শাওয়ার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(Shawar থেকে পুনর্নির্দেশিত)

শাওয়ার (আরবি: شاور بن مجير السعدي) (মৃত্যু ১৮ জানুয়ারি ১১৬৯) ছিলেন ফাতেমীয় মিশরের উজির। উজির হলেও তিনি কার্যত শাসক ছিলেন। ১১৬২ সালের ডিসেম্বর থেকে ১১৬৯ সালে নিহত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি উজিরের পদে ছিলেন।[১] তিনি সালাহউদ্দিনের চাচা শিরকুহর হাতে নিহত হন।[২] শাওয়ার দ্রুত মিত্রতা পরিবর্তন করতেন।[৩] শত্রুর হস্তগত না হওয়ার জন্য তিনি রাজধানী ফুসতাত শহর জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।[৪]

জীবনী[সম্পাদনা]

ফাতেমীয় খলিফা আল-আদিদের খিলাফতকালে শাওয়ার উজির হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন।

১২শ-শতাব্দীর মধ্যভাগে ফাতেমীয় খিলাফত দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং মিশর নৈরাজ্যকর অবস্থার দিকে ধাবিত হতে থাকে। কাগজেকলমে খলিফা রাষ্ট্রপ্রধান হলেও প্রকৃত ক্ষমতা ছিল উজিরের হাতে। এছাড়াও অন্যান্য গভর্নররা ক্ষমতার লড়াইয়ে সহিংসতা শুরু করে। ১১৫০ এর দশকে শাওয়ার উচ্চ মিশরে পাঁচ বছর গভর্নর হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। কিন্তু ফাতেমীয়দের পক্ষ ত্যাগ করে তিনি দামেস্কের সুলতান নুরউদ্দিন জেনগির সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন। শাওয়ার সুলতানের সহায়তা নেন,[৫] এবং কায়রোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তার পূর্বসূরিকে সপরিবারে হত্যা করেন।[৬] কিন্তু নয়মাস পরে তার অধীনস্থ দিরগাম তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। এরপর শাওয়ার পুনরায় নুরউদ্দিনের সহায়তা চান। ফলে নুরউদ্দিন তার অন্যতম সেনাপতি শিরকুহকে দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য প্রেরণ করেন। এরপর দিরগাম নিহত হন এবং শাওয়ার পুনরায় ক্ষমতালাভ করেন। তবে এরপর শাওয়ার শিরকুহর সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন এবং জেরুজালেমের ক্রুসেডার রাজা প্রথম আমালরিকের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন। ১১৬৪ সালের আগস্ট-অক্টোবরে আমালরিক শিরকুহকে বিলবাইসে আক্রমণ করেছিলেন।[৭] এরপর যুদ্ধবিরতি হয় এবং শিরকুহ ও আমালরিক উভয়ে মিশর থেকে ফিরে আসেন।

১১৬৬ সালে শিরকুহ আক্রমণের চেষ্টা চালান। কিন্তু শাওয়ার আমালরিকের কাছে সহায়তা চান। ফলে আমালরিক ১১৬৭ সালের জানুয়ারিতে এগিয়ে আসেন। মিশরের অভ্যন্তরে কায়রোর দক্ষিণে আল বাবাইন পর্যন্ত লড়াই চলতে থাকে। মার্চে শিরকুহ আমালরিকের বিরুদ্ধে একটি বড় বিজয় অর্জন করেন। এর ফলে পুনরায় যুদ্ধবিরতি হয়। শিরকুহ ও আমালরিক ১১৬৭ সালের আগস্টে নিজ নিজ বাহিনী নিয়ে পিছিয়ে আসেন এবং শাওয়ার পুনরায় ক্ষমতাসীন হন। তবে আমালরিক কায়রোতে একটি ঘাটি রেখে এসেছিলেন এবং মিশর কর্তৃক জেরুজালেমের সরকারকে অধিক হারে কর দিতে হয়।

১১৬৮ সালের শীতে আমালরিক পুনরায় মিশর আক্রমণ করেন। এসময় শাওয়ার তার মিত্রতা বদলে শিরকুহর পক্ষ নেন। শিরকুহ ও শাওয়ার একত্রে ক্রুসেডারদেরকে মিশরের বাইরে পাঠাতে লড়াই করেন। কিন্তু আমালরিক এগিয়ে এসে ফুসতাতের দক্ষিণে এসে পড়েন। আমালরিকের আক্রমণ অবশ্যম্ভাবী বিবেচনা করে শহরকে তার হাত থেকে দূরে রাখার জন্য শাওয়ার শহর জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। মিশরীয় ইতিহাসবিদ আল-মাকরিজির বর্ণনা অনুযায়ী:

শাওয়ার ফুসতাত খালি করার নির্দেশ দেন। তিনি নাগরিকদেরকে তাদের অর্থ ও সম্পদ ফেলে সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেন। শহর ত্যাগের সময় আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলার কারণে পলায়নরত জনতার ভীড়কে ভূতের বিশাল বাহিনী মনে হচ্ছিল.... কেউ কেউ মসজিদ ও হাম্মামে আশ্রয় নেয়...বিলবাইসের মত খ্রিষ্টানদের হাতে আরেকটি গণহত্যার অপেক্ষা করতে থাকে। শাওয়ার ২০,০০০ ন্যাপথা পাত্র ও ১০,০০০ আলোক বোমা [মিশআল] পাঠান এবং শহরজুড়ে বণ্টন করে দেন। আগুন ও ধোয়া শহরকে গ্রাস করে ফেলে এবং ভয়ানকভাবে আকাশস্পর্শ‌ করে। অগ্নিশিখা ৫৪ দিন পর্যন্ত জ্বলেছিল....[৪]

কিন্তু শিরকুহ আমালরিককে পিছু হটতে বাধ্য করেন এবং নিজ বাহিনী নিয়ে মিশর জয় করে নেন। ১১৬৯ সালের জানুয়ারি কায়রোর পতন হয় এবং শাওয়ারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। শিরকুহ নতুন উজির হন তবে তার শাসনকাল মাত্র দুই মাস স্থায়ী ছিল। তিনি মারা যাওয়ার পর তার ভ্রাতুষ্পুত্র সালাহউদ্দিন উজিরের দায়িত্ব পান।[৮]

সাংস্কৃতিক প্রভাব[সম্পাদনা]

শাওয়ার, শিরকুহ ও আমালরিকের মধ্যকার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব রবার্ট ই. হাওয়ার্ডে‌র "গেটস অব এম্পায়ার" গ্রন্থের গল্পে বর্ণিত হয়েছে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Amin Maalouf (১৯৮৪)। The Crusades Through Arab Eyes। Al Saqi Books। পৃষ্ঠা 159–161আইএসবিএন 0-8052-0898-4 
  2. Beeson, Irene (সেপ্টেম্বর–অক্টোবর ১৯৬৯)। "Cairo, a Millennial"Saudi Aramco World: 24, 26–30। ২০০৭-০৯-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-০৯ 
  3. Ismail Abaza। "Saladin and his Cairo"। touregypt.net। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৭-২৮ 
  4. Dr. Zayn Bilkadi (জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫)। "The Oil Weapons"Saudi Aramco World। পৃষ্ঠা 20–27। ৯ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৬ 
  5. "Ayyubid Period"। touregypt.net। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-০৯ 
  6. Stanley Lane-Poole (১৯০১)। A History of Egypt in the Middle Ages। Methuen & Co.। পৃষ্ঠা 176ওসিএলসি 602503339 
  7. Gibb, Sir Hamilton (২০০৬)। The Life of Saladin। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 8। আইএসবিএন 978-0-86356-928-9 
  8. Christopher Tyerman (২০০৬)। God's War: A New History of the Crusades। Belknap। পৃষ্ঠা 347–349। আইএসবিএন 978-0-674-02387-1 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]