ব্যবহারকারী:Emdadul hasan/মেজবাহ উদ্দিন নৌফেল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মেজবাহ উদ্দিন নৌফেল

জন্ম:(১৯৫৪ সালের ১৮ই জুন)

ফরিদপুর

মৃত্যু: ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১

করিমপুর

জাতীয়তা বাংলাদেশি

পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)

পরিচিতির কারণ:   বীর মুক্তিযোদ্ধা

ফরিদপুর শহরের বাসাতেই (১৯৫৪ সালের ১৮ই জুন) জন্ম নেয়া নৌফেল ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে ৪ টি বিষয়ে লেটার মার্কস সহ প্রথম বিভাগ পেয়ে ১৯৬৯ ইং সালে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। কলেজে ভর্তি হওয়ার পরই তদানীন্তন ইউ ও টি সি (UOTC) তে যোগদান করেন। ইউ ও টি সি-র ট্রেনিং সফল ভাবে শেষ করার কারণে তাকে ক্যাডেট ল্যান্স কর্পোরাল পদবী দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ তাকে ভীষণ ভাবে উজ্জীবিত করে। মার্চের শেষ দিকে নৌফেল এবং আরও কয়েকজন ইউ ও টি সির ছাত্র ফরিদপুর স্টেডিয়াম এবং রাজেন্দ্র কলেজের মাঠে কয়েক শ’ হবু যোদ্ধাদেরকে ট্রেনিং দেন। এপ্রিল মাসে হানাদার বাহিনীর সদস্যরা গোয়ালন্দ ঘাট পৌঁছাতেই নৌফেলরা যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেন। ইউ ও টি সির রাইফেল রাজেন্দ্র কলেজ থেকে লুকিয়ে বের করে নিয়ে আরেক সহযোদ্ধার সহায়তায় সেগুলোর অকেজো পিন ঠিক করে প্রথম যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। নৌফেল নিজ উদ্যোগে আরেক সহযোদ্ধাকে সাথে নিয়ে ফরিদপুরের চাদমারি মাঠে গার্লস গাইডের মেয়েদের মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং দেন। ২৬শে মে পরিবারের বিহারী কর্মচারীর সহায়তায় পাক হানাদার নৌফেলকে ফরিদপুর সার্কিট হাউসে ধরে নিয়ে অকথ্য অত্যাচার করে। ফরিদপুর পুলিশ লাইনে হানাদার বাহিনীর ঘাঁটিতে বোমা হামলা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে তার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের সূচনা হয়। সকল যুবক এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের খুঁজে খুঁজে খুন করা হচ্ছে জানতে পেরে বাসায় বাসায় গিয়ে তাদের অনেককে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে সহায়তা করেন।.তাদের গ্রুপ পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সফল অপারেশন করে(এরমধ্যে ‘বারখাদা ব্রীজ’ এবং ‘বাখুন্ডা ব্রীজ’অপারেশন বিশেষ উল্লেখযোগ্য)সবচেয়ে কঠিন এবং একক অপারেশন ছিল ওদের হাতে বানানো শক্তিশালী বোমা ফরিদপুরের পাঁচটি পাক হানাদারদের ঘাঁটিতে একই সময়ে পাঁচ যোদ্ধার ঘটানো বিস্ফোরণ। এই অপারেশনে নৌফেল সফলভাবে ট্রেনের দুই বগি ভর্তি পাকসেনাদের উপর বোমা ছুঁড়ে মারে। ৯ ডিসেম্বর '৭১, যশোরে পরাস্ত হওয়া হানাদার বাহিনীকে ফরিদপুরের করিমপুর নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখীন হতে হয়। সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা দলের কমান্ডার ছিলেন কাজী সালাউদ্দিন নাসিম এবং টু-আই-সি ছিলেন নৌফেল। করিমপুরে বিশাল শত্রু বাহিনীকে ২০-২২ জন মুক্তিযোদ্ধার প্রচন্ড আক্রমণের শিকার হতে হয়। কয়েক ঘণ্টা ধরে সম্মুখযুদ্ধ চলে। দুর্ভাগ্যবশত তরুণ যোদ্ধাদের অস্ত্রের স্বল্পতা দেখা দেয়। একই সময়ে কমান্ডার সালাউদ্দিনের পায়ে শত্রুর গুলি এসে আঘাত করে। নৌফেল তখন ইউ ও টি সির শিক্ষা অনুসারে দলের বাদবাকি সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে কমান্ডার সালাউদ্দিনকে কাঁধে নিয়ে নিকটস্থ গ্রামের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। হানাদার বাহিনী পুরো এলাকাটি ঘিরে ফেলে। তার পর কিছু রাজাকারের সহায়তায় কমান্ডার সালাউদ্দিন এবং তার ডেপুটি মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ নৌফেলকে খুঁজে বের করে নির্মম ভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে।  ফরিদপুর সদরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সাবডিভিশনাল কমান্ডার জনাব হেমায়েত উদ্দিন তালুকদারের বর্ননা এবং লিখিত একটি চিঠি মোতাবেক ৯ ডিসেম্বরের করিমপুর যুদ্ধে মোট সাত জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন যাদের ছিন্ন বিছিন্ন হাড়গোড় ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। বস্তাবন্দি করে সেই সাত বীরের পাওয়া শরীরের অংশ গুলো একই কবরে ১৭ই ডিসেম্বর ১৯৭১ ইং সকালে দাফন করা হয় ফরিদপুরের আলীপুর গোরস্তানে।কবরটি চিহ্নিত করা হয় ১৯৯৬ এর পর।


তথ্যসূত্র: নাজমুন নাহার খান শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজবাহ উদ্দিন নৌফেল এর বোন।

জন্ম ও শৈশব

ফরিদপুর সদর উপজেলা

শিক্ষাজীবন:

ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে ৪ টি বিষয়ে লেটার মার্কস সহ প্রথম বিভাগ পেয়ে ১৯৬৯ ইং সালে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন।

সমাধিস্থল:

ফরিদপুরের আলীপুর কবরস্থান।কবরটি চিহ্নিত করা হয় ১৯৯৬ এর পর।

সম্মাননা:

মেজবাহ উদ্দিন নৌফেল’এর নামে সুন্দরবন রেজিমেন্ট বিএনসিসি’র প্রশিক্ষণ মাঠ এর নামকরণ করে তাকে সম্মাননা দেয়া হয়েছে ২২ নভেম্বর ২০২১ তারিখে।