পরিভাষা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Salim Khandoker (আলোচনা | অবদান)
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল অ্যাপ সম্পাদনা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সম্পাদনা
Your Poltergeist O3 (আলোচনা | অবদান)
#WPWP #WPWPBN
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[চিত্র:Argument terminology used in logic (en).svg|থাম্ব|যুক্তিতে ব্যবহৃত আর্গুমেন্ট পরিভাষা]]
যে শব্দের দ্বারা সংক্ষেপে কোন বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে ব্যক্ত করা যায় তাকেই '''পরিভাষা''' বলা হয়। [[শব্দ]] হল যেকোন কিছুর নাম বা তাকে ভাষায় প্রকাশ করার উপায়, [[প্রতিশব্দ]] হল সমার্থক শব্দ; কিন্তু পরিভাষা পুরোপুরিই সংজ্ঞাবাচক। এর অর্থ ব্যাপক। একটি পরিভাষা একটি পরিপূর্ণ সংজ্ঞাকে নির্দেশ করে। শব্দের অর্থ এবং পরিভাষার অর্থ ভিন্ন বা একেবারে বিপরীত হতে পারে। যেমন, বাংলা ভাষায় ''বিজ্ঞান'' শব্দটি [[সংস্কৃত ভাষা]] থেকে এসেছে। সংস্কৃতে বিজ্ঞান শব্দের অর্থ ছিল ঈশ্বরানুভব, অপরোক্ষ জ্ঞান, তত্ত্বজ্ঞান বা বিশেষ জ্ঞান। কিন্তু বাংলায় এটি ইংরেজি ''science'' শব্দের পরিভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই বাংলায় বিজ্ঞান শব্দের অর্থ ''নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার ফলে কোন বিষয়ে ক্রম অনুসারে লব্ধ জ্ঞান''। ঈশ্বরানুভূতি এবং গবেষণালব্ধ জ্ঞান একেবারে বিপরীত। দেখা যাচ্ছে, পরিভাষার অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং এটিই বর্তমানে একটি সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞার জন্ম দিয়েছে।
যে শব্দের দ্বারা সংক্ষেপে কোন বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে ব্যক্ত করা যায় তাকেই '''পরিভাষা''' বলা হয়। [[শব্দ]] হল যেকোন কিছুর নাম বা তাকে ভাষায় প্রকাশ করার উপায়, [[প্রতিশব্দ]] হল সমার্থক শব্দ; কিন্তু পরিভাষা পুরোপুরিই সংজ্ঞাবাচক। এর অর্থ ব্যাপক। একটি পরিভাষা একটি পরিপূর্ণ সংজ্ঞাকে নির্দেশ করে। শব্দের অর্থ এবং পরিভাষার অর্থ ভিন্ন বা একেবারে বিপরীত হতে পারে। যেমন, বাংলা ভাষায় ''বিজ্ঞান'' শব্দটি [[সংস্কৃত ভাষা]] থেকে এসেছে। সংস্কৃতে বিজ্ঞান শব্দের অর্থ ছিল ঈশ্বরানুভব, অপরোক্ষ জ্ঞান, তত্ত্বজ্ঞান বা বিশেষ জ্ঞান। কিন্তু বাংলায় এটি ইংরেজি ''science'' শব্দের পরিভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই বাংলায় বিজ্ঞান শব্দের অর্থ ''নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার ফলে কোন বিষয়ে ক্রম অনুসারে লব্ধ জ্ঞান''। ঈশ্বরানুভূতি এবং গবেষণালব্ধ জ্ঞান একেবারে বিপরীত। দেখা যাচ্ছে, পরিভাষার অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং এটিই বর্তমানে একটি সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞার জন্ম দিয়েছে।



১৫:১৫, ৩১ আগস্ট ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

যুক্তিতে ব্যবহৃত আর্গুমেন্ট পরিভাষা

যে শব্দের দ্বারা সংক্ষেপে কোন বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে ব্যক্ত করা যায় তাকেই পরিভাষা বলা হয়। শব্দ হল যেকোন কিছুর নাম বা তাকে ভাষায় প্রকাশ করার উপায়, প্রতিশব্দ হল সমার্থক শব্দ; কিন্তু পরিভাষা পুরোপুরিই সংজ্ঞাবাচক। এর অর্থ ব্যাপক। একটি পরিভাষা একটি পরিপূর্ণ সংজ্ঞাকে নির্দেশ করে। শব্দের অর্থ এবং পরিভাষার অর্থ ভিন্ন বা একেবারে বিপরীত হতে পারে। যেমন, বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান শব্দটি সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। সংস্কৃতে বিজ্ঞান শব্দের অর্থ ছিল ঈশ্বরানুভব, অপরোক্ষ জ্ঞান, তত্ত্বজ্ঞান বা বিশেষ জ্ঞান। কিন্তু বাংলায় এটি ইংরেজি science শব্দের পরিভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই বাংলায় বিজ্ঞান শব্দের অর্থ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার ফলে কোন বিষয়ে ক্রম অনুসারে লব্ধ জ্ঞান। ঈশ্বরানুভূতি এবং গবেষণালব্ধ জ্ঞান একেবারে বিপরীত। দেখা যাচ্ছে, পরিভাষার অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং এটিই বর্তমানে একটি সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞার জন্ম দিয়েছে।

পরিভাষা কাকে বলে?

পরিভাষা হচ্ছে বিষয়সমূহের অধ্যয়ন ও তার ব্যবহার। অভিধানে পরিভাষার অর্থ সংক্ষেপার্থ শব্দ। অর্থাৎ যে শব্দের দ্বারা সংক্ষেপে কোন বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে ব্যক্ত করা যায় তাই পরিভাষা। সাধারণত পরিভাষা বললে এমন শব্দ বা শব্দাবলি বোঝায় যার অর্থ পণ্ডিতগণের সম্মতিতে স্থিরীকৃত হয়েছে এবং যা দর্শন বিজ্ঞানের আলোচনায় প্রয়োগ করলে অর্থবোধে সংশয় ঘটে না। অন্যভাবে বলা যায়, সুনির্দিষ্ট সংক্ষেপার্থ সংশয়মুক্ত শব্দই হলো পরিভাষা। সহজভাবে বললে, বিশেষ ভাষা। বিদেশি ভাষার বিভিন্ন শব্দের স্বাদ, গন্ধ, বৈশিষ্ট্য, চরিত্র, সম্পর্ক, অর্থ ইত্যাদি অনুসারে বাংলা শব্দে রূপ দেয়া হয় তাকে পারিভাষিক শব্দ বলে। যেমন : Oxygen-অম্লজান, Act-আইন, Farm- খামার। পরিভাষার অর্থ ভূমিকা অংশেই বলা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন অভিধান ও বিশ্বকোষ থেকে নেয়া অর্থগুলো উল্লেখ করা হচ্ছে:

  • সংসদ বাঙ্গালা অভিধানে বলা হয়েছে, "বিশেষ অর্থে নির্দিষ্ট শব্দ বা সংজ্ঞা"।
  • চলন্তিকা অভিধানে রাজশেখর বসু এর অর্থ করতে গিয়ে লিখেছেন, "বিশেষ অর্থবোধক শব্দ"।
  • রাজশেখর বসু তার লঘুগুরু গ্রন্থে পরিভাষার অর্থ করতে গিয়ে লিখেছেন, "ভাষা একটি নমনীয় পদার্থ, তাকে টেনে বাঁকিয়ে চটকে আমরা নানা প্রয়োজনে লাগাই। কিন্তু এরকম জিনিসে কোন পাকা কাজ হয়না, মাঝে মাঝে শক্ত খুঁটির দরকার, তাই পরিভাষার উদ্ভব হয়েছে।" (১৩৪৬ বঙ্গাব্দ)
  • বাচস্পত্য অভিধান গ্রন্থে বলা হয়েছে, "শাস্ত্রকারের সংজ্ঞা বিশেষ"।

পরিভাষা সম্পর্কে ভাষাবিদগণের অভিমত

  • সৈয়দ আলী আহসান : বাংলাদেশের প্রতি প্রকৃতির দিকে এবং বোধগম্যতার দিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের পরিভাষা নির্মাণ করতে হবে। যেখানে আরবি ফারসির প্রয়োগ সমীচীন সেখানে আরবি, ফারসি এবং যেখানে সংস্কৃতের প্রয়োজন সেখানে সংস্কৃত-এটাই আমাদের আদর্শ হওয়া উচিত।

সৈয়দ আলী আহসানের পরিভাষা নীতি—যে বিদেশি শব্দগুলোর অতিরিক্ত প্রয়োগে একটি সবল এবং সুষ্ঠুরূপ নিয়েছে সেগুলোর পরিবর্তন না করা। জটিল বৈজ্ঞানিক শব্দ যেগুলোর কোন প্রতিরূপ আমাদের ভাষায় নাই >সেগুলো অবিকৃত রাখা। যেগুলো ব্যাখ্যা চলে এবং ব্যাখ্যা করলেই আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়-একমাত্র সেগুলোরই প্রতিশব্দ নির্মাণ করা।

  • মুহম্মদ আবদুল হাই : যতটা সম্ভব বাংলা ভাষার ধর্ম, তার শ্রুতিমাধুর্য এবং ব্যবহারিক প্রয়োজনের দিক লক্ষ্য রেখে সংস্কৃত ও আরবি ভাষার শব্দ মূলের মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
  • ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর অভিমত: বাংলা গদ্যের সাহিত্যিক ব্যবহারের প্রারম্ভ থেকেই পরিভাষার জন্য সংস্কৃতের সাহায্য লওয়া হচ্ছে। আমি মনে করি যে বাংলা ভাষার এই ঐতিহ্যের দিকে লক্ষ্য করে আমরা একদম সংস্কৃত বর্জন করতে পারি না। সেইরূপ রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য করে আরবির ফারসিও আমরা অগ্রাহ্য করতে পারি না।

বাংলা পরিভাষা নির্মাণের ইতিহাস

১৭৭২ সালের ১৫ই আগস্ট প্রতি জেলায় দেওয়ানি বিচারের জন্য মফস্বলে দেওয়ানি আদালত স্থাপিত হয়। ১৭৭৫ সালে স্থাপিত হয় কলকাতায় সুপ্রীম কোর্ট। ১৭৯৭ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করেন। ওই আইনের রেগুলেশন খাতে সরকার ইচ্ছামত পরিবর্তন না করতে পারে সে ব্যাপারে নির্দেশ থাকে। প্রতিটি রেগুলেশন মুদ্রিত এবং দেশি ভাষায় অনূদিত হবারও নির্দেশ থাকে। এই আবশ্যিক অনুবাদের মাধ্যমে এদেশে আইনের অনুবাদ শুরু হয়। ফলে ১৭৭৬ সাল থেকে ১৭৯৭-৯৮ সাল পর্যন্ত জেন্টু কোড, অর্ডিন্যান্স অভমনু, এ ডাইজেস্ট অব হিন্দুল (১৭৭৬-১৭৯৮) প্রণয়নে সংস্কৃত থেকে ইংরেজি পরিভাষা নির্মাণের গোড়াপত্তন হয়। বাংলায় পরিভাষা নির্মাণের গোড়াপত্তন হয় ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে। ১৭৮৪ সালে জনাথান ডানকানের ‘হইবার কারণ ধারার নিয়ম বাংলা ভাষায়’র বাংলা হরফে প্রকাশ হবার মধ্য দিয়েই বাংলা পরিভাষার সূচনা হয়। এ ধারা অব্যাহত থাকে ১৮৯৩ সাল পর্যন্ত। ১৮৯৪ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে যা ব্যাপক পরিণতরূপ পায়। বিগত দুইশ বছরে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের পাশাপাশি পরিভাষা নির্মাণে অবদান রেখেছেন ফেলিকস কেরি, জনমেক, উইলসন, পীয়ারসন বৃটন প্রমুখ মনীষী থেকে শুরু করে অক্ষয় কুমার দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম চন্দ্র, বিপিনবিহারী দাস, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, যোগেশচন্দ্র, ড. রঘুবীর, বি এন শীল, সুনীতিকুমার, রাজশেখর বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুধীন্দ্রনাথ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশের পরিভাষা

১৯৪৭ সালে পূর্বপাকিস্তান নামকরাষ্ট্র জন্মাবার পর শিশুরাষ্ট্রে ভাষা সংকট দেখা দেয়। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে জিন্নাহর দাম্ভিক ঘোষণা পূর্ববঙ্গবাসীদের মর্মাহত করে। যার পরিণতি ১৯৫২ সালে রক্তাক্ত মহান ভাষা আন্দোলন। অনেক রক্তের বিনিময়ে ১৯৫৬ সালে পশ্চিমা শাসকরা উর্দুর সঙ্গে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। সেদিন পূর্ববঙ্গের বাঙালিরা ভাষার প্রশ্নে ছিল উত্তপ্ত ও উদ্বেলিত। বাংলা অক্ষর, ভাষা ও ব্যাকরণকে সহজ করার জন্য বাঙালিরা ২টি সংস্থার জন্ম দেয়। বাংলা ভাষা পরিকল্পনায় এদুটো প্রতিষ্ঠানই মুখ্য ভূমিকা রাখে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাবোর্ড, টেকস্টবুক বোর্ড তখনও গৌণ। এসব প্রতিষ্ঠান নিজনিজ ক্ষেত্রে প্রয়োজন মতো পরিভাষা প্রণয়নে ভূমিকা রাখে। বাংলা একাডেমি (১৯৫৭) ও বাংলা উন্নয়ন বোর্ড (১৯৬৩)। এদেশে পরিভাষা সম্পর্কিত চিন্তার সূত্রপাত হয়। মুহম্মদ আব্দুল হাই-এর ‘আমাদের পরিভাষা সমস্যায় সংস্কৃতের স্থান’ (১৯৬১) এবং ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ‘আমাদের পরিভাষা সমস্যা’ (১৯৬২) প্রবন্ধ দুটি পরিভাষার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে পরিভাষা প্রণয়নে ৩ জন মনীষীর নাম স্মরণযোগ্য। যেমন : আব্দুল হাই, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও সৈয়দ আলী আহসান।

পরিভাষা প্রণয়ন নীতি

বাংলা পরিষদ কর্তৃক প্রবর্তিত "পরিভাষা প্রণয়ন নীতিমালা " অনুসারে পরিভাষার ৫ বৈশিষ্ট্য বা গুণ থাকা আবশ্যক।

পরিভাষার ৫টি বৈশিষ্ট্য/গুণ যথাক্রমে-

  • সর্বজন স্বীকৃতি ও প্রয়োজনীয়তা
  • স্বাভাবিকতা ও সহজবোধ্যতা
  • অর্থবাচকতা ও বিশিষ্টার্থ প্রয়োগ
  • অনাড়ষ্টতা ও দ্ব্যর্থহীনতা
  • ধ্বনিমাধুর্য ও সংক্ষিপ্ততা

পরিভাষা নির্মাণের রীতি

বাংলা পরিষদের ভাষ্য অনুযায়ী ৫টি রীতি অনুসরণ করে পরিভাষা নির্মাণ করা যাবে-

১। দর্পণায়ন: ইংরেজি / বিদেশি ভাষার উচ্চারণ অপরিবর্তিত রেখে।

২। রূপায়ণ: ইংরেজি / বিদেশি শব্দের উচ্চারণ আংশিক পরিবর্তন করে। যেমন : হাসপাতাল, ডাক্তার, বোতল, আকাদেমি

৩। নির্মাণ: বাংলা ব্যাকরণ ও শব্দগঠনের রীতি অনুসারে সম্পূর্ণ নতুন শব্দ নির্মাণ।

৪। নবায়ন: অব্যবহৃত শব্দের সম্পূর্ণ বা আংশিক অর্থ পরিবর্তন / আংশিক বানান পরিবর্তন / পরিবর্তন না করে।

৫। কৃতঋণ: অন্য ভাষা থেকে শব্দ ধার করে। যেমন: Green>সবুজ (ফারসি)-এর বাংলা নাই।

উপনীতিমালা

বাংলা পরিষদ কর্তৃক প্রণীত "পরিভাষা ব্যবহারের আবশ্যক ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা" অনুসরণ করা উচিত। ‌

  • একই অর্থ নির্দেশের জন্য বিভিন্ন শব্দ এবং বিভিন্ন অর্থ নির্দেশের জন্য একই শব্দ বৈজ্ঞানিক তথ্যাদির সুষ্ঠু প্রকাশ ব্যাহত করে বিধায় যথাসম্ভব একটিমাত্র বাংলা প্রতিশব্দ নির্বাচন করতে হবে।
  • ‌ বিদেশি ভাষার সমার্থক শব্দসমূহের জন্য পৃথক পৃথক পরিভাষা বা প্রতিশব্দ তৈরি করা যাবেনা।
  • ‌ কোনো বিভাষি শব্দ যদি জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে তাহলে পৃথক পৃথক বাংলা প্রতিশব্দ তৈরি হতে পারে। তবে ভিন্ন প্রতিশব্দ যদি ইতোমধ্যেই চালু না থাকে তাহলে বাংলাতেও বিভিন্ন শাখায় এরূপ ব্যবস্থা করা যায় কি-না ভেবে দেখতে হবে।
  • ‌ বাংলা প্রতিশব্দ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাষি শব্দটির শুধু বাহ্যিক অর্থ বিবেচনা না করে শব্দটির ব্যবহারিক ও বৈজ্ঞানিক সত্তায় প্রতীকী নাম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে তার প্রতি লক্ষ্য রেখে অর্থাৎ অন্তর্নিহিত অর্থব্যঞ্জনা অনুধাবন করে উপযুক্ত বাংলা প্রতিশব্দ নির্বাচন করতে হবে।
  • ‌ নির্বাচিত শব্দ যথাসম্ভব বানান জটিলতা, উচ্চারণ জটিলতা, বর্ণজট বা যুক্তবর্ণ মুক্ত, দ্বিত্ব উচ্চারণ ও বাহুল্যমুক্ত তথা সহজ সরল, সংক্ষিপ্ত ও প্রাঞ্জল হতে হবে।
  • বহুল ব্যবহৃত যেসব বিভাষি শব্দের প্রতিশব্দ ইতোমধ্যে রয়েছে বা মূল ভাষার শব্দটি প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে সেসব শব্দ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে ব্যবহৃত শব্দ, যন্ত্রপাতি, প্রসাধনী, ক্রীড়া সামগ্রী, নতুন আমদানিকৃত পণ্য বা সরঞ্জাম ইত্যাদির অপরিবর্তিত রাখার যথাসম্ভব চেষ্টা করা হবে। তবে তা আরোপিত শর্তাদি মেনে।
  • ‌ নবনির্মিত শব্দটি বাংলা ব্যাকরণকে মেনে চলে কিনা অর্থাৎ তার সাথে বিভক্তি, প্রত্যয়, উপসর্গ, অনুসর্গ ইত্যাদি যুক্ত হতে পারে কি-না তার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে।
  • বাংলা ব্যাকরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এমন শব্দ নির্বাচন করা যাবেনা।
  • ‌নির্মিত শব্দটি যাতে শ্রুতিমধুর ও সহজবোধ্য হয় তার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে। তবে এর চাইতেও দ্ব্যর্থহীনতা গুণটিতে অধিকতর মনোনিবেশ থাকা বাঞ্ছনীয়।

দর্পণায়নের প্রাসঙ্গিক নীতিমালা

  • বাংলায় কোন প্রতিশব্দ বর্তমান না থাকলে আগত শব্দটি প্রয়োগ করা যাবে।

যেমন: পুলিশ চোরকে ধরতে এসেছে। পুলিশের কোন বাংলা প্রতিশব্দ নেই।

  • বাংলায় টেকসই প্রতিশব্দ না থাকলে প্রয়োগ আগত শব্দটি ব্যবহার করা যাবে।

যেমন: ছেলেমেয়েরা টেলিভিশন দেখছে। টেলিভিশন শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ দূরদর্শন। তবে এ শব্দটি টেকসই নয়।

  • মূল ভাষায় প্রতিশব্দটি অতি অপ্রচলিত হলে আগত শব্দ প্রয়োগ করা যায়।

যেমন: টেবিলে কলমটা রাখো। টেবিলের প্রতিশব্দ চৌপায়া, তবে এটি একদমই অপ্রচলিত।

  • বাংলা প্রতিশব্দটি সর্বসাধারণের বোধগম্য না হলে আগত শব্দটি ব্যবহার করা যাবে। যেমন:

গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ডিগ্রির প্রতিশব্দ মাননির্ণয়ক বিশেষ বলে অভিহিত করা হয়, কিন্তু এটি দ্বারা ডিগ্রির কোন ভাবই প্রকাশ পায়না। তাই ডিগ্রি লেখাই শ্রেয়।

  • পৌনঃপুনিক ব্যবহারের কারণে প্রতিশব্দ থাকলেও আগত শব্দটি প্রয়োগ করা যাবে।

যেমন: অ্যাকাউনট্যান্ট পদে লোক নিয়োগ করা হবে। Accountant-এর প্রতিশব্দ হিসাবরক্ষক। কিন্তু অ্যাকাউনট্যান্ট বারবার ব্যবহৃত হয়।

  • বাংলায় সহজে গ্রহণযোগ্য ও অভিযোজন ক্ষমতাসম্পন্ন আগত শব্দটি প্রয়োগ করা যাবে।

যেমন: টেলিফোন নষ্ট হয়ে গেছে। টেলিফোনের প্রতিশব্দ ‘দূরালাপনী’ কিন্তু টেলিফোন অধিকতর সহজ।

  • অফিস-আদালতে বহুল ব্যবহৃত আগত শব্দটি ব্যবহার করা যাবে।

যেমন: বিল জমা দেওয়া হোক। এখানে বিলের পরিবর্তে অন্য কোনো শব্দ প্রয়োগ করা ঠিক নয়।

  • বহুল ব্যবহৃত যেসব বিভাষি শব্দের প্রতিশব্দ ইতোমধ্যে রয়েছে বা মূল ভাষার শব্দটি প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে সেসব শব্দ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে ব্যবহৃত শব্দ, যন্ত্রপাতি, প্রসাধনী, ক্রীড়া সামগ্রী, নতুন আমদানিকৃত পণ্য বা সরঞ্জাম ও বহুল প্রচলিত বিশেষ্যপদের অপরিবর্তিত রাখার যথাসম্ভব চেষ্টা করা হবে। তবে তা আরোপিত শর্তাদি মেনে।

উল্লেখযোগ্য পরিভাষা

  • Camera- চিত্রনী
  • Calculas- পরিকলন
  • Comission- অধিষদ (অধিশদ)
  • Computer- গণনী
  • Nihilism - শূন্যতাবাদ
  • attested -প্রত্যয়িত
  • Consumer Goods - ভোগ্যপণ্য

বৈজ্ঞানিক পরিভাষা

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  • বিজ্ঞানচর্চায় বাঙলা পরিভাষা: ইতিহাস, সমস্যা ও সমাধান — লেখক - নৃপেন ভৌমিক; প্রকাশক - পার্থশঙ্কর বসু, নয়া উদ্যোগ, ২০৬ বিধান সরণি, কলকাতা-৬; প্রথম প্রকাশ - ফেব্রুয়ারি, ২০০২; আইএসবিএন ৮১-৮৫৯৭১-৯৯-৪