মানব বংশাণুসমগ্র

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জিনোম

মানব বংশাণুসমগ্র বলতে মানবদেহে অবস্থিত সকল নিউক্লিয়িক এসিডের সম্পূর্ণ সমগ্রকে বোঝায়। এই নিউক্লিয়িক এসিডের সংগ্রহটি ডিএনএ হিসেবে মানবকোষের কোষকেন্দ্র বা নিউক্লিয়াসে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমে বিন্যস্ত থাকে; এছাড়া অল্প কিছু ডিএনএ কোষের মাইটোকোন্ড্রিয়া নামক অঙ্গাণুতেও পাওয়া যায়।[১] মানব বংশাণুসমগ্রে প্রোটিন সংকেতায়নকারী এবং প্রোটিন সংকেতায়ন করে না, এমন উভয় ধরনেরই বংশাণু রয়েছে।

হ্যাপলয়েড মানব বংশাণুসমগ্র, যেগুলি বীজ কোষে থাকে (নিষিক্তের আগে যৌন প্রজননের মায়োসিস পর্যায়ে তৈরি ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু গেমেট কোষ মিলে একটি জাইগোট তৈরি করে) তিন শত কোটি ডিএনএ ভিত্তি জোড় নিয়ে গঠিত হয়, এবং ডিপ্লোড বংশাণুসমগ্রে (যেগুলি দেহকোষে পাওয়া যায়) ডিএনএ-র পরিমাণ দ্বিগুণ থাকে।

যদিও ব্যক্তিভেদে বংশাণুসমগ্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। একক নিউক্লিওটাইডে ভিন্নতার কারণে এই পার্থক্য ০.১ শতাংশের মতো। ইনডেল বিবেচনায় আনলে তা ০.৬% হয়। [২]

মানুষ আর তার নিকটতম প্রাণীর মধ্যকার পার্থক্যের তুলনায় এই পার্থক্য অনেক ক্ষুদ্র। মানুষের সাথে শিম্পাঞ্জির ও বনোবোনের এই বংশাণুগতবপার্থক্য ~ ১.১% এর মতো। ইনডেল বিবেচনায় আনলে ৪ শতাংশ হয়।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

প্রথম মানব বংশাণুসমগ্র অনুক্রমের খসড়া ২০০১ সালে হিউম্যান জিনোম প্রকল্পের ফলাফল হিসেবে প্রকাশিত হয়। [৩] ২০০৪ সালে সেলেরা কর্পোরেশন হিউম্যান জিনোম প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ ফলাফলের খসড়া প্রকাশ করে। তাদের প্রকাশনায় অবশ্য ৩৪১টি শুন্যস্থান রয়ে গিয়েছিল। সেই সময়ে উপলব্ধ প্রযুক্তি দ্বারা উচ্চ পুনরাবৃত্তি অঞ্চল ও অন্যান্য ডিএনএ অনুক্রম নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।

মেরুদন্ডী প্রাণীর মাঝে মানুষই প্রথম প্রাণী যার পূর্ণাঙ্গ বংশাণুসমগ্রের অনুক্রম এত বিস্তারিতভাবে নির্ণয় করা হয়েছিল। ২০১৮ সাল নাগাদ প্রায় দশ লক্ষ মানুষের দেহকোষের বংশাণুসমগ্রের অনুক্রম "নেক্সট জেনারেশন সিকুয়েন্স পদ্ধতি" অর্থাৎ "পরবর্তী প্রজন্মের অনুক্রম নির্ণয় পদ্ধতি" ব্যবহার করে নির্ণয় করা হয়েছে। [৪] এই অনুক্রম করা প্রাপ্ত তথ্য বিশ্বব্যাপী জৈবচিকিৎসা বিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, আদালতি বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় ব্যবহৃত হয়।

যদিও মানব বংশাণুসমগ্রের ক্রমটি (প্রায়) সম্পূর্ণভাবে ডিএনএ অনুক্রম নির্ণয়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে, তা সত্ত্বেও এটি এখনও পুরোপুরি বোঝা সম্ভব নি।

বেশিরভাগ (যদিও সম্ভবত সমগ্র নয়) বংশাণু হাই থ্রুপুট পরীক্ষামূলক এবং জৈব তথ্যবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সংমিশ্রণ দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে, তবুও তাদের প্রোটিন এবং আরএনএ পণ্যগুলির জৈবিক ক্রিয়াকলাপগুলি আরও বিশদ জ্ঞানের জন্য এখনও অনেক গবেষণাকর্ম সম্পাদন করা দরকার। সাম্প্রতিক ফলাফলগুলি অনুযায়ী বংশাণুসমগ্রের অভ্যন্তরে অ-সংকেতায়ক ডিএনএর বেশিরভাগ পরিমাণে জৈব রাসায়নিক পদার্থের সাথে বংশাণুর অভিব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ, ক্রোমোজোম আর্কিটেকচারের সংগঠন এবং পরাবংশাণুগত (এপিজেনেটিক) উত্তরাধিকার নিয়ন্ত্রণকারী সংকেত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সম্পূর্ণ বংশাণুসমগ্র অনুক্রমের তথ্য প্রাপ্তির আগে,আনুমানিক মানব বংশাণু সংখ্যা ছিলো ৫০,০০০ থেকে ১৪০,০০০ (এই আনুমানিক সংখ্যায় অ-প্রোটিন সংকেতায়ক বংশাণুগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়)। [৫] জিনোম সিকোয়েন্সের গুণমান এবং প্রোটিন-কোডিং জিনগুলি সনাক্ত করার পদ্ধতির মানোন্নয়নের সাথে,[৬] স্বীকৃত প্রোটিন-কোডিং জিনের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে ১৯,০০০-২০,০০০ হয়েছে। [৭] তবে, প্রোটিন সংকেতায়ন করে না এমন অনুক্রমের ভূমিকা, নিয়ন্ত্রক আরএনএ অভিব্যক্ত করে এমন বংশাণুর সংখ্যা কমপক্ষে ৪৬,৮৩১।[৮] এবং আরও ২৩০০ অণু-আরএনএ বংশাণু হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। [৯] ২০১২ সালের মধ্যে ক্রিয়ামূলক ডিএনএ উপাদান লক্ষ করা যায়। এরা আরএনএ বা প্রোটিনকে সংকেতায়ন করে না।[১০] সাম্প্রতিক (২০১৮) জনসংখ্যার সমীক্ষায় মানব বংশাণুসমগ্রের আরও ১০% সমতুল্য কার্যমূলক ডিএনএর সন্ধান পাওয়া যায়। [১১]

ব্যক্তিগত বংশাণুসমগ্র[সম্পাদনা]

ব্যক্তিগত বংশাণুসমগ্র হল একক ব্যক্তির ডিএনএ তৈরি করে সেসব রাসায়নিক বন্ধনীর (প্রায়) সম্পূর্ণ ক্রম। যেহেতু একক নিউক্লিওটাইড পলিমার্ফিজমের (এসএনপি) বংশাণুগত পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন লোকের উপর চিকিৎসার পৃথক প্রভাব লক্ষ করা যায়। ব্যক্তিগত বংশাণুসমগ্রের বিশ্লেষণ পৃথক বংশাণুগত বৈশিষ্ট্যের (জিনোটাইপ) উপর ভিত্তি করে ব্যক্তিমাফিক চিকিৎসা করা যেতে পারে। [১২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Neaves, William B (২০০২-১২-০১)। "Genomes, 2nd ed. T.A. Brown. Oxford, United Kingdom: Wiley-Liss, 2002, 600 pp., $97.50, cloth. ISBN 0-471-25046-5."Clinical Chemistry48 (12): 2300–2300। আইএসএসএন 0009-9147ডিওআই:10.1093/clinchem/48.12.2300 
  2. Auton A, Brooks LD, Durbin RM, Garrison EP, Kang HM, Korbel JO, Marchini JL, McCarthy S, McVean GA, Abecasis GR (অক্টোবর ২০১৫)। "A global reference for human genetic variation": 68–74। ডিওআই:10.1038/nature15393পিএমআইডি 26432245পিএমসি 4750478অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  3. International Human Genome Sequencing Consortium Publishes Sequence and Analysis of the Human Genome
  4. Molteni, Megan (১৯ নভেম্বর ২০১৮)। "Now You Can Sequence Your Whole Genome For Just $200" 
  5. Wade, Nicholas (২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯)। "Number of Human Genes Is Put at 140,000, a Significant Gain"The New York Times 
  6. International Human Genome Sequencing Consortium (অক্টো ২০০৪)। "Finishing the euchromatic sequence of the human genome": 931–45। ডিওআই:10.1038/nature03001অবাধে প্রবেশযোগ্যপিএমআইডি 15496913 
  7. Ezkurdia I, Juan D, Rodriguez JM, Frankish A, Diekhans M, Harrow J, Vazquez J, Valencia A, Tress ML (নভেম্বর ২০১৪)। "Multiple evidence strands suggest that there may be as few as 19,000 human protein-coding genes": 5866–78। ডিওআই:10.1093/hmg/ddu309পিএমআইডি 24939910পিএমসি 4204768অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  8. Saey, Tina Hesman (১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮)। "A recount of human genes ups the number to at least 46,831" 
  9. Alles J, Fehlmann T, Fischer U, Backes C, Galata V, Minet M, Hart M, Abu-Halima M, Grässer FA, Lenhof HP, Keller A, Meese E (এপ্রিল ২০১৯)। "An estimate of the total number of true human miRNAs": 3353–3364। ডিওআই:10.1093/nar/gkz097পিএমআইডি 30820533পিএমসি 6468295অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  10. Pennisi E (সেপ্টে ২০১২)। "Genomics. ENCODE project writes eulogy for junk DNA": 1159–1161। ডিওআই:10.1126/science.337.6099.1159পিএমআইডি 22955811 
  11. Zhang, Sarah (২৮ নভেম্বর ২০১৮)। "300 Million Letters of DNA Are Missing From the Human Genome"। 
  12. Lai E (জুন ২০০১)। "Application of SNP technologies in medicine: lessons learned and future challenges": 927–9। ডিওআই:10.1101/gr.192301অবাধে প্রবেশযোগ্যপিএমআইডি 11381021