যাল-এ প্রধান শিল্প ও গবেষণা উপদেষ্টা হিসাবে যোগ দেন এবং ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে অবসর নেন। এছাড়া তিনি মুম্বইয়ের টি সি এফ, জনউইথ এবং জেফরি ম্যানার্স ভেষজ প্রতিষ্ঠানেরও উপদেষ্টা ছিলেন। জ্ঞানেন্দ্রনাথের রচিত ১৮০ টিরও বেশি মৌলিক গবেষণা নিবন্ধ ভারত, ব্রিটেন, আমেরিকা জার্মানির নানা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। [১]

সম্মাননা[সম্পাদনা]

অধ্যাপক জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায় একসময়ে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটি র সভাপতি হয়েছিলেন।১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের রসায়ন বিভাগের সভাপতিও হয়েছিলেন। ব্রিটেনের রয়াল ইনস্টিটিউট অফ কেমিস্ট্রির ফেলো ছিলেন এবং এর ভারতীয় শাখার একসময়ের সভাপতি ছিলেন। [৪]

জীবনাবসান[সম্পাদনা]

দীর্ঘ কর্মজীবনের পর জীবনের শেষ দিনগুলি বাড়িতে নির্জনে কাটিয়েছেন। তাঁর কাছে নিজের চিন্তাভাবনাই ছিল একান্ত সঙ্গী। তিনি শেষের দিকে দৃঢ়তায়, শান্ত এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের মাঝে ভুগছেন এবং ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ৯ এপ্রিল পরলোক গমন করেন। [৪]


তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ২৫২, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. "প্রতি সন্ধ্যায় গড়ের মাঠে আড্ডা জমাতেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র, ময়দান ক্লাবের আড্ডা নাম দিলেন গান্ধীজি"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-১৬ 
  3. "4.0 Case study two, the safety match industry in india"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-১৬ 
  4. 8408.pdf/ "Jnanendranath Ray (ইংরাজীতে)" |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]