আতাতুর্ক ও স্বাধীনতা যুদ্ধ জাদুঘর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আতাতুর্ক ও স্বাধীনতা যুদ্ধ জাদুঘর
Anıtkabir Atatürk ve Kurtuluş Savaşı Müzesi
জাদুঘরের প্রথম অংশের প্রবেশদ্বার অংশ জাতীয় চুক্তি মিনার
মানচিত্র
স্থাপিত২১ জুন ১৯৬০ (1960-06-21)
অবস্থানচাঙ্কায়া, আঙ্কারা, তুরস্ক
ধরনঐতিহাসিক জাদুঘর
সংগ্রহ
প্রতিষ্ঠাতাহুসেইন কুভরুকোওলু
তত্ত্বাবধায়কমেহমেত ওজেল
মালিকতুর্কি সশস্ত্র বাহিনী
নিকটতম গণপরিবহন সুবিধা
আঙ্কারায় আনাদোলু/আনাতকাবির আঙ্কারায় স্টেশন
নিকটবর্তী পার্কিংহ্যাঁ
ওয়েবসাইটwww.anitkabir.tsk.tr/03_muzeler/muzeler.html

আতাতুর্ক ও স্বাধীনতার যুদ্ধ জাদুঘর হলো আতাতুর্কের সমাধিস্থল আনাতকাবিরে অবস্থিত একটি জাদুঘর, এটি দর্শকদের জন্য ২১ জুন ১৯৬০ সালে উন্মুক্ত করা হয়, এটি সম্মানকক্ষের নীচে কলাম সহ ৩ হাজার বর্গ মিটার এলাকায় অবস্থিত।

জাতীয় চুক্তি মিনার ও বিপ্লব মিনারের মধ্যে অবস্থিত জাদুঘরের এই অংশটি ১৯৬০ সাল থেকে "আতাতুর্ক জাদুঘর" হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। ২০০১ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া ও ৯ মাস ধরে চলা একটি সংস্কার কাজের শেষে এই বিভাগটিকে নতুন বিভাগগুলোর সাথে একত্রিত করা হয় এবং ২৬ আগস্ট ২০০২-এ মহা আক্রমণের ৮০ তম বার্ষিকীতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আহমেত নেজদেত সেজার ও প্রধানমন্ত্রী বুলেন্ত এজেভিত দ্বারা পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। জাদুঘরটি সে সময়ের জেনারেল স্টাফের প্রধান হুসেইন কুভরুকোলুর আদেশে নির্মিত হয়েছিল ও জেনারেল স্টাফের শিল্প পরামর্শক মেহমেত ওজেলের সমন্বয়ে প্রস্তুত করা হয়েছিলো।

বিভাগসমূহ[সম্পাদনা]

১৯৩৬-১৯৩৮ সালের মধ্যে ব্যবহৃত ক্যাডিলাক

আতাতুর্ক ও স্বাধীনতার যুদ্ধ জাদুঘর চারটি বিভাগ নিয়ে গঠিত: প্রথম বিভাগে, আতাতুর্কের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র; দ্বিতীয় অংশে চানাক্কালে ভূমি ও সাগর লড়াইয়ের পরিদৃশ্য; তৃতীয় অংশে, সাকারিয়া লড়াই এবং মহা আক্রমণের পরিদৃশ্য; চতুর্থ বিভাগে রিলিফে সমৃদ্ধ একটি খিলানের দরদালান রয়েছে, এখানে আতাতুর্কের সংস্কারের আলোকচিত্র ও ব্যাখ্যা সহ উপস্থাপন করা হয়েছে।

প্রথম অংশের কিছু আকর্ষণীয় অংশ হল আতাতুর্কের মোমের মূর্তি ও তার কুকুর ফকসের সংরক্ষিত দেহ।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের পরিদৃশ্যগুলো সেই সময়ের চিত্রগুলো ব্যবহার করে দারদানেলেস লড়াই ও তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত ঘটনাগুলোকে পুনরায় তৈরি করে। পরিদৃশ্যগুলোর সামনে মডেলগুলোর সাথে একটি যুদ্ধক্ষেত্র সাজানো ও একটি ত্রিমাত্রিক প্রভাব দেখানো হয়। চানাক্কালে লড়াইয়ের পরিদৃশ্যের সামনে এই লড়াইয়ে ব্যবহৃত বুলেট, বন্দুক, কামান, পোড়া চাকা ও ষাঁড়ের গাড়ি প্রদর্শন করা হয়েছে। তুরগুত ওজাকমান লিখিত চিত্রনাট্যে প্রস্তুত ৪০ মিটার দীর্ঘ পরিদৃশ্য দেখার সময়, দর্শকরা মুয়াম্মের সান দ্বারা রচিত সঙ্গীত ও যুদ্ধের প্রভাব যেমন কামানের শব্দ, জাহাজের হুইসেল, তরবারি শব্দ, ঘোড়ার দৌড়ানো এবং "আল্লাহ আল্লাহ" রব শুনতে পায়।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের মাঝখানে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সেনাপতিদের প্রতিকৃতি ও স্বাধীনতা যুদ্ধকে চিত্রিত করে বড় বড় চিত্রকর্ম প্রদর্শন করা হয়েছে। এই কাজগুলো রুশ শিল্পীদের দ্বারা মস্কোর একটি স্টুডিওতে করা হয়।

চতুর্থ বিভাগে পরিদৃশ্য বিভাগের চারপাশের দরদালানে ১৮ ভল্টে বিষয়ভিত্তিক প্রদর্শনী এলাকা রয়েছে। ভল্ট জাদুঘরে, মোস্তফা কামালের সামসুনে চলে যাওয়ার পর থেকে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো প্রায় ৩০০০ আলোকচিত্র সহ বলা হয়েছে। প্রতিটি ভল্ট একটি করে বিপ্লব বর্ণনা করে। খিলান জাদুঘর অবস্থিত সেই চিত্রশালা জুড়ে কারা ফাতমা থেকে শাহিন বে পর্যন্ত ২০ জন সামরিক ও বেসামরিক বীরদের আবক্ষ মূর্তি ও জীবনী প্রদর্শিত হয়। জাদুঘরের চতুর্থ বিভাগটি যে অংশে অবস্থিত সেটি হল কলামযুক্ত হলের মধ্যবর্তী অংশ যা সম্মানকক্ষকে বজায় রাখে, এখানে আতাতুর্ক সমাধি ও আনাতকাবিরের ভিত্তি প্রাচীর অবস্থিত। তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতিদের দাফনের জন্য খিলানযুক্ত চেম্বারগুলো প্রস্তুত করা হলেও ব্যবহার করা হয়নি ও জাদুঘরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

জাদুঘরের থেকে বেরিয়ে আসার সময় আতাতুর্কের জন্মের ঘরের মডেল অবস্থিত। সেখানে প্রথম সংসদ ভবন, তুর্কি সামরিক অ্যাকাডেমি, চানাক্কালের লড়াইয়ের একটি অংশকে চিত্রিত করা তুরান এরোলের বিশাল চিত্রকর্ম ও আতাতুর্কের বিভিন্ন ছবি রয়েছে।

জাদুঘরের পরিদৃশ্য[সম্পাদনা]

বিশ্বের অনন্য তিনটি পরিদৃশ্য এই জাদুঘরে প্রদর্শিত হয়: ৬x৪০ মিটারের চানাক্কালে ভূমি ও সমুদ্র লড়াই পরিদৃশ্য, ৭x৩০ মিটারের সাকারিয়ার চূড়া লড়াইয়ের পরিদৃশ্য এবং ৭x৩০ মিটারের মহা আক্রমণ পরিদৃশ্য। এই পরিদৃশ্য ও জাদুঘরের বিশাল চিত্রকলাগুলো আইদিন এরকমেনের নেতৃত্বে ১২ জন রুশ চিত্রশিল্পী দ্বারা তৈরি করা হয়েছে।

পরিদৃশ্যগুলো তৈরি করার জন্য তুরগুত ওজাকমানের লেখা দৃশ্যের উপর ভিত্তি করে স্বাধীনতা যুদ্ধের যে অঞ্চলগুলোতে সংঘটিত হয়েছিলো। সেখানে অতিরিক্ত ব্যবহার করে ১৪ হাজার বর্গাকার আলোকচিত্র তোলা হয়েছিল এবং এই আলোকচিত্রগুলো ব্যবহার করে স্কেচ তৈরি করা হয়। আইদিন এরকমেন রাশিয়ায় তৈরি রঙিন স্কেচ ব্যবহার করে পরিদৃশ্যগুলো আঁকেন। রাশিয়ানেদারল্যান্ডসের বড় চিত্র স্টুডিওগুলোয় বিশাল পরিদৃশ্যগুলো সম্পূর্ণরূপে তৈরি করা হয়েছিল ও সেগুলোকে মোড়ানোর জন্য একটি যন্ত্র তৈরি করা হয়; এইভাবে, পরিদৃশ্যগুলোকে সিলিন্ডারে আকার দিয়ে বিমানে করে আঙ্কারায় নিয়ে যাওয়া হয়, তারপর বিমানবন্দর থেকে ট্রাকে করে আনাতকাবিরে আনা হয়। সিলিন্ডারগুলো একটি বিশেষ মেশিন দিয়ে খোলা হয় ও ভিত্তির সাথে সংযুক্ত করা হয় এবং কাজের ক্ষতিগ্রস্থ অংশগুলো ২০ দিনের জন্য কাজ করে পুনর্নবীকরণ করা হয়েছিল।

আতাতুর্ক ব্যক্তিগত পাঠাগার[সম্পাদনা]

আতাতুর্ক ব্যক্তিগত পাঠাগার জাদুঘরের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। এটি ২৬ জুন ২০০৫-এ একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উন্মুক্ত করা হয়। পাঠাগারটিতে আতাতুর্কের ৩ হাজার ১২৩টি বই প্রদর্শন করা হয়েছে, এখানে দর্শকদের জন্য কম্পিউটারের মাধ্যমে বইগুলোতে প্রবেশ করতে সক্ষম করার জন্য নকশা করা হয়েছে। দর্শকরা টাচস্ক্রিন তথ্য ডিভাইস থেকে বই সম্পর্কে তথ্য আহরণ করতে পারেন। পাঠাগারটি দর্শকদের সেই বইগুলো সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার সুযোগ দেয় যা আতাতুর্কের দার্শনিক জীবন গঠন করেছিল এবং তিনি যে বইগুলো পড়েছেন ও যেসব বাক্যগুলোতে গুরুত্বসহকারে দাগ দিয়েছেন সেগুলো নিরীক্ষা করার সুযোগ দেয়৷

সূত্র[সম্পাদনা]

  • Yozgatlı, Hüseyin; Ulualp, Ayşegül, সম্পাদকগণ (১৯৯৪)। Anıtkabir Anıtkabir Müzesi (তুর্কি ভাষায়)। Ankara: Anıtkabir Komutanlığı। 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]