আবুল হাশেম (বীর প্রতীক)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আবুল হাশেম
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

আবুল হাশেম (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১][২]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

আবুল হাশেমের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামে। ১৯৭৭ সালে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তার বাবার নাম সুরুজ মিয়া এবং মায়ের নাম রূপভাননেছা। তার স্ত্রীর নাম লাইলি বেগম। তাদের এক ছেলে, তিন মেয়ে।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

আবুল হাশেম চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের (বর্তমানে পাকিস্তান) শিয়ালকোটে। ফেব্রুয়ারি মাসে ছুটিতে বাড়িতে এসে তিনি আর চাকরিতে যোগ দেননি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ চলাকালে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেন। এ পর্যায়ে তার উল্লেখযোগ্য অপারেশন কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত জাঙ্গালিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস। পরে যুদ্ধ করেন নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীনে।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার আজমপর রেলস্টেশনে মুখোমুখি মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। মধ্যরাতে শুরু হলো প্রচণ্ড রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা এক কোম্পানি। তারা কয়েকটি দলে (প্লাটুন) বিভক্ত। ৯ নম্বর প্লাটুনে আছেন আবুল হাশেম। তার দলনেতা সুবেদার আশরাফ আলী খান (বীর বিক্রম)। পাকিস্তানি সেনাদের প্রবল প্রতিরোধ উপেক্ষা করে তারা ভোরবেলায় দখল করলেন বিরাট এক এলাকা। পরদিন রাতে সেখানে শুরু হলো আবার প্রচণ্ড যুদ্ধ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অতর্কিতে পাল্টা আক্রমণ করেছে। নভেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশের সর্বত্র শুরু হয় সর্বাত্মক যুদ্ধ। তখন মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়। সীমান্ত এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল সমবেত হয় আখাউড়ার চারদিকে। ভৌগোলিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। সেখানে আছে রেল জংশন। আখাউড়ার পার্শ্ববর্তী আজমপুরে অবস্থান নেয় নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের চার্লি (সি) কোম্পানি। এর ৯ নম্বর প্লাটুনে ছিলেন আবুল হাশেম। আজমপুর রেলস্টেশনে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত এক প্রতিরক্ষা অবস্থান। মুক্তিযোদ্ধারা ৩০ নভেম্বর মধ্যরাতে সেখানে আক্রমণ চালান। পাকিস্তানি সেনারা প্রবল প্রতিরোধ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা সব বাধা বীরত্বের সঙ্গে উপেক্ষা করে আজমপুর রেলস্টেশন ও আশপাশ এলাকা ভোর হওয়ার আগেই দখল করেন। পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পিছু হটে যায়। ১ ডিসেম্বর শেষ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেখানে পাল্টা আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণ এতটা অপ্রত্যাশিত ছিল যে মুক্তিযোদ্ধারা বেশ নাজুক অবস্থায় পড়েন। আবুল হাশেমসহ তার সহযোদ্ধারা বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করেও দখল করা এলাকা ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। এ সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে তার প্লাটুন কমান্ডার শহীদ হলে তারা প্রায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হন। তখন আবুল হাশেম সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে প্লাটুনের হাল ধরেন। তার নেতৃত্বে সহযোদ্ধারা পুনরায় সংঘবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করতে থাকেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ এত প্রচণ্ড ছিল যে তারা কৌশলগত কারণে পিছু হটে যান। পরদিন তারা আরও কয়েকটি দল মিলে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে চূড়ান্তভাবে আজমপুর রেলস্টেশন এলাকা পুনর্দখল করেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১৭-০৪-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449