সোনাব্যাঙ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সোনাব্যাঙ
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস সম্পাদনা করুন
অপরিচিত শ্রেণী (ঠিক করুন): লিথোব্যাটস
প্রজাতি: টেমপ্লেট:শ্রেণীবিন্যাসবিদ্যা/লিথোব্যাটসল পাইপিয়েনস
দ্বিপদী নাম
টেমপ্লেট:শ্রেণীবিন্যাসবিদ্যা/লিথোব্যাটসল পাইপিয়েনস
(স্ক্রেবার, ১৭৮২)

সোনাব্যাঙ (লিথোব্যাটস পাইপিয়েনস [১][২][৩][৪] বা রানা পাইপিয়েনস [৫][৬]) ব্যাঙ পরিবারের এক প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত যাকে লেপার্ড‌ ফ্রগ বা চিতা ব্যাঙ নামেও অভিহিত করা হয়। এদের প্রধানত কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশে বাস করতে দেখা যায়। এটি মিনেসোটা এবং ভার্মন্ট অঞ্চলের বহুল পরিচিত উভচর প্রাণী।

বর্ণনা[সম্পাদনা]

অপরিনতবয়স্ক সোনাব্যাঙ

ব্যাঙের প্রজাতির সোনাব্যাঙ বেশ বৃহৎ আকৃতির, যার দেহের অগ্রভাগ থেকে পশ্চাৎ ভাগের দৈর্ঘ্যে প্রায় ১১ সেন্টিমিটার (৪.৩ ইঞ্চি)। এদের শরীরের বিশেষত পৃষ্ঠভাগের রঙ সবুজ অথবা বাদামি হয়। এদের শরীরের পশ্চাৎ ভাগে, পার্শ‌দেশে এবং পায়ে বড় বড় বৃত্তাকার দাগ থাকে।[৭] প্রতিটি বৃত্তাকার দাগকে সাধারণত একটি অপেক্ষাকৃত হালকা রঙের বলয় বেষ্টন করে থাকে। দুই চোখের পিছন থেকে শুরু করে একজোড়া ভাঁজগুলি একে অপরের সাথে সমান্তরালে পিঠের উপর দিয়ে গমন করে দেহের পশ্চাৎ ভাগের দিকে অগ্রসর হয়েছে। এই ভাঁজদুটি সাধারণত হাল্কা রঙের, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গোলাপি রঙের হয়। এছাড়াও, একটি ফ্যাকাশে দাগ নাসারন্ধ্র থেকে শুরু করে চোখের নীচে কাঁধে সমাপ্ত হয়। এদের অঙ্কদেশ সাধারণত সাদা বা ফ্যাকাশে সবুজ হয়। এদের চোখের তারার রঙ সোনালী হয় এবং পায়ের আঙ্গুলগুলি পাতলা চামড়া দ্বারা পরস্পর যুক্ত থাকে।

সোনাব্যাঙ -এর বেঙাচি বা লার্ভা সাধারণত বাদামী বা ধূসর বর্ণের হয় এবং এদের নিচের অংশে হাল্কা রঙের একটি ফুস্কুড়ি থাকে। এদের লেজ ধূসর বর্ণের হয়।

বর্ণভেদ[সম্পাদনা]

দুটি বার্ন‌সি প্রকারের, একটি সবুজ এবং একটি বাদামী বর্ণের সোনাব্যাঙ
আইওয়াতে একটি কাঠের স্তূপে বাদামী বর্ণের সোনাব্যাঙ

বিভিন্ন বর্ণের সোনাব্যাঙ -এর প্রজাতির খোজ পাওয়া গেছে যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় পাওয়া গেছে সবুজ ও বাদামী রঙের প্রজাতি যাদের মধ্যে একটি বিশেষ প্রকারের শ্রেণিকে বার্ন‌সি বলা হয়। এই বিশেষ বার্ন‌সি প্রকারের সোনাব্যাঙ -এর পিঠে বৃত্তাকার দাগ দেখা যায়না কিন্ত তাদের পায়ে দাগ থাকতে পারে। এগুলি উজ্জ্বল সবুজ বা বাদামী হতে পারে এবং এদের শরীরে হলুদ রঙের ভাঁজ থাকতে পারে।[৮] অ্যালবিনিজম(অ্যালবিনিজম একটি বিরল জীনগত রোগ যা ত্বক, চুল এবং চোখের রঙ খুব কম বা বর্ণহীন করে তোলে।) এই প্রজাতিতেও দেখা যায় তবে তা খুব বিরল।

বাস্তুশাস্ত্র এবং আচরণ[সম্পাদনা]

ওয়েলল্যান্ড খালের কাছে, অন্টারিও

সোনাব্যাঙ -এর বাসস্থান বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে পরিব্যাপ্ত। সাধারণত স্থায়ী জলাশয়, জলাভূমি, বদ্ধ জলাশয় এবং ধীর স্রোতযুক্ত নালা, উন্মুক্ত শহুরে অঞ্চলে পাওয়া যায় এদের দেখা যায়।[৯] এরা সাধারণত এমন জলাশয়ে বাস করে যেখানে প্রচুর জলজ উদ্ভিদ বর্তমান। গ্রীষ্মে, তারা প্রায়শই জলাভূমি ত্যাগ করে ঘাসযুক্ত অঞ্চল এবং তৃণভূমিতে চলে যায়। এরা ঠান্ডা পরিবেশে ভালভাবে মানিয়ে নিতে পারে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩,০০০ মিটার (৯,৮০০ ফুট) উচ্চতায় এদের দেখা যায়। পুরুষ সোনাব্যাঙ বসন্ত এবং গ্রীষ্মের সময় জলের ভেতর থেকে একটি বিশেষ ধরনের ডাক দেয়। সোনাব্যাঙ সাধারণত বসন্তে (মার্চ-জুন) প্রজনন করে। এরা জলের মধ্যে ৬৫০০ -এর বেশি ডিম পারে এবং ডিম থেকে বেরনোর পর লার্ভাদের জীবনযাত্রা জলেই পূর্ণতা পায়। বেঙাচিগুলি কালো দাগযুক্ত হালকা বাদামী এবং পরিবেশগত অবস্থা উপর নির্ভর কর ৭০-১১০ দিনের মধ্যে পূর্ণ বিকশিত হয়। লার্ভা থেকে সামান্য বিকশিত হওয়ার পর রূপান্তর ব্যাঙগুলি ২-৩ সেমি (০.৭৯–১.১৮ ইঞ্চি) দীর্ঘ হয় এবং আকৃতি ও প্রকৃতিগতভাবে এরা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যাঙের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়।

এই প্রজাতিটি পশ্চিম কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে একসময় বহুল সংখ্যায় বসবাস করত যতক্ষণ না ১৯৭০ সালে এদের সংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু করে। যদিও এই হ্রাসের চূড়ান্ত কারণ অজানা তবুও অনুমান করা হয় যে, আবাসস্থল হ্রাস এবং খণ্ডন, পরিবেশ দূষন, প্রবর্তিত মাছ চাষ, খরা এবং রোগ এইসব কারণে বহু অঞ্চলে ব্যাঙের এই প্রজাতির জীবনযাপনে বাঁধা পরে এবং এদের সংখ্যা হ্রাস পায়।[৭] এই অঞ্চলে সোনাব্যাঙের বহু প্রজাতি এই জনসংখ্যা হ্রাস থেকে এখনও উদ্ধার পায়নি।

সোনাব্যাঙ বিভিন্ন প্রাণী, যেমন সাপ, রাকুন, অন্যান্য ব্যাঙ এবং এমনকি মানুষেরও শিকারে পরিনত হয়েছে। অন্যান্য ব্যাঙ -এর মত এরা নিজের সুরক্ষার জন্য তাদের ত্বক থেকে ক্ষতিকারক ক্ষরণ সৃষ্টি করে না এবং শিকারির হাত থেকে বাঁচার জন্য শুধুমাত্র নিজের গতির উপর নির্ভরশীল। তারা ঝিঁঝিপোকা, মাছি, কৃমি এবং আরও ছোট ব্যাঙ সহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী খায়। তাদের বড় মুখ ব্যবহার করে তারা পাখি এবং গার্টার সাপকেও গ্রাস করতে পারে।[১০] এই প্রজাতি পিকেরেল ব্যাঙের (লিথোব্যাটস প্যালাস্ট্রিস) এবং দক্ষিণ চিতাবাঘ ব্যাঙের (লিথোবেটস স্পেনোসেফালাস) সমতুল্য।

গবেষণা[সম্পাদনা]

চিকিৎসা শাস্ত্র[সম্পাদনা]

সোনাব্যাঙ তার ডিম্বাণুজননকোষে নির্দিষ্ট রাইবোনোক্লেজ উৎপাদন করে। এই উৎসেচকগুলি ক্যান্সারের সম্ভাব্য ওষুধ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। রেনপিরনেস (অনকনাস) নামে পরিচিত এই জাতীয় একটি অণু ফুসফুসের মেসোথেলিয়োমা এবং ফুসফুসের টিউমারের চিকিৎসা হিসাবে পরীক্ষিত হচ্ছে। আরেকটি অ্যামফিনেজকে মস্তিষ্কের টিউমারের সম্ভাব্য চিকিৎসা হিসাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে।[১১]

স্নায়ুবিজ্ঞান[সম্পাদনা]

১৯৫০ এর দশক থেকেই স্নায়ুর প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আবিষ্কার করার জন্য সোনাব্যাঙ একটি পছন্দের প্রজাতি। এই ব্যাঙের সার্টোরিয়াস পেশীর সায়াটিক স্নায়ুতন্তুর স্নায়ু এবং পেশির সংযোগস্থল অংশটি স্নায়ুতন্ত্র সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য সম্পর্কে জানার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।[১২][১৩][১৪][১৫][১৬][১৭][১৮]

পেশী দেহতত্ত্ব এবং জৈব প্রকৌশল[সম্পাদনা]

পেশীতত্ত্বে ও জৈব প্রকৌশলে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার জন্য সোনাব্যাঙ ব্যবহৃত হয় কারণ সার্টরিয়াস পেশীর দক্ষতার কারণে তারা বেশ কয়েক ঘণ্টা গবেষণাগারের আবদ্ধ পরিবেশে কাঁচের ভেতর জীবিত থাকতে পারে। এছারাও এদের শারীরিক দক্ষতা, অর্থাৎ ঝাঁপ দিয়ে চলা এবং সাঁতার কাটা -এই সকল কাজে এদের পেশী কীভাবে সহায়তা করে তাও গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয়।

পরিসর[সম্পাদনা]

সোনাব্যাঙ -এর প্রজাতি কানাডার গ্রেট স্লেভ লেক এবং হাডসন বে থেকে দক্ষিণে কেনটাকি এবং নিউ মেক্সিকো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত খুজে পাওয়া যায়।[১৯][২০] এটি পানামায়ও পাওয়া যায়, যেখানে এটি কেন্দ্রীয় কর্ডিলার এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিম্নভূমির স্থানীয় জীব হিসাবে পরিচিত যদিও এটি সম্ভবত সেখানকার একটি অবর্ণিত প্রজাতি।[১] এদের সাধারণত তৃণভূমি, হ্রদের তীরবর্তী অঞ্চল এবং জলাভূমি অঞ্চলে দেখা যায়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Hammerson, G.; Solís, F.; Ibáñez, R.; Jaramillo, C.; Fuenmayor, Q. (২০০৪)। "Lithobates pipiens"বিপদগ্রস্ত প্রজাতির আইইউসিএন লাল তালিকা (ইংরেজি ভাষায়)। আইইউসিএন2004: e.T58695A11814172। ডিওআই:10.2305/IUCN.UK.2004.RLTS.T58695A11814172.enঅবাধে প্রবেশযোগ্য 
  2. Frost, Darrel (২০১১)। "American Museum of Natural History: Amphibian Species of the World 5.5, an Online Reference"Herpetology। The American Museum of Natural History। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৭ 
  3. Frost, D.-R.; ও অন্যান্য (২০০৯)। "Response to the Point Of View of Gregory B. Pauly, David M. Hillis, and David C. Cannatella, by the Anuran Subcommittee of the SSRA/HL/ASIH Scientific and Standard English Names List"Herpetologica65 (2): 136–153। এসটুসিআইডি 55147982ডিওআই:10.1655/09-009R1.1 
  4. Integrated Taxonomic Information System [Internet] 2012. Lithobates pipiens [updated 2012 Sept; cited 2012 Dec 26] Available from: www.itis.gov/
  5. Hillis & Wilcox (2005), Hillis (2007), Stuart (2008), Pauly et al. (2009), AmphibiaWeb (2016)
  6. Yuan, Z.-Y.; ও অন্যান্য (২০১৬)। "Spatiotemporal diversification of the true frogs (genus Rana): A historical framework for a widely studied group of model organisms."। Systematic Biology65 (5): 824–42। ডিওআই:10.1093/sysbio/syw055অবাধে প্রবেশযোগ্যপিএমআইডি 27288482 
  7. Northern Leopard Frog Rana pipiens ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে, National Geographic. Retrieved 2015-03-28
  8. "Northern Leopard Frog Rana pipens"। HerpNet। ২০১৫-০৯-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১০-৩০ 
  9. Northern Leopard Frog (Lithobates pipiens) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে, Nevada Fish and Wildlife Office. Retrieved 2015-03-28.
  10. Mikula, P (২০১৫)। "Fish and amphibians as bat predators"। European Journal of Ecology1 (1): 71–80। ডিওআই:10.1515/eje-2015-0010অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  11. Frog molecule could provide drug treatment for brain tumors
  12. Fatt, P; Katz, B (১৯৫২)। "Spontaneous subthreshold activity at motor nerve endings"The Journal of Physiology117 (1): 109–28। ডিওআই:10.1113/jphysiol.1952.sp004735 (নিষ্ক্রিয় ২০২০-১১-০৮)। পিএমআইডি 14946732পিএমসি 1392564অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  13. Del Castillo, J; Katz, B (১৯৫৪)। "Quantal components of the end-plate potential"The Journal of Physiology124 (3): 560–73। ডিওআই:10.1113/jphysiol.1954.sp005129পিএমআইডি 13175199পিএমসি 1366292অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  14. Lettvin, J.Y.; Maturana, H.R.; McCulloch, W.S.; Pitts, W.H. (১৯৫৯)। "What the Frog's Eye Tells the Frog's Brain"। Proceedings of the IRE47 (11): 1940–51। এসটুসিআইডি 8739509ডিওআই:10.1109/JRPROC.1959.287207 
  15. Katz, B; Miledi, R (১৯৬৫)। "The Measurement of Synaptic Delay, and the Time Course of Acetylcholine Release at the Neuromuscular Junction"। Proceedings of the Royal Society of London. Series B161 (985): 483–95। এসটুসিআইডি 8663912ডিওআই:10.1098/rspb.1965.0016পিএমআইডি 14278409বিবকোড:1965RSPSB.161..483K 
  16. Kuffler, SW; Yoshikami, D (১৯৭৫)। "The number of transmitter molecules in a quantum: An estimate from iontophoretic application of acetylcholine at the neuromuscular synapse"The Journal of Physiology251 (2): 465–82। ডিওআই:10.1113/jphysiol.1975.sp011103পিএমআইডি 171380পিএমসি 1348438অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  17. Hille, B (১৯৬৭)। "The selective inhibition of delayed potassium currents in nerve by tetraethylammonium ion"The Journal of General Physiology50 (5): 1287–302। ডিওআই:10.1085/jgp.50.5.1287পিএমআইডি 6033586পিএমসি 2225709অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  18. Anderson, CR; Stevens, CF (১৯৭৩)। "Voltage clamp analysis of acetylcholine produced end-plate current fluctuations at frog neuromuscular junction"The Journal of Physiology235 (3): 655–91। ডিওআই:10.1113/jphysiol.1973.sp010410পিএমআইডি 4543940পিএমসি 1350786অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  19. Stebbins, R.C. (1985). A Field Guide to Western Reptiles and Amphibians. Second Edition. Houghton Mifflin Company, Boston, Massachusetts.
  20. Conant, R. and Collins, J.T. (1991). A Field Guide to Reptiles and Amphibians: Eastern and Central North America. Third Edition. Houghton Mifflin Company, Boston, Massachusetts.