আর্কেডিয়া শিক্ষা কেন্দ্র
আর্কেডিয়া শিক্ষা কেন্দ্র বাংলাদেশের ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কানারচরে ধলেশ্বরী নদীর তীরে অবস্থিত।[১][২] এটি একটি উভচর কাঠামোর ইমারত। ইমারতটি যে এলাকায়, সেটি বছরের কয়েক মাস থাকে পানির নিচে। যখন পানি আসে, তখন ইমারতটি ভেসে থাকে।আবার যখন পানি চলে যায়, তখন তা মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকে।[২] ইমারতটি তৈরি হয়েছে স্থানীয় বস্তু দিয়ে।[৩][৪] এছাড়াও শিক্ষা কেন্দ্রের অন্তর্গত হল প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোস্টেল, নার্সারি ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।[৫] ইমারতটির জন্য ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্মাণ শেষ হয়। ইমারতটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৪৩ লাখ ৩০ হাজার ৭০০ টাকা।[৩]
উভচর স্থাপত্য
[সম্পাদনা]মালেকা কল্যাণ ট্রাস্ট জমি খরিদ করেছিল, যাতে তারা তাদের একটি প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে।[৬] জমিটি বছরের পাঁচ মাস জলমগ্ন থাকে।[১] এবং এর পারিপার্শ্বিক অবস্থা এখানে ইমারত নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রতিকূল ছিল।[২]
বাংলাদেশের স্থপতি সাইফ উল হক[৭] একটি ভাসমান কাঠামো তৈরি করেন যা বর্ষাকালে পানিতে ভেসে থাকে এবং শুষ্ক মৌসুমে এটি মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকে যার দরুন ইমারতটি সারা বছর ঐ জমির উপরে টিকে থাকে।[২] অধিকন্তু, এখানে বন্যা প্রতিরোধী স্বল্প মূল্যের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে যেমন বাঁশ, ড্রাম, টায়ার দড়ির মত জিনিস দিয়ে।[২][৩][৪] এই ইমারতটি নির্মাণে স্থানীয় বাড়ি নির্মাণ কৌশল ব্যবহৃত হয়েছে।[২] এই ইমারত নির্মাণে ব্যবহৃত উভচর স্থাপত্য কৌশলকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে তা জলবায়ু পরিবর্তনে সমাধান দিতে পারে কেননা, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।[৮].
ইমারতটি এমনভাবে নির্মিত যাতে শিক্ষার্থীরা পাঠদান কার্যক্রম চলাকালে প্রকৃতির সাহচর্য পায়।[২]
মালেকা কল্যাণ ট্রাস্ট
[সম্পাদনা]মালেকা কল্যাণ ট্রাস্ট একটি সমাজকল্যাণমূলক সংগঠন।[৬] তাদের কার্যক্রমের মধ্যে প্রাকপ্রাথমিক বিদ্যালয়, কারিগরি প্রশিক্ষব কেন্দ্র, নার্সারি ও একা থাকা নারীদের জন্য হোস্টেলের সুবিধা নিশ্চিতকরণ অন্তর্গত।[৬]
২০১৯ সালের আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার পায় মালেকা কল্যাণ ট্রাস্টের আর্কেডিয়া শিক্ষা প্রকল্প।[১][৯] এটিতে স্থানীয়ভাবে পাওয়া সামগ্রী ও স্থানীয় নির্মাণ কৌশলকে কাজে লাগে জলমগ্ন পরিবেশে ইমারত নির্মাণের কৌশল ব্যবহৃত হয়েছে যা জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা পালন করে।[২] রাজিয়া আলম আগা খান ও তাতারস্তান প্রজাতন্ত্রের স্টেট কাউন্সিলর মিন্তিমার শাইমিতেভের নিকট থেকে ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার গ্রহণ করেন।[৩][৪][১০]
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে উচ্চ ঝুঁকির দেশগুলোর মাঝে অন্যতম।[১১] এখানে জলবায়ু পরিবর্তনের দরুন প্রতিবছর মানুষজন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।[১২][১৩] স্থানীয় সামগ্রীকে কাজে লাগিয়ে স্বল্পমূল্যে তৈরি এই ধরনের স্থাপত্য বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে।[২]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ McGuigan, Cathleen (আগস্ট ২৯, ২০১৯)। "The Winners of the 2019 Aga Khan Award for Architecture"। Architectural Record (English ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩০।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ "Arcadia Education Project | Aga Khan Development Network"। www.akdn.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২৮।
- ↑ ক খ গ ঘ "পুরস্কার জিতল আর্কেডিয়া এডুকেশন"। প্রথম আলো। ৩০ আগস্ট ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ গ "আগা খান পুরস্কার পেল আর্কেডিয়া প্রজেক্ট"। সমকাল। ৩০ আগস্ট ২০১৯। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- ↑ "Aga Khan Award: 2 Bangladeshi projects shortlisted"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৪-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২৮।
- ↑ ক খ গ "Shortlist for the 2019 Aga Khan Award for Architecture announced"। Architectural Digest Middle East (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৮-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২৮।
- ↑ GmbH, BauNetz Media (২০১৯-০৫-০৬)। "Von Kinderdorf bis Fischmarkt - Shortlist des Aga Khan Award 2019"। BauNetz (জার্মান ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২৮।
- ↑ "This 'waterproof' bamboo school in Bangladesh could be the solution to rising sea levels due to climate change"। India Today। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৩।
- ↑ Woodyatt, Amy (২০১৯-০৮-২৯)। "Winners of prestigious Aga Khan architecture award announced"। CNN Style (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।
- ↑ "International experts praise Bangladesh's excellence in architecture"। unb.com.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২০।
- ↑ "Bangladesh, India Most Threatened by Climate Change, Risk Study Finds | National Geographic (blogs)"। web.archive.org। ২০১৬-০৫-০৩। Archived from the original on ২০১৬-০৫-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২৮।
- ↑ "GLOBAL CLIMATE RISK INDEX 2019" (পিডিএফ)। German Watch। ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "Wayback Machine" (পিডিএফ)। web.archive.org। ২০১৭-০৯-২৫। Archived from the original on ২০১৭-০৯-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২৯।