আলাপ:ফারাক্কা লং মার্চ (১৯৭৬)

পাতাটির বিষয়বস্তু অন্যান্য ভাষায় নেই।
আলোচনা যোগ করুন
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সাম্প্রতিক মন্তব্য: Faizul Latif Chowdhury কর্তৃক ১০ বছর পূর্বে "আরো তথ্যসূত্র" অনুচ্ছেদে

সম্প্রসারণের জন্য তথ্য[সম্পাদনা]

সম্প্রসারণের জন্য তথ্য সংরক্ষণ করা হলো৤ নিবন্ধ সম্প্রসারণের পর মুছে ফেলা যায়৤ -- Faizul Latif Chowdhury (আলাপ) ১৩:২২, ৬ মে ২০১৪ (ইউটিসি)উত্তর দিন


সূত্র: দৈনিক সংগ্রাম, ১৬ মে ২০০৮ ভাসানীর নেতৃত্বে ফারাক্কা অভিমুখে ঐতিহাসিক লং মার্চ লিখেছেন : বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম.net.bd Monday, 09 June 2008 সূত্র: [১]

১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট ও ১৫ই আগস্ট বৃটিশ ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান, ভারত রাষ্ট্রের জন্ম হয়। প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের ওপরে ভিত্তি করে অনাদিকাল থেকে মানব সভ্যতার গোড়া পত্তন হয়। সভ্যতা বিকাশে পানির উৎস একটি প্রধান উপাদান। ভারতবর্ষের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর, উত্তরে হিমালয় এই দুইয়ের মহিমায় জলবায়ু প্রবাহের মধ্যেই এই অঞ্চলের কৃষিখাদ্য, সভ্যতা যোগাযোগ ব্যবস্থার এক প্রাকৃতিক পথ ধরে মানব সভ্যতার উত্থান ঘটেছে। কৃষি, মৎস্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা আমাদের এই অঞ্চলের জীবন প্রবাহে পানি ও নদী অন্যতম প্রধান উপকরণ, এই অঞ্চলের দীর্ঘতম নদীপ্রবাহ যার উৎপত্তি হিমালয়ের পাদদেশে মানবসরবহ চীন, নেপাল, ভারত, বাংলাদেশের বুক চিরে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এই অঞ্চলের মিঠা পানির প্রধান উৎস হচ্ছে গঙ্গা-পদ্মা প্রবাহ। এই গঙ্গা পদ্মার পানি প্রবাহের ওপরে নির্ভর করেই নেপাল ভারত ও বাংলাদেশের অর্থনীতি, কৃষিনীতি, মৎস্য উৎপাদন এবং নৌ যোগাযোগ সর্বোপরি প্রাকৃতিক ভারসাম্য গড়ে উঠেছে। ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ই জুলাই আগস্ট ভারত বিভক্তির মধ্যদিয়ে নদীপ্রবাহও বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১৯৬২ সালে চীন ভারত যুদ্ধের পটভূমিতে অরুনাচল অঞ্চল ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে কৌশলগতভাবে আসাম ত্রিপুরার নিরাপত্তা হুমকির মুখে পতিত হয় এবং ভারতের ভৌগোলিক নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টারা উপলব্ধি করেন গঙ্গার উপর দিয়ে দ্রুতযুদ্ধ সরঞ্জাম পূর্ব অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই পরিকল্পনার আলোকেই ১৯৬৪ সালে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ফারাক্কা ব্যারেজ যা মূলত পানি নিয়ন্ত্রণ ও যুদ্ধকালীন সময়ে সংযোগ ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তোলা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। পাকিস্তান ভারতের এই পানি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিবাদ জানান। ১৯৭২ সালে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এরই মধ্যে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্যদিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়।


ফারাক্কা বাঁধ চালু মুজিব-ইন্দিরা গান্ধীর চুক্তি[সম্পাদনা]

আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে একটি নদী একাধিক দেশের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হলে ভাটির দেশের অনুমতি না নিয়ে উজানের দেশ নদীর পানিপ্রবাহে কোনক্রমেই বাধার সৃষ্টি করতে পারে না। এই আইন অমান্যকারী দেশ ভাটির দেশকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকিবে। ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা গান্ধী চুক্তির মাধ্যমে ফারাক্কার বাঁধ চালু হয়। এই সময় বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রী ছিলেন খন্দকার মোস্তাক আহম্মেদ আর ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রী ছিলেন বাবু জগজীবন রাম উভয়েই উভয় দেশের মন্ত্রী পরিষদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। সেই সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন বিএম আব্বাছ। তিনি বঙ্গবু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত পরিচিত ও আস্থাভাজন ব্যক্তি এবং বাংলাদেশের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা। ১৯৭৪ সালে ফারাক্কা বাঁধ চালুর প্রসঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হতে থাকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সেই সময়ে অত্যন্ত মধুর ছিল বলে সকল রাজনৈতিক মহল বিশ্বাস করতো। কিন্তু পানি প্রদানের প্রশ্নে ভারতীয় পক্ষের আচরণ অত্যন্ত দুঃখজনক, তারা খরা মওসুমে বাংলাদশকে মাত্র ৩৪ হাজার কিউসেক পানি প্রদানের প্রস্তাব করে এবং কোন প্রকার গ্রান্টি ক্লোজ রাখতে রাজি হয় না। খন্দকার মোস্তাক আহমেদ এই অসম চুক্তিতে রাজি হতে বারবার অপারগতা প্রকাশ করতে থাকেন। তিনি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে বলেন ১৯৭১ সালে দুই দেশের জনগণ এক সঙ্গে রক্ত দিয়ে শান্তিতে বসবাসের জন্য বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছেন। আজ পানি প্রত্যাহার করে ভারত সরকার বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করবে তিনি তা বিশ্বাস করেন না। অবশেষে খন্দকার মোস্তাক আহম্মেদকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রদান করা হয় এবং বঙ্গবু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট বোনের স্বামী আব্দুর রব সেরনিয়াবাতকে বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এর মাননীয় মন্ত্রী করা হয়- মুজিব-ইন্দিরা অসম পানি চুক্তির ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয় এবং বাংলাদেশ-ভারতের পানি লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন স্বীকৃত সকল পথ পরিহার করে ভারতের এক তরফা পানি প্রত্যাহারের নীতিকে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির মধ্যদিয়ে আইনগত বৈধতা প্রদান করে।

১৯৭৫ সালের ৭ই নবেম্বর পট পরিবর্তন ও বৈরি পানিনীতি[সম্পাদনা]

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নিহত হন বঙ্গবুর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী খন্দকার মোস্তাক, আবু সাইদ চৌধুরী, শ্রী মনরঞ্জন সেনের নেতৃত্বে গঠিত হয় মুজিব উত্তর বেসামরিক সামরিক শাসন (Civil Marshal law) ১৯৭৫ সালের ৩রা নবেম্বর খালেদ মোশাররফ খন্দকার মোস্তাক আহম্মেদ সরকারকে অপসারিত করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ৭ই নবেম্বর কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে বন্দী রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মুক্ত হন এবং রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ক্ষমতার পট পরিবর্তন ঘটে। দৃশ্য পটে বিচারপতি সায়েম থাকলেও প্রকৃত ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। মুজিবভক্ত বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে সীমান্তে শুরু হয় বিভিন্ন ধরনের গোলযোগ। অন্যদিকে ভারতীয় কতৃêপক্ষ চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশের প্রাপ্য পানিটুকুও দেওয়া থেকে বিরত থাকতে থাকে।

এই জটিল পরিস্থিতির মধ্যে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭৬ সালের এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারতের অন্যায় পানি প্রত্যাহারের প্রতিবাদে প্রতিবাদ লংমার্চ পরিচালনার ঘোষণা প্রদান করেন। দিন নির্ধারিত হয় ১৬ই মে, ১৫ই মে সকাল ১০টায় রাজশাহী মাদরাসা ময়দানে জন সমাবেশ এবং ফারাক্কা অভিমুখে পায়ে হেঁটে গণমিছিল কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়। এই গণমিছিল পরিচালনার জন্য মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে আহ্বায়ক করে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। মশিউর রহমান, হাজী মোহাম্মদ দানেশ, ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিম, মাওলানা আব্দুল মতিন, আনোয়ার জাহিদ, কাজী জাফর আহম্মেদ, সিরাজুল হোসেন খান, গাজী শহিদ উল্যা, এনায়েত উল্যা খানসহ আমিও এই কেন্দ্রীয় লং মার্চ পরিচালনা কমিটির সদস্য মনোনীত হই।

ফারাক্কা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ[সম্পাদনা]

গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে আহ্বায়ক, মোহাম্মদ ইবনে ইউসুফ, আব্দুল রাজ্জাক সরকার, শামছুল হক, ডাঃ গোলাম হোসেন, সালে ইমাম চৌধুরী, মজনু খান, জামাল শরিফ হিরুর নেতৃত্বে গঠন করা হয় ফারাক্কা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ লংমার্চ পরিচালনা কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দেশব্যাপী কৃষক শ্রমিক জেলে তাঁতী ছাত্র জনতার মধ্যে ব্যাপক জাগরণের সৃষ্টি হয়। সর্বস্তরের রাজনৈতিক কর্মীরা সংগঠিত হতে থাকে। রাজশাহী থেকে ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চে অংশ গ্রহণের জন্য সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি শুরু হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তার প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হতে থাকে। অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপন করা হয়। ৫৬ মতিঝিলে আবু নাসের খান ভাসানীর অফিসে এইভাবে চলতে থাকে ফারাক্কা লংমার্চের প্রস্তুতি।

ভারতীয় প্রধান মন্ত্রীকে মাওলানা ভাষাণীর চিঠি[সম্পাদনা]

মজলুম মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কেন এই লংমার্চের কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। কি তার উদ্দেশ্য তা অবহিত করে ভারতের প্রধান মন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে এক ঐতিহাসিক পত্র প্রদান করেন এনায়েত উল্যা খান, সিরাজুল হোসেন খান ও আনোয়ার জাহিদ এই পত্র প্রণয়নে সহযোগিতা করেন। মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে লেখেন তার পিতা পন্ডিত জওয়াদহরলাল নেহরুর সঙ্গে নিজের বৃটিশ ভারতের সংগ্রামী জীবনের ঘনিষ্ঠতার কথা একই সঙ্গে ভারত বর্ষের বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের কথা। এক সপ্তাহের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী শ্রদ্ধেয় জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর পত্রের উত্তর দিলেন কিন্তু কৌশলে পাশ কাটিয়ে গেলেন পানি সমস্যার সমাধানের কথা। এই প্রসঙ্গে মজলুম জননেতা আমাদের বলেন, ইন্দিরা গান্ধী কিংবা জ্যোতি বসুর বুকের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য কি পরিমাণ ভালোবাসা আছে তাতে কিছুই আসে যায় না, কারণ রাষ্ট্রের কোন বু নাই, রাষ্ট্রের আছে শুধুমাত্র স্বার্থ Country has no friend. It has only interest তিনি আরও বলেন, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যেমন সত্য তেমনি, ভারত আঞ্চলিক আধিপত্যবাদ শক্তিতে পরিণত হয়েছে সেটাও ঐতিহাসিক সত্য। তৃতীয় বিশ্বের মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য সাম্রাজ্যবাদ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা ছাড়া জনগণের কোন বিকল্প নেই। পরিশেষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে হাজার হাজার প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী রওয়ানা হলো ১৩ ও ১৪ই মে’র মধ্যে রাজশাহী অভিমুখে।

ফারাক্কা লংমার্চ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ[সম্পাদনা]

এর নেতাদের সঙ্গে আমার ভালো যোগাযোগ ছিলো এবং সমন্বয় সাধন করে আমরা কাজ করে যাচ্ছিলাম। রাজশাহীর ব্যবস্থাপনার সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন জননেতা এমরান আলী সরকার, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আব্দুর রাজ্জাক সরকার, ১০ই মে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। লংমার্চে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা এবং রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ব্যাপক গণজাগরণ সৃষ্টিই- আমাদের লক্ষ্য। আমি দুইটি বাস বোঝাই করে রাজনৈতিক সহকর্মীদের নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই ১৩ই মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক সরকার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গেইটেই অভ্যর্থনা জানান। রাত্রিতে আমরা আর শহরের দিকে গেলাম না সকলে মিলেমিশে যে যেভাবে পারি থাকলাম। এক সঙ্গে আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল হল ক্যান্টিনেই। পরের দিন সকাল ১০টার দিকে আমি গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, রাজ্জাক সরকার, সালেহ ইমাম চৌধুরী, গোলাম এমরান আলী সরকারের সঙ্গে দেখা করি তিনি তখন রাজশাহী পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান। আমাদের মতো আরও অনেকে সারাদেশ থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। খুলনা থেকে গাজী শহীদ উল্যা বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে, যশোর থেকে তরিকুল ইসলাম, খালেদুর রহমান টিটোর বিশাল কর্মীবাহিনী, বরিশাল থেকে বাবু সুনীল গুপ্তের নেতৃত্বে বিশাল কর্মীবাহিনী এইভাবে ১৪ই মে স্যা ৮টার মধ্যে সারাদেশের প্রগতিশীল নেতা-কর্মীরা রাজশাহীতে উপস্থিত হতে থাকেন। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী রাত ৮.৩০ মিনিটে রাজশাহী এসে উপস্থিত ছিলেন। পরদিন ১৫ই মে সকাল ১০ ঘটিকায় ঐতিহাসিক মাদরাসা-ময়দানে গণজমায়েত তার পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হয়ে সোনামসজিদ অভিমুখে লংমার্চ সকাল ১০ টার মধ্যেই মাদরাসা ময়দান কানায় কানায় ভরে গেল, ব্যারিস্টার সলিমুল্যা হক খান মিলকী, আবু নাসের খান ভাসানী ও গাজী শহিদুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে ১০টা ১৫ মিনিটের মধ্যে এলেন মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী।

মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ঐতিহাসিক দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ[সম্পাদনা]

১৯৭৬ সালের ১৭ই নবেম্বর শতাব্দীর গণমানুষের আন্দোলন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ নেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ইন্তেকাল করেন। ১৯৭৬ সালের ১৫ই মে রাজশাহী মাদরাসা ময়দানেই সম্ভবত তার শেষ ঐতিহাসিক ভাষণ। এরপর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ঘরোয়া বৈঠক ছাড়া কোন বড় জনসভায় বক্তব্য রাখেন নাই। প্রতিজন মহান নেতার একটি দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য থাকে। ভারতের জাতির জনক করম চান্দ গান্ধী গুলীবিদ্ধ হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগে বলেছিলেন, হে রাম তুমি ভারতের হিন্দু, মুসলমান সকলকে রক্ষা কর। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণকে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ বলে গণ্য করা হয়। ঠিক তেমনি ১৯৭৬ সালের ১৫ই মে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর জাতির উদ্দেশ্যে তার দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ হিসেবে আমি গণ্য করেছি। ১০.৩০ মিনিটে বক্তব্য প্রদানের জন্য মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী উঠে দাঁড়ালেন। লাখো মানুষের কোলাহলমুখর মাদরাসা ময়দান মুহূর্তের মধ্যেই পিন-পতন নিস্তব্ধতা নেমে এলো। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের কথা দিয়ে শুরুতে স্মৃতিচারণ করলেন খেলাফত আন্দোলনে মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা শওকত আলীর সম্পর্কের কথা স্মৃতিচারণ করলেন করম চান্দগান্ধী, পণ্ডিত জওয়াহের লাল নেহরু, কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর কথা। শ্রদ্ধা জানালেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি।

অশীতিপর বৃদ্ধ জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর যখন বক্তৃতা করছিলেন মনে হচ্ছিল রাজশাহীর মাটি থর থর করে কাঁপছে মাঠের আশেপাশে তিল ধারণের ঠাঁই নাই। জনতার মধ্য থেকে হাজার কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছিল লও লও লও সালাম মওলানা ভাসানী। ধ্বনিত হচ্ছিল সিকিম নয়, ভুটান নয়, এদেশ মোদের বাংলাদেশ। মাওলানা ভাসানী অনেক কথাই বললেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- আধিপত্যবাদীরা বাংলাদেশের জনগণের সম্পদ পানি, গ্যাস, লুণ্ঠন করে নিয়ে যেতে চায়, তারা বাংলাদেশে নতুন করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর গোড়া পত্তন করতে চায়। তারা সিকিম ভুটানের মতন, বাংলাদেশকে মর্যাদাহীন সার্বভৌমত্বহীন রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, তারা বাংলার মানুষকে প্রতারিত করার জন্য নব্য মীর জাফর আলী খান, সেনদুপ দরজী সৃষ্টি করতে চায়।

তিনি দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আধিপত্যবাদী শক্তির এই সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে হলে জনতার গণতান্ত্রিক ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তিনি তরুণ ছাত্র-জনতাকে স্বার্ভভৌমত্ব নিরাপদ রাখার জন্য মীরজাফর আলী খান, সেনদুপ, দর্জী, ঘষেটি বেগমদের সম্পর্কে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। ১১.১০ মিনিটে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে শুরু হয় ঐতিহাসিক ফারাক্কা মিছিল। মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী একটি খোলা জীপে চড়ে জনতার গণমিছিলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৩২ মাইল পথ লাখ লাখ মানুষ পায়ে হেঁটে চলছে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ফারাক্কা অভিমুখে। রাস্তার দুই ধারে বৃদ্ধ, নারী শিশুসহ সর্বস্তরের মানুষ এসেছে পানি, মুড়ি, চিঁড়া, কাঁচা আম দিয়ে মিছিলকারীদের সহানুভূতি জানাতে। সে এক অপরূপ দৃশ্য। দূর থেকে এই আত্মিক জাগরণ বুঝা যায় না। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী স্যা ৬টার মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসে উপস্থিত হলেন। স্যা ৭টায় ফারাক্কা লংমার্চে ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে বের হলো ঐতিহাসিক মশাল মিছিল। সকল ছাত্র সংগঠনের নেতারাই সেই মশাল মিছিলে অংশ নিলেন। মশাল মিছিলের শ্লোগান ছিলো- ফারাক্কা তোড় দেংগা, নেতিজা জোবি হোগা। পরদিন সকাল ৮টার দিকে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ফারাক্কা অভিমুখে মিছিল শুরু হলো, নদীর উপরে নৌকা দিয়ে পোলের মতন করে দেয়া হয়েছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ফারাক্কা পাদদেশ-সোনামসজিদ পর্যন্ত ১৫ মাইল পথে শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে আসরের নামাজ আদায় করলেন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, ঐতিহাসিক সোনা মসজিদে নামাজের পরে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করলেন।

আরো তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

এখানে আরো একটি ব্যবহার্য তথ্যসূত্র ফারাক্কার ফাঁদে আজও কাঁদছে বাংলাদেশ৤ অনুগ্রহপূর্বক সম্প্রসারণে এগিয়ে আসুন৤ -- Faizul Latif Chowdhury (আলাপ) ১৩:২৭, ৬ মে ২০১৪ (ইউটিসি)উত্তর দিন