মানসিক দৃঢ়তা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মানসিক দৃঢ়তা বলতে এমন একটি মানসিক গুণকে বোঝায় যার অধিকারী ব্যক্তি ভীত হতে প্রত্যাখ্যান করে, কোনও প্রতিযোগিতায় খারাপ অবস্থায় পতিত হলেও প্রতিযোগিতা শেষ করার দৃঢ় মনোবল প্রদর্শন করে, নিজের আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে এবং তীব্র প্রতিযোগিতার চাপের মুখেও গভীর মনোযোগ ধরে রাখতে পারে।[১] অন্য ভাষায় মানসিক দৃঢ়তা হল কিছু মূল্যবোধ, মনোভঙ্গি ও আচরণের সমষ্টি যার বদৌলতে কোনও ব্যক্তি অধ্যবসায়ী হয় এবং কঠিন ও দুঃসাধ্য অবস্থার মুখোমুখি হলেও ইতিবাচক ও আত্মবিশ্বাসী মনোভঙ্গি বজায় রাখে।

ক্রীড়াক্ষেত্রে মানসিক দৃঢ়তা একটি বহুমাত্রিক ধারণা। একজন মানসিকভাবে দৃঢ় ক্রীড়াবিদ নিজের উপরে অটল বিশ্বাস রাখেন, বহু সংখ্যক চিত্তবিক্ষেপকারী কারণের উপস্থিতিতেও মনোযোগ ধরে রাখেন, উচ্চ স্তরের প্রেষণার অধিকারী হন, প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার চাপ ও বিরুদ্ধতা সহ্য করা ও সামলে নেওয়ার ক্ষমতা প্রদর্শন করেন, ব্যর্থতায় পতিত হবার পরেও মানসিকভাবে ফেরত আসেন, কখনোই হাল ছেড়ে দেন না, এবং চাপের মুখেও ভালো ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করেন, বিশেষ করে যখন ঝুঁকি বেশি থাকে।[২][৩]

মানসিক দৃঢ়তার উপাদানসমূহ[সম্পাদনা]

ক্লফের গবেষণা[সম্পাদনা]

ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি নামক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক পিটার ক্লফ ২০০২ সালে মানসিক দৃঢ়তা বিষয়ক গবেষণার একজন অগ্রদূত। তাঁর মতে মানসিক দৃঢ়তা ৪টি উপাদান নিয়ে গঠিত: নিয়ন্ত্রণ, দায়িত্বের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধতা, শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের আকাঙ্ক্ষা এবং আত্মবিশ্বাস।[৪] এগুলিকে ইংরেজিতে কন্ট্রোল (Control), কমিটমেন্ট (Commitment), চ্যালেঞ্জ (Challenge) ও কনফিডেন্স (Confidence) বা সংক্ষেপে ৪সি (4C) নামেও অভিহিত করা হয়।

জোনস, হ্যান্টন ও কোন'টনের গবেষণা[সম্পাদনা]

ক্রীড়া গবেষক জোনস, হ্যান্টন ও কোন'টন ২০০২ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে একজন ক্রীড়াবিদের জন্য মানসিক দৃঢ়তাকে ১২টি বৈশিষ্ট্যের সমষ্টি হিসেবে বর্ণনা করেন।[৫] এগুলি নিম্নরূপ:

  1. প্রতিযোগিতা নিজের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষমতার উপর অটল আত্মবিশ্বাস
  2. বাধাবিপত্তি বা প্রতিবন্ধকতার শিকার হবার পরে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়া এবং সফল হবার জন্য অধিকতর দৃঢ়সংকল্পের অধিকারী হওয়া
  3. নিজের অনন্য ক্ষমতা ও গুণের সুবাদে প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় নিজেকে উন্নত ভাবার ব্যাপারে অটল আত্মবিশ্বাস
  4. সফল হবার জন্য উচ্চ পরিমাণে আত্মীকৃত প্রেষণা ও চির-অতৃপ্ত বাসনার অধিকারী হওয়া
  5. প্রতিযোগিতায় উপস্থিত চিত্তবিক্ষিপ্তকারী কারণের উপস্থিতি সত্ত্বেও লক্ষ্যের উপর পূর্ণ মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার ক্ষমতা
  6. অপ্রত্যাশিত ও অনিয়ন্ত্রণযোগ্য ঘটনা ঘটার পরে মানসিক নিয়ন্ত্রণ পুনরায় জয় করার ক্ষমতা
  7. প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার সময় কৌশল ও প্রচেষ্টা বজায় রেখে আবেগীয় ও দৈহিক ব্যথা-বেদনা থেকে উত্তরণ করার ক্ষমতা
  8. প্রতিযোগিতার সময় অনুভূত দুশ্চিতা ও উদ্বেগ মেনে নেওয়া ও সেগুলিকে সামলে নেওয়ার ক্ষমতা
  9. প্রতিযোগিতার চাপের মুখে আরও শক্তিশালী হওয়া
  10. অন্য প্রতিযোগীদের ভাল বা খারাপ ফলাফলের দ্বারা প্রভাবিত না হবার ক্ষমতা
  11. ব্যক্তিগত জীবনের চিত্তবিক্ষেপকারী কারণের মুখে পূর্ণ মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার ক্ষমতা
  12. প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রীড়ার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা বা মনোযোগ উঠিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা

এর কয়েক বছর পরে ২০০৭ সালে জোনস, হ্যান্টন ও কোন'টন মানসিক দৃঢ়তার একটি পরিকাঠামো নির্মাণ করেন।[৬] পরিকাঠামোটি চারটি মাত্রায় বিভক্ত। মাত্রাগুলিকে আবার ১৩টি উপশ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে এবং সব মিলিয়ে পরিকাঠামোতে ৩০টি বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নিচের সারণিতে এগুলিকে উপস্থাপন করা হল।

মাত্রা উপশ্রেণী বৈশিষ্ট্য
মনোভঙ্গি/মানসিক প্রবণতা বিশ্বাস
  1. নিজের বর্তমান অবস্থানে কীভাবে পৌঁছেছে, সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতনতার ফলে সৃষ্ট অটল আত্মবিশ্বাসের অধিকারী হওয়া
  2. এক ধরনের অভ্যন্তরীণ ঔদ্ধত্যের কারণে যেকোনও কিছুর উপর মনস্থির করলে তা অর্জন করার ব্যাপারে বিশ্বাস অর্জন করা
  3. সাফল্য অর্জনের পথে অন্যেরা যে প্রতিবন্ধকতাই স্থাপন করুক না কেন, সেগুলিকে ভেদ করে বের হওয়ার বিশ্বাস রাখা
  4. নিজ বাসনা ও ক্ষুধা যে শেষ পর্যন্ত নিজের সম্ভাবনা বাস্তবায়নে সফলতা আনবে, সে ব্যাপারে বিশ্বাস রাখা
মনোযোগ কেন্দ্রীভূতকরণ
  1. দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যসমূহ অর্জন যেন ঝুঁকিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য স্বল্প-মেয়াদী সাফল্যের (আর্থিক বা কর্মসম্পাদন) দ্বারা উদ্বেলিত হওয়া প্রত্যাখ্যান করা
  2. নিজ ক্রীড়ায় লক্ষ্য অর্জন যেন জীবনে প্রথম অগ্রাধিকার পায়, তা নিশ্চিত করা।
  3. কখন ক্রীড়ায় মনোনিবেশ করতে হবে এবং কখন মন উঠিয়ে নিতে হবে, তার গুরুত্ব অনুধাবন করা
প্রশিক্ষণ দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলিকে প্রেষণার উৎস হিসেবে ব্যবহার
  1. যখন প্রশিক্ষণ শারীরিক ও মানসিকভাবে কঠিন হয়ে ওঠে এবং ফলাফল নিজের পক্ষে না আসতে থাকে, তখন নিজের লক্ষ্য ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলির কথা ও কেন প্রশিক্ষণের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে সে কথা স্মরণ করিয়ে নিজেকে সচল রাখা।
  2. নিজের পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে প্রতিটি বিশেষ বিকাশমূলক ধাপের জন্য যে প্রশিক্ষণ আবশ্যক, সেগুলি সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় ধৈর্য, নিয়মানুবর্তিতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারী হওয়া
পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা
  1. পরিবেশকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা ও পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হওয়া
  2. অত্যন্ত দুরূহ প্রশিক্ষণ পরিবেশের সমস্ত দিককে নিজের সুবিধায় কাজে লাগানো
নিজেকে সীমার দিকে ঠেলা
  1. প্রশিক্ষণের যে অংশগুলি বেদনাদায়ক সেগুলিকা ভালোবাসা
  2. প্রশিক্ষণে অন্যান্য ব্যক্তিদের পরাজিত করার সুযোগ আসলে আরও শক্তিশালী হওয়া
প্রতিযোগিতা চাপ সামাল দেওয়া
  1. প্রতিযোগিতার চাপ ভালোবাসা
  2. চাপের মুখে উপযোজন করা এবং যেকোনও পরিবর্তন/চিত্তবিক্ষিপ্তকারী কারণ/হুমকি সামাল দেওয়া
  3. চরম চাপ ও দ্ব্যর্থকতাবিশিষ্ট পরস্থিতিতে সর্বোত্তম-সম্ভব কর্মসম্পাদন নিশ্চিত করতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এবং সঠিক বিকল্পগুলি বাছাই করা
  4. চাপযুক্ত পরিস্থিতে দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ সামাল দেওয়া ও সেগুলিকে নির্দিষ্ট পথে পরিচালিত করা।
বিশ্বাস
  1. যতক্ষণ না পর্যন্ত সাফল্যের সমস্ত সম্ভাব্য সুযোগ অতিক্রান্ত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কর্মসাধনের লক্ষ্য অর্জনের ব্যাপারে পূর্ণ অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকা
  2. ভুলত্রুটি হলে অস্থির না হয়ে সেগুলি থেকে ফিরে আসা
কর্মসাধন নিয়ন্ত্রণ
  1. কোন্‌ মুহূর্তে জেতার ক্ষমতা আছে জানতে পারলে সেই মুহূর্তটিকে পুঁজি করার "সহজাত ঘাতক প্রবৃত্তি" থাকা
  2. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে নিজের কার্যসাধনের স্তর এক ধাপ উন্নত করা
মনোযোগ নিবদ্ধ রাখা
  1. চিত্তবিক্ষেপকারী কারণের মুখে হাতের কাজের উপরে সম্পূর্ণ মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা
  2. বহিরাগত চিত্তবিক্ষেপকারী কারণ সত্ত্বেও আত্মনিবিষ্ট মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকা
  3. কিছু নির্দিষ্ট কার্যসাধনের সময় কেবলমাত্র ফলাফলের উপরে নয়, বরং প্রক্রিয়াসমূহের উপরে মনোযোগ নিবদ্ধ রাখা
চিন্তা ও অনুভূতি সম্পর্কে সচেতনতা ও সেগুলির নিয়ন্ত্রণ
  1. যেকোনও অনুপযুক্ত চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি সম্পর্কে তীক্ষ্মভাবে সচেতন থাকা এবং সর্বোত্তম সম্ভব কার্যসাধন করার উদ্দেশ্যে সেগুলির পরিবর্তন সাধন করা
পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা
  1. কোনও অতিদুরূহ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের সমস্ত দিককে নিজের সুবিধায় কাজে লাগানো
প্রতিযোগিতার পরে ব্যর্থতা সামাল দেওয়া
  1. ব্যর্থতা স্বীকার করা ও যুক্তি দিয়ে বিবেচনা করা এবং সামনের দিকে আগানোর জন্য শিক্ষণীয় বিষয়গুলি খুঁজে নেওয়া
  2. ব্যর্থতাকে ব্যবহার করে নিজেকে আরও সাফল্যের দিকে তাড়িত করা
সাফল্য সামাল দেওয়া
  1. কখন সাফল্য উদযাপন করতে হবে এবং কখন উদযাপন করা থামিয়ে পরবর্তী শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের উপরে মনোযোগ নিবদ্ধ করতে হবে, সে ব্যাপারে জ্ঞান রাখা
  2. কীভাবে যুক্তিসম্মতভাবে সাফল্য সামাল দিতে হবে, সে ব্যাপারে জ্ঞান রাখা

কুল্টারের গবেষণা[সম্পাদনা]

কুল্টার ও তাঁর সহযোগীরা ২০১০ সালে ফুটবল খেলোয়াড়, প্রশিক্ষক ও তাদের বাবা-মায়েদের ব্যক্তিনিষ্ঠ সাক্ষ্যপ্রমাণের উপর ভিত্তি করে একটি গবেষণা সম্পন্ন করেন, যাতে মানসিক দৃঢ়তার ১৪টি বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ আছে।[৭] এগুলি নিম্নরূপ:

বৈশিষ্ট্য বর্ণনা
জয়লাভের মানসিকতা ও আকাঙ্ক্ষা জয়লাভের আকাঙ্ক্ষা যা সামর্থ্য/শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের পরীক্ষা (চ্যালেঞ্জ) উত্তরণে ও প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলায় ব্যক্তিকে ক্রীড়াক্ষেত্রের ভেতরে ও বাইরে তাড়িত করে ও তাকে সফল করে
আত্মবিশ্বাস চাপের মুখে শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতার উপরে আত্মবিশ্বাস রাখা যাতে সমস্ত সামর্থ্য/শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের পরিস্থিতি (চ্যালেঞ্জ) উত্তরণ করা যায়
শারীরিক দৃঢ়তা ব্যথার প্রতিবন্ধকতা ভেদ করে খেলার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখা এবং আঘাত, ক্লান্তি বা ব্যথা সাথে নিয়েই উচ্চমানের কর্ম সম্পাদন বজায় রাখা
কঠোর পরিশ্রমের নীতি খেলার সমস্ত ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করা এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে অবিরাম প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা
ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা খেলার ভেতরে ও বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই প্রতিকূল অবস্থাকে অধ্যবসায়ের ও "বুলেটরোধী" দৃঢ়সংকল্পের সাহায্যে মনোযোগ নিবদ্ধ রাখা ও নিয়মিতভাবে উচ্চ স্তরে কর্মসম্পাদন বজায় রাখা
ব্যক্তিগত মূল্যবোধ ব্যক্তিগত মূল্যবোধের উপরে অর্থ স্থাপন করা এবং একজন উন্নততর ব্যক্তি ও খেলোয়াড় হওয়ার জন্য ব্যক্তিগত আদর্শসমূহ মেনে চলা
মনোযোগ কেন্দ্রীভূতকরণ অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক চাপ, প্রতিবন্ধকতা বা প্রতিকূলতার উপস্থিতি সত্ত্বেও হাতের কাজের উপর একমনে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখার ক্ষমতা
কর্মসম্পাদন সচেতনতা নিজের সম্পাদিত কর্মে সঠিকভাবে নিজেই যাচাই করার ক্ষমতা
ক্রীড়া বুদ্ধিমত্তা খেলা "পড়া"র ক্ষমতা, উচ্চ কৌশলগত সচেতনতা এবং মাঠে নিজের ভূমিকা অনুধাবনের মাধ্যমে সংকটময় মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নির্বাহ করা
দৃঢ় মনোভঙ্গি নিজের সেরাটা দেবার জন্য বিরামহীনভাবে মনস্থির রেখে মনোযোগ বজায় রাখা
চাপ সামলানো চাপের মুখে গুণগত ও পরিমাণগতভাবে উচ্চমানের কর্মসম্পাদন বজায় রাখা এবং প্রতিবন্ধকতাগুলিকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের সুযোগ হিসেবে দেখা
প্রতিযোগিতামূলক প্রচেষ্টা পরিস্থিতি নির্বিশেষে খেলার মাঠে উচ্চ প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব বজায় রাখা
ঝুঁকি গ্রহণ মাঠে এবং মাঠের বাইরে ব্যক্তিগত জীবন বা কর্মজীবনে সাফল্যের সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক থাকা
আবেগিক বুদ্ধিমত্তা শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের প্রতিযোগিতার সময় আত্ম-সচেতনতা বজায় রেখে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা

মানসিক দৃঢ়তা অর্জন[সম্পাদনা]

মানসিক দৃঢ়তা সংক্রান্ত গবেষণার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল কীভাবে এটি অর্জিত হয়। এটি উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত ব্যক্তিত্বের একটি বৈশিষ্ট্য, নাকি এটি সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে (বিশেষ প্রশিক্ষণ) অথবা জীবনের অভিজ্ঞতার উপরে ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, তা একটি বিতর্কের বিষয়। সমকালীন গবেষকদের কাজে বেরিয়ে এসেছে যে মানসিক দৃঢ়তার গঠন প্রক্রিয়ার বেশ কিছু দিক আছে, যেমন- জন্মগত সূত্রে অর্জন, পরিবেশ, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ। মানসিক দৃঢ়তা সংক্রান্ত গবেষণার একটি পর্যালোচনাতে দেখা গেছে যে কোনও ব্যক্তির বিকাশের প্রাথমিক গঠনমূলক বছরগুলিতে সেই ব্যক্তিটি যেসব অভিজ্ঞতা ও পরিবেশের প্রতি উন্মুক্ত থাকে, সেগুলি ঐ ব্যক্তির মানসিক দৃঢ়তার "অভিজ্ঞতা-ভিত্তিক" দিকগুলি নির্ধারণে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এরপর মাধ্যমিক পর্যায়ের বছরগুলিতে, যে সময় ক্রীড়াবিদরা অন্যদের (যেমন বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক, উচ্চস্তরের ক্রীড়াবিদ, অনুসরণীয় প্রতিমারূপী ক্রীড়াবিদ) দ্বারা উপকৃত হয় এবং মানসিক দক্ষতা ও কৌশল উন্নয়নের মাধ্যমে মানসিক দৃঢ়তা উন্নত করে ও বজায় রাখে, সেগুলি হল মানসিক দৃঢ়তার "প্রশিক্ষণ-ভিত্তিক" দিক।[৩]

অস্ট্রেলীয় গবেষক গুকার্ডি ও তাঁর সহকর্মীদের মতে একজন প্রশিক্ষক শিক্ষার্থীর মানসিক দৃঢ়তার অর্জনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী একজন ব্যক্তি। যদি কোনও প্রশিক্ষক খেলোয়াড়ের বিকাশের প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করে ভারসাম্যহীনভাবে সাফল্যের প্রতি তাকে ধাবিত করেন, খেলোয়াড়ের দুর্বলতাগুলির উপরে অতিরিক্তরূপে মনোযোগ নিবদ্ধ করেন, খুবই কম বা অস্বাভাবিক রকমের উচ্চ প্রত্যাশা স্থির করেন, কিংবা "সহজ" প্রশিক্ষণ পরিবেশ উৎসাহিত করেন, তাহলে তা খেলোয়াড়ের মানসিক দৃঢ়তার বিকাশে অন্তরায় হতে পারে।[৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Michael Kent (২০০৬), The Oxford Dictionary of Sports Science & Medicine (৩য় সংস্করণ) 
  2. Michael Kent (২০১৬), Food and Fitness: A Dictionary of Diet and Exercise (২য় সংস্করণ) 
  3. Liew, G.C.; Kuan, G.; Chin, N.S.; Hairul Anuar Hashim (২০১৯), "Mental toughness in sport", German Journal of Exercise and Sport Research, 49: 381–394 
  4. Clough, P. J.; Earle, K.; Sewell, D. (২০০২), "Mental Toughness: The Concept and Its Measurement", I. Cockerill, Solutions in Sport Psychology, London: Thomson, পৃষ্ঠা 32-43 
  5. Jones, G.; Hanton, S.; Connaughton, D. (২০০২), "What is this thing called mental toughness? An investigation of elite sport performers", Journal of Applied Sport Psychology, 14 (3): 205–218 
  6. Jones, G.; Hanton, S.; Connaughton, D. (২০০৭), "A Framework of Mental toughness in the World's Best Performers", The Sport Psychologist, 21: 243-262. 
  7. Coulter, T. J.; Mallett, C. J.; Gucciardi, D. F. (২০১০), "Understanding Mental Toughness in Australian Soccer: Perceptions of Players, Parents and Coaches", Journal of Sports Sciences, 28 (7): 699-716 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]