র্যাপিড স্ট্রেপ টেস্ট
র্যাপিড স্ট্রেপ টেস্ট (RST) অথবা র্যাপিড এন্টিজেন ডিটেকশন টেস্ট (RADT) হল একটি দ্রুত রোগনির্ণয় পরীক্ষা যা বিভিন্ন ক্লিনিকে একপ্রকার ব্যাকটেরিয়া গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কি এর কারণে গলায় প্রদাহ হবার কারণ নিশ্চিত করে। কখনও একে স্ট্রেপ থ্রোটও বলা হয়। বর্তমানে কয়েক প্রকার স্ট্রেপ টেস্ট রয়েছে, প্রত্যেকটা প্রযুক্তি প্রত্যেকটির থেকে ভিন্ন। তবে যেভাবেই হোক, সব গুলোর উদ্দেশ্য একই থাকে আর সেটা হল রোগীর গলা থেকে কাঠিতে করে নমুনা সংগ্রহ করে সেখানে GAS এর উপস্থিতি সনাক্ত করা।
ব্যবহার
[সম্পাদনা]একটি র্যাপিড স্ট্রেপ টেস্ট কখনো কখনো একজন চিকিৎসককে সাহায্য করে থাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে যে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হবে কিনা, বিশেষত যা সচরাচর একপ্রকার গলার প্রদাহ -ফ্যারিনজাইটিস সনাক্ত করতে সহায়তা করে। সাধারণত এই অসুখটা হয় ভাইরাসের কারণে কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে (২০% থেকে ৪০% বাচ্চাদের মধ্যে, ৫% থেকে ১৫% বড়দের মধ্যে) এই প্রদাহ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের কারণেও হতে পারে।ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া উভয় সংক্রমনের উপসর্গ একই রকম কিন্তু ব্যাক্টেরিয়ার কারণে ফ্যারিনজাইটিস হলে সেটাকে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগে ভালো করা যায়। যেহেতু ব্যাক্টেরিয়াল ফ্যারিনজাইটিস এর মূল কারণ হল গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কি, তাই রোগীর গলায় এর নমুনা পাওয়া গেলেই এটা চিকিৎসককে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করার সিন্ধান্ত নিতে সহায়তা করতে পারে। গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কি ফ্যারিনজাইটিস হল একপ্রকার সীমাবদ্ধ প্রদাহ যা কিনা কোন ওষুধ ব্যবহার ছাড়াই ভালো হয়ে যায়। তারপরও এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করলে সেটা রোগের স্থায়ীত্ব এবং প্রাবল্য (এবং কোন কোন ক্ষেত্রে, যদিও খুব দুর্লভ) রোগের জটিলতর অবস্থা হওয়া থেকে কমায়।[১]
কেবল গলার রোগের চিকিৎসা করা ছাড়াও র্যাপিড স্ট্রেপ টেস্টের আরো বেশকিছু সুবিধা আছে। এটা করার কারণে বোঝা যায় যে রোগীর আসলেই ব্যাক্টেরিয়াল প্রদাহ হয়েছে, ভাইরাল প্রদাহ হলে রোগী অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিকের ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট অনাকাঙ্খিত স্বাস্থ্যগত সমস্যা থেকে বেঁচে যায়, যেখানে এন্টিবায়োটিক কার্যকরী নয়।[২]
কিছু দেশের স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী ফ্যারিনজাইটিসের রোগীকে র্যাপিড স্ট্রেপ টেস্টের করানোর পরামর্শ আছে, আবার কোথাও কোথাও নিষেধ করা আছে। ইউরোপিয় মানের তুলনায় আমেরিকান স্বাস্থ্যগত গাইডলাইন আরএসটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে আছে। স্বম্ভবত তৃতীয় বিশ্বে র্যাপিড স্ট্রেপ টেস্টের প্রয়োগ সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হবে যেহেতু এসব এলাকায় গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কি এর সংক্রমন বেশি এবং পরীক্ষাটি এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী। কিন্তু দু্ঃখজনকভাবে সেইসব এলাকায় এখনও পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি।[১]
পরীক্ষা করার কাঠি থেকে প্রাপ্ত নমুনার মাইক্রোবিয়াল কালচার হতে পারে আরএসটির একটি কার্যকরী অথচ তুলনামূলকভাবে সস্তা বিকল্প যা তুলনামূলকভাবে বেশি স্পর্শকাতর এবং নির্দিষ্টতা রয়েছে। তারপরও, এই কালচার করতেও বিশেষ ব্যবস্থা এবং যন্ত্রপাতি লাগে এবং পরীক্ষার ফলাফল বের হয়ে আসতে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগে যেখানে র্যাপিড স্ট্রেপ টেস্ট মাত্র ময়েক মিনিটে ফলাফল প্রদান করে।[২]
প্রক্রিয়া
[সম্পাদনা]প্রথমে রোগীর গলা থেকে কাঠির মাধ্যমে মিউকাস সংগ্রহ করা হয়। বেশিরভাগ টেস্টেই নমুনাটুকু একটি রিএজেন্টের সংস্পর্শে আনা হয় যেখানে এমন কিছু এন্টিবডি থাকে যা গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কির এন্টিজেনের সাথে একপ্রকার বন্ডিং তৈরী করে। যদি দৃশ্যমান কোন পরিবর্তন আসে তাহলে ফলাফল পজিটিভ বলে ধরে নেওয়া হয়। প্রধানত তিন ধরনের আরএসটি আছে: প্রথমটি হল ল্যাটেক্স ফিক্সেশন টেস্ট যেটা ১৯৮০ সালে আবিস্কৃত হয়েছিল এবং বর্তমানে একেবারে বিলুপ্ত। এই পদ্ধতিতে কিছু ল্যাটেক্স বিডস/ রাবারের বল ছিল যেগুলোতে এমনসব এন্টিজেন মাখানো থাকত যাতে গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কির এন্টিবডি থাকলে সেগুলো রবারের বলের সাথে এঁটে থাকত। দ্বিতীয়ত, একটি ল্যাটারেল ফ্লো টেস্ট যেটা এখন সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এখানে নমুনটিকে একটি নাইট্রোসেলুলার ফিল্মের সংস্পর্শে আনা হয়। গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কির এন্টিজেন থাকলে এগুলো ফিল্মের একদিক থেকে আরেকদিকে চলে যাওয়ার সময় এন্টিবডির সাথে মিলে একটা দাগ ফেলে। তৃতীয়ত পদ্ধতিতে, অপ্টিকাল ইমিউনোএ্যাসে ব্যবহার করা হয় যা সর্বাধুনিক এবং খরচ সবচেয়ে বেশি। এখানে নমুনাকে কিছু পরিচিত এন্টিবডির সাথে মিশানো হয় তারপর বিশেষ স্তর লাগানো ফিল্মের সংস্পর্শে আনা হয়। এন্টিজেন থাকলে (বা না থাকলে) ফিল্মটি রং পরিবর্তন করে।[৩]
ফলাফল নিরূপণ
[সম্পাদনা]র্যাপিড স্ট্রেপ টেস্টের মাধ্যমে গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কির উপস্থিতি নির্ণয় সাফল্যের শতকটা হার ৯৫% (কোন কোন গবেষণায় এটা ১০০% এর কাছাকাছি বলেও দাবি করে)। তাই ধরেই নেওয়া হয় টেস্টের ফলাফল পজিটিভ আসলে সেখানে গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কির উপস্থিতি রয়েছে। তারপরও, ৫% থেকে ২০% মানুষ তাদের গলায় গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কি বহন করে অথচ তাঁদের গলায় কোন প্রদাহের লক্ষন বহন করে না। তাই কারো গলায় গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কি থাকলেই যে সে ফ্যারিনজাইটিস এর রোগী এমনটি দাবী করা যাবে না। ল্যাটারেল ফ্লো পদ্ধতির র্যাপিড স্ট্রেপ টেস্টের স্পর্শকাতরতা ৬৫% থেকে ৮০% পর্যন্ত কম। তারপরও পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল আসলে তাকে গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কি ফ্যারিনজাইটিস নয় এমনটা বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না যেটা কিনা মাইক্রোবিয়াল কালচারের তুলনায় একটি উল্লেখযোগ্য অসুবিধা, যার স্পর্শকাতরতা ৯০% থেকে ৯৫% পর্যন্ত। যাইহোক, নতুন অপ্টিকাল ইমিউনোএ্যাসে টেস্টটি ৯৪% পর্যন্ত সংবেদনশীল বলে গবেষণার রিপোর্টে পাওয়া গেছে।
যদিও উপসর্গহীন জীবাণুধারকের ক্ষেত্রে একটি র্যাপিড স্ট্রেপ টেস্ট করানো আর না করানোর ভেতর কোন পার্থক্য থাকে না, বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই আর এস টি'র ফলাফল পজিটিভ আসলে গলায় ঘাঁ হওয়া রোগীকে এ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দেন। যুক্তরাষ্টের বিশেষজ্ঞগণ ফলাফল নেগেটিভ আসলে একটি মাইক্রোবিয়াল কালচার করার পরামর্শ দেন যেখানে ইউরোপীয় বিশেষজ্ঞরা আরএসটির ফলাফলেই সন্তুষ্ট থাকেন।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- স্ক্রীনিং (মেডিসিন)
- রোগনির্ণয়ের পরীক্ষা
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;Matthys et. al.
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ ক খ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;Danchin et. al.
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;Cohen et. al.
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি