হিস্টামিন নিরোধক
হিস্টামিন নিরোধক / অ্যানিহিস্টামিন | |
---|---|
ঔষধ শ্রেণী | |
জৈবিক লক্ষ্য | হিস্টামিন গ্রাহকসমূহ • এইচআরএইচ১ • এইচআরএইচ২ • এইচআরএইচ৩ • এইচআরএইচ৪ |
এটিসি কোড | R06 |
বহিঃসংযোগ | |
MeSH | D006633 |
হিস্টামিন নিরোধক বা ইংরেজি পরিভাষায় অ্যান্টিহিস্টামিন বলতে এক শ্রেণীর কৃত্রিম উপায়ে সংশ্লেষিত ঔষধকে বোঝায়, যেগুলি দেহে স্বাভাবিকভাবে উৎপন্ন ও নিঃসরিত হিস্টামিন নামক পদার্থের ঔষধীয় প্রভাবের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে কাজ করে।[১] দেহে হিস্টামিনের প্রতি সংবেদনশীল তিন ধরনের গ্রাহকের একটির সাথে আবদ্ধ হবার জন্য হিস্টামিন নিরোধকগুলি হিস্টামিনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়। ফলে হিস্টামিনের দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়ে দেহে যে চাপ, অতিপ্রতিক্রিয়া (অ্যালার্জি) বা প্রদাহ সৃষ্টি হয়, তা প্রতিরোধ করা যায়। কিছু হিস্টামিন নিরোধক অতিপ্রতিক্রিয়া (অ্যালার্জি) যেমন হে জ্বর বা চর্মের অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত সমস্যাদির বিরুদ্ধে গ্রহণ করা হয়।[২]
কোন্ ধরনের গ্রাহকের সাথে আবদ্ধ হয়, তার উপর ভিত্তি করে হিস্টামিন নিরোধকগুলিকে প্রধানত এইচ১ ও এইচ২ এই দুইটি উপশ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। এইচ১ শ্রেণীর হিস্টামিন নিরোধকগুলি মাস্ট কোষ, মসৃণ পেশীকোষ, আবরণী কলা ও মস্তিষ্কের টিউবারোম্যামিলারি নিউক্লিয়াসের এইচ১ গ্রাহকের সাথে আবদ্ধ হয়। এগুলি নাকের অতিপ্রতিক্রিয়া (যেমন নাক চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি) রোধে ব্যবহার করা হয়। কিছু এইচ১ হিস্টামিন নিরোধক শক্তিশালী বমিরোধক প্রকৃতির এবং এগুলি নিদ্রাহীনতা, গতিজনিত অসুস্থতা, বমিভাব এবং অন্তকর্ণের সমস্যাজনিত মাথা ঘোরা বা ঝিমঝিম প্রতিরোধ করতে পারে। অন্যদিকে এইচ২ শ্রেণীর হিস্টামিননিরোধকগুলি মানব পরিপাকনালির উপরের অংশে অবস্থিত এইচ১ হিস্টামিন গ্রাহকগুলির সাথে আবদ্ধ হয়; এগুলিকে পাকস্থলীয় অম্ল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য ("চুয়া ঢেকুর") এবং পাকস্থলীর ক্ষত (পেপটিক আলসার) ও ক্ষুদ্রান্ত্রের গ্রহণীর ক্ষত (ডিওডেনাল আলসার) সারানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
হিস্টামিন এমন একটি পদার্থ যা দেহের সব ধরনের কলায় উপস্থিত থাকে। দেহে আঘাত পেলে বা দেহে বহিরাগত পদার্থের অনুপ্রবেশ ঘটলে (যেমন পরাগরেণু) দেহের কিছু বৃহৎ কোষ (মাস্ট কোষ) থেকে হিস্টামিন নিঃসৃত হয়। এছাড়া কিছু বিশেষ কীটের বিষেও উপদ্রবমূলক ক্রিয়াসৃষ্টিকারক হিসেবে হিস্টামিন উপস্থিত থাকে। আপাতদৃষ্টিতে হিস্টামিন শরীরের রসায়নে একটি সুরক্ষামূলক ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু এটির স্বাভাবিক ক্রিয়া বা ধর্ম কি, তা এখনও সম্পূর্ণ জ্ঞাত নয়। হিস্টামিন দেহে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে, যেমন রক্তবাহী নালির প্রশস্ত হওয়া, ফুসফুসের মসৃণ পেশীসমূহের সংকোচন এবং পাকস্থলীর রস নিঃসরণ উদ্দীপ্তকরণ, ইত্যাদি।
হিস্টামিন নিরোধক সাবধাণতার সাথে ব্যবহার করা উচিত, কেননা কিছু কিছু হিস্টামিন নিরোধক অবাঞ্ছিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যাদের মধ্যেপ্রায়ই তন্দ্রাচ্ছন্নতা (ঘুম ঘুম লাগা), পেট খারাপ হওয়া, মাথাব্যথা, অস্পষ্ট দৃষ্টি, মুখের ভেতর শুকিয়ে যাওয়া, ইত্যাদি উল্লেখ্য। হিস্টামিন নিরোধক ঔষধ খেয়ে মোটরযান চালালে এইসব প্রতিক্রিয়ার কারণে বিপদের সৃষ্টি হতে পারে।
সাধারণত হিস্টামিননিরোধক ঔষধগুলি সস্তা, কৃতিস্বত্বহীন ঔষধ হিসেবে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ঔষধালয়ে কিনতে পারা যায় এবং পরাগরেণু, ধূলিমাকড়, বা পশুঘটিত অতিপ্রতিক্রিয়ার কারণে নাক বন্ধ হওয়া, হাঁচি, ত্বকে চুলকানিযুক্ত লাল ফুসকুড়ির থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।[২] হিস্টামিন নিরোধকগুলিকে সাধারণত স্বল্প মেয়াদী চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। [২] দীর্ঘমেয়াদী অতিপ্রতিক্রিয়া (অ্যালার্জি) স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি বৃদ্ধি করে এবং এগুলিকে হিস্টামিন নিরোধক দিয়ে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়, যেমন অ্যাজমা, সাইনুসাইটিস, এবং নিম্ন শ্বাসপথ সংক্রমণ।[২] দীর্ঘ মেয়াদ ধরে হিস্টামিন নিরোধক ব্যবহার করতে চাইলে পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।[২] জনসাধারণ্যে হিস্টামিন নিরোধকগুলি অতিপ্রতিক্রিয়ার (অ্যালার্জি) চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ হিসেবেই বেশি পরিচিত।
প্রকারভেদ
[সম্পাদনা]হিস্টামিন নিরোধক দুই ধরনের। প্রথম প্রজন্মের হিস্টামিন নিরোধক: প্রোমিথাযাইন, ক্লোরফেনিরামিন।
দ্বিতীয় প্রজন্মের হিস্টামিন নিরোধক: সেটিরিজিন, লেভোসেট্রিজিন, লোরাটাডিন, ইবাস্টাইন, ফেক্সোফেনাডিন, ডেসলোরাটাডিন, রুপাটাডিন।
প্রথম প্রজন্মের হিস্টামিন নিরোধক ব্লাড-ব্রেইন ব্যারিয়ার (বিবিবি) অতিক্রম করতে পারে, আর H1, 1 and muscarinic receptors ব্লক করে; তাই Jsto glaucoma, BPH, IHD cuisiting দেয়া যাবে না। আর লং টার্ম ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যদিকে দ্বিতীয় প্রজন্মের হিস্টামিন নিরোধকগুলি ব্লাড-ব্রেইন ব্যারিয়ার (বিবিবি) অতিক্রম করতে পারে না, আর selectively H1 ব্লক করে তাই এগুলাের সাইড ইফেক্ট খুব কম বা নাই। আর দ্বিতীয় প্রজন্মের মধ্যে সেটিরিজিন, লেভোসেট্রিজিন, লোরাটাডিন, ডেসলোরাটাডিন ও ফেক্সোফেনাডিন ৯৬ দিন (৬ মাস থেকে ১৮ মাস) ব্যবহার করা যায়। হিস্টামিন নিরোধক সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত নাসাপ্রদাহে (অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, allergic rhinitis) জন্য।
ব্যবহার হ্রাসে করণীয়
[সম্পাদনা]ঠান্ডা জ্বর ও এলার্জিজনিত চিকিৎসায় হিস্টামিন নিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে হিস্টামিন নিরোধকের ব্যবহার কমানাের জন্য রােগীকে উপদেশ প্রদান করা প্রয়োজন।
- এটি অসুখের স্থায়ী কোন চিকিৎসা নয়।
- যে জিনিসগুলাে খেলে বা যেগুলাের কাছে গেলে এই সমস্যা হয় সেগুলাে এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন-বেগুন বা ইলিশ মাছ খেলে যদি সমস্যা হয় তবে এগুলাে খাওয়া যাবে না। ধুলা-বালিতে গেলে বা ঠান্ডা লাগলে যদি সমস্যা হয় তবে এগুলাে এড়িয়ে চলতে হবে।
- আর যখন সমস্যা শুরু হয়ে যাবে, যেমন- নাক বন্ধ বা পানি পড়া তখন ঔষধ খাওয়া যাবে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;H1 receptor NF-κB signaling
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ ক খ গ ঘ ঙ Consumer Reports (২০১৩), Using Antihistamines to Treat Allergies, Hay Fever, & Hives - Comparing Effectiveness, Safety, and Price (পিডিএফ), Yonkers, New York: Consumer Reports, ১৭ মে ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০১৭