সমলিঙ্গ দম্পতিতে বিবাহ বিচ্ছেদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

অনেক রাষ্ট্রে সরাসরী সমলিঙ্গে বিবাহ প্রচলন না থাকলেও নাগরিক ইউনিয়ন, ঘরোয়া পার্টনারশিপ অধিকার প্রচলিত আছে। ফলশ্রুতিতে তাদের বিচ্ছেদ হলে সমলিঙ্গে বিচ্ছেদের হার সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ সরকারি নথি পর্যাপ্তভাবে পাওয়া যায় না। এই রাষ্ট্রগুলোতে ভবিষ্যতে সমলিঙ্গে বিবাহ বৈধ, এবং যে সব রাষ্ট্রে সাম্প্রতিক সময়ে এইবিবাহ বৈধ হয়েছে, ভবিষ্যতে যত সময় যাবে, বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত উপাত্ত আরো বিস্তৃতপরিসরে পাওয়া যাবে এবং তা বিশ্লেষণ করে অপেক্ষাকৃত সঠিক ব্যাখ্যা প্রণয়ন করা যাবে।

কনফ্লিক্ট অব ল[সম্পাদনা]

বিবাহ বিচ্ছেদের হার[সম্পাদনা]

বেলজিয়াম[সম্পাদনা]

২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বেলজিয়ামে সমলিঙ্গে বিবাহ বিছেদের হার গড়ে ২%। ২০০৪ থেকে ২০০৯ সালের হিসেবে দেখা গিয়েছে সমকামী নারীতে এই বিবাহ বিচ্ছেদ পুরুষ সমকামীদের তুলনায় দ্বিগুণ।[১]

ডেনমার্ক[সম্পাদনা]

১৯৯৭ সালের হিসাব অনুযায়ী, ডেনমার্কে সমলিঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বিষমকামীদের তুলনায় অনেক কম। বিষমকামীদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ বিবাহ বিচ্ছেদ এবং সমকামী দম্পতির ১৭ শতাংশ বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।[২]

নেদারল্যান্ড[সম্পাদনা]

নেদারল্যান্ডে প্রাপ্ত উপাত্ত থেকে দেখা গিয়েছে, নারী সনকামীরা পুরুষ সমকামীদের তুলনায় অধিক বেশি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। একইসাথে পুরুষ সমকামীদের তুলনায় নারী সমকামীতে বিবাহ বিচ্ছেদ বেশি হয়। গড়ে ১০০ জন নারী এবং গড়ে ৪৫ জন পুরুষ সমলিঙ্গে (নারী সমলিঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ=১৪%, পুরুষ সমলিঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ =৭%) বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।[৩]

১০ বছর ধরে সংগৃহীত জরিপ থেকে দেখা গিয়েছে, নারী সমলিঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের হার উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি। ২০০৫ সালে ৫৮০ টি নারী সমকামী তে বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়; পরবর্তী ১০ বছরে এর ৩০ শতাংশই বিবাহ বিচ্ছেদে মোড় নেয়। পক্ষান্তরে ১৮ শতাংশ বিষমকামী দম্পতিতে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় এবং ১৫ শতাংশ পুরুষ সমকামীতে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।[৪]

নরওয়ে এবং সুইডেন[সম্পাদনা]

সংক্ষিপ্ত পরিসরে যে পরিমাণ সমলিঙ্গে বিবাহ রেজিস্ট্রি বা সংরক্ষিত হয়েছে, তা থেকে দেখা গিয়েছে, নরওয়ে এবং সুইডেনে সমলিঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বিপরীত লিঙ্গের বিবাহ বিচ্ছেদের চেয়ে ৫০ শতাংশ কম।[৫] এবং দেখা গিয়েছে সমলিঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের মধ্যে পুরুষ সমলিঙ্গে যে বিচ্ছেদ হয় তার তুলনায় নারী সমকামীতে বিচ্ছেদ বেশি হয়।[৬] নারী সমকামিতে বিবাহ বিচ্ছেদ পুরুষ সমকামীদের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।

যুক্তরাজ্য[সম্পাদনা]

যুক্তরাজ্যে বিবাহ বৈধ করার পর ২৯ মাস ধরে উপাত্ত বিশ্লেষণ করার পর দেখা গিয়েছে সমলিঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ১ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।[৭]

২০১৩ তে উপাত্ত থেকে দেখা গিয়েছে, নারী সমলিঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের হার পুরুষ সমলিঙ্গের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি।[৮] ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী, নারী সমলিঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের হার পুরুষ সমলিঙ্গের চেয়ে ২-১/২ গুণ বেশি।[৯]

জাতীয় জরিপ অফিসের মতে, ইংল্যাণ্ড এবং ওয়ালসে ১৯৭১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিপরীত লিঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের হার সবচেয়ে কম পক্ষান্তরে সমলিঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের হার ২০১৬ থেকে বেড়ে ২০১৭ তে ৩ গুণ হয়।[৯][১০] যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, সমলিঙ্গে বিবাহ ২০১৪ তেই বৈধতা পেয়েছে, তাই নতুন করে পুনঃপুন বিবাহ হচ্ছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ।[১০]

যুক্তরাষ্ট্র[সম্পাদনা]

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রদেশ হিসেবে ম্যাসচুসেটস সমকামী বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। তবে এই প্রদেশ সমকামী দম্পতিতে বিবাহ বিচ্ছেদের কোনো পরিসংখ্যান করে নি।[১১] ২০১১ সালে একটি গবেষণায় প্রথমে দাবী করা হয়েছিল সমলিঙ্গে বিবাহ হওয়া দম্পতিদের বিবাহ বিচ্ছেদের হার গড়পড়তায় ১ শতাংশ এবং বিপরীত লিঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের হার ২ শতাংশ।[১২] ওয়াশিংটন পোস্ট এই গবেষণায় ত্রুটি খুজে পায়। তারা শিরোনাম করে এই গবেষণায় হিসাবে কিছু গড়মিল আছে। তাদের মতে এই গড়মিলটা হয়েছে মুলত, গবেষক দল কখন সমলিঙ্গে বিবাহ প্রথম স্বীকৃতি পেয়েছে তা পরিসংখ্যানে নথিবদ্ধ করতে ভুল করেছে। ফলে সঠিক ভাবে অন্বেষণ করে দেখা গিয়েছে প্রকৃতপক্ষে সমলিঙ্গ ও বিষমলিঙ্গ উভয় দম্পতিতে এই বিবাহ বিচ্ছেদের হার ২ শতাংশ। আরো সঠিক উপাত্ত ভবিষ্যতে সময়ের সাথে সাথে বের হয়ে আসবে।[১৩]

কিছু গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে, নারী সমকামী দম্পতিদের সম্পর্ক যত বেশি দিন টিকে, পুরুষ সমলিঙ্গ দম্পতিতে এই সম্পর্ক স্থায়ী হওয়ার প্রবণতা তার চেয়ে বেশি থাকে।[১৪]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. EL। "Marital Bliss? Gender Gaps..."Gender Across Borders। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  2. Marian Jones (১ মে ১৯৯৭)। "Lessons from a Gay Marriage: Despite stereotypes of gay relationships as short-lived, gay unions highlight the keys to success"Psychology Today। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১১ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "Lesbiennes scheiden veel meer dan homo's (Lesbians divorce much more than gays)"। Nu.nl (Dutch ভাষায়)। ২৪ জানুয়ারি ২০১২। 
  4. Janene Pieters (১ মার্চ ২০১৬)। "Marriages Between Women Most Likely To End In Divorce"NL Times। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১৮ 
  5. Andersson, Gunnar (ফেব্রুয়ারি ২০০৬)। "The Demographics of Same-Sex 'Marriages' in Norway and Sweden" (পিডিএফ)Demography43 (1): 79–98। ডিওআই:10.1353/dem.2006.0001। ২৫ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৮ 
  6. Andersson, Gunnar (ফেব্রুয়ারি ২০০৬)। "The Demographics of Same-Sex 'Marriages' in Norway and Sweden" (পিডিএফ)Demography43 (1): 262। ডিওআই:10.1353/dem.2006.0001। ২৫ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৮ 
  7. Tony Grew (৭ আগস্ট ২০০৮)। "Less than 1% of civil partnerships end in 'divorce'"Pink News। ১১ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১১ 
  8. "UK: Lesbian Couples Twice As Likely As Gay Men To End Civil Partnerships"The Independent। London। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১৪ 
  9. "Lesbian couples two and a half times more likely to get divorced than male same-sex couples, ONS figures reveal"The Independent। ১৮ অক্টোবর ২০১৭। 
  10. Mohdin, Aamna (২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮)। "Heterosexual divorce in England and Wales is at lowest level since 1973"the Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 
  11. LeBlanc, Steve (৯ জুন ২০১৫)। "Numbers show how gay marriage has fared in Massachusetts"। Mass Live। Associated Press। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৮ 
  12. Badgett, M.V. Lee; Herman, Jody L. (নভেম্বর ২০১১)। "Patterns of Relationship Recognition by Same-Sex Couples in the United States" (পিডিএফ)। The Williams Institute, UCLA School of Law। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৮ 
  13. "Same-sex divorce rate not as low as it seemed"। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  14. "Divorce and Marriage Rates for Same-Sex Couples"The Huffington Post। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১৪ 

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]