রঙ্গস্বামী নটরাজ মুদলিয়ার
রঙ্গস্বামী নটরাজ মুদলিয়ার | |
---|---|
জন্ম | ১৮৮৫ |
মৃত্যু | ১৯৭২ (বয়স ৮৬–৮৭) |
পেশা | চলচ্চিত্র নির্মাতা, চলচ্চিত্র প্রযোজক, লেখক, সিনেমাটোগ্রাফার |
রঙ্গস্বামী নটরাজ মুদলিয়ার (১৮৮৫-১৯৭২) একজন সফল চলচ্চিত্র নির্মাতা যাকে তামিল চলচ্চিত্রের জনক বলা হয়।[১] তিনি দক্ষিণ ভারতের নীরব চলচ্চিত্র নির্মাণের পথিকৃৎ ছিলেন। একটি অটোমোবাইল খুচরা যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। যা থেকে তিনি মাদ্রাজে "ইন্ডিয়ান ফিল্ম কোম্পানি লিমিটেড" চালু করেন।[২] ১৯১৭ সালে মুদলিয়ার দক্ষিণ ভারতের প্রথম নির্বাক চলচ্চিত্র কীচক বধম তৈরি করেন। তাঁর চলচ্চিত্রের অভাবনীয় সাফল্যের পর তিনি দ্রৌপদী বস্ত্রপহরণম (১৯১৮), লব কুশ (১৯১৯), রুক্মিণী সত্যভাম এবং মায়িল রাবণ এর মতো চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন। ১৯২৩ সালে অগ্নিকাণ্ডে ছেলের মৃত্যুর পর মুদলিয়ার চলচ্চিত্র জগৎ থেকে অবসর নেন।
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]মুদলিয়ার ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ভেলোরে একটি ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষ করার পর মুদলিয়ার মাদ্রাজে (বর্তমানে চেন্নাই) আসেন এবং তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেন, কারণ শহরটি ছিল প্রাদেশিক রাজধানী। পরবর্তীতে তিনি তাঁর চাচাতো ভাই এস. এম. ধর্মলিঙ্গম মুদলিয়ারের সাথে অংশীদার হয়ে "ওয়াটসন অ্যান্ড কোম্পানি" নামে একটি সাইকেল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। কোম্পানি তখন ২৫ ভারতীয় টাকায় (রুপি) সাইকেল বিক্রি করতো। ১৯১১ সালে সফলতার সঙ্গে ব্যাবসা করে কোম্পানিটি "রোমার ড্যান অ্যান্ড কোম্পানি" নামে একটি বিদেশি ফার্মের অংশীদারি লাভ করে, যা একটি মার্কিন গাড়ি এবং অটোমোবাইল খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি বিষয়ক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। তার পূর্বে "অ্যাডিসন অ্যান্ড কোম্পানি" মাদ্রাজের একমাত্র কোম্পানি ছিল, যেটি মার্কিন গাড়ি বিক্রি করতো। মুদলিয়ার একই গাড়ি ১০০০ ভারতীয় টাকায় বিক্রি করেন এবং প্রথম ভারতীয় হিসাবে আমেরিকান গাড়ি বিক্রি করেন। মুদলিয়ারের প্রাথমিক আগ্রহ ছিল ফটোগ্রাফিতে, পরবর্তীতে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।[৩]
চলচ্চিত্র পেশাজীবন
[সম্পাদনা]দাদাসাহেব ফালকের ছবি দেখার পর মুদলিয়ারের চলচ্চিত্রায়নের জন্য আগ্রহ তৈরি হয়। সেই সময় ব্রিটেনের চলচ্চিত্রকারেরা ভারতের তৎকালীন গভর্নর-জেনারেল ও ভাইসরয় লর্ড কার্জনের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করছিলেন।[৩] তাদেরই মধ্যে একজন চলচ্চিত্রকার স্টিওয়ার্ট স্মিথের সঙ্গে মুদলিয়ারের পরিচয় হয় এবং তাঁর মাধ্যমে চলচ্চিত্র নির্মাণে ফটোগ্রাফির মৌলিক বিষয় সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করেন মুদলিয়ার। এর ফলে শেষ পর্যন্ত ১৯১৭ সালে মুদলিয়ার তাঁর "ইন্ডিয়া ফিল্ম কোম্পানি" প্রতিষ্ঠা করেন।[৩][৪] তিনি তাঁর কিছু ব্যবসায়ী বন্ধুদের একত্র করে প্রোডাকশন হাউসে তাদের বিনিয়োগ করার অনুমতি দেন এবং মাদ্রাজের পুরসাইবক্কমের মিলার্স রোডে দক্ষিণ ভারতের প্রথম স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন।[৪]
১৯১৭ সালে, মুদলিয়ার কীচক বধম নামে একটি ছবিতে কাজ শুরু করেন এবং প্রযোজনার কাজ ছাড়াও স্ক্রিপ্ট, সিনেমাটোগ্রাফি, সম্পাদনা ও নির্দেশনার দেখাশোনা করেন। ছবিটি দক্ষিণ ভারতে নির্মিত প্রথম নীরব চলচ্চিত্র হিসেবে ৬,০০০ ফুটেরও বেশি লম্বা হয়েছিল।[৫][৬] মুক্তি লাভের পর এটি সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত ও বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছিল। চলচ্চিত্রের শিরোনাম কার্ডগুলো ইংরেজি ভাষায় মাদ্রাজের বিখ্যাত ডাক্তার গুরুস্বামী মুদালিয়ার ও তামিল ভাষায় একটি কলেজের অধ্যক্ষ তিরুবেঙ্গদা মুদলিয়ার দ্বারা লিখিত হয়। হিন্দিতে শিরোনামটি মহাত্মা গান্ধীর পুত্র দেবদাস গান্ধী লিখেছিলেন।[৭] কীচক বধম ১৯১৮ সালের জানুয়ারিতে এলফিনস্টন থিয়েটারে মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটির সাফল্য মুদলিয়ারকে ঐতিহাসিক চলচ্চিত্রের একটি সিরিজ তৈরি করতে প্ররোচিত করে। পরবর্তীতে তাঁর এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়। কিন্তু তাঁর স্টুডিওতে ঘটে যাওয়া একটি অগ্নি দুর্ঘটনায় তাঁর ছেলের মৃত্যুর পর মুদলিয়ার চলচ্চিত্র নির্মাণ থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং স্টুডিও বন্ধ করে দেন।[৭] একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে মুদলিয়ার রঘুপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডুর পুত্র রঘুপতি প্রকাশ এবং মালয়ালম প্রযোজক জোসেফ চেল্লাইয়া ড্যানিয়েলকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, যিনি পরবর্তীতে মালয়ালম চলচ্চিত্রের জনক হিসেবে সম্মানিত হন।
নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Classics must be preserved, says B. Mahendra"। ডেকান ক্রনিকল। ২৯ মে ২০১৩। ২৮ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুন ২০১৩।
- ↑ সেলভারাজ ভেলায়ুথম (২০০৮)। Tamil Cinema: The Cultural Politics of India's other Film Industry। টেইলর ও ফ্রান্সিস। পৃষ্ঠা ২–৩। আইএসবিএন 978-0-203-93037-3।
- ↑ ক খ গ গাই, র্যান্ডর (৯ মে ২০০০)। "Remembering a pioneer" [একজন অগ্রদূতকে স্বরণ]। দ্য হিন্দু। ১ জুলাই ২০০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৩।
- ↑ ক খ জেরি পিন্টো ও রাহুল শ্রিবাস্তব দ্বারা সম্পাদিত (২০০৮)। Talk of the Town। পেঙ্গুইন বুকস ইন্ডিয়া। পৃষ্ঠা ৪২–৪৩। আইএসবিএন 978-0-14-333013-4।
- ↑ স্যামুয়েল ক্যামেরন (২০১১)। Handbook on the Economics of Leisure। এডওয়ার্ড ইলগার পাবলিশিং। পৃষ্ঠা ৩০২। আইএসবিএন 978-0-85793-056-9।
- ↑ "The stamp of honour" [সম্মানের ডাকটিকিট]। দ্য হিন্দু। ১০ জুলাই ২০০০। ১১ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুন ২০১৩।
- ↑ ক খ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;hindu2
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি