আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া মুফাসসির ও ইতিহাসবিদ আবুল ফিদা হাফিজ ইবনে কাসির আদ দামেশ্কী (রহ.) কর্তৃক আরবি ভাষায় রচিত একটি ইতিহাস গ্রন্থ। আল্লাহ তায়ালার বিশাল সৃষ্টিজগতের সৃষ্টিতত্ত্ব ও রহস্য, মানব সৃষ্টিতত্ত্ব তথা মানব ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা, নবী-রাসুলদের আগমন ও তাঁদের কর্মব্যস্ত জীবনের ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে এ গ্রন্থে। [১]

ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত ১৪ খন্ডের ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’
ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত ১৪ খন্ডের ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’

‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ একটি ইতিহাস গ্রন্থ হওয়া সত্ত্বেও এ গ্রন্থে ব্যবহৃত উচ্চস্তরের ভাষা ও এর সাহিত্যিক মানের কারণে বিখ্যাত আরবি সাহিত্যিকদের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। আল্লামা ইবনে কাসির তার এ গ্রন্থের প্রতিটি আলোচনা কোরআন, হাদিস, সাহাবা ও বিভিন্ন মনীষীর উক্তি দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন। এ ক্ষেত্রে লেখক কোনো তথ্য বা বর্ণনাতে অতিরঞ্জন, অতিকথন বা নিজের পক্ষ থেকে কোনো পরিবর্তন, সংযোজন, বিয়োজন পরিহার করেছেন।

আল্লামা ইবনে কাসির তার এ গ্রন্থকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। প্রথম অংশে রয়েছে সৃষ্টিজগতের তত্ত্ব-রহস্য তথা আরশ-কুরসি, আসমান-জমিন ও এগুলোর মধ্যস্থিত যা কিছু আছে তা সৃষ্টি এবং আসমান-জমিনের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে সেগুলো সৃষ্টির ইতিহাস। অর্থাৎ আরশ-কুরসি, আসমান-জমিনের মধ্যবর্তী সব কিছু তথা ফেরেশতা, জিন, শয়তান, হজরত আদম (আ.) এর সৃষ্টি, নবী-রাসুলদের ধারাবাহিক আলোচনা, বনি ইসরাইলিদের বর্ণনা, আইয়ামে জাহেলিয়াতের ঘটনা এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনচরিত ও নবুয়ত লাভ পর্যন্ত সময়ের আলোচনা করা হয়েছে।

দ্বিতীয় অংশে রয়েছে রাসুল (সা.) এর ওফাতের পর থেকে ৭৬৮ হিজরি সাল পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য খলিফা, রাজা-বাদশাহদের উত্থান-পতনের ঘটনা, মনীষীদের বর্ণনা, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ। আর তৃতীয় অংশে লেখক অন্তর্ভুক্ত করেছেন মুসলিম উম্মাহর অশান্তি ও বিপর্যয়ের কারণ, ভবিষ্যতে অনুষ্ঠিতব্য মানবজাতির মধ্যে সংঘাত, অশান্তি, বিপর্যয়, যুদ্ধ-বিগ্রহ, ফেৎনা-ফ্যাসাদ, কেয়ামতের আলামত, পুনরুত্থান, হাশর-নশর, কেয়ামত দিবসের ভয়াবহ অবস্থা, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ।

ইতিহাস গ্রন্থ রচনায় লেখক তার পূর্বে রচিত গ্রন্থগুলোর রীতি অনুসরণ করেছেন। ঘটনাগুলোর বর্ণনায় তিনি ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন এবং সেগুলোর বর্ণনায় তিনি বিভিন্ন শিরোনাম দিয়েছেন। প্রথমে তিনি বছরের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো এবং পরবর্তীতে ওই বছর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের জীবনী আলোচনা করেছেন। কখনও কখনও তিনি তার স্বরচিত কবিতা সন্নিবেশন করেছেন। আবার তথ্য-প্রমাণে তিনি প্রাসঙ্গিক কোরআনের আয়াত ও হাদিস উপস্থাপন করেছেন। ইসলামের ইতিহাস চর্চাকারীদের কাছে তাই এ বিখ্যাত গ্রন্থটি মৌলিক ও নির্ভুল ইতিহাস গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

এ গ্রন্থটি হিজরি ১৩৪৮ সনে কুর্দিস্তান আল আলামিয়া প্রেসে প্রথম মুদ্রিত হয়। দ্বিতীয়বার মুদ্রিত হয়েছিল কায়রোর আসসা’আদাহ্ প্রেসে ১৩৫১ হিজরিতে। পরে গ্রন্থটি পরিমার্জিতরূপে রিয়াদে ছাপা হয় হিজরি ১৩৮৮ সনে। এছাড়াও গ্রন্থটি বহুবার বহু ভাষায় মুদ্রিত হয়েছে। গ্রন্থটির গুরুত্ব বিবেচনায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলা ভাষায় এর অনুবাদ প্রকাশ করেছে। ১৪ খণ্ডের ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থটির বাংলা নামকরণ করা হয়েছে ‘ইসলামের ইতিহাস : আদি-অন্ত’। [২][৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "বইঃ আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (নতুন সংস্করণ) – QuranerAlo.com – কুরআনের আলো ইসলামিক ওয়েবসাইট"www.quraneralo.com। ২০১৬-০৮-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-১০ 
  2. "আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (ইসলামের ইতিহাস : আদি-অন্ত)"ইসলামিক অনলাইন মিডিয়া (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০০-০১-০১। ২০১৬-১২-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-১০ 
  3. "আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (ইসলামের ইতিহাস : আদি-অন্ত) তৃতীয় খন্ড"Amar Bangla Post (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-১০-২৯। ২০১৬-১১-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-১০ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]