যুক্তরাজ্যের পরমাণু অস্ত্র

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
যুক্তরাজ্য (United Kingdom)
Location of যুক্তরাজ্য (United Kingdom)
প্রথম পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা৩রা অক্টোবোর ১৯৫২
প্রথম ফিউশন অস্ত্র পরীক্ষা১৫ ই মে ১৯৫৭
শেষ পারমাণবিক পরীক্ষা২৬শে নভেম্বর ১৯৯১
বৃহত্তম ফলিত পরীক্ষা৩ মেগা টন টিএনটি (১৩ পেজু) (28 April 1958)
মোট পরীক্ষা৪৫ টি নিক্ষিপ্ত
নির্দিষ্ট সময়ে সর্বাধিক মজুদ৫২০টি ক্ষেপণাস্ত্র (১৯৭০)
বর্তমান মজুদ (ব্যবহারযোগ্য ও অব্যবহারযোগ্য)২১৫ টি (২০১৬)
বর্তমান ব্যবহারযোগ্য মজুদ১২০ টি ক্ষেপণাস্ত্র (২০১৬)
সর্বোচ্চ ক্ষেপণাস্ত্র পরিসীমা১২,০০০ কিলোমিটার (৭,৫০০ মা) (UGM-133 Trident II)
নিউক্লিয়ার নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি সাক্ষরকারীহ্যাঁ (১৯৬৮, স্বীকৃত পরমাণু শক্তিধর)

যুক্তরাজ্য হল তৃতীয় দেশ(আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন এর পরে) যারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরী এবং এর কার্যকারীতা পরীক্ষা করে এবং ৫ টি দেশের মধ্যে একটি যারা বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধে কাজ করে।

যুক্তরাজ্য ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোড নেম টিউব এলোয়স নামে নিউক্লিয়ার প্রোগ্রাম শুরু করে পরবর্তিতে এটি আমেরিকান ম্যানহাটান প্রোজেক্ট এর সাথে সংযুক্ত করা হয়। ম্যানহাটান প্রোজেক্টে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরাও কাজ করে, তাই তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার পারমাণবিক অস্ত্র আবিষ্কারকে একটি যৌথ অর্জন হিসেবে ধরে নেয়, কিন্ত আমেরিকান পরমাণু শক্তি আইন ১৯৪৬ যুক্তরাজ্য সহ অন্যান্য দেশকে পরমাণু অস্ত্র বিষয় তথ্য প্রদানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যুক্তরাজ্য বিশ্ব দরবারে তার নিজ ক্ষমতা বজায় রাখতে তাদের নিজ প্রজেক্ট আবার শুরু করে এবার এর কোড নেম দেয়া হয় হাই এক্সপ্লোসিভ রিসার্চ। তেশরা অক্টোবর,১৯৫২ সালে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মন্টে বেলো দ্বীপে, যুক্তরাজ্য তাদের প্রথম পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে এটি অপারেশান হারিকেন নামে পরিচিত। পরবর্তি দশকে যুক্তরাজ্য অস্ট্রেলিয়ায় আরো ১১ টি পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়।

ব্রিটিশ হাইড্রোজেন বোম্ব প্রোগ্রাম, যুক্তরাজ্যের থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র তৈরীর সক্ষমতা প্রদর্শন করে।  এবং ১৯৫৮ সালে কোডনেম অপারেশন গ্রাপল নামে এক প্রজেক্টে তারা প্রশান্ত মহাসাগরে তাদের থার্মো নিউক্লিয়ার অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। এতে করে যুক্তরাজ্য বিশ্বের তৃতীয় পারমাণবিক শক্তি সম্পন্ন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

এবং ১৯৫৮ ইউএস-ইউকে মিউচুয়াল ডিফেন্স এগ্রিমেন্ট এর দ্বারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র বিষয়ক বিশেষ সম্পর্ক পুনরায় বহাল হয়।[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

টিউব এলোয়স[সম্পাদনা]

১৯৩২ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যামব্রিজ এর কেভিন্ডিস ল্যাব্রটরিতে জেমস চ্যাডউইক এর দ্বারা নিউট্রন কনা সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হয়[২]। পরবর্তিতে একই বছরের এপ্রিল মাসে তার সহকর্মি জন এবং আরনেস্ট ওয়াল্টন এক্সালেরেটেড প্রোটন দ্বারা লিথিয়াম আয়নকে ভাগ করে[৩]। ১৯৩৮ সালের ডিসেম্বরে অট্টো হান এবং ফ্রিটজ স্ট্রাসম্যান বার্লিন-দাহলেম এর হান নামক ল্যাব্রটরিতে কম গতি সম্পন্ন নিউট্রন দ্বারা ইউরেনিয়াম এর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিস্ফোরন ঘটায়।

এবং বেরিয়াম এর উপস্থিতি লক্ষ্য করেন[৪]। হান তার সহকর্মী লিসা মেইটনার কে তা জানান পরবর্তিতে লিসা মেইটনার এবং অট্টো ফ্রিস্ক এর গবেষণায় তারা সিদ্ধান্তে আসেন যে উইরেনিয়াম নিউক্লিয়াস ভাগ হওয়া সম্ভব এবং তা হয়েছে, এবং তারা ১৯৩৯ সালে ন্যাচার নামক একটি সাইন্টিফিক জার্নালে তা প্রকাশ করেন[৪]

এবং এ প্রক্রিয়ার নাম দেন তারা “ফিশান[৪]।  

ফিশান প্রক্রিয়া আবিষ্কারের ফলে ভয়ানক শক্তিশালী পারমাণবিক বোমা তৈরীর সম্ভাবনার দ্বার খুলে যায়। লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের শিক্ষক জর্জ পেজেট থমসন এবং ইউনিভার্সিটি ব্রিমিংহাম এ চাকুরীরত একজন অস্ট্রেলিয়ান পদার্থ বিজ্ঞানী মার্ক অলিফেন্টকে ইউরেনিয়াম নিয়ে গবেষণার দায়িত্ব দেয়া হয়। অলিফেন্ট তার কাজের দায়িত্ব তার অধীনস্থ ২ জন রেফুজি বিজ্ঞানী রুদলোফ এবং ফ্রিসককে দেয়, ফলপ্রসূতে তারা বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম-২৩৫

এর ধাতবিয় গোলক এর ক্রিটিকাল ম্যাস বের করে এবং দেখা যায় টনের পরিবর্তে ১ থেকে ১০ কেজি ইউরোনিয়াম ব্যবহার করে হাজার টন ডাইনামাইট এর সমান বিস্ফোরন ঘটানো সম্ভব[৪][৪]

পরবর্তিতে এ বিষয়ে আরো গবেষণার জন্য অলিফেন্ট, ফ্রিসক-রুদলোফের গবেষণা টিজার্ড কমিটির চেয়ারম্যান স্যার হেনরি টিজার্ড এর কাছে পেশ করেন ফলশ্রুতিতে MAUD কমিটি তৈরী হয়। ১৯৪১ সালে জোরেশোরে তাদের গবেষণা শুরু হয় এবং তারা

এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে পারমাণবিক বোমা তৈরী করা সুধু সম্ভবই নয় এটি খুব দ্রুত হতে পারে ২ বছর বা যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই তৈরী সম্ভব। এবং তারা সরকারকে অতি দ্রুততার সাথে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরীর আবেদন জানাল। এ প্রক্রিয়া সচল এবং নিয়ন্ত্রের উদ্দেশে স্যার জন এন্ডারসন কে লর্ড প্রেসিডেন্ট এবং ওয়ালেস একারস কে ডাইরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত করে নতুন একটি ডাইরেক্টরেট প্রজেক্ট তৈরী হয় যার নাম দেয়া হয় টিউব এলোয়স।

প্রোজেক্ট ম্যানহাটান[সম্পাদনা]

A large man in uniform and a bespectacled thin man in a suit and tie sit at a desk.
জ্যামস চ্যাডউইক (বামে) এবং মেজোর জেনারেল লেজলি আর. গ্রুভস জুনিয়র,(ডানে), ম্যানহাটান প্রোজেক্ট

যুক্তরাজ্য একাই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরী করার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্ত  যুদ্ধ চলাকালের কারণে এবং সঠিক সময়ে পারমাণবিক অস্ত্রের বাস্তবায়ন এর শঙ্কায়, তারা সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

এছারাও তাদের প্রোজেক্ট এ সোভিয়েত ইউনিয়নের এটোমিক স্পাই ঢুকে পরেছিল[৪]

১৯৪৩ এর আগস্টে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র কিইবেক চুক্তি করে। চার্চিল এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুসভেল্ট এতে চুক্তিতে সাক্ষর করেন এর মাধ্যমে দেশ দুটি তাদের নিউক্লিয়ার ডেভলপমেন্ট প্রোজেক্ট সংযুক্ত করে[৪]

যা প্রোজেক্ট ম্যানহাটান নামে পরিচিত এবং চুক্তিতে এটিও বলা থাকে যে যৌথ সম্মতি ছাড়া তৈরীকৃত পারমাণবিক বোমা যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা। এ প্রোজেক্টে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরাও অংশগ্রহণ এবং অবদান রাখেন।

যার কারণে তৎকালীন ব্রিটিশসরকার পারমাণবিক অস্ত্র আবিষ্কারকে একটি যৌথ অর্জন হিসেবে ধরে নেয়, কিন্ত আমেরিকান পরমাণু শক্তি আইন ১৯৪৬ যুক্তরাজ্য সহ অন্যান্য দেশকে পরমাণু অস্ত্র বিষয় তথ্য প্রদানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

এবং এর কারণে পরবর্তিতে আমেরিকা এবং যুক্তরাজ্যের সম্পর্কে অবনতি ঘটে। এবং যুক্তরাজ্য প্রোজেক্ট হারিকেন নামে তাদের নিজস্ব নিউক্লিয়ার ওয়ারফেয়ার ডেভলপমেন্ট প্রোজেক্ট চালু করে। এবং পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে ব্রিটিশ গ্রাপল প্রোজেক্ট

এর সাফল্য লাভের পরে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য সমঝোতা চুক্তি হয় এবং এতে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যকার সম্পর্ক পুনরায় উন্নতি লাভ করে এবং এতে করে যুক্তরাজ্য,আমেরিকা থেকে সামরিক সাহাজ্য লাভ করে।

যুক্তরাজ্যের পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র পরীক্ষা এবং সফলতা[সম্পাদনা]

যুক্তরাজ্যের প্রজেক্ট হারিকেন সফলতা লাভ করে এবং ১৯৫২ সালে তারা সর্বপ্রথম পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায় এবং এতে সফলতে লাভ করে।

তাদের সর্বশেষ পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা হয় ১৯৯১ সালে।

তাদের পরীক্ষিত সব পারমাণবিক অস্ত্র থেকে হাইড্রোজেন বোম্ব বা থার্মোনিউক্লিয়ার বোম্ব সবচেয়ে শক্তিশালী।

টোটেম সাইট, অস্ট্রেলিয়া মেইনল্যান্ড
যুক্তরাজ্যের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা
প্রোজেক্ট সাল পরীক্ষা ফলিত দূরত্ব (কিলোটন) সর্বমোট উৎপন্ন শক্তি (কিলোটন) মন্তব্য উদ্ধৃত
হারিকেন ১৯৫২ ২৫ ২৫ প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র [৪]
টোটেম ১৯৫৩ ৮ থেকে ১০ ১৮ - [৪]
মোসাইক ১৯৫৬ ১৫ থেকে ৬০ ৭৫ - [৪]
বাফেলো ১৯৫৬ ২ থেকে ১৫ ৩০ - [৪]
এন্টলার ১৯৫৭ ১ থেকে ২৭ ৩৪ - [৪]
গ্রাপল ১৯৫৭-১৯৫৮ ২৪ থেকে ৩,০০০ ৭,৮৬৯ প্রথম থার্মোনিউক্লিয়ার বোম্ব [৪]
NTS সিরিস ১৯৬১-১৯৯১ ২৪ ০ থেকে ১৪০ ১,২৩৬ - [৪]
সর্বমোট ১৯৫২-১৯৯১ ৪৫ ০ থেকে ৩,০০০ ৯,২৮২ [৪]

যুক্তরাজ্যের পারমাণবিক অস্ত্র সমূহ[সম্পাদনা]

রয়েল নেভ সাবমেরিন, ট্রাইডেন্ট
  • Blue Steel - ফিশান হেড নিউক্লিয়
  • ইয়েলোসান - আকাশ থেকে নিক্ষেপিত থার্মোনিউক্লিয়ার বোম্ব
  • যুদ্ধাস্ত্র
পারমাণবিক অস্ত্রের নাম এবং বর্ণনা
নাম বর্ণনা উদ্ধৃত
Mk.1 এটম বোম ফিশান ব্যবহার করে এর শক্তি উৎপন্ন হয় [৫]
রেড বিয়ার্ড ট্যাকটিকাল নিউক্লিয়ার ওয়েপন [৫]
রেড স্নো থার্মো নিউক্লিয়ার বোম্ব [৫]
ট্রাউডেন্ট নিউক্লিয়ার সাবমেরিন [৫]
ডাব্লিউ.১৭৭ নিউক্লিয়ার ডেপথ চার্জ [৫]
গ্রীন চিস নিউক্লিয়ার এন্টি শিপ মিসাইল [৫]
অরেঞ্জ হেরাল্ড ফিউসান বুস্টেড নিউক্লিয়ার ওয়েপন [৫]

যুক্তরাজ্যের বর্তমানে ১২০ টি ব্যবহারযোগ্য পরমাণু অস্ত্র রয়েছে (২০১৯)

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ১২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ আগস্ট ২০১৯ 
  2. "Ronald W. Clark"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৫-০৬। 
  3. Aylen, Jonathan (২০১৫-০১-০১)। "First Waltz: Development and Deployment of Blue Danube, Britain's Post-War Atomic Bomb"The International Journal for the History of Engineering & Technology85 (1): 31–59। আইএসএসএন 1758-1206ডিওআই:10.1179/1758120614Z.00000000054 
  4. "Nuclear weapons and the United Kingdom"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৮-২৭। 
  5. "Metapress | A Fast Growing Resource for Young Entrepreneurs"Metapress (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১২-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২৯ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]