ব্যবহারকারী:Sakkhar21/শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

১৯ শতকে যে কয়েকজন ধর্ম মনিষী ছিলেন তাদের মধ্যে শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর ছিলেন অন্যতম। তিনি হিন্দু ধর্মের অন্যতম ধর্ম প্রচারক ছিলেন। শ্রীশ্রী রামঠাকুরের আবির্ভাব, সে যে এক যুগসন্ধিক্ষণে। বৈদেশিক বাতাসে তদানীন্তন নব্য শিক্ষাপ্রাপ্ত বাংলাদেশ চঞ্চল, শিক্ষিত মন অনেক কিছু জানিতে চায়। মিথ্যা ভেদগন্ডির প্রতি একটা বিদ্বেষভাব শিক্ষিত মনকে অস্থির করিয়া তুলিয়াছিল। তাই বুঝি বিশ্বপতি তাহাদের ব্যাকুলতায় চঞ্চল হইয়া বিশ্বমানবতার ক্ষুধা মিটাইতে নরদেহ ধারণ করিয়া কৈবল্যনাথ অবতারে আবির্ভূত হইয়াছিলেন। শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর জন্ম গ্রহণ করেন এক ধর্মীয় বংশে। তার বাবার নাম ছিল শ্রী রাধামাধব চক্রবর্তী।


জন্ম[সম্পাদনা]

শ্রীশ্রী রামঠাকুরের জন্মস্থান ডিঙ্গামানিক, শরীয়তপুরে। শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর বাংলা ১২৬৬ সালের ২১ শে মাঘ শুক্লপক্ষে বৃহস্পতিবার দশমী তিথি রোহিনী নক্ষত্রে জন্মগ্রহণ করেন।


জীবনী[সম্পাদনা]

শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর ছিলেন আড়ম্বরহীন সাধারণ মানুষের মত। বাহ্যিক আবরণের কোন বালাই ছিল না রাম ঠাকুরের মধ্যে। প্রথম দর্শনলাভের সৌভাগ্যের দিন হইতে যত দিন সুস্থ দেহে ছিলেন একখানি ধূতি ও একটি চাদর তিনি পরিধান করেছেন। শীত-গ্রীষ্ম সব সময় তিনি একই পোশাক পরতেন। জীবনের শেষ ভাগে আশ্রিতরা শ্রী শ্রী রাম ঠাকুরকে গরম জামা, কাপড় প্রভৃতিতে ভুষিত করত। ঐগুলি তিনি ইচ্ছামত দান করিতেন। পুঁথিগত বিদ্যা তার অবিদিত ছিল বলা চলে। তবু তিনি সর্ব্বশাস্ত্রবিশারদ ছিলেন। মহান আত্মার ভাবাবেশে তিনি কথা বলতেন। তার সন্মুখে উপস্থিত হলে সকলেরই মস্তক আপনিই অবনত হত। মহান সঙ্গীতের ন্যায় তাঁর কন্ঠস্বর। ভাবোচ্ছ্বাসগুলি স্বর্গের দৃশ্ব্যের ন্যায়। সে স্বর্গে সকল মানব প্রেমে সম্মিলিত। পাপী, অজ্ঞ, মুর্খ, সমাজের পরিত্যক্ত যত আবর্জনা সবাইকে তিনি কোলে টেনে নিতেন। যা তিনি স্পর্শ করেছেন, তাই পবিত্র হয়ছে। এমন কোন মলিনতা নাই যা সেই পুণ্যের আলোকে একটি কলঙ্ক রেখাপাত করতে পারে। সুগভীর জ্ঞান ও পবিত্রতা তাঁর নিকট নিশ্বাস-প্রশ্বাসের ন্যায় স্বাভাবিক। আপন-পর তাঁর নিকট অবিদিত ছিল। সবাই তাঁর নিকট সমান; সর্ব্বাধিক প্রিয় তাঁর কেই ছিল না, তাঁর নিকট যিনি থাকিতেন, মনে করিতেন তিনি ঠাকুরের অতি প্রিয় জন।


রাম ঠাকুরের কিছু বানী[সম্পাদনা]

সংসারে চলার পথে কোন বাঁধা-ধরা নিয়ম বা আদেশ শ্রীশ্রী ঠাকুরের নিকট হইতে কেহ কোনদিন পান নাই। সর্ব্বদা আলোচনার মাধ্যমে অনেক উপদেশ তিনি দিতেন। সেই সংগৃহীত উপদেশগুলিই জীবনপথে চলার একমাত্র অবলম্বন। কোন কঠিন সমস্যায় চিন্তান্বিত হইয়া পড়িলে ঠাকুর গল্পচ্ছলে উপদেশ দিয়া চিন্তা দূর করিয়া দিতেন। অধিকাংশ উপদেশ গল্প হইতে লওয়া হইয়াছে। উপদেশগুলি নিম্নে উদ্ধৃত হইল।

""গুরু""

  • গুরুকে ভজনা বা পূজা করিলে সর্ব্বদেবতাকে পূজা করা হয় ও সর্ব্বদেবতা তুষ্ট হন।
  • গুরুর আশ্রয় লইয়া সর্ব্বদা থাকিতে হয়।
  • গুরুর কার্য্য সমালোচনা করার ক্ষমতা কাহারও নাই।
  • গুরু ও ‘নাম’-এ কোন প্রভেদ নাই।
  • গুরুর আদেশই একমাত্র আদেশ।
  • গুরু সর্ব্বজ্ঞ ও সর্ব্বদর্শী।
  • গুরু-তীর্থ কৈবল্যধামে গ্রমন ও কামশ্রীকুণ্ডতে স্নান করিলেই সর্ব্বতীর্থের ফল লাভ হয়।
  • গুরু-কৃপায় সবই লাভ হয়।
  • গুরুর আদেশ গুরুই দেন-অন্যে তাহা দিতেই পারেন না।
  • গুরুর আশ্রিত ব্যক্তিকে পাপ স্পর্শ করিতে পারে না।
  • গুরু পাত্রানুযায়ী বীজ বপন করেন।
  • গুরুর বীজ নিস্ফল হয় না।
  • গুরু-পদ সেবা অর্থে গুরুর আশ্রয় ভিক্ষা।
  • গুরুর পূজায় শুচি-অশুচি নাই।
  • প্রত্যেক অনু-পরমানু গুরুরই অংশ।

স্মরণীয় উপদেশ[সম্পাদনা]

  • সংসারী হইয়া সাধনা করিলেই মুক্তিলাভ হয়। সন্যাস গ্রহনের প্রয়োজন হয় না।
  • সংসারীকে সামাজিক নিয়ম পালন করিতে হইবে।
  • সংসারীকে পরিবার প্রতিপালন করিতে হইবে।
  • যাহার যাহা আছে তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত।
  • হিংসা করা উচিত নয়।
  • মানুষ মানুষের অনিষ্ট করিতে পারে না।
  • ভাগ্যের লিখন মানিতে হইবে।
  • অতীত ও ভবিষ্যত চিন্তা করিয়া লাভ নাই।
  • সঞ্চয় করিলে বন্ধন বাড়ে।
  • কর্ত্তিত্বাভিমানী কোন কার্যে সাফল্য লাভ করিতে পারে না।
  • সর্ব্বদা নিজেকে ছোট মনে করিয়া প্রচ্ছন্ন থাকিতে হয়।
  • বাহ্য আবরণে অভিমান বাড়ায়।
  • কাহারও মনে কষ্ট দিতে নাই।
  • মাতাপিতার সেবা করিতেই হইবে।
  • কাহাকেও তুচ্ছ জ্ঞান করিতে নাই – কাহার মধ্যে কি আছে তাহা জানা যায় না।
  • সাধুর পোশাকে যিনিই থাকিবেন তিনিই নমস্য।
  • কেহই জগতের অস্পৃশ্য নয়।
  • তর্ক ও বিচারে কোন লাভ হয় না।
  • পুঁথিগত বিদ্যা বিদ্যা নয়।
  • সর্ব্বদা মাথা উঁচু করিয়া চলিবে।
  • প্রত্যেকের দীক্ষা গ্রহণ করা উচিত।
  • স্ত্রীকেও সর্ব্বদা সন্তুষ্ট রাখিতে হইবে।
  • জোর করিয়া কোন অভ্যাস ত্যাগ করিয়া লাভ হয় না।
  • যে নিজে আসে তাহাকে তাড়াইতে নাই।
  • কর্ত্তব্য কার্য্য ত্যাগ করিয়া কোন উত্সব বা ধর্ম্মানুষ্ঠান যোগদান করিয়া লাভ হয় না।
  • আমাদের চরম লক্ষ্য মুক্তি।
  • শরীরের যত্ন করিতে হইবে।
  • কোন জিনিষ প্রার্থনা করিতে নাই।
  • ফুল বাসি হয় না।
  • পাপীকে ঘৃনা করিতে নাই।
  • প্রসাদ যখন যে অবস্থায় পাওয়া যায় তখনই গ্রহণ করিতে হইবে।
  • উত্সব মনকে পবিত্র করে।
  • সুখই দুঃখ আনে।
  • দেবমন্দির কখনো অপবিত্র হয় না।
  • প্রত্যুপ্রকারের আশায় উপকার করিতে নাই।
  • এমন কোন অভ্যাস থাকা উচিত নয় যাহা ত্যাগ করা যায় না।
  • এই পৃথিবী মর-ভূমি।
  • মনের পাপ আত্মায় স্পর্শে না। আত্মা সর্ব্বদা নির্ম্মল।
  • সাধু-সন্যাসীকে আহ্বান করিয়া গৃহে আনিলে গৃহীর পক্ষে সেবাযত্নের দ্বারা তাঁহাকে সন্তুষ্ট করা যায় না, অসন্তোষ উত্পাদনের কারণ হয়। আপন ইচ্ছায় আসিলে গৃহীর কোন দোষ-ত্রুটি তিনি গ্রহণ করেন না।
  • ‘আমি’ বলিয়া পৃথিবীতে কেহ নাই। আমার কোন শক্তি নাই।
  • ‘আমি’ যন্ত্রচালিত পুত্তলিকা মাত্র।
  • কোন গন্ডির মধ্যে গেলে বন্ধনে পড়িতে হয়।
  • স্ত্রীলোকের মুখ্যধর্ম্ম পতিসেবা।

শেষ জীবন[সম্পাদনা]

শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর নরলীলার শেষ পর্যায়ে এসে ঘনিষ্ঠ অনুসারীদের একজন শ্রী উঁপেন্দ্র সাহার নিকট কিছুদিনের জন্য একটি শান্ত, নিরিবিলি জায়গায় থাকার জন্য তাঁর ইচ্ছা প্রকাশ করেন। শ্রী উঁপেন্দ্র সাহা শ্রীশ্রীঠাকুরের নিকট জানালেন যে, চৌমুহনীতে তার নিজস্ব একটি বাংলো অনেকদিন ধরে খালি পড়ে আছে এবং শ্রীশ্রী ঠাকুর যদি ঐ বাংলোতে থাকার সন্মতি দেন তাহলে তিনি থাকার সবরকম আয়োজন করতে পারেন। শ্রীশ্রীঠাকুরের সম্মতি সাপেক্ষে উপেন্দ্রবাবু তাঁর ভাই নরেনবাবুকে অতিসত্তর প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে বলেন এবং বাংলোটির প্রয়োজনীয় কিছুটা সংস্কার করে তিন-চার দিনের মধ্যে বাসপোযোগী করে তোলায় উপেন্দ্রবাবু শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিয়ে সেই বাংলোবাড়িতে উপস্থিত হন। শ্রীদেহ ত্যাগের আগ পর্যন্ত একটানা প্রায় সাত (৭) বছর ১৯৪৯ সালের ১ লা মে রবিবার পূণ্য অক্ষয় তৃতীয়া পর্যন্ত শ্রীশ্রীঠাকুর ওই বাংলোতেই বাস করেছেন। যদিও খুব স্বল্প সময়ের জন্য মাঝে মধ্যে তিনি বিভিন্ন জায়গায় ভক্তদের কাছে যেতেন। অবশেষে পূণ্য অক্ষয় তৃতীয়ার মাহেন্দ্রক্ষণে শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর ভক্তদের শোকসাগরে ভাসিয়ে শ্রীদেহ ত্যাগ করেন। এরপর শ্রীশ্রীঠাকুর বাংলোর যে ঘরে বাস করতেন সেখানেই তাঁরই নির্দেশ এবং উপস্থিত ভক্তদের সার্বিক অনুমোদনক্রমে তাঁর দেহ সমাধিস্থ করা হয়। পরে কুমিল্লা ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের ইজ্ঞিনিয়ারের প্ল্যান পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে তৈরী করা হয় সুন্দর সুরম্য একটি সমাধি মন্দির।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

https://en.wikipedia.org/wiki/Ram_Thakur http://www.kaibalyadham.org/ https://www.facebook.com/Kaibalyadham