শ্যামমোহিনী দেবী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

শ্যামমোহিনী দেবী (১০ ফেব্রুয়ারি ১৮৮৭ - ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮০) নিখিল ভারত নারীশিক্ষা পরিষদের প্রতিষ্ঠাত্রী ও স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারসহ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অগ্রণী ব্যক্তিত্ব ।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

শ্যামমোহিনী দেবীর জন্ম অধুনা বাংলাদেশের পাবনার করঞ্জা গ্রামের চৌধুরী জমিদার পরিবারে । ১০ বৎসর বয়সে প্রাথমিক পরীক্ষায় রাজশাহী বিভাগে প্রথম হন। কিন্তু মাত্র ১২ বৎসর বয়সেই ঢাকার সুরেন্দ্রনাথ মৈত্রর সঙ্গে বিবাহ হয়। তবে স্বামীর সহায়তায় নানা বিষয়ে পড়াশোনা করেন। ষোল বৎসর বয়সে বিধবা হয়ে স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে আত্ম নিয়োগ করেন। নিজের সম্পত্তি ও অলঙ্কার বিক্রি করে করঞ্জায়, পাবনা জেলায় ও স্বামীর গ্রামে অনেকগুলি অবৈতনিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। নিজেও সেই বিদ্যালয় সমূহে পড়াতেন।

কলকাতায় পরবর্তী জীবনে[সম্পাদনা]

কলকাতায় এসে পরবর্তীকালে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্ম ট্রেনিং স্কুল থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে সিনিয়ার ট্রেনিং পাশ করেন।লেডি অবলা বসু তাঁকে তার প্রতিষ্ঠিত নারী শিক্ষা সমিতি পরিচালিত বিদ্যালয় সমূহে পরিদর্শিকার দায়িত্ব দেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে কিছু দিন পর পরিদর্শিকার কাজ ছেড়ে ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়ে যোগ দেন। সেই সঙ্গে একটি কর্পোরেশন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এবং ব্রাহ্ম ট্রেনিং স্কুলের সুপারিনটেন্ডন্ট এর কাজও করতেন। সেই সাথে মেয়েদের লাঠি-ছোরা খেলা,যুযুৎসু ইত্যাদি শেখানোর জন্য 'দীপালী সংঘ' প্রতিষ্ঠা করেন। বিপ্লবী পুলিন দাস এই সংঘে শেখাতেন। শ্যামমোহিনীর চেষ্টাতে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে পাবনার এম.ই স্কুলটি হাই স্কুলে উন্নীত হয়। স্কুলটির খরচের অনেকখানি অংশ তিনি বহন করতেন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে স্কুলের কাজ ছেড়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। মহিলা সমিতি গঠন করে চরকা,খদ্দর প্রচার বিলাতিদ্রব্য বর্জনে মহিলাদের উৎসাহিত করেন। এই সময়ে তিনি 'তিলক স্বরাজ' ফান্ডে নগদ ও অলঙ্কারে ২০ হাজার টাকা চাঁদা তুলে দেন। পাবনায় লবণ আইন অমান্য আন্দোলনের অংশ নেন।

নারীশিক্ষা বিস্তারে অবদান[সম্পাদনা]

পরে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে লেডি অবলা বসুর আহ্বানে কলকাতায় এসে নারী শিক্ষা সমিতির সুপারিনটেন্ডন্টের পদ গ্রহণ করেন এবং সমিতির নানা গঠনমূলক কাজে লেডি অবলা বসুকে সাহায্য করেন। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে অল্প কয়েকটি ছাত্রী নিয়ে স্থাপন করেন 'বাণীপীঠ' গার্লস হাই স্কুল । ওই বছরই বয়স্কাদের জন্য শর্ট ম্যাট্রিক স্কুল এবং ক্রমে ক্রমে জুনিয়র ও সিনিয়র ট্রেনিং সেন্টার, প্রাইমারি স্কুল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল এবং ছাত্রীনিবাস খোলেন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে অনুরূপা দেবীকে সভানেত্রী করে তিনি নিখিল ভারত নারী শিক্ষা পরিষদ গঠন করে স্কুলগুলিকে তার অন্তর্ভুক্ত করেন যাতে মেয়েরা শিক্ষিত, উপার্জনক্ষম ও আত্নির্ভরশীল হতে পারে। 'কাশী বিশ্বনাথ মঞ্চ' নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান তার উদ্যোগ স্থাপিত হয় ।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

শ্যামমোহিনী দেবী ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে ২৬ শে ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত সাহিত্য সংসদ কলকাতা প্রকাশিত সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান প্রথম খণ্ড সংশোধিত পঞ্চম সংস্করণ তৃতীয় মুদ্রণ পৃষ্ঠা সংখ্যা ৭২৭-৭২৮ আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬