অ্যাপালেশিয়ান মালভূমি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপালেশিয়ান অঞ্চল - ইউএসজিএস

অ্যাপালেশিয়ান মালভূমি হল অ্যাপালেশিয়ান পর্বতমালার পশ্চিম দিকে অবস্থিত একটি রুক্ষ বিচ্ছিন্ন মালভূমির শ্রেণী। অ্যাপালেশিয়ান পর্বতমালা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূল জুড়ে বিস্তৃত একটি পর্বতশ্রেণী। অ্যাপালেশিয়ান মালভূমি হ'ল অ্যাপালেশিয়ান পর্বতমালার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, নিউ ইয়র্ক থেকে অ্যালাবামা পর্যন্ত প্রসারিত। মালভূমিটি দ্বিতীয় স্তরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিজিওগ্রাফিক অঞ্চল। এটি নিউ ইয়র্ক রাজ্যের পেনসিলভেনিয়া, ওহাইও, মেরিল্যান্ড, পশ্চিম ভার্জিনিয়া, ভার্জিনিয়া, কেন্টাকি, টেনেসী, অ্যালাবামা, এবং জর্জিয়ার কিছু অংশ নিয়ে বিস্তৃত।

ভূগোল এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

মালভূমি গঠনের সূচনা হয়েছিল প্যালিওজোয়িক যুগের সময় থেকে। এই সময়কালে আঞ্চলিক উত্থানের ফলে জমির ভূসংস্থানের পরিবর্তন না করেই অঞ্চলটি পুরোপুরি উত্থিত হয়েছিল। মালভূমির পূর্ব দিকটি একটি পর্বতশ্রেণীর মত লাগে। পূর্বদিকে অ্যালিগেনি ফ্রন্ট নামে পরিচিত একটি খুব খাড়া ঢালের কারণে মালভূমিটি এমন চেহারা পেয়েছে। পূর্ব প্রান্তটি অ্যাপালেশিয়ান মালভূমির সর্বোচ্চ অংশ। পেনসিলভেনিয়া তে, উচ্চতা ১,৭৫০ থেকে ৩,০০০ ফুট অবধি এবং পশ্চিম ভার্জিনিয়ার দিকে যেতে যেতে উচ্চতা বাড়তে থাকে, সেখানে উচ্চতা প্রায় ৪,৮০০ ফুট। পশ্চিম ভার্জিনিয়া থেকে টেনেসীর দিকে যেতে, উচ্চতা কমে ৩,০০০ ফুট হয়ে গেছে এবং কমতে কমতে অ্যালাবামাতে এসে উচ্চতা হয়েছে ১,০০০ ফুট। মালভূমির পশ্চিম দিকে, ওহাইও তে উচ্চতা ৯০০ ফুট; কেন্টাকির দিকে যেতে উচ্চতা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২,০০০ ফুট। কেন্টাকি থেকে উত্তর-পশ্চিমে অ্যালাবামা যেতে উচ্চতা কমে ৫০০ ফুট হয়ে গেছে। মালভূমিটির উত্তর-পশ্চিম দিকে সামান্য তির্যক, যার ফলে পূর্ব দিকে এটি বেশি উঁচু।[১]

মালভূমির একটি বড় অংশ হল কয়লা খনি, এটি গঠিত হয়েছিল প্রায় ৩২০ মিলিয়ন বছর আগে পেনসিলভ্যানীয় যুগে[২] প্লাইস্টোসিন বরফ যুগে এই সময় মালভূমিটি হিমবাহে পরিণত হয়েছিল। ফলস্বরূপ, মালভূমিটির এই অংশের ভূসংস্থান অন্যান্য প্রাকৃতিক প্রদেশের তুলনায় তুলনামূলকভাবে সমতল। মালভূমির এই অংশটিতে হিমায়িত অতীতের নানা প্রমাণ চিহ্নিত হয়ে আছে, যার মধ্যে আছে বগ (মৃত উদ্ভিদের অংশ সমন্বিত জলাভূমি), হ্রদ, এবং বালু এবং কাঁকরের ছোট ছোট পাহাড়। বাকি মালভূমির ভূসংস্থান মূলত জলপ্রবাহ ক্ষয়ীভবন থেকে তৈরি হয়েছিল। তাই এই অঞ্চলের ভূদৃশ্য অন্যান্য অনেক মালভূমির থেকে আলাদা এবং রুক্ষ। অন্য মালভূমিতে সাধারণত খাড়া ঢাল দিয়ে ঘেরা অনেক ঝরনা বাহিত উপত্যকা দেখতে পাওয়া যায়। [৩]

কেন্টাকির এই অঞ্চলটি পূর্ব কেন্টাকি কয়লা খনি নামে পরিচিত। এখানে ৩৫টি কাউন্টি (প্রদেশ) আছে এবং কেন্টাকির প্রায় ৩০% ভূমি এখানে রয়েছে। এখানকার প্রধান অংশগুলির মধ্যে আছে অ্যালেগ্রেনি মালভূমি, কম্বারল্যান্ড মালভূমি এবং কম্বারল্যান্ড পর্বতমালা, যার মধ্যে কম্বারল্যান্ড পর্বতমালায় অবস্থিত সর্বোচ্চ চূড়া রয়েছে।[৪]

প্রাকৃতিক অঞ্চল[সম্পাদনা]

একটি প্রাকৃতিক অঞ্চল হ'ল ভূমির বিরাট অংশ যা বিভিন্ন কারণ দ্বারা বিভক্ত। প্রতিটি একই রকম অঞ্চলে,- একই রকম ভূতত্ত্ব, স্থলাকৃতি এবং গাছপালা ও প্রাণীর গোষ্ঠী রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আটটি বিভিন্ন প্রাকৃতিক অঞ্চল রয়েছে। প্রতিটি অঞ্চল প্রদেশে বিভক্ত, যুক্তরাষ্ট্রে ২৫টি প্রদেশ রয়েছে। এরপরে প্রতিটি অঞ্চলকে বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ৮৫টি বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিভাগ তৈরি করা হয়েছে। অ্যাপালেশিয়ান মালভূমি হল অ্যাপালেশিয়ান উচ্চভূমির প্রাকৃতিক অঞ্চলের একটি প্রদেশ। অ্যাপালেশিয়ান মালভূমি প্রদেশটি সাতটি প্রাকৃতিক বিভাগে বিভক্ত: মোহক, ক্যাটস্কিল, দক্ষিণ নিউ ইয়র্ক, অ্যালেগেনি পর্বতমালা, কানাওহা , কম্বারল্যান্ড মালভূমি, এবং কম্বারল্যান্ড পর্বতমালা। ভূতাত্ত্বিক চেহারা, স্থলাকৃতি এবং বন্যজীবের মিলের কারণে প্রতিটি বিভাগকে অ্যাপালেশিয়ান মালভূমি প্রদেশের অধীনে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। তেমনি, একই জাতীয় বৈশিষ্ট্যের কারণে অ্যাপালেশিয়ান মালভূমি অঞ্চল অ্যাপালেশিয়ান উচ্চভূমিগুলির শ্রেণিবিন্যাসের আওতায় পড়ে।

ভূতত্ত্ব[সম্পাদনা]

অ্যাপালেশিয়ান মালভূমির অন্তর্নিহিত শিলা প্রাক্-ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের শিলার ভিত্তি নিয়ে গঠিত, এর ওপরে আছে প্যালিওজোয়িক যুগের পাললিক শিলা। সবার ওপরে আছে ক্যাম্ব্রিয়ান, অর্ডোভিশিয়ান এবং মধ্য সিলুরিয়ান যুগের শিলার মিশ্রণ; যা প্রায় ২০,০০০ ফুট পুরু। এই শিলাটি শেল পাথর, সিল্টসটোন এবং বেলেপাথর নিয়ে গঠিত। এই স্তরের উপরে রয়েছে সিলুরিয়ান যুগের বাষ্পীভবন অববাহিকা, বা বলা যায় রাসায়নিকভাবে পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত অববাহিকা। Tমালভূমির ভাঁজ বলয়টিটি কাঠামোগত জটিল প্যালিওসাইক স্তর দিয়ে গঠিত যেখানে পুরোনো শিলাগুলি নবগঠিত শিলার ওপর চালিত হয়।[৫]

যখন অ্যাপালেশিয়ান পর্বতমালা গঠিত হয়েছিল, মালভূমি অংশটি ওপর দিকে উঠে গিয়েছিল। সমস্ত শৈলশিরা এবং উপত্যকা মালভূমির নীচে চাপা পড়ে গিয়েছিল। এই অঞ্চল জুড়ে একাধিক উপত্যকা রয়েছে যেগুলি চুনাপাথর এবং শেলের উন্মুক্ত অঞ্চল নিয়ে গঠিত।[৫]

বন্যজীবন[সম্পাদনা]

রোডোডেনড্রন

গাছপালা[সম্পাদনা]

অ্যাপালেশিয়ান অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের জলবায়ু এবং এবং অবস্থার বৈচিত্রের কারণে অ্যাপালেশিয়ান মালভূমি অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগতের আবাসস্থল। উত্তরদিকে অনেকগুলি শঙ্কুসদৃশ (কনিফার) বৃক্ষ রয়েছে, যেমন লাল স্প্রুস এবং বালসাম ফার; যেগুলি অ্যাপালেশিয়ান অঞ্চলের উত্তরতম অক্ষাংশে বেড়ে উঠেছে। মালভূমির উত্তর দিকে কিছুটা কম উচ্চতায় দেখা যাবে উত্তরীয় হার্ডউড জাতীয় গাছ, যেমন সুগার ম্যাপেল এবং সাদা ওক। দক্ষিণের অ্যাপালেশিয়ায়, সাইকামোর, আখরোট এবং হিকরি গাছ বেশি দেখা যায়। অনুমান করা হয় যে অ্যাপালেশিয়া অঞ্চলে প্রায় দুই হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। অ্যাপালেশিয়া ক্ষেত্রের উচ্চতা এবং জলবায়ুর কারণে ফুলের মধ্যেও বৈচিত্র দেখা যায়। অ্যাপালাশিয়ার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ফুল দেখা যায়। দক্ষিণাঞ্চলে দেখা যায় রোদরঞ্জন, আজালিয়া এবং পর্বত লরেল। উত্তরে দেখা যায় সার্ভিসবেরি, রেডবাড, স্যুরউড এবং আরও অনেক ধরনের ফুল। [৬]

প্রাণী জগৎ[সম্পাদনা]

বাইসন এবং নেকড়েদের মতো প্রাণী অ্যাপালেশিয়ান অঞ্চলে খুব সাধারণ ছিল কিন্তু পরবর্তীকালে এই অঞ্চল থেকে তারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিছু কিছু অঞ্চলে এখনো এল্ক দেখতে পাওয়া যায়। অ্যাপালেশিয়ান মালভূমির সমস্ত অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ শিয়াল, রেকুন, বুনো শুয়োর, কালো ভাল্লুক, সাদা লেজযুক্ত হরিণ এবং বীভার রয়েছে। গবেষকরা সেখানে ২০০টিরও বেশি প্রজাতির বন্য টার্কি, চক্রবাক, রাজহাঁস, বাজ, পাতিহাঁস এবং আরও অনেকগুলি ধরনের পাখি দেখতে পেয়েছেন।[৭]

এই অঞ্চলের একটি বৈশিষ্ট হল এখানকার ছত্রাকগুলি। এখানে প্রচুর মাশরুম এবং লাইকেনের প্রজাতি দেখা যায়, যার মধ্যে আছে চ্যান্টেরেল, ঝিনুক মাশরুম এবং রক ট্রাইপ[৭]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Soil Information for Environmental Modeling and Ecosystem Management"। PA Soil Landscapes। ৪ মার্চ ১৯৯৯। ২৯ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৬ 
  2. "Appalachian Region: Multi-State Priority Area" (পিডিএফ)। Appendix 5K। ১৬ অক্টোবর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৬ 
  3. Davies, William। "Physiography"। U.S. Geological Survey। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৬ 
  4. Jones, Ronald L.। Plant Life of Kentucky: An Illustrated Guide to Vascular Flora। University Press of Kentucky। 
  5. Mount, Van S. (২০১৪)। "Structural style of the Appalachian Plateau fold belt, north-central Pennsylvania."। Journal of Structural Geology। 69, December 2014: 284–303। ডিওআই:10.1016/j.jsg.2014.04.005 
  6. Stephenson, Steven L. ˜Aœ Natural History of the Central Appalachians. Morgantown: West Virginia UP, 2013. Print. (pg. 30-129)
  7. Stephenson, Steven L. ˜Aœ Natural History of the Central Appalachians. Morgantown: West Virginia UP, 2013. Print. (pg. 130-211)
  8. Chowns, Timothy. "Appalachian Plateau Geologic Province." New Georgia Encyclopedia. N.p., 6 Oct. 2006. Web. 13 Nov. 2016.

টেমপ্লেট:Physical geography topics