বিষয়বস্তুতে চলুন

শামাখি জুমা মসজিদ

শামাখি জুমা মসজিদ
আজারবাইজানি: Şamaxı Cümə Məscidi
২০১৬ সালে শামাখি জুমা মসজিদ
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিইসলাম
যাজকীয় বা
সাংগঠনিক অবস্থা
মসজিদ
অবস্থাসচল
অবস্থান
অবস্থানশামাখি, আজারবাইজান
শামাখি জুমা মসজিদ আজারবাইজান-এ অবস্থিত
শামাখি জুমা মসজিদ
আজারবাইজানে মসজিদের অবস্থান
স্থানাঙ্ক৪০°৩৭′৩৬″ উত্তর ৪৮°৩৮′৩৮″ পূর্ব / ৪০.৬২৬৬৭° উত্তর ৪৮.৬৪৩৮৯° পূর্ব / 40.62667; 48.64389
স্থাপত্য
ধরনমসজিদ স্থাপত্য
স্থাপত্য শৈলীউমাইয়া
সম্পূর্ণ হয়আনুমানিক ৭৪৪ খ্রিস্টাব্দ
বিনির্দেশ
গম্বুজসমূহ(বা আরও বেশি)
মিনার

শামাখি জুমা মসজিদ (আজারবাইজানি: Şamaxı Cümə Məscidi) আজারবাইজানের শামাখি শহরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

এই মসজিদটি নির্মিত হয় হিজরি ১২৬ সালে। মসজিদের ফ্যাসাদে থাকা শিলালিপি এবং তিফলিস থেকে পরিচালিত ভূতাত্ত্বিক গবেষণার ভিত্তিতে এটি নিশ্চিত করা হয়েছে, যা পরিচালনা করেন কাজার প্রিন্স শাহগুলু।[] এই সময় থেকেই আজারবাইজানের ভূখণ্ডে মসজিদ নির্মাণ শুরু হয়। ইসলাম প্রচার ও আরব শাসনের প্রভাবেই এই মসজিদ নির্মিত হয়। এটি দারবেন্টের জুমা মসজিদ-এর পর ককেশাস অঞ্চলের প্রথম মসজিদ হিসেবে বিবেচিত।

মসজিদটির নির্মাণকাল ছিল উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদ I-এর (৭০৫–৭১৫) ভাই, আরব সেনাপতি ও ককেশাসে খলিফার প্রতিনিধি মাসলাম ইবনে আবদুল মালিক-এর সময়। সেই সময় শামাখিকে তার আবাসস্থল হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল। মসজিদটির স্থাপত্য শৈলী থেকে বোঝা যায় যে আরবরা শামাখিকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

পুনর্নির্মাণ

[সম্পাদনা]
রাতের প্যানোরামিক দৃশ্য

সময়ের সাথে বিভিন্ন যুদ্ধ ও ভূমিকম্পে মসজিদটি বহুবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বারংবার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। ১১২৩ সালে সেলজুক যুগের ইতিহাসবিদ ইমাদ আদ-দিন আল-ইসফাহানির বর্ণনা অনুযায়ী, শিরভানশাহ শাসকেরা সেলজুক সুলতান মাহমুদের (১১১৮–১১৩১) সাহায্য চান জর্জিয়ার আগ্রাসন থেকে রক্ষার জন্য। সেই আক্রমণে মসজিদ ধ্বংস, মিনার ভাঙা এবং শহর লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে।

পরবর্তীতে ১২শ শতকে মানুচেহর III-এর শাসনামলে মসজিদ পুনর্নির্মাণ করা হয়। ঐতিহাসিক সূত্র ও প্রত্নতাত্ত্বিক খননে এই সময়ে মাদ্রাসা, কক্ষ এবং কবর আবিষ্কৃত হয়েছে।

১৭শ শতকে সাফাভিদ শাসনামলে পুনরায় মসজিদটি নির্মিত হয়। তুর্কি পর্যটক এভলিয়া চেলেবি ১৬৫৬ সালে শামাখি সফরের সময় এটিকে শহরের সবচেয়ে বৃহৎ ধর্মীয় স্থাপনা হিসেবে উল্লেখ করেন।

১৮৫৯ সালের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদ ১৮৬০ সালে প্রদেশীয় স্থপতি হাজি বাবাবায়েভ-এর তত্ত্বাবধানে পুনরায় নির্মাণ করা হয়।

১৯০২ সালের প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের পর আবারও মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পুনর্গঠনের জন্য দান সংগ্রহ করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। প্রথমে কাজ শুরু করেন শামাখির স্থপতি জিভারবেই আহমাদবায়েভ, কিন্তু তাঁর মূল নকশা গ্রহণ না করায় তাঁকে সরিয়ে দেয়া হয় এবং পরিবর্তে জোজেফ প্লশকো-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯০৯ সালের তাঁর পরিকল্পনায় চারটি মিনার, কেন্দ্রীয় গম্বুজ, খোলা বারান্দা এবং সুষম নকশা অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা বাকুর শিরভানশাহ প্রাসাদ-এর স্থাপত্যের অনুরূপ। তবে অর্থসংকটের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ পড়ে।

২০০৯ সালে আজারবাইজান সরকার একটি সরকারি আদেশে মসজিদটির পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দেয়।[]

নকশা ও পরিকল্পনা

[সম্পাদনা]
মসজিদের সম্মুখভাগ
পার্শ্বচিত্র

শামাখি জুমা মসজিদ তার আয়তন ও নকশা দ্বারা আজারবাইজানের ধর্মীয় ও অসাধারণ ভবনগুলোর মধ্যে স্বতন্ত্র। ১৮৪৭ সালে রুশ স্থপতি জি. গাগারিন একটি একমাত্র চিত্র আঁকেন, যেখান থেকে পুরাতন মসজিদের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক রূপ সম্পর্কে জানা যায়। তিন-কক্ষবিশিষ্ট প্রার্থনাকক্ষ, কেন্দ্রীয় গম্বুজ, পাশের স্তম্ভসমূহ ইত্যাদি এখনো অক্ষত রয়ে গেছে।

মসজিদের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ মিটার এবং প্রস্থ ২৮ মিটার। তিনটি পৃথক প্রার্থনাকক্ষ রয়েছে, প্রতিটিতে পৃথক মিহরাব ও প্রবেশপথ রয়েছে। এ কারণে একে "তিন কক্ষবিশিষ্ট মসজিদ" বলা হয়। এই ধরনের পরিকল্পনা উমাইয়া মসজিদ-এর পরিকল্পনার সাথে মিল রয়েছে।

স্থপতি প্লশকো মসজিদের গঠনগত স্থাপত্যে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনেন। তিনি পূর্ববর্তী স্থাপত্যধারার সঙ্গে ইসলামী স্থাপত্যের ঐতিহ্যকে মিলিয়ে পরিকল্পনা করেন। শক্তপোক্ত অভ্যন্তর তৈরিতে তিনি আধুনিক ধাতব কাঠামো ব্যবহার করেন যা পোল্যান্ডের ওয়ারশ থেকে আনা হয়। এর কেন্দ্রীয় গম্বুজ চারটি সাজসজ্জামূলক মিনার দ্বারা ঘেরা ছিল এবং শেবেকা (জ্যামিতিক কাটছাঁট যুক্ত জানালার কাঠামো), অলঙ্কার, স্তম্ভ ইত্যাদি পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Fatullayev, S. S. (১৯৭৩)। Джума-мечеть в Шемахе (রুশ ভাষায়)। বাকু: National Academy of Sciences of the Azerbaijan SSR।
  2. "Azərbaycan Prezidenti Şamaxı şəhərindəki Cümə məscidinin bərpası ilə əlaqədar tədbirlər haqqında sərəncam verib"Trend.az। ৩০ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১১