রমা ইয়াদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
২০০৭ সালে ইয়াদ

রহমতুল্লাহ ইয়াদ বা রমা ইয়াদ (জন্ম: ১৩ জুন ১৯৭৬, ডাকার, সেনেগাল) একজন ফরাসি রাজনীতিবিদ ও নারীবাদী। তিনি ২০০৭ সাল থেকে , তিনি ফ্রান্সের পররাষ্ট্র ও মানবাধিকার প্রতিমন্ত্রী বা পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বার্নার্ড কাউচনার-এর অধীন কাজ করছেন।

রমা ইয়াদ একজন মুসলিম তবে তিনি ইহুদি জোসেফ জিমমেটকে বিয়ে করেছেন যিনি ফ্রান্স সরকারের হয়ে কাজ করেন।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

তিনি সেনেগাল এর ডাকারে একটি ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম ছিল আমিনাতা কান্দজি, যিনি একজন স্কুল শিক্ষকা ছিলেন এবং তার পিতা গ্যাব্রিয়েল ইয়েড ছিলেন একজন অধ্যাপক এবং প্রাক্তন সেনেগালের প্রেসিডেন্ট লিওপোল্ড সেদারের ব্যক্তিগত সচিব এবং একজন কূটনীতিক।

তিনি ১৯৮৪ সালে আট বছর বয়সে সপরিবারে ফ্রান্সে চলে যান। তার বাবা যখন দেশ ছাড়েন তখন তার বয়স ১৪ বছর ছিল। তখন তিনি তার মা এবং তিন বোনের সাথে কলম্বিয়ায় চলে যান। এবং একটি ক্যাথলিক স্কুলে ভর্তি হয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তারপর রমা ইয়াদ প্যারিসের ইনস্টিটিউট ডি'টিউডস পলিটিকসেরাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করেন, যেখান থেকে তিনি ২০০০ সালে স্নাতক পাশ করেন। এর পরে, তিনি প্যারিস শহরের বিভিন্ন বিষয় এবং ফরাসি সংসদে চাকরি নিয়ে কাজ করেন।

তার রাজনৈতিক কর্মজীবন[সম্পাদনা]

রমা ইয়াদ প্যারিস সিটি হল এবং প্যারিস জাতীয় পরিষদে চাকরি করেছেন। তিনি গ্রিন পার্টির হয়েও কাজ করেছিলেন। পরে তিনি ২০০২ সালে সিনেটর নির্বাচিত হন। তারপর তিনি “ইত্তেহাদু মিন আযালে হরকাতে শুবিয়া” অর্থাৎ ইউনিয়ন ফর আ পপুলার মুভমেন্ট বা ইউএমপি এ যোগ দেন। এ রাজনৈতিক দলের হয়ে ২০০৫ সালে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী নির্বাচিত হন এবং ২০০৬ সালে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তিনি হুমকি প্রদান করেছেন বলে অভিযুক্ত হন এবং কারারুদ্ধ হন। তিনি এটিকে নিকোলাস সারকোজির চক্রান্তকে বলে ঘোষণা করেন এবং বলেন যে তাকে শাসক দলে যোগ দিতে বাধ্য করার জন্য এ ঘৃণ পথ গ্রহণ করা হয়েছে।[১]

২০০৭ সালের মে মাসে তিনি ফ্রান্সের পররাষ্ট্র ও ইউরোপীয় বিষয়ক মন্ত্রী বার্নার্ড কাউচনার নেতৃত্বে মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২০০৮ সালে মুয়াম্মার গাদ্দাফির লিবিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে কি না সে বিষয়ে তদন্তের জন্য ফ্রান্স এর হয়ে সফর করেন।[২] সফর শেষে এ সম্পর্কে তদন্ত প্রতিবেদন দেন।

বিতর্ক এবং নিন্দা[সম্পাদনা]

  • ২০০৭ সালে, তার বই Noirs de France, Les Nouveaux Neg'marrons- এ তিনি লিখেছিলেন যে : "১৮ বছর বয়স পর্যন্ত যদি সেনেগাল এবং ফ্রান্সের মধ্যে যুদ্ধ হতো, আমি সেনেগালকে বেছে নিতাম।" এ ধরনের দেশ বিরোধি কথা দেশে ঝড় তোলে। ২০০৯ সালে যখন তিনি পররাষ্ট্র সচিব নিযুক্ত হন, তখন এই বিবৃতিগুলি দেশের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করে। তখন তিনি বলেন "আমি একজন বিদেশী ছিলাম, এবং আমি ফরাসি নাগরিকত্ব চাইনি।" [৩]
  • কলম্বিয়ার মেয়র ফিলিপ সারে ২০১২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগ আনার পর, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে নান্টেরের একটি আদালত তাকে মানহানির জন্য দোষী সাব্যস্ত করে। বিচারে তার ২,০০০ ইউরো জরিমানা করে এবং ৪০০০ ইউরো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দেয়। পরে অবশ্য তিনি আপিল করেন।
  • ২৫ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে, প্যারিস ফৌজদারি আদালত তাকে প্রাক্তন সাংসদ ম্যানুয়েল ইস্ক্লিম্যানের মানহানির মামলায় অভিযুক্ত করে এবং ২৮ টি মামলার মধ্যে আটটিতে তার বিচার করে, বাকিগুলো থেকে তাকে বেকসুর খালাস দেয়। তবু হাল ছাড়েননি। পরে আপিল করেন এবং রায়ে তাকে ৮০০ ইউরো জরিমানা, এবং ম্যানুয়েল আইখলেমানকে ১০০০ ইউরো ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়। যদিও বিবাদি পক্ষ ১,০০,০০০ ইউরো দাবি করেছিল।
  • ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে মেরিন লে পেন এবং জিন-মেরি লে পেনকে অপমান করার দায়ে প্যারিস ফৌজদারি আদালত তাকে ৮০০ ইউরো জরিমানা, ১০০০ ইউরো ক্ষতিপূরণ করে। এটা ছিল তার নারী অধিকারের দাবি।

রাজনৈতিক অবস্থান[সম্পাদনা]

  • নারীর অধিকারের বিষয়ে: তিনি ২০১৩ সালে রাজনীতিতে অ্যান্থোলজি রিগ্রেটেবল ডু মেশিজম” গ্রন্থ লেখন। এ গ্রন্থে তিনি নারী অধিকারে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তার এ গ্রন্থ পড়ে অন্যান্য মহিলা মন্ত্রীরা “জার্নাল ডু ডিমান্সিতে” ১৪ মে ২০১৬ সালে লেখেন যে, “আজকের পর আমরা চুপ থাকব না।” [৪]
  • সকলের জন্য বিবাহ: সমকামী বিবাহ, দত্তক সমস্যা সংস্কারের প্রতি তার সমর্থন ঘোষণা করেন এবং এই অর্থে এটি সমান অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের একটি সম্প্রসারণ হিসাবে দেখেন। ২৭ জানুয়ারি, ২০১৩ সালে তিনি পিয়েরে বার্গো এবং জিন-মিশেল রিবেস দ্বারা আয়োজিত বিবাহের জন্য একটি সান্ধ্যভোজে অংশ নিয়েছিলেন। আর এটাছিল একটি সমকামি বিবাহ।
  • বর্ণ বৈষম্য : তিনি একবিংশ শতাব্দীর “এদারাতে নাদি ক্লাবের” প্রাক্তন ভাইস-চেয়ারম্যান হিসাবে বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেন এবং এভাররোস ক্লাবের সদস্য হয়ে ফরাসি মিডিয়ায় "সক্রিয় সংখ্যালঘুদের" প্রচারের জন্য পেশাদারদের একত্রিত করেন। অন্যান্য মন্ত্রীদের মতো, তিনি দাবি করেন যে তিনি আসলেই বর্ণবাদী অপমানের লক্ষ্য ছিলেন।
  • ফরাসি শিক্ষাব্যবস্থা: ২০১১ সালের নভেম্বরে, রমা ইয়াদি স্কুলে মেধা ফিরিয়ে আনার জন্য একটি জনশিক্ষা প্রচারণার আহ্বান প্রকাশ করেন এবং শিক্ষাব্যবস্থার দেউলিয়া হওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।
  • গাঁজার বৈধতা: রমা ইয়াদ ঘোষণা করেছেন যে তিনি গাঁজার বৈধতার বিরুদ্ধে, কেননা এটা অনৈতিক, মানব সমাজকে নষ্ট করে। তাই এটা বন্ধ করা দরকার।
  • র‍্যাডিক্যাল ইসলাম: রামা ইয়াদি ইসলামী চরমপন্থার উত্থানকে ধারাবাহিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা ত্যাগের ব্যাখ্যা দেন। তিনি পর্দা করার অনুমতি দেন এবং কিছু এলাকায় সালাফিদের সমর্থন করেন। এটা নিছক নির্বাচনী স্বার্থে মুসলিম সংখ্যালঘুদের দাবি ছিল। তিনি ইমামদের প্রশিক্ষণ এবং উগ্রবাদী প্রচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মরক্কোকে একটি উদাহরণ হিসাবে নেন।
  • ষাঁড়ের লড়াই : জুলাই ২০১৬ সালে, রমা ইয়েড গায়ক রেনাউডের সাথে করিডার বিরুদ্ধে একটি বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলে ষাঁড়ের নিষ্ঠুর লড়াইয়ের নিন্দা জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Jim Jarrasse, Rama Yade : «J'existerai après l'Unesco», Le Figaro, 22 April 2011
  2. Rama Yade quitte son poste d'ambassadrice à l'Unesco, Le Figaro,
  3. "Rama Yade is not opposed to the law banning the burqa" (Press release). Elle. 20 June 2009. Retrieved 27 April 2013.
  4. "EN DIRECT. Mariage gay: suivez les débats à l'Assemblée nationale" [LIVE: Gay marriage: debate in the National Assembly] (in French). L'Express. 5 February 2013. Retrieved 10 November 2019.