রঞ্জনরশ্মি কেলাসবিজ্ঞান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

রঞ্জনরশ্মি কেলাসবিজ্ঞান হল এক ধরনের পরীক্ষাভিত্তিক বিজ্ঞান যাতে কেলাসের পারমাণবিক ও আণবিক কাঠামো নির্ণয় করা হয়। কেলাসের কাঠামো একটি আপতিত রঞ্জনরশ্মি পটিকে বহু বিভিন্ন দিকে অপবর্তিত করে। এই অপবর্তিত রঞ্জনরশ্মিগুলির কোণ ও তীব্রতা পরিমাপ করার মাধ্যমে একজন কেলাসবিজ্ঞানী কেলাসের অভ্যন্তরের ইলেকট্রনগুলির ঘনত্বের একটি ত্রিমাত্রিক চিত্র সৃষ্টি করেন। এই ইলেকট্রন ঘনত্ব থেকে কেলাসের অভ্যন্তরে পরমাণুসমূহের অবস্থান, এগুলির মধ্যকার রাসায়নিক বন্ধনের প্রকৃতি, কেলাসীয় বিশৃঙ্খলা ও আরও বিভিন্ন তথ্য নির্ণয় করা সম্ভব হয়।

যেহেতু অনেক উপাদান পদার্থ কেলাস গঠন করে – যেমন লবণ, ধাতু, খনিজ, অর্ধপরিবাহী, এবং বিভিন্ন অজৈব, জৈব ও জীবজ অণুসমূহ – তাই রঞ্জনরশ্মি কেলাসবিজ্ঞান শাস্ত্রটি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রের বিকাশে মৌলিক ভূমিকা পালন করেছে। এই পদ্ধতি প্রয়োগের প্রথম দশকগুলিতে এটি ব্যবহার করে পরমাণুর আকার, রাসায়নিক বন্ধনের দৈর্ঘ্য ও প্রকার এবং বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে (বিশেষত খনিজ ও সংকর ধাতুগুলির) পারমাণবিক মাপনীতে পার্থক্য নির্ণয় করা হয়। অধিকন্তু পদ্ধতিটি বহুসংখ্যক জীবজ অণুর গাঠনিক কাঠামো ও ক্রিয়া উদ্ঘাটন করে, যাদের মধ্যে আছে খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন, ঔষধ, প্রোটিন (দেহসার), নিউক্লেয়িক অ্যাসিড (যেমন ডিএনএ), ইত্যাদি। রঞ্জনরশি কেলাসবিজ্ঞান আজও নতুন নতুন উপাদান পদার্থের পারমাণবিক কাঠামো চরিত্রায়িত করা এবং অন্যান্য পরীক্ষানিরীক্ষায় আপাতদৃষ্টিতে একই রকম উপাদানসমূহের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ের প্রধানতম পদ্ধতি। রঞ্জনরশ্মি কেলাস কাঠামোগুলিকে কোনও উপাদানের অস্বাভাবিক ইলেকট্রনীয় (বৈদ্যুতিন) বা প্রসার্য স্থিতিস্থাপক ধর্ম ব্যাখ্যা করতে, রাসায়নিক আন্তঃক্রিয়া ও প্রক্রিয়াসমূহের উপর আলোকপাত করতে কিংবা রোগসমূহের বিরুদ্ধে ঔষধ নকশা করার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

রঞ্জনরশ্মি কেলাসবিজ্ঞানের পদ্ধতিতি পারমাণবিক কাঠামো নির্ণয়ের আরও একাধিক পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত। ইলেকট্রন বা নিউট্রন কণা বিক্ষেপণের মাধ্যমেও সমরূপী অপবর্তন বিন্যাস সৃষ্টি করা সম্ভব। যদি যথেষ্ট আকারের একক কেলাস সংগ্রহ করা না যায়, তবে অন্য বিভিন্ন রঞ্জনরশ্মি পদ্ধতি প্রয়োগ করে অপেক্ষাকৃত কম খুঁটিনাটি তথ্য বের করা যায়। এইসব পদ্ধতির মধ্যে আছে তন্তু অপবর্তন, গুঁড়া অপবর্তন এবং (যদি নমুনাটি কেলাসিত না হয়) ক্ষুদ্র-কোণ রঞ্জনরশ্মি বিক্ষেপণ। যদি অনুসন্ধানাধীন উপাদানটি কেবলমাত্র ন্যানোকেলাসিত গুঁড়া রূপে বিদ্যমান থাকে বা এর কেলাসধর্ম অনুন্নত হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে ইলেকট্রন অপবর্তন, সংবহন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণইলেকট্রন কেলাসবিজ্ঞান পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করে পারমাণবিক কাঠামো নির্ণয় করা হতে পারে।