শ্রী গুরু তেগ বাহাদুর সাহিব গুরুদ্বারা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শ্রী গুরু তেগ বাহাদুর সাহিব গুরুদ্বারা

শ্রী গুরু তেগ বাহাদুর সাহিব গুরুদ্বারা (Gurdwara Sri Guru Tegh Bahadur Sahib) আসামের ধুবুরী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদীর পারে অবস্থিত একটি শিখদের গুরুদ্বারা৷[১] শিখদের প্রথম গুরু, গুরু নানক দেব ১৫০৫ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা থেকে আসামে আসার সময় এই স্থানে তিনি শ্রীমন্ত শঙ্করদেবকে সাথে পান। পরে ১৭শ শতকে শিখদের নবম গুরু, গুরু তেগ বাহাদুর একটি গুরুদ্বারা স্থাপন করেন। গুরু তেগ বাহাদুরের শহীদ দিবস উপলক্ষে প্রতি বছরে ডিসেম্বর মাসে এই ঐতিহাসিক স্থানে প্রায় ৫০,০০০ দেশী-বিদেশী হিন্দু, শিখ , মুসলিম এবং অন্যান্য তীর্থযাত্রী আসেন। এই উৎসব প্রতি বছর ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। শিখরা এই উৎসবকে শহীদী গুরু পর্ব বলে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৬৭০ সালে গুরু তেগ বাহাদুর আসামে আসেন। তাঁর সাথে সম্রাট ঔরংজেব আহোম রাজা চক্রধ্বজসিংহকে দমন করতে পাঠানো অম্বরের রাজা রাম সিঙও আসেন। তখন আসাম একটি দুর্গম স্থান এবং এর মানুষগুলি সাহসী তথা স্বাধীনপ্রিয় বলে পরিচিত ছিল। রাম সিঙের জন্য এই কাজ এক প্রকারের শাস্তি ছিল। কারণ তাঁর দায়িত্বে থাকার সময় বিখ্যাত মারাঠা রাজা শিবাজী এবং তাঁর পুত্ররা পলায়ন করেছিল। সেজন্য গুরু তেগ বাহাদুরের উপস্থিতি তিনি এবং তাঁর সাথে যাওয়া সৈন্যদের মানসিক শক্তি যুগিয়েছিল। কিন্তু পরে গুরুর উপস্থিতি শুধু মানসিক শক্তি নয় অন্য জরুরী কাজও সমাধা করেছিল। আহোম এবং মোগলদের মধ্যে শান্তির চুক্তি রূপায়ন করসর জন্য গুরু তেগ বাহাদুর অহোপুরুষার্থ করেছিলেন।

গুরু তেগ বাহাদুরে মারি পাঠানো ঐতিহাসিক শিলা

শান্তি প্রতিষ্ঠা করার সময় সকল সৈন্যই ৫ ঢাল মাটি দিয়ে একটি বৃহৎ মাটির ঢিবি সাজিলেছিল। এই ঢিবি ধুবুড়ীর ব্রহ্মপুত্র নদীর ডান পারে এখনও অবস্থিত এবং একে মানুষ পবিত্র বলে গণ্য করে। এর সাথে গুরু তেগ বাহাদুরের থাকা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করা স্থানটিতে একটি গুরুদ্ধারা নির্মাণ করা হয়। উদাসী পুরোহিত এই গুরুদ্বার দেখাশুনা করতেন। ১৮৯৬-৯৭ তে হওয়া প্রবল ভূমিকম্পে এই গুরুদ্বারা ধ্বংস হয়। পরে ১৯০১ সালে ভাই রাম সিঙ এই গুরুদ্বারা পুনরায় নির্মাণ করেন। মহন্তরা এই গুরুদ্বারার জমির জন্য মোগলদের অনুমোদন লাভ করেছিলেন। ১৯০২-০৩ সালে মহন্ত জয় সিঙ এই অনুমোদন পত্র নিয়ে গুরুদ্বারার ভবন পুনরায় নির্মাণের জন্য অর্থের যোগান করতে পাঞ্জাবে গিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যবশতঃ ভাই জয় সিং অমৃতসরের কাছে স্বর্গগামী হয় এবং এই অনুমোদন পত্র হারিয়ে যায়।

এই স্থানে দুটি গুরুদ্বারা আছে

  • ঠারা সাহিব গুরুদ্বারা বা দামদামা সাহিব গুরুদ্বারা: ১৯৬৬ সালে একটি ছোট অষ্টভূজী ঝুপড়িতে একটি গুরুদ্বারা তৈরি হয়। সাথে মাটির ঢিবির উপরও চালের ব্যবস্থা করা করা হয়। একে ঠারা সাহিব গুরুদ্বারা বা দামদামা সাহিব গুরুদ্বারা বলা হয়।
  • শ্রী গুরু তেগ বাহাদুর সাহিব গুরুদ্বারা: একটি বর্গাকার গৃহ, কাঠের বেড়া এবং হেলানো চালে অন্য গুরুদ্বারাটি তৈরি হয়। শিখ প্রতিনিধি বোর্ড পূর্বাঞ্চল বিভাগ এবং স্থানীয় কমিটি গুরুদ্বারার দেখাশুনা এবং উন্নয়নের কাজ করেন।

যাতায়াত[সম্পাদনা]

ধুবুড়ী পর্যন্ত শিলিগুড়ি এবং কাটিহার থেকে রেলে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। ফকিরাগ্রাম জংশন থেকে রেলের দিক পরিবর্তন করতে হয়। এই স্থান তার থেকে প্রায় ৭০ কি.মি. দূরে অবস্থিত। ধুবুড়ী শহর থেকে এই স্থানে নিয়মিত বাস চলাচল করে।

উল্লেখযোগ্য তীর্থযাত্রী[সম্পাদনা]

১৯৮৩ সালে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জ্ঞানী জাইল সিং এই পবিত্র স্থান দর্শন করেছিলেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. গুরুদ্বারা মানে গুরুর দ্বার, শিখ ধর্মাবলম্বীদের মুখ্য উপাসনাস্থল।