শিমশোন বিকল্প

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শিমশোন বিকল্প
ঠেলা
টানা
বাইবেলের আখ্যান অনুযায়ী শিমশোন দাগোনের মন্দিরের "দুইটি স্তম্ভ আঁকড়ে ধরে সর্বশক্তি দিয়ে নিচু হয়ে মারা যান।" (বিচারকগণ ১৬:৩০; এ ঘটনাটিকে কেউ কেউ শিমশোনের স্তম্ভ দুইটিকে দুপাশে ঠেলে দেওয়া (উপরের চিত্র), আবার কেউ কেউ স্তম্ভ দুইটিকে কাছে নিয়ে আসা (নিচের চিত্র) বোঝানো হয়েছে বলে ব্যাখ্যা করেছেন।

শিমশোন বিকল্প (হিব্রু ভাষায়: ברירת שמשון‎, ব্রেরাৎ শিমশোন) বলতে কিছু সামরিক বিশ্লেষক ও লেখকের দেয়া একটি নামকে বোঝায়, যা দিয়ে ইসরায়েলের একটি শত্রু নিরস্তকরণ কৌশলকে নির্দেশ করা হয়, যা অনুসারে ইসরায়েল যদি কখনও বিদেশী সামরিক শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং এতে ইসরায়েলের সিংহভাগ যদি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, তাহলে "শেষ উপায়" হিসেবে দেশটি শত্রুর বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে বিশাল প্রতিঘাত দেবে।[১] তবে কোনও কোনও লেখক এই পরিভাষাটি দিয়ে ইসরায়েল নয় এবং পারমাণবিক অস্ত্রের পরিবর্তে চিরায়ত অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে, এমন পরিস্থিতিও বর্ণনা করেছেন।[২]

নামটি বাইবেলের ইসরায়েলি বিচারক শিমশোনের সাথে সম্পর্কিত। শিমশোন প্রাচীনকালে ফিলিস্তিনিদের একটি মন্দিরের স্তম্ভগুলি দুহাতে ঠেলে সরিয়ে দিলে ছাদ ধ্বসে পড়ে শিমশোন নিজে মারা যান এবং সাথে সাথে তাঁকে আটককারী হাজার হাজার ফিলিস্তিনিও মারা যায়। মারা যাবার মুহূর্তে শিমশোন চিৎকার করে বলেছিলেন, "আমাকে ফিলিস্তিনিদের সাথে মরতে দাও!"[৩] (বিচারকগণ ১৬:৩০)[৪]

পারমাণবিক দ্ব্যর্থকতা[সম্পাদনা]

ইসরায়েল তার কাছে পারমাণবিক অস্ত্র আছে কি নেই, তা স্বীকার বা অস্বীকার কোনওটাই করে না এবং থাকলে কীভাবে সেগুলিকে ব্যবহার করবে, সে ব্যাপারেও কোনও বর্ণনা দেয় না। ইসরায়েল সরকারের এই নীতিটিকে "ইচ্ছাকৃত পারমাণবিক দ্ব্যর্থকতা" বা "পারমাণবিক অস্পষ্টতা" নাম দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ইসরায়েল সরকারের বাইরের কোনও ব্যক্তির পক্ষে দেশটির প্রকৃত পারমাণবিক নীতি সুস্পষ্টভাবে বর্ণন করা কঠিন। একই সময়ে এই কৌশলের সুবাদে ইসরায়েল অন্যান্য দেশের সরকারের উপলব্ধি, কৌশল ও কর্মকাণ্ডের উপর সূক্ষ্ম প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে।[৫][৬] তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে কিছু ইসরায়েলি নেতা উন্মুক্তভাবে তাদের দেশের পারমাণবিক ক্ষমতার ব্যাপারটি স্বীকার করেছেন: ১৯৭৪ সালে এফ্রিম কাতজির, ১৯৮১ সালে মোশে দায়ান, ১৯৯৮ সালে শিমোন পেরেস এবং ২০০৬ সালে এহুদ ওলমের্ট[৭]

২০০৬ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পদে নিয়োগ লাভের আগে নিশ্চিতকরণ শুনানিতে রবার্ট গেটস স্বীকার করেন যে ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।[৭] ২০০৮ সালের প্রকাশিত দ্য কালচার অভ ওয়ার নামক গ্রন্থে ইসরাটেলের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের সামরিক ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মার্টিন ভান ক্রেফেল্ড লেখেন যে গেটসের এই স্বীকারোক্তির পর থেকে ইসরায়েলে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে কোনও কথা বা লেখালেখি করলে "গ্রেপ্তার, বিচার ও কারাগার বরণের" ঝুঁকি আছে। এ কারণে ইসরায়েলি লেখক ও আলোচকেরা "শেষ বিচারের দিনের অস্ত্র" এবং "শিমশোন বিকল্প" কথাগুলি ব্যবহার করেন।[৮]

১৯৭৬ সালেই মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ বিশ্বাস করত যে ইসরায়েলের কাছে ১০ থেকে ২০টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে।[৯] ২০০২ সাল নাগাদ একটি প্রাক্কলন অনুযায়ী ইসরায়েলের কাছে ৭৫ থেকে ২০০টির মত তাপ-পারমাণবিক অস্ত্র ছিল, যাদের প্রতিটির বিস্ফোরণ ক্ষমতা একাধিক মেগাটন পরিসীমার মধ্যে পড়ে।[১০] কেনেথ বাওয়ারের মতে ৪০০টির মতো পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে।[১১] এগুলিকে স্থলভাগ, সমুদ্র ও আকাশ থেকে নিক্ষেপ করা সম্ভব.[১২] ফলে ইসরায়েল যদি ধ্বংস হয়েও যায়, তার পরেও দেশটি দ্বিতীয় আঘাত হানার ক্ষমতা রাখে।[১৩]

২০০৮ সালের ২৫শে মে তারিখে হে উৎসবে প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার বলেন ইসরায়েলের কমপক্ষে ১৫০টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে। [১৪]

১৯৯১ সালে মার্কিন অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী রাজনৈতিক লেখক সিমোর হার্শ "স্যামসন অপশন" নামের একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন, যার ভূমিকায় তিনি লেখেন যে "এই বইটিতে ইসরায়েল কীভাবে গোপনে একটি পারমাণবিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে, তা নিয়ে লেখা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে কীভাবে আইজেনহাওয়ার আমল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ রাজনৈতিক ও সামরিক কর্মকর্তারা এই গোপন কথাটি অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করেছেন, গোপন কথাটি প্রকাশের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে এটিকে এড়িয়ে গেছেন।"

লেখকদের মতামত[সম্পাদনা]

মার্কিন-ইহুদি লেখক রন রোজেনবাউম তাঁর ২০১২ সালে রচিত গ্রন্থ হাও দি এন্ড বিগিন্‌স: দ্য রোড টু আ নিউক্লিয়ার ওয়ার্ল্ড ওয়ার থ্রি-তে লেখেন যে যদি ইসরায়েল "দ্বিতীয় একটি ইহুদি গণনিধনের" (হলোকস্ট বা শোওয়া) শিকার হয়, তাহলে দেশটি পৃথিবীর স্তম্ভস্বরূপ দেশগুলিকে ধ্বসিয়ে দিতে পারে, যেমন "মস্কো, ইউরোপের বিভিন্ন রাজধানী" এমনকি "ইসলামের পবিত্রতম স্থানগুলিও"। তিনি লেখেন "আনুপাতিক প্রতিঘাতকে পরিহার করাই" শিমশোন বিকল্পের সারকথা"।[সন্দেহপূর্ণ ][১৫]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Strategic Doctrine"। Global Security। এপ্রিল ২৮, ২০০৫। 
  2. Keinon, Herb (২০০২-০১-৩১), "Selling the 'Samson option'", The Jerusalem post, ২০০৪-০৬-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা 
  3. Hersh 1991, পৃ. 137।
  4. টেমপ্লেট:Wwbible
  5. Cohen 1998, পৃ. 1–3, 7, 341।
  6. Cohen, Avner (২০০১), "Israel's Nuclear Opacity: a Political Genealogy", Spiegel, Steven L; Kibbe, Jennifer D; Matthews, Elizabeth G, The Dynamics of Middle East Nuclear Proliferation, Symposium, 66, The Edwin Mellen Press, পৃষ্ঠা 187–212, ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০২১ .
  7. Yaakov Katz (ডিসেম্বর ১৫, ২০০৬)। "Mum's the N-word"। Jerusalem Post। পৃষ্ঠা 14। 
  8. Van Creveld, Martin (২০০৮), The Culture of War, Random House Digital, পৃষ্ঠা 284, আইএসবিএন 978-0-345-50540-8 
  9. ১৯৭৬ সালের মার্চ মাসে সিআইএ অনিচ্ছাকৃতভাবে সর্বসমক্ষে স্বীকার করে যে ইসরায়েলের কাছে ১০-২০টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে, যেগুলি দেশটি "ব্যবহার করতে প্রস্তুত"। Arthur Kranish, "CIA: Israel Has 10–20 A-Weapons," The Washington Post, March 15, 1976, p. 2 and David Binder, "C.I.A. says Israel has 10–20 A-bombs," The New York Times, March 16, 1976, p. 1.
  10. Norris, Robert S; Arkin, William; Kristensen, Hans M; Handler, Joshua (সেপ্টেম্বর–অক্টোবর ২০০২), "Israeli nuclear forces, 2002", Bulletin of the Atomic Scientists (excerpt), 58 (5): 73–5, ডিওআই:10.2968/058005020 
  11. Brower, Kenneth S (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭), "A Propensity for Conflict: Potential Scenarios and Outcomes of War in the Middle East", Jane's Intelligence Review (special report) (14): 14–5 .
  12. Frantz, Douglas (অক্টোবর ১২, ২০০৩), "Israel Adds Fuel to Nuclear Dispute, Officials confirm that the nation can now launch atomic weapons from land, sea and air", The Los Angeles Times, Common dreams, অক্টোবর ২১, ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা .
  13. Plushnick-Masti, Ramit (২৫ আগস্ট ২০০৬)। "Israel Buys 2 Nuclear-Capable Submarines"The Washington Post 
  14. as reported by REUTERS/Hayfestival.com under the heading, "Israel has at least 150 atomic weapons: Carter"- Carter addressed a news conference during the event; the following is a transcript of his remarks: “The U.S. has more than 12,000 nuclear weapons, the Soviet Union (Russia) has about the same, Great Britain and France have several hundred, and Israel has 150 or more. We have a phalanx of enormous weaponry ... not only of enormous weaponry but of rockets to deliver those missiles on a pinpoint accuracy target.”
  15. Rosenbaum 2012, পৃ. 21–2, 141–2।

গ্রন্থ ও রচনাপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • Cohen, Avner (১৯৯৮), Israel and the Bomb, Columbia University Press .
  • Hersh, Seymour (১৯৯১), The Samson Option: Israel's Nuclear Arsenal and American Foreign Policy, Random House .
  • Rosenbaum, Ron (২০১২), How the End Begins: The Road to a Nuclear World War III, Simon & Schuster, আইএসবিএন 978-1-4165-9422-2 .

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]