বিষয়বস্তুতে চলুন

সিমলাপাল মদনমোহন উচ্চ বিদ্যালয়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(সিমলাপাল মদনমোহন হাই স্কুল থেকে পুনর্নির্দেশিত)
সিমলাপাল মদনমোহন উচ্চ বিদ্যালয়
ঠিকানা
মানচিত্র
তথ্য
প্রতিষ্ঠাকাল২০ জানুয়ারি ১৯৩৮; ৮৬ বছর আগে (1938-01-20)
সভাপতিসবিতাব্রত সিংহ বাবু[]
প্রধান শিক্ষকতাপস কুমার সিংহ মহাপাত্র[]
শ্রেণিপঞ্চম - দ্বাদশ
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট

সিমলাপাল মদনমোহন উচ্চ বিদ্যালয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার খাতড়া মহকুমার অন্তর্গত সিমলাপালে অবস্থিত। ১৯৩৮ সালের ২০ জানুয়ারি সিমলাপালের রাজা মদনমোহন সিংহ চৌধুরীর পৃষ্ঠপোষকতায় এই বিদ্যালয়ের পথ চলা শুরু হয়।[] প্রতিষ্ঠানটিতে পঞ্চম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করানো হয়ে থাকে।[][]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাঁকুড়া জেলায় প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার হয়। উচ্চ প্রাথমিক ও নিম্ন প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৬৯ এবং ৮০৮টি। এই স্কুলের তদারকির জন্য বাঁকুড়া জেলা বোর্ড গোটা জেলায় ১১ জন পরিদর্শক পণ্ডিত নিযুক্ত করেছিলেন। সেই সময় কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুসলমান ও আদিবাসীদের জন্য আলাদা স্কুলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

সিমলাপালের আদি মিডল ইংলিশ স্কুল ছিল রাজবাড়ি সংলগ্ন দোলমঞ্চের উত্তরপূর্ব দিকে। এই এম ই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হত। স্কুলের নিজস্ব ছাত্রাবাস ছিল। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন প্রফুল্লকুমার পাত্র। সেই সময় সিমলাপাল এলাকায় কোনো হাইস্কুল ছিল না। হাইস্কুল ছিল খাতড়া, হাড়মাসড়া, এবং বাঁকুড়ায়। অনেক দূরে স্কুল। পথ ছিল দুর্গম, অরণ্যে আবৃত। তাই এই এলাকার মানুষকে হাইস্কুলে পড়ার মানসিকতাই ত্যাগ করতে হত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ঘটনা। মেদিনীপুর জেলার হুমগড় চাঁদাবিলা হাইস্কুলের শিক্ষকদের সাথে পরিচালন সমিতির মনোমালিন্য হয়। ওই স্কুলে তখনকার শিক্ষক আশুতোষ পাত্র, রাধাবল্লভ সিংহমহাপাত্র, বিশ্বেশ্বর যন্নিগ্রহী, গোপালচন্দ্র যন্নিগ্রহী সিমলাপাল রাজবাড়িতে আসেন। এঁরা রাজা মদনমোহন সিংহচৌধুরীকে সিমলাপালে হাই ইংলিশ স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য উৎসাহ দেন। শিক্ষা প্রসারের জন্য রাজা মদনমোহন সিমলাপালে হাই ইংলিশ স্কুল প্রতিষ্ঠা করবেন বলে স্থির করেন। হাই ইংলিশ স্কুলের নিজস্ব বাড়ি ছিল না। তাই ঠিক হল সিমলাপালের কৃষ্ণচন্দ্র রায় ও গঙ্গাবিষ্ণু রায় এর বাড়ির ওপর তলায় ক্লাস হবে। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিক ভাবে হাই ইংলিশ স্কুলের সূচনা হয়। উদ্বোধন করেন রাজা মদনমোহন সিংহচৌধুরী। উদ্বোধনের দিনে ছাত্র সংখ্যা ছিল এইরকম; সপ্তম শ্রেণিতে ১০ জন, অষ্টম শ্রেণিতে ৬ জন, নবম শ্রেণিতে ২ জন মোট ১৮ জন। অবশ্য কিছুদিন বাদে ছাত্রসংখ্যা বেড়ে হল ১২০ জন। সেই সময় এম ই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন আশুতোষ পাত্র, সহ- শিক্ষক ছিলেন বিশ্বেশ্বর যন্নিগ্রহী, রাধাবল্লভ সিংহমহাপাত্র এবং রাখালচন্দ্র নায়ক। শিক্ষাকর্মী ছিলেন গোপালচন্দ্র যন্নিগ্রহী ও তারাপদ নায়ক। ১৯৩৮ সালে প্রথম যে স্কুল পরিচালন কমিটি গঠিত হয় তার সদস্যরা ছিলেন; মহকুমা শাসক- বাঁকুড়া,রাজা মদনমোহন সিংহচৌধুরী, গোকুলচন্দ্র সিংহবাবু, বলগোবিন্দ সিংহবাবু, নিত্যানন্দ সিংহমহাপাত্র ভাগবৎ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।[]১৯৪০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সিমলাপাল হাই ইংলিশ স্কুল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়। ১৯৪১ সালে প্রথম ছাত্রদল ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় বসে। পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজিয়েট স্কুল। ২৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১২ জন পাশ করেন। প্রথম বিভাগে পাশ করেছিলেন শ্যামাপদ সৎপথী এবং চণ্ডীচরণ রায়। দেবীপদ পাঠক, ভাস্করচন্দ্র সেন, জগদানন্দ দাস, নারায়ণচন্দ্র মাঝি প্রমুখ পাশ করেছিলেন দ্বিতীয় বিভাগে। পরে সিমলাপালের বনকূলে রাজাদের জায়গায় (৭.৩৫ একর) আট হাজার টাকা খরচ করে খড়ের চালযুক্ত মাটির লম্বা লম্বা ঘর তৈরি করা হয়। একদিকে স্কুল, অন্যদিকে বোর্ডিং হাউস। ১৯৪৮-১৯৪৯ সালে স্কুল প্রথম গ্রান্ট ইন এড পায় ১২০ টাকা। ১৯৫৪ সালে রাজা মদনমোহন সিংহটৌধুরী পরলোকগমন করেন। তখন মদনমোহনের পুত্র শ্যামসুন্দর সিংহচৌধুরী স্কুলের সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত। স্কুলের নাম হয় সিমলাপাল মদনমোহন হাইস্কুল। ১৯৫৮ সালে এই বিদ্যালয় একাদশ শ্রেণির উচ্চমাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়। বিজ্ঞানভবন, কলাভবন, নির্মাণ করা হয়। শিক্ষকগণের আবাস ও ছাত্রাবাস সেই সময়েই নির্মিত। তখন জেনারেটারের সাহায্যে আলো জ্বালানো হত। ১৯৭৬ সালে এই বিদ্যালয় দ্বাদশ শ্রেণিযুক্ত বিদ্যালয় হিসেবে উন্নীত হয়।[] ১৯৬৭ সালে এই বিদ্যালয়ে প্রথম উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র হয়। এই প্রতিষ্ঠানে ২০০২ সালে শুরু হয় কম্পিউটার শিক্ষা এবং ২০০৬ সালে শুরু হয় বৃত্তিমূলক শিক্ষা। ২০১৩ সালে এই বিদ্যালয় সরকার পোষিত বিদ্যালয় হিসেবে ঘোষিত হয়। ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অন্যতম সেরা বিদ্যালয় সম্মাননা লাভ করে এই বিদ্যালয়।[][]

অবস্থান

[সম্পাদনা]

প্রতিষ্ঠানটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার খাতড়া মহকুমার সিমলাপালে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি বাঁকুড়া শহর থেকে দক্ষিণে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে ৯ নং রাজ্য সড়কের পাশে অবস্থিত।[]

পরিচালনা ব্যবস্থা

[সম্পাদনা]

প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য সবিতাব্রত সিংহ বাবুকে সভাপতি করে ৮ সদস্যের একটি পরিচালনা পরিষদ রয়েছে।[]

অ্যাকাডেমিক গঠন

[সম্পাদনা]

বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে পঞ্চম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করানো হয়।[]

একাডেমিক কোর্সসমূহ
  • পঞ্চম - দশম(কেবলমাত্র ছাত্ররা পড়ে)
    • নবম ও দশম শ্রেণিতে অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে কর্মশিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা এবং উদ্যানবিদ্যা পড়ানো হয়।[]
  • একাদশ-দ্বাদশ ( সহপাঠক্রম- ছাত্র-ছাত্রী উভয়েই পড়ে)
    • সাধারণ বিভাগ - বাংলা, ইংরেজী এবং ইলেকটিভ বিষয় হিসেবে সংস্কৃত, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, মডার্ন কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত, ও জীববিদ্যা পড়ানো হয়।[]
    • বৃত্তিমূলক শাখা - কৃষিবিজ্ঞান।[]

অবকাঠামো

[সম্পাদনা]

এ বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জুড়ে আছে বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণ, শ্রেণিকক্ষ, পুকুর, প্রাচীন কক্ষ, ছাত্রাবাসের ভগ্নাবশেষ, বিস্তৃত পুকুর, সুপ্রাচীন বৃক্ষরাজি, বিজ্ঞান ভবন, কলা ভবন, বাণিজ্য ভবন, প্রশাসনিক ভবন, ল্যাবরেটরি, কম্পিউটার কক্ষ, প্লাটিনাম জুবিলি ভবন, মঞ্চ, নেতাজী ভবন, বৃত্তিমূলক শ্রেণিকক্ষ ও কার্যালয়, এন সি সি কক্ষ ইত্যাদি।[]

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড

[সম্পাদনা]

সাধারণ পঠন পাঠন ছাড়াও এই বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবস, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম দিবস, সাধারণতন্ত্র দিবস, রবীন্দ্রজয়ন্তী, স্বাধীনতা দিবস, শিক্ষক দিবস ইত্যাদি উদযাপিত হয়। বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী উৎসব, সরস্বতী পুজো বিদ্যালয়ে আড়ম্বরের সাথে পালিত হয়। উৎসবের অঙ্গ হিসেবে কোন কোন সময় নাচ-গান, আবৃত্তি, নাটক প্রদর্শনী ইত্যাদিও হয়ে থাকে। এতে ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক-শিক্ষিকা সকলে অংশ নেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Managing Committee" [পরিচালনা কমিটি] (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০২৪ 
  2. "সর্বভারতীয় মেডিক্যাল এন্ট্রান্স পরীক্ষা নীটে রাজ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করলো অর্ণব পতি"। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০২৪ 
  3. "history" [ইতিহাস]। সিমলাপাল মদনমোহন উচ্চ বিদ্যালয়। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০২৪ 
  4. "সংক্ষিপ্ত বিবরণ"সিমলাপাল মদনমোহন উচ্চ বিদ্যালয়। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০২৪ 
  5. "SIMLAPAL MADAN MOHAN HIGH SCHOOL"। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুলাই ২০২৪ 
  6. সিমলাপাল মদনমোহন উচ্চ বিদ্যালয় পত্রিকা, লেখক=বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিরোনাম-প্রতিবেদন, প্রকাশক-বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বছর-২০১৩, পাতা=৬
  7. "SIMLAPAL MADAN MOHAN HIGH SCHOOL"। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুলাই ২০২৪ 
  8. "Our Campus" [আমাদের ক্যাম্পাস]। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০২৪