শিরভানের প্রথম ইব্রাহিম
প্রথম ইব্রাহিম | |
---|---|
শিরভান-এর শাহ্ | |
রাজত্ব | ১৩৮২ - ১৪১৭ |
পূর্বসূরি | হুশাং |
উত্তরসূরি | প্রথম খালিলুল্লাহ |
জন্ম | শাক্কি, শিরভান |
মৃত্যু | ১৫ সেপ্টেম্বার ১৪১৮ শামক্ষি, শিরভান |
দাম্পত্য সঙ্গী | বিকা খানুম |
পিতা | সুলতান মুহাম্মাদ |
প্রথম ইব্রাহিম (ফার্সি: ابراهیم) ছিলেন ৩৩তম শিরভানশাহ (শিরভানের শাসক)। তার চতুর রাজনীতির কারণে তিনি তুর্ক-মঙ্গল শাসক তৈমুর কর্তৃক পদচ্যুত হননি এবং সার্বভৌমত্ব বজায় রেখতে সক্ষম হন।
পরিবার এবং সিংহাসন লাভ
[সম্পাদনা]ইব্রাহিম, শিরভানীয় রাজপুত্র সুলতান মুহাম্মদের ছেলে। তিনি শাক্ষি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন যেখানে তিনি কৃষি কাজের দেখাশুনা করতেন। ১৩৮২ সালে শিরভানশাহ হুশাং এর মৃত্যুর পর, ইব্রাহিম আই স্থানীয় অভিজাত সম্প্রদায় কর্তৃক শাসক পদ লাভ করেন।
রাজত্ব
[সম্পাদনা]১৩৮৬ সালে ইব্রাহিম তুর্ক-মঙ্গল শাসক তৈমুরকে তার ভূঁইঞা হিসেবে স্বীকৃতি দেন। ১৩৯৪ সালে যখন তইমুর ককেসাসে পৌঁছান, ইব্রাহিম তাকে উপঢৌকন হিসেবে অনেক পুরস্কার ও দৌলত দেন যেন তাদের মধ্যে ভাল সম্পর্ক বজায় থাকে। তার মধ্যে একটি উপহার ছিল ৮ জন দাস, যা তৈমুর যথেষ্ট বলে মনে করেননি- যখন তিনি ইব্রাহিমকে জিজ্ঞেস করলেন যে খেন তাকে কেবল ৮ জন দাস দেওয়া হলো, ইব্রাহিম তার উত্তরে বললেনঃ "আমি নিজেই হলাম নবম জন।" ইব্রাহিমের এই বাক্যে তইমুর খুশি হলেন এবং তার বিনয়ের কারণে তাকে অনেক জমি দিলেন এবং তাকে রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা করলেন।[১] ১৩৯৯ থেকে ১৪০২ পর্যন্ত, সিরিয়া এবং আনাটোলিয়াতে ইব্রাহিম তৈমুরের পক্ষে যুদ্ধ করেন। তইমুর ১৪০৫ সালে মারা যান, যুদ্ধ এবং বিদ্রোহ একটি বড় ধরনের ঐক্যনাশের কারণ হয়ে দাঁড়ালো। ইব্রাহিম তাদের একজন ছিলেন; তিনি তৈমুরের মৃত্যুকে স্বাধীনতা ঘোষণার সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করলেন এবং গাঞ্জা এবং কারাবাখকে পাকড়াও করলেন।[২]
১৯১২ সালে, কারা কয়ুনলু এর শাসক ক্বারা-ইয়ুসুফ, যিনি আজারবাইজান শাসন করেন, ইব্রাহিমের রাজ্যকে আক্রমণ করেন, যিনি জর্জীয় শাসক জর্জিয়ার প্রথম কনস্টান্টাইনের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন, এবং তার আবেদন মঞ্জুর করেন জর্জিয়ান শাসক- তিনি ইব্রাহিমকে সাহায্য করেন; উক্ত যুদ্ধটি ছালাগান এর পাশে হয়, যা শিরভানীয়-জর্জিয় সেনা'র যৌথ পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইব্রাহিম কনস্টান্টাইন এবং তার পুত্রদের সাথে বন্দি হন।[১]
কিছু কাল পর, কনস্টান্টাইনের খারাপ আচরণের কারণে, ক্বারা-ইউসুফ তাকে এবং তার পুত্রদের এবং অন্যান্য জর্জিয়ানদেরকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন। এছাড়াও, ক্বারা-ইউসুফ শিভরানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালান। ইব্রাহিম পরে মুক্তি করেন এবং তাকে অনেক অর্থ দেওয়া হয়। ইব্রাহিম আবার তার রাজ্যে ফিরে যান এবং তার শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য অনেক সংগ্রাম করেন।[১] ১৪১৮ সালে তিনি মারা যান তার পুত্র খালিলুল্লাহ আই কর্তৃক অনুসৃত হন।
উত্তরাধিকার
[সম্পাদনা]ইব্রাহিম আই তার চতুর রাজনীতি কর্তৃক শিভরানের ভাগ্য ফিরিয়ে আনেন এবং তৈমুরের শাসন থেকে স্বাধীন রাখেন দেশকে এবং তার রাজ্যকে রাজস্ব আদায় ছাড়াই ঠিক ঠাক রাখেন। পাশাপাশি, ইব্রাহিম তার রাজ্যের সীমানা উত্তরে ডারবান্ট এবং দক্ষিণে মুগান সমতল পর্যন্ত বিস্তৃত করেন।
পরিবার
[সম্পাদনা]ইব্রাহিম বিকা খানুম (মৃত্যুঃ ১৪৩৫) কে বিয়ে করেন, যিনি ছিলেন একজন সম্ভ্রান্ত মহিলা এবং ১১ পুত্র ও এক কন্যা ছিল তারঃ
- খালিলুল্লাহ আই- মৃত্যুঃ ১৪৬৫, পরবর্তী শিরভানশাহ ছিলেন।
- যুবরাজকাইউমারসঃ মৃত্যু আনুমানিক ১৪১২, ক্বারা-ইউসুফ কর্তৃক বন্দি হন এবং তাকে ক্ষমা করা হয়, পরে ইব্রাহিমের কাছে ফিরে যান, কিন্তু তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এর স্বীকার হন, কাইউমারসকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়, যা ছালাগান এর যুদ্ধের সূত্রপাত করে।
- যুবরাজগাযানফার- জন্মঃ ১৯৯৮, মৃত্যুঃ ১৪৪৩- ক্বারা-ইউসুফ কর্তৃক বন্দী হন, খালিলুল্লাহ আই এর অবর্তমানে বাকুতে সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
- যুবরাজকায়কোবাদ- ১৪২৫ সালে খালিলুল্লাহ আই এর বিরুদ্ধের বিদ্রোহ করেন, শাহ্রুখ মির্জা কর্তৃক মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত হন।
- যুবরাজআসাদুল্লাহ- ছালাগান যুদ্ধে ক্বারা-ইউসুফ কর্তৃক বন্দী হন।
- যুবরাজমানুছিহ্র- ছালাগান যুদ্ধে ক্বারা-ইউসুফ কর্তৃক বন্দী হন এবং পরে শাহ্রুখ মির্জা'র জন্য কাজ করেন।
- যুবরাজআব্দুররাহমান- ছালাগান যুদ্ধে ক্বারা-ইউসুফ কর্তৃক বন্দী হন ।
- যুবরাজনাসরাতুল্লাহ- ছালাগান যুদ্ধে ক্বারা-ইউসুফ কর্তৃক বন্দী হন ।
- যুবরাজহাশিম- ছালাগান যুদ্ধে ক্বারা-ইউসুফ কর্তৃক বন্দী হন, ১৯২৫ সালে খালিলুল্লাহ এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং শাহ্রুখ মির্জা কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডিত হন।
- যুবরাজফাররুখযাদ- ছালাগান যুদ্ধে ক্বারা-ইউসুফ কর্তৃক বন্দী হন
- প্রিন্সেস লাল বাই তুকমাক- ১৩৮৭ সালে তৈমুরের পুত্র উমার শাইখ মির্জা-কে বিয়ে করেন।
জনপ্রিয় সংস্কৃতি
[সম্পাদনা]শামাক্ষি নামক সড়কটি তার নামে নামকরণ করা হয়েছে। নেসিমি (১৯৭৩) এ তিনি সামান্দার রাজায়েভ কর্তৃক অভিনীত হয়েছেন। শিরভান কল্পকাহীনতে ইব্রাহিম দারবেনদিদ হলো ইউরোপা ইউনিভার্সালিস ৪ এর প্রধান চরিত্র।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ Minorsky 1958, পৃ. 130।
- ↑ Houtsma 1993, পৃ. 383।
উৎস
[সম্পাদনা]- Minorsky, Vladimir (১৯৫৮)। A History of Sharvān and Darband in the 10th-11th Centuries (ইংরেজি ভাষায়)। University of Michigan। পৃষ্ঠা 1–219। আইএসবিএন 978-1-84511-645-3।
- Houtsma, Martijn Theodoor (১৯৯৩)। "Shirwanshah"। First Encyclopaedia of Islam: 1913-1936 (ইংরেজি ভাষায়)। Leiden: BRILL। পৃষ্ঠা 383। আইএসবিএন 9004097961।