হাচিকো
![]() হাচিক | |
প্রজাতি | কুকুর |
---|---|
বংশ | আকিতা ইনু |
লিঙ্গ | পুরুষ |
জন্ম | হাচিক ১০ নভেম্বর ১৯২৩ অদাতে, আকিতা |
মৃত্যু | ৮ মার্চ ১৯৩৫ (১১ বছর বয়সে) শিবুয়্যা, টোকিও |
সমাধি | উয়েনো, টোকিও-র জাতীয় প্রকৃতি এবং বিজ্ঞান জাদুঘর |
যে জাতির | জাপান |
যে জন্য পরিচিত | দীর্ঘ ৯ বছর যাবত মৃত মালিকের জন্য অপেক্ষা |
মালিক | হিদেসাবুরে উয়েনো |
সন্তান | নাই |
চেহারা | শরীর: সাদার সাথে বাদামি ও হালকা সোনালি বর্ণ মুখমন্ডল: উপরে দিকে সাদা বর্ণ |
পুরস্কার | টোকিও-র শিবুয়্যা ট্রেন স্টেশনের সামনে ব্রোঞ্জ দ্বারা নির্মিত হাচিকোর প্রতিমুর্তি (যেখানে সে মালিকের জন্য অপেক্ষা করতো) |
হাচিক (ハチ公, ১০ ই নভেম্বর,১৯২৩ – ৮ ই মার্চ,১৯৩৫) ছিল একটি আকিতা কুকুর। হাচিকোর জন্ম হয়েছিল আকিতা প্রশাসনিক এলাকার, অদাতে শহরের নিকটে।[১] মালিকের প্রতি আনুগত্যের কারণে হাচিকো বিশ্ববাসীর মনে জায়গা পেয়েছে।[২] জাপানি ভাষায় হাচিক-কে 'চুকেন হাচিকো' (忠犬ハチ公, "বিশ্বস্ত কুকুর হাচিক") বলে সম্বোধন করা হয়। হাচি মানে আট, এবং কো মানে স্নেহ[৩]
জীবনী[সম্পাদনা]
১৯২৪ সালে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিভাগের অধ্যাপক হিদেসাবুরে উয়েনো, সোনালী বাদামি আকিতা কুকুর পোষ্য প্রাণী হিসেবে গ্রহণ করেন। মালিক জীবদ্দশায় হাচিকো প্রতিদিন শেষ সময়ে শিবুয়া স্টেশনে তাকে অভ্যর্থনা জানাতেন। ১৯২৫ সালের মে পর্যন্ত তাদের মধ্যে এ নিত্যনৈমিত্তিক ভাবে চলতে থাকে। অধ্যাপক মস্তিষ্ক রক্তক্ষরণ রোগে আক্রান্ত হন এবং মারা গেলে আর স্টেশনে ফিরেন না যেখানে হাচিকো তার ফেরার অপেক্ষায় থাকতো। হাচিকো তার মালিকের অপেক্ষায় ছিল তার মালিকের মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে।পরবর্তী ৯ বছর,৯ মাস,পনের দিনের প্রত্যেকটি দিন হাচিকো তার মালিক উয়েনোর ফিরার অপেক্ষা করেছে। স্টেশনে যে সময়ে ট্রেন উপস্থিত হত সেই সময়েই হাচিকোকে দেখা যেত ঠিক একই জায়গায়, যেখানে সে তার মালিকের জন্য অপেক্ষা করত।
উয়েনোর সাথে অন্য যে সকল ট্রেন যাত্রীরা প্রতি দিন তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে যেত তাদের অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলো হাচিকো।উয়েনোদের সাথে যাদের প্রতিদিন দেখা হত, এমনকি যারা ট্রেন স্টেশনে কর্মরত ছিলেন কিন্তু বন্ধুসুলভ ছিলনা একসময় তাদেরও মনোভাব বদলে যায়। যাই হোক ৪ অক্টোবর ১৯৩২ সালে হাচিকোর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পাই আসাহি শিম্বুন পত্রিকাতে। পত্রিকাতে বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর মানুষেরা হাচিকোর জন্য খাবার নিয়ে আসা শুরু করে।[৪]
প্রকাশনী[সম্পাদনা]
১৯৩২ সালে উয়েনোর শিক্ষার্থী হিরোকিচি সাইতো (তিনি আকিতা প্রজাতি কুকুর বিশেষজ্ঞ ছিলেন) শিব্যুয়া ট্রেন স্টেশনের নিকট হাচিকোকে দেখতে পান। হাচিকোকে অনুসরন করে তিনি পৌঁছ যান কোবায়াশি হোমে (তিনি অধ্যাপক উয়েনই কিকুজাবোরোর কোবায়াশির বাসার পূর্ব মালি ছিলেন) [৫]) সেখান থেকে সাইতো হাচিকোর জীবন সম্পর্কে জানতে পারেন। সংক্ষিপ্ত আলাপের পর এই শিক্ষার্থী হাচিকোর জীবন নিয়ে একটি তথ্য প্রকাশ কররেন। তার গবেষণাতে প্রকাশ পায় শুদ্ধ আকিতা প্রজাতির কুকুর মাত্র ৩০ টি বেঁচে আছে শিব্যুয়া স্টেশনের হাচিকো সহ।
তিনি প্রায়ই হাচিকোকে দেখতে আসতেন ¨ এবং এক বছরের মাঝে সে কিছু পত্রিকাতে হাচিকোর মালিকের প্রতি অনুগত্যর বিষয় নিয়ে প্রকাশনা চালান। ১৯৩২ সালে টোকিওতে আশাহি শিম্বুন মাসিকি পত্রিকা প্রকাশ পায় যেখানে হাচিকোকে জাতীয় চেতনার প্রতীক হিসেবে প্রকাশ করা হয়়। মালিকের স্মৃতির প্রতি তার যে বিশ্বস্ততা তা জাপানের মানুষদের সচেতন করে তুলে এবং পারিবারিক আনুগত্যের একটি শক্তি অর্জন করতে সাহায্য করে। এমনকি শিক্ষক ও পিতা মাতারা আনুগত্যর উদাহরণ হিসেবে বাচ্চাদের হাচিকোর মত আদর্শবান হতে বলতেন। জাপানের একজন ভালো পরিচিত চারুকলা শিল্পী কুকুরে একটি ভাস্কর্য তৈরি করেন এবং সারা শহরের মাঝে একটা চেতনা ছড়িয়ে পরে আকিতা প্রজাতির কুকুর বংশ বৃদ্ধি প্রকল্পে।
এমনকি হাচিকো সারা জাতি এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের কাছে জাতীয় প্রতীক ও কিংবদন্তি হয়ে উঠলো।.[৬]
ব্রোঞ্জ মূর্তি[সম্পাদনা]
১৯৩৪ সালে শিব্যুয়া স্টেশন এ হাচিকো সাদৃশ মূর্তি স্থাপন করা হয় (৩৫°৩৯′৩২.৬″ উত্তর ১৩৯°৪২′২.১″ পূর্ব / ৩৫.৬৫৯০৫৬° উত্তর ১৩৯.৭০০৫৮৩° পূর্ব), যা হাচিকোর জীবনকে সবার সামনে তুলে ধরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হাচিকোর মূর্তিটি পূনরায় নির্মানের চেষ্টা করা হয়। ১৯৪৮ সালে তাকেসি আন্ডোর (যে ছিলেন হাচিকোর প্রথম মূর্তির কারুকারির ছেলে) নেতৃত্বে হাচিকোর মূর্তিটি পুনরায় নির্মানের জন্য একটি দল গঠন করা হয়[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এবং সে দ্বিত্বীয় মূর্তি নির্মাণ করেন। নতুন মূর্তিটি উৎসব পালনের মাধ্যমে স্থাপন করা হয়[৭] ১৯৪৮ সালে হাচিকোর মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল, এবং জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়। স্টেশনের প্রবেশদ্বারককে "হাচিকো গুচ্ছি" বলা হয়, যার অর্থ "হাচিকো প্রবেশদ্বার " এবং এটি শিব্যুয়া স্টেশনের পঁাচটি প্রবেশদ্বারের মধ্যে একটি।
জাপান সাময়কি পত্রিকাতে একটি কৌতুক প্রকাশ পায় যা সবাইকে এপ্রিলফুল বানায়। কৌতুকে বলা হয় ১ এএপ্রিল ২০০৭ এর মধ্য রাত ২ টার দিকে ব্রোঞ্জ মূর্তিটি চুরি হয়েছে। সসন্দেহে রয়েছে ধাতব চোর।এই মিথ্যা ঘটনা খুব বিস্তারিত বলা হয়। [৮]
হাচিকোর আরেকটি সাদৃশ মূর্তি হাচিকোর গ্রামের বাড়ি, অদাত্যে স্টেশনএর সামনে অবস্থিত। ২০০৪ সালে আকিতা কুকুর যাদুঘরে সামনে আসল পাথরের তৈরি নতুন একটি হাচিকোর মূর্তি স্থাপন করা হয়।
স্টেশনের ঠিক যেখানে হাচিকো তার মালিকের জন্য অপেক্ষা করতো সেখানে ব্রোঞ্জ দ্বারা তার পায়ের পদ চিহ্ন চিহ্নিত করা হহয়। যা তার মালিকের প্রতি আনুগত্যের বিষয় ফুটিয়ে তুলে।
চলচ্চিত্র এবং বই[সম্পাদনা]

১৯৮৭ সালে Hachi-kō (হাচিকো মোনোগাতারী ) ハチ公物語 চলচ্চিত্রের মূল বিষয় ছিল হাচিকো(সাহিত্যের ভাষায় "হাচিকোর গল্প "),[৯] চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছে সেইজিরো কোয়ামা,যা তার কথিত জিবনের ভিত্তিতে নির্মিত , এই চলচ্চিত্রের শেষাংসে হাচিকো ও তার মালিকের পূর্ণমিলনি ঘটে হাচিকোর মৃত্যুর সময় যা কল্পিত ভাবে নির্মিত যা হাচিকোর আনুগত্যের বিষয়টি প্রকাশ পায়।এই চলচ্চিত্রটির সাফল্য কে ব্লকবাস্টার হিসেবে গৃহীত হয়। এই চলচ্চিত্রটি জাপানের সচিকো কিনেমা কেঙ্কি যো সিনেমা হলে শেষ বড় ধরনের আয় এনে দেয়।[১০][১১]
হাচি: এক কুকুরের গল্প ,[১২] ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে চলচ্চিত্রটি প্রকাশ করা হয়, চলচ্চিত্রটি আমেরিকান অভিনেতা রিচার্ড গেরে হাচিকোর মালিকের রোল পালন করেন, পরিচালনা করেছেন লাসসে হলস্ট্রোম, আমেরিকান অধ্যাপক এবং তার পরিবার হাচিকো এবং তার মালিকের মধ্যে যে সম্পর্ক তার মূল ঘটনা অনুসরণ করেন।[১৩]
২০০৪ সালেও হাচিকো বাচ্চাদের বই এর বিষয় ছিল। বিষয়টির নাম ছিলো হাচিকো: দি ট্রু স্টরি অফ লয়াল ডগ, রচনা করেছেন পামেলা এস টারনার এবং মুদ্রিত করেছেন ইয়ান নাস্কিমবেন.[১৪] অন্য শিশু উপন্যাস যা সকল বয়সী পাঠকের জন্য লিখিত,বইটি হাচিকো ওয়েটস নামে পরিচিত, রচনা করেছেন লেসলেয়া নিউম্যান[১৫] মুদ্রিত করেছেন মাচিয়ো কোদাইরা, প্রকাশ করেছেন হেনরি হল্ট এন্ড কো । [১৬]
সংস্কৃতিতে জনপ্রিয়তা[সম্পাদনা]
"জুরাসিক বার্ক ",নামক এনিমেটেড টেলিভিশন সিরিজেরন ৪র্থ সিরিজের ৭তম পর্বের ফুতুরামা যাতে দেখানো হয় হোমেজ কে হাচিকোর চরিত্রের পরিবর্তে।,[১৭] [১৮]
সাদৃশ ঘটনা[সম্পাদনা]
হাচিকো সে সক্ল কুকুরদের মধ্যে অন্যতঅম যারা তাদের তাদের মালিকের প্রতি আনুগত্যের জন্য বিখ্যাত।একই ঘটনা পাওয়া যায় পুরতন গ্রীক হোমার এর গল্প আরগোস। অন্য আরো কিছু গল্প পাওয়া যায় যা হাচিকোর সাদৃশ যেমন ইতালীয় ডগ ফিদো, স্কোটিস কুকুর গ্রেফ্রিয়াস বব্বি ,এবং এরকম অসখ্য কুকুর আছে জারা তার মালিকের প্রতি বিশ্বস্ততার জন্য বিখ্যাত।
আরো দেখুন[সম্পাদনা]
- স্টারগেজিং ডগ,এই মাঙ্গাটি ব্যাতিক্রমী আনিগত্য পোষা প্রাণীর কাহিনী নিয়ে নির্মিত।
- জাপানের পোষা প্রাণির মালিকানা
গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]
পদটিকা[সম্পাদনা]
প্রান্তটিকা[সম্পাদনা]
- ↑ "Hollywood the latest to fall for tale of Hachiko"। The Japan Times। Kyodo News। জুন ২৫, ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪।
- ↑ "Unbelievable Facts"। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০১৪।
- ↑ টেমপ্লেট:Cite। web
- ↑ Dog faithfully awaits return of his master for past 11 years ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে story Posted Aug 18, 2007 by Chris V. (cgull) in Lifestyle of Digital journal. Accessed July 8, 2008
- ↑ Bouyet, Barbara. Akita, Treasure of Japan, Volume II. Hong Kong: Magnum Publishing, 2002, page 5. আইএসবিএন ০-৯৭১৬১৪৬-০-১. Accessed via Google Books April 18, 2010.
- ↑ Skabelund, Aaron Herald (২৩ সেপ্টেম্বর ২০১১)। "Canine Imperialism"। Berfrois। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০১১।
|প্রকাশক=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য) - ↑ Newman, Lesléa. Hachiko Waits. Macmillan, 2004. 91. Retrieved from Google Books on February 25, 2011. আইএসবিএন ০-৮০৫০-৭৩৩৬-১, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮০৫০-৭৩৩৬-২.
- ↑ "METAL THIEVES SUSPECTED: Shibuya's 'loyal dog Hachiko' vanishes overnight"। The Japan Times। এপ্রিল ১, ২০০৭। ২২ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে Hachikō Monogatari (ইংরেজি).
- ↑ Anne Tereska Ciecko, Contemporary Asian Cinema: Popular Culture in a Global Frame, Berg Publishers, 2006, pages 194–195. আইএসবিএন ১-৮৪৫২০-২৩৭-৬. Accessed via Google Books August 21, 2008.
- ↑ Company credits for Hachikō monogatari (1987) from Internet Movie Database
- ↑ ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে Hachiko: A Dog's Story (ইংরেজি)
- ↑ BEHIND THE FILM "Hachi: A Dog's Tale" Vicki Shigekuni Wong accessed online October 1, 2013
- ↑ Publishers Weekly Reviewed on: 05/17/2004 accessed via the internet on October 1, 2013
- ↑ Hachiko Waits ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে the various editions of the book on author's website accessed October 1, 2013
- ↑ Hachiko Waits is now available in paperback. Published by Square Fish, 2008. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে আইএসবিএন ০-৩১২-৫৫৮০৬-৬
- ↑ https://www.youtube.com/watch?v=M_MBFxSEpqo&t=18m14s
- ↑ "fremantle.wa.gov.au"। ১৬ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ http://www.imdb.com/title/tt1028532/
আরো পড়ুন[সম্পাদনা]
- Itoh, Mayumi (২০১৩)। Hachi: The Truth of the Life and Legend of the Most Famous Dog in Japan। Amazon.com Kindle E-book। এএসআইএন B00BNBWDQ4।
- Skabelund, Aaron Herald (২০১১)। Empire of Dogs: Canines, Japan, and the Making of the Modern Imperial World। Studies of the Weatherhead East Asian Institute। Columbia University। আইএসবিএন 978-0-8014-5025-9।
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

- "Behind the film "Hachi: A Dog's Tale""। Vicki Shigekuni Wong। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৯, ২০১২। Site with numerous photos of the real Hachikō during his life, at the end of his life, of his beloved professor & of people who came to care for Hachikō.
- Skabelund, Aaron Herald (২৩ সেপ্টেম্বর ২০১১)। "Canine Imperialism"। Berfrois। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০১১।
|প্রকাশক=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)