কার্বন ধনাত্মক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

'দ্য নিউ ল্যাঙ্গুয়েজ অব কার্বন' (ইংরেজি: The New Language of Carbon, অনুবাদ'কার্বনের নতুন ভাষা') একটি নতুন ধারণা, যা মূলত ২০১৬ সালে নেচার জার্নালে প্রকাশিত স্থাপত্যবিদ উইলিয়াম ম্যাকডোনফের নিবন্ধ, “কার্বন ইজ নট এনেমি” (ইংরেজি: Carbon Is Not The Enemy, অনুবাদ'কার্বন শত্রু নয়') মাধ্যমে প্রথম বিকাশিত হয়।[১] “কার্বন ধনাত্মক নগর” এবং “চক্রাকার কার্বন অর্থনীতি” ধারণা দুটি এই ধারণাকে ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে এটির নিঃসরণ না কমিয়ে, কার্বনকে 'দায়' মনে করে না করে বরং মাটি, উদ্ভিদ এবং “টেকসই” পৃথিবীর উপযুক্ত সম্পদ হিসেবে গ্রহণ করা- এই ধারণার মূল মর্ম।

কার্বন ধনাত্মক নগর[সম্পাদনা]

উইলিয়াম ম্যাকডোনফ তার শার্লটসভিল-ভিত্তিক স্থাপত্য নকশা প্রতিষ্ঠান উইলিয়াম ম্যাকডোনফ + পার্টনার্সের সাথে যৌথভাবে কার্বন ধনাত্মক নগরসমূহের নকশা তৈরির কাঠামো প্রণয়ন করতে কার্বনের নতুন ভাষা ব্যবহার করেছিলেন।[২] এই ধারণাটি শহরে বায়ু সেবন ধারণার সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত, যা তিনি মে ২০১৮ সালে সাংহাইয়ে সার্কেল চায়না ফোরামে উপস্থাপন করেছিলেন এবং ভূ-তাপীয় শক্তির মত সমন্বিত নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে বায়ু দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন সমাধানের পরিবর্তে ন্যূনতম কার্বন এবং অল্প বিষাক্ত রাসায়নিক বায়ুতে নিঃসরণের দিকে মনোনিবেশ করেন।

নগরসমূহে ধনাত্মক কার্বন কাঠামো বাস্তবায়ন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি পদ্ধতি।[৩] পদ্ধতিটির উদ্দেশ্য হলো কার্বনকে বোঝা মনে করে বায়ুমন্ডলে এটির নিঃসরণ না কমিয়ে বরং মাটি, উদ্ভিদ এবং “টেকসই” পৃথিবীর উপযুক্ত সম্পদ হিসেবে গ্রহণ করা।

'কার্বন ধনাত্মক নগর'-এর লক্ষ্য বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন দায় হ্রাস করা একই সাথে সম্পদ হিসাবে পৃথিবীজুড়ে কার্বনের টেকসই ব্যবহার বৃদ্ধি, একটি উত্পাদনশীল এবং পুনরুদ্ধারযোগ্য বাস্তুসংস্থানের সমন্বয়ের মাধ্যমে নগর উন্নয়ন উদ্‌যাপন,[৪] শহরগুলিতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশগত, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক মূল্যবোধের জন্য কার্বনের উপকারী ব্যবহার চিহ্নিতকরণ, শহরগুলির সাথে তাদের স্থানীয় পশ্চাৎপ্রদেশ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের সম্পর্কের সবচেয়ে সুযোগ্য এবং কার্যকর ব্যবহার; কৃষিকাজকে নগর অ অঞ্চলের গড়ন ও ক্রিয়াকলাপের সাংগঠনিক উপাদান হিসাবে কল্পনা করা।[৪]

চক্রাকার কার্বন অর্থনীতি[সম্পাদনা]

মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত ২০১৯-এর জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে উইলিয়াম ম্যাকডোনফ এবং সামুদ্রিক বাস্তুবিদ কার্লোস দুয়ার্তে বিবিভিএ ফাউন্ডেশনের একটি অনুষ্ঠানে 'চক্রাকার কার্বন অর্থনীতি'র ধারণা উপস্থাপন করেছিলেন।[৫] চক্রাকার কার্বন অর্থনীতির ধারণা ম্যাকডোনফের কার্বনের ব্যবহার সম্পর্কিত নতুন মতবাদ 'কার্বন শত্রু নয়'-এর উপর ভিত্তিতে এবং কার্বন ব্যবস্থাপনার পরিচালনা করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সংগঠিত করার কাঠামো হিসাবে কাজ করার লক্ষ্যে উপস্থাপিত।[১] ২০২০ সালের মার্চে জি২০ -এর একটি কর্মশালায় আলোচনার জন্য "চক্রাকার কার্বন অর্থনীতি" ধারণা ব্যবহার করেছিলেন।[৬]

অভ্যর্থনা[সম্পাদনা]

২০১৬ সালে “কার্বন শত্রু নয়” শিরোনামের নিবন্ধটি নেচার সাময়িকীতে প্রকাশের পর সাইন্টিফিক আমেরিকান[৭] এবং আমেরিকার বাণিজ্য সাময়িকী ফাস্ট কোম্পানি[৮] মত অসংখ্যা সাময়িকী সমসাময়িক আলোচনায় কার্বন নিঃসরণের বিষয়ক কথপোকথনগুলিতে এ সম্পর্কে পুনর্বিবেচনার জন্য প্রশংসা করেছিল।

কার্বন ধনাত্মক নগরের ধারণা প্রকাশের পর, বেশ কয়েকটি পৌরসভা তাদের পরিবেশগত লক্ষ্যগুলির মূল্যায়নের সময় এটি ব্যবহার করেছে। জাতিসংঘ গণচীনের বাওডিং শহরকে “প্রথম 'কার্বন ধনাত্মক' শহর” হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল।[৯] লিভারপুল সিটি কাউন্সিল তাদের ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে "২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রথম কার্বন ধনাত্মক নগর" হওয়ার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিল।[১০]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. ম্যাকডোনফ, উইলিয়াম (২০১৬-১১-১৭)। "Carbon is not the enemy" [কার্বন শত্রু নয়]। নেচার (ইংরেজি ভাষায়)। ৫৩৯ (৭৬২৯): ৩৪৯–৩৫১। এসটুসিআইডি 4448028ডিওআই:10.1038/539349aঅবাধে প্রবেশযোগ্যপিএমআইডি 27853228বিবকোড:2016Natur.539..349M 
  2. প্লাসট্রিক, পিট (২০১৭-১১-০৮)। ""Carbon Positive" Cities?" ["কার্বন ধনাত্মক" নগর ?]। লাইফ আফটার কার্বন (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৪-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১২ 
  3. এনজিলত্তি, ইলিলি (২০১৮-০৬-১৩)। "Climate positive, carbon neutral, carbon negative: What do they mean?" [জলবায়ু ধনাত্মক, কার্বন নিরপেক্ষ, কার্বন ঋণাত্মক: তাদের অর্থ কী?]। ফাস্ট কোম্পানি (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৬-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১২ 
  4. "Energy-smart companies, cities and governments sign up to deliver Net Zero Carbon Buildings"দ্য ক্লাইমেট গ্রুপ (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৯-১৪। ২০২০-০৮-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১২ 
  5. "BBVA Foundation"FBBVA (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-১০-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২২ 
  6. "William McDonough invited to give G20 opening speeches on Circular Carbon Economy"William McDonough (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৩-০৫। ২০২০-১০-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২২ 
  7. ""Positive Cities" Can Improve Earth as Well as People's Lives" ["ইতিবাচক নগর" মানুষের জীবনযাত্রার পাশাপাশি পৃথিবীর উন্নতি করতে পারে।]। সাইন্টিফিক আমেরিকান (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৭-০১। ২০১৮-১১-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১২ 
  8. পিটারস, এডেলে (২০১৬-১১-১৪)। "William McDonough Wants To Change The Way We Talk About Carbon" [উইলিয়াম ম্যাকডোনফ কার্বন নিয়ে আমাদের কার্বন সম্পর্কে আমাদের কথা বলার ধরন পরিবর্তন করতে চান]। ফাস্ট কোম্পানি (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-১১-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১২ 
  9. "Baoding, China- The world's first "carbon positive" city .:. Sustainable Development Knowledge Platform"জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন। ২০২১-০৪-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১২ 
  10. ডালেয়, হোপ (২০১৮-০৭-২৬)। "Liverpool aims to be world's first climate-positive city with blockchain technology" [লিভারপুল ব্লকচেন প্রযুক্তি সহ বিশ্বের প্রথম জলবায়ু-ইতিবাচক শহর হওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে]। আর্কিনেক্ট (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৮-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১৩ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]