বিষয়বস্তুতে চলুন

ইনফ্লুয়েঞ্জা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইনফ্লুয়েঞ্জা
প্রতিশব্দফ্লু
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, প্রায় ১,০০,০০০ গুণ বিবর্ধিত
বিশেষত্বসংক্রামক রোগ
লক্ষণজ্বর, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা ব্যাথা, পেশী ও গিরায় ব্যাথা, মাথাব্যাথা, কাশি, অবষাদগ্রস্থতা[]
রোগের সূত্রপাতভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ১ থেকে ৪ দিনের মধ্যে[]
স্থিতিকাল~১ সপ্তাহ[]
কারণইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস[]
প্রতিরোধহাত ধোয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা, সার্জিক্যাল মাস্ক[]
ঔষধভাইরাস নিরোধক ঔষধ যেমন ওসেলটামিভির[]
সংঘটনের হারপ্রতি বছর ৩০–৪০ লক্ষ মানুষ মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হন[]
মৃতের সংখ্যাপ্রতি বছর ৬,৫০,০০০ মানুষ শ্বাসযন্ত্রীয় জটিলতায় মারা যান[]

ইনফ্লুয়েঞ্জা (ইংরেজি: influenza) যা অনেক সময় ফ্লু নামেও পরিচিত হচ্ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট এক প্রকার সংক্রামক রোগ[] এই রোগের লক্ষণগুলো হালকা থেকে গুরুতর হতে পারে।[] সবচেয়ে প্রচলিত লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা ব্যাথা, পেশী ও হাঁড়ের গিরায় (অস্থিসন্ধি) ব্যথা, মাথাব্যথা, কাশি এবং ক্লান্তি অনুভব করা। লক্ষণগুলো সাধারণত ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার দুই দিন পরে শুরু হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এক সপ্তাহেরও কম সময় ধরে থাকে। তবে কাশির সমস্যা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে থাকতে পারে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই রোগে ডায়রিয়া এবং বমি হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিলেও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এটি ততোটা প্রচলিত নয়। সাধারণত ডাইরিয়া এবং বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব হওয়ার উপসর্গ দেখা দেয় গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস রোগের কারণে যা ইনফ্লুয়েঞ্জার সাথে সম্পর্কিত না হলেও মাঝে মাঝে ভুলক্রমে এটিকে পাকস্থলীর ফ্লু বা ২৪-ঘণ্টার ফ্লু হিসেবে অভিহিত করা হয়।[] ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণে সৃষ্ট জটিলতাগুলোর মধ্যে রয়েছে ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া, মাধ্যমিক পর্যায়ের ব্যাক্টেরিয়াজনিত নিউমোনিয়া, সাইনুসাইটিস বা সাইনাসের সংক্রমণ। এছাড়ার এই রোগের কারণে পূর্বে থাকা হাঁপানি বা হৃদরোগের মতো অন্যান্য স্বাস্থ্য জটিলতাগুলোর উপরে খারাপ প্রভাব ফেলে যা সার্বিকভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থার অবনতি ঘটাতে পারে।[]

চার ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মধ্যে তিনটি মানুষকে আক্রান্ত করে যেগুলো টাইপ এ, টাইপ বি, এবং টাইপ সি হিসেবে অভিহিত। এখন পর্যন্ত টাইপ ডি ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস মানুষকে সংক্রান্ত করার কথা জানা যায়নি, কিন্তু এটিরও মানুষকে সংক্রমিত করার সংক্ষমতা রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়। সাধারণত হাঁচি ও কাশির ফলে বাতাসে ছড়িয়ে পড়া শ্বাসযন্ত্রীয় ক্ষুদ্র জলকণার (রেসপিরেটরি ড্রপলেট) মাধ্যমে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বল্প দূরত্বে থাকা মানুষের মধ্যে হাঁচি-কাশির দেওয়ার ফলে সংক্রমণে ঝুঁকি বাড়ে বলে ধারণা করা হয়। এছাড়াও ভাইরাস লেগে থাকা বস্তু ধরলে বা স্পর্শ করলে এবং তারপর সেই অংশ দিয়ে চোখ, নাক, বা মুখ স্পর্শ করলে এটি সংক্রমিত হতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জায় সংক্রমিত একজন ব্যক্তি লক্ষণ অপ্রকাশিত থাকাসহ প্রকাশকালীন সময়েও অপরকে সংক্রমণ করার ক্ষমতা রাখেন। আক্রান্ত ব্যক্তির গলা, লালা, বা নাক থেকে সংগ্রহকৃত তরলের নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। দ্রুততার সাথে ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের দ্রুত পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা (র‍্যাপিড টেস্ট) রয়েছে, তবে এই ধরনের দ্রুত পরীক্ষার ফলাফল না-সূচক আসলেও তিনি ইনফ্লুয়াঞ্জায় আক্রান্ত হতে পারেন। এজন্য ভাইরাসের আরএনএ খুঁজে বের করতে সমর্থ এরকম পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন পদ্ধতিতে করা পরীক্ষাগুলোর অপেক্ষাকৃত সঠিকতর ফলাফল প্রদান করে।

ঘন ঘন ভালো করে হাত ধোঁয়া ও সার্জিকাল মাস্ক পরিধানের মাধ্যমে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধ করা সম্ভব। যাদের ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতি বছর ইনফ্লুয়েঞ্জার টীকা নেওয়া পরামর্শ দেয়। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বা সিডিসি ছয় বছর থেকেই সবাইকে এই টীকা নেওয়ার পরামর্শ প্রদান করে। এই টীকা সাধারণত তিন থেকে চার ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রেই কার্যকরী। সাধারণত এই টীকা শরীরে কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলে না এবং সহজেই মানিয়ে নেয়। যেহেতু ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দ্রুত বিবর্তিত হয় তাই কোনো বছরের জন্য প্রস্তুতকৃত টীকা পরবর্তী বছরের জন্য কার্যকরী নাও হতে পারে। নিউরামিনিডেজ ইনহিবিটর ধরনের ওষুধের মধ্যে ওসোমিভিরের জাতীয় অ্যান্টিভাইরাল ওষুধগুলো ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। অবশ্য ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের শারীরিক অবস্থা ভালো তাদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের কার্যকারিতার প্রভাব এর ঝুঁকির চেয়ে বেশি নয়। এছাড়া যেসকল আক্রান্ত ব্যক্তির অন্যান্য স্বাস্থ্যগত জটিলতা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও এ ধরনের ওষুধের কার্যকরীতা পাওয়া যায়নি।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Influenza (Seasonal)"World Health Organization (WHO)। ৬ নভেম্বর ২০১৮। ৩০ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৯ 
  2. Longo, Dan L. (২০১২)। "Chapter 187: Influenza"। Harrison's principles of internal medicine (18th সংস্করণ)। McGraw-Hill। আইএসবিএন 978-0-07-174889-6 
  3. "Key Facts About Influenza (Flu)"Centers for Disease Control and Prevention (CDC)। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪। ২ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৪ 
  4. Duben-Engelkirk, Paul G.; Engelkirk, Janet (২০১১)। Burton's microbiology for the health sciences (9th সংস্করণ)। Wolters Kluwer Health/Lippincott Williams & Wilkins। পৃষ্ঠা 314। আইএসবিএন 978-1-60547-673-5 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
শ্রেণীবিন্যাস
বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান