বিষয়বস্তুতে চলুন

সরল দোলক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
একটি 'সরল দোলক' এর মডেল। এই মডেলে ঘর্ষণ এবং বায়ুর বাধা উপেখখা করা হচ্ছে।

একটি ভারী আয়তনহীন বস্তুকে অপ্রসারণশীল, ওজনহীন ও নমনীয় সুতার সাহায্যে ঝুলিয়ে দিলে এটি যদি ঘর্ষণ এড়িয়ে স্বাধীনভাবে দুলতে থাকে তবে তাকে সরল দোলক (Simple Pendulum) বলে। বাস্তবে সরল দোলক পাওয়া সম্ভব নয়। কেননা, ভারী আয়তনহীন কোন বস্তু কিংবা সম্পূর্ণরূপে অপ্রসারণশীল, ওজনহীন ও নমনীয় সুতার অস্তিত্ব নেই। হিসাব নিকাশের সুবিধার্থে এরূপ প্রমাণ দোলক কল্পনা করে নেওয়া হয়। সাধারণভাবে একটি হালকা সুতার সাহায্যে কোন দৃঢ় অবলম্বন থেকে একটি ভারী বস্তু ঝুলিয়ে দিয়ে সরল দোলক তৈরী করা হয়।

গ্যালিলিও গ্যালিলির ১৬০২ সালের দিকে পেন্ডুলামের প্রথম বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা থেকে, পেন্ডুলামের নিয়মিত গতি সময় মাপার জন্য ব্যবহৃত হত এবং ১৯৩০ এর দশক পর্যন্ত এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভুল সময়মাপক প্রযুক্তি। [] ১৬৫৬ সালে ক্রিশ্চিয়ান হাইজেন্স দ্বারা উদ্ভাবিত পেন্ডুলাম ঘড়িটি বিশ্বের মান্য সময় নির্ণয়কারী যন্ত্র হয়ে ওঠে, হয়েছিল, যা 270 বছর ধরে বাড়ি এবং অফিসে ব্যবহৃত হয় এবং এটি বছরে প্রায় এক সেকেন্ড নির্ভুল সময় দেখাতে পারত। ১৯৩০-এর দশকে কোয়ার্টজ ঘড়ি দ্বারা পেন্ডুলাম ঘড়ি প্রতিস্থাপিত হয়। পেন্ডুলাম বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিতেও ব্যবহৃত হয়, যেমন - অ্যাক্সিলোমিটার এবং সিসমোমিটার । ঐতিহাসিকভাবে, ভূ-পদার্থবিদ্যা সমীক্ষায় অভিকর্ষজ ত্বরণ পরিমাপ করতে এবং এমনকি দৈর্ঘ্যের মানক হিসাবেও পেন্ডুলাম ব্যবহৃত হত। 'পেন্ডুলাম' শব্দটি নব্য-ল্যাটিন (Neo-Latin) শব্দ, এটি এসেছে ল্যাটিন 'পেন্ডুলাস' থেকে, যার অর্থ 'ঝুলন্ত'। []

সরল দোলকের অংশসমূহ

[সম্পাদনা]

বব: যে ভারী বস্তুটিকে সুতার সাহায্যে ঝলিয়ে দেওয়া হয় সেটিই বব।

ঝুলন বিন্দু: কোন দৃঢ় অবলম্বনের যে নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে বব ঝোলানো হয় তাকে ঝুলন বিন্দু বলে।

সরল দোলক সম্পর্কিত কতিপয় সংজ্ঞা

[সম্পাদনা]

কার্যকরী দৈর্ঘ্য: ঝুলন বিন্দু থেকে ববের ভরকেন্দ্র পর্যন্ত দুরত্বকে কার্যকরী দৈর্ঘ্য বা দোলক দৈর্ঘ্য বলে। একে দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

এখানে, সুতার দৈর্ঘ্য এবং ববের ব্যাসার্ধ

বিস্তার: সরল দোলকের সাম্যাবস্থান থেকে যে কোন এক দিকের সর্বোচ্চ দুরত্বকে বিস্তার বলে।

পূর্ণ দোলন: বব এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্তে গিয়ে আবার আগের প্রান্তে ফিরে আসলে তাকে পূর্ণ দোলন বলে।

দোলন কাল: একটি পূর্ণ দোলন সম্পন্ন করতে সরল দোলকের যে সময় লাগে তাকে দোলনকাল বলে। একে দ্বারা প্রকাশ করা হয়। কোন সরল দোলকের সংখ্যক পূর্ণ দোলনের জন্য যদি সময় লাগে তাহলে,

কম্পাঙ্ক: এক সেকেন্ডে একটি সরল দোলক যে কয়টি পূর্ণ দোলন সম্পন্ন করে তাকে তার কম্পাঙ্ক বলে। একে দ্বারা প্রকাশ করা হয়। কোন সরল দোলক সময়ে সংখ্যক পূর্ণ দোলন সম্পন্ন করলে,

সরল দোলকের সূত্রসমূহ

[সম্পাদনা]

১ম সূত্র বা সমকাল সূত্র: কৌণিক বিস্তার অল্প হলে এবং দোলকের কার্যকরী দৈর্ঘ্য অপরিবর্তিত থাকলে কোন নির্দিষ্ট স্থানে একটি সরল দোলকের প্রতিটি দোলনের জন্য সমান সময় লাগবে।

২য় সূত্র বা দৈর্ঘ্যের সূত্র: কৌণিক বিস্তার অল্প হলে কোন নির্দিষ্ট স্থানে সরল দোলকের দোলনকাল, এর কার্যকরী দৈর্ঘ্যের বর্গমূলের সমানুপাতিক।

৩য় সূত্র বা ত্বরণের সূত্র: কৌণিক বিস্তার অল্প হলে এবং দোলকের কার্যকরী দৈর্ঘ্য অপরিবর্তিত থাকলে এর দোলনকাল অভিকর্ষজ ত্বরণের বর্গমূলের ব্যস্তানুপাতিক।

৪র্থ সূত্র বা ভরের সূত্র: কৌণিক বিস্তার অল্প হলে এবং কার্যকরী দৈর্ঘ্য অপরিবর্তিত থাকলে কোন নির্দিষ্ট স্থানে সরল দোলকের দোলনকাল ববের ভর, আয়তন, উপাদান ইত্যাদির উপর নির্ভর করে না ।

সবকটি সূত্র একত্র করে আমরা পাই, এবং

যেখানে, হল দোলকের কার্যকরী দৈর্ঘ্য, আর হল অভিকর্ষজ ত্বরণের মান।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Marrison, Warren (১৯৪৮)। "The Evolution of the Quartz Crystal Clock"Bell System Technical Journal27 (3): 510–588। ডিওআই:10.1002/j.1538-7305.1948.tb01343.x। ২০১১-০৭-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. Morris, William, Ed. (১৯৭৯)। The American Heritage Dictionary, New College Ed। New York: Houghton-Mifflin। পৃষ্ঠা 969আইএসবিএন 978-0-395-20360-6