বিষয়বস্তুতে চলুন

হ্যাপ্লয়েড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মিয়োসিস কোষ বিভাজনে, চারটি হ্যাপ্লয়েড কোষ দেখা যায় যা একটি ডিপ্লয়েড কোষ থেকে উৎপাদিত হয়

নির্দিষ্ট প্রজাতির সব জীবের দেহকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকে। ঐ জীবের জননকোষ যেমন শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুতে দেহকোষের তুলনায় অর্ধেক সংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে। একেই হ্যাপ্লয়েড বা অর্ধসংখ্যক ক্রোমোজোম বা জিনোম বলে। নির্দিষ্ট প্রজাতির জীবের প্রতিটি দেহকোষে জননকোষের তুলনায় দ্বিগুণ সংখ্যায় ক্রোমোজোম থাকে। একে ডিপ্লয়েড বা দ্বিসংখ্যক ক্রোমোজোম বা পূর্ণসংখ্যক ক্রোমোজোম বলে।[] বলা যেতে পারে একপ্রস্থ বিশিষ্ট ক্রোমোজোমগুলোকে হ্যাপ্লয়েড বলে। এবং, যেসব কোষে হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোম থাকে সেগুলো হ্যাপ্লয়েড কোষ। অনুরূপভাবে, যেসব জীবের দেহকোষ হ্যাপ্লয়েড প্রকৃতির তাদেরকে হ্যাপ্লয়েড জীব বলে। দুটি হ্যাপ্লয়েড কোষ মিলিত হয়ে একটি ডিপ্লয়েড কোষ সৃষ্টি করে। উল্লেখ্য, হ্যাপ্লয়েড কোষকে (n) এবং ডিপ্লয়েড কোষকে (2n) দিয়ে চিহ্নিত করা হয়।

যেসকল ডিপ্লয়েড জীবে যৌন প্রজনন দেখা যায়, সেগুলোর জননকোষ সৃষ্টির সময় মিয়োসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে একটি ডিপ্লয়েড কোষ (2n) থেকে চারটি হ্যাপ্লয়েড কোষের (n) সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ জীবের পুরুষ বা স্ত্রী জননকোষ হ্যাপ্লয়েড হয়ে থাকে। পরবর্তীতে জাইগোট সৃষ্টির সময় দুটি হ্যাপ্লয়েড কোষ মিলিত হয়ে একটি ডিপ্লয়েড কোষের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে এই ডিপ্লয়েড কোষই মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়ে হয়ে বিশালাকার জীবদেহ সৃষ্টি করে।

কিছু উদ্ভিদ এবং প্রাণী হ্যাপ্লয়েড কিংবা পলিপ্লয়েড (দুইয়ের অধিক সেটের ক্রোমোজোম) কোষের অধিকারী। উদাহরণস্বরুপ, এক প্রজাতির গম হেক্সাপ্লয়েড, অর্থাৎ তাতে 6-set chromosome বিদ্যমান (যদিও অন্যান্য প্রজাতির গম 2-set chromosome বিশিষ্ট।) অর্থাৎ এটি একটি পলিপ্লয়েড। অনেক সময়ই single set chromosome কে বোঝাতে "মনোপ্লয়েড" শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

আবার, Hymenoptera বর্গের পতঙ্গদের মধ্যে (যেমন: পিঁপড়া, মৌমাছি এবং Wasp ইত্যাদি) পুরুষরা হ্যাপ্লয়েড। অর্থাত, মূলত তাদের একপ্রস্থবিশিষ্ট বা Single set ক্রোমোজোম তারা তাদের মাতা হতে লাভ করে। অনিষিক্ত ডিম থেকে পুরুষ মৌমাছি ও পিপড়া জন্মায় বিধায় এরাও হ্যপ্লয়েড হয়ে থাকে। হ্যাপ্লয়েড পতঙ্গদেহে উৎপন্ন সব স্পার্মই আইডেন্টিকাল হয়, যেখানে ডিপ্লয়েড male কর্তৃক উৎপন্ন স্পার্মগুলো পরস্পরের থেকে জীনগতভাবে ভিন্ন হয়। সকল ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া পর্বের অধিকাংশ প্রাণীদের জীবনের অধিকাংশ সময়কাল জুড়েই হ্যাপ্লয়েড অবস্থা দেখতে পাওয়া যায়।

ডিপ্লয়েড জীবের জনন কোষের (পুরুষ বা স্ত্রী) নিউক্লিয়াস এক সেট ক্রোমোজোম বিশিষ্ট হয়ে থাকে যা ঐ জীবের হ্যাপ্লয়েড অবস্থা তথা হ্যাপ্লয়ডি (Haploidy)। যেমন রুই মাছের দেহ কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা ২৫ জোড়া যার প্রতিটি জোড়া থেকে একটি করে ক্রোমোজোম নিয়ে এক সেট ক্রোমোজোম গঠিত হয় এবং প্রতিটি জোড়া থেকে অপর ক্রোমোজোমটি নিয়ে অপর এক সেট ক্রোমোজোম গঠিত হয়। যায় ডিপ্লয়েড জীবের দেহকোষ যে দুই সেট ক্রোমোজোম বিশিষ্ট হয়ে থাকে তার এক সেট আসে মায়ের জনন কোষ থেকে থেকে অন্য সেটটি আসে বাবার জনন কোষ থেকে।

  1. মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান: তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা, বছর:১৯৮৬, পৃঃ ৫৯