ব্যবহারকারী:সৌরভ সাহা শুভ/খেলাঘর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ব্রেক্সিট[সম্পাদনা]

ব্রেক্সিট কী ??[সম্পাদনা]

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেনের বিচ্ছেদ বা এক্সিট ই ব্রেক্সিট হিসেবে পরিচিত।

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ হচ্ছে ২৮ টি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট। এই জোটের সদস্য দেশগুলো নিজেদের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য করে থাকে, এসব দেশের নাগরিকরা ভিসা ছাড়াই জোটভুক্ত যেকোন দেশে গিয়ে থাকতে ও কাজ করতে পারে। ১৯৭৩ সালে যুক্তরাজ্য ইইউ তে যোগ দেয়। তখন এর নাম ছিল ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটি । ১৯৯৩ সালে মাসট্রিচ চুক্তির মাধ্যমে আসলে ইউরোপিয় ইউনিয়ন গঠিত হয়। পূর্বসূরি ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটির আওতা ছিল শুধু অর্থনীতি। আর ইউরোপিয় ইউনিয়ন গঠনের মধ্য দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিচার ও পুলিশিংও এর আওতায় চলে আসে।  ১৯৭৩ সালে অভিন্ন বাজারব্যবস্থায় প্রবেশ করার পর থেকেই এর বিরুদ্ধাচরণ শুরু হয় যুক্তরাজ্যে। লেবার পার্টির আনুষ্ঠানিক নীতি ছিল এ রকম যে, তারা পরবর্তী এক দশকের মধ্যে সেখান থেকে বেরিয়ে আসবে। আবার কনজারভেটিভ পার্টিরও একটি বড় অংশ কখনোই ইউরোপিয় হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে স্বস্তিবোধ করত না।

যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের আধিক্য দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্রিটিশ নাগরিকদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়। ইইউ'র নিয়ম অণুযায়ী ইইউভুক্ত ২৮টি দেশের নাগরিকরা ভিসা ছাড়াই এক দেশ থেকে আরেক দেশে প্রবেশ করার অধিকার রাখে। আর সে কারণে ডেভিড ক্যামেরন সরকার তার প্রথম মেইয়াদে ইইউ'র বাইরের দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে সক্ষম হলেও ইইউভুক্ত নাগরিকদের প্রবেশ ঠেকাতে পারেনি। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দ্বিতীয় মেয়াদে ইইউভুক্ত দেশের নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশ নিরুৎসাহিত করতে চার বছরের জন্য সুবিধা ভাতা বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেন ক্যামেরন। এতে খুশি হতে পারেননি ইইউভুক্ত দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। তারা সদস্য দেশের নাগরিকদের সুবিধা ভাতা প্রদানে বৈষম্য করা হলে তা হবে ইইউর প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক হবে বলে দাবি তোলেন। আর এ কারণেই যুক্তরাজ্যকে ইইউতে রাখা না রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন তৈরি হয়।

৪০ বছরের বেশি সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পর ২০১৬ সালের ২৩ জুন একটি গণভোটের আয়োজন করে যুক্তরাজ্য। সেখানে ৫২ শতাংশ মানুষ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের পক্ষে রায় দেয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ডানপন্থীদের অভিবাসনবিরোধী প্রচারণাই ইইউ থেকে বের হতে ব্রিটিশদের সবচেয়ে বেশি উৎসাহিত করেছে। ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (বিবিসি) বিশ্লেষণে ব্রেক্সিটের পক্ষে আটটি কারণ বের হয়ে এসেছে। কারণগুলো হলো নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রচারণায় উল্টো ফল, ব্রেক্সিটপন্থীদের স্বাস্থ্যসেবা খাতে ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের প্রতিশ্রুতি, অভিবাসন ইস্যু, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে গুরুত্ব না দেওয়া, ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে লেবার পার্টির ব্যর্থতা, কনজারভেটিভ পার্টির প্রভাবশালী নেতাদের ব্রেক্সিটের পক্ষে প্রচারণা, বয়স্কদের ভোটদানে আগ্রহ এবং ইউরোপকে ব্রিটিশদের ‘বিদেশ’ মনে করা।

গণভোট পরবর্তী জটিলতা[সম্পাদনা]

গণভোটের আয়োজক কনজারভেটিভ পার্টির তৎকালীন ব্রেক্সিট বিরোধী প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এ ঘটনার পর পদত্যাগ করেন। তার স্থলাভিষিক্ত হন থেরেসা মে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ২০১৬ সালের ১৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন মে। মে-র নেতৃত্বে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া নিয়ে যুক্তরাজ্য ও ব্রিটেনের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে কী কী শর্তে ব্রিটেন ইইউ থেকে বেরিয়ে আসবে। ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর ইইউ নেতারা মে র প্রস্তাবিত খসড়া চুক্তিতে অনুমোদন দেন। চুক্তির মূল বিষয়গুলো হলঃ

  • ইউরোপিয় ইউনিয়নের দেনা মেটাতে যুক্তরাজ্য ৩৯ বিলিয়ন পাউন্ড দেবে।
  • ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন অবস্থা বিরাজ করবে। এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক বিষয়গুলো ঠিক করে নেবে। অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন হবে না।  
  • ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ সালের মাঝে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকরা এবং তাদের পরিবার মুক্তভাবে যুক্তরাজ্যে আসতে পারবে।
  • ইইউ বা যুক্তরাজ্য কেউই চায় না উত্তর আয়ারল্যান্ড ও রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের মাঝে কোন কড়া সীমান্ত থাকুক। তাই উভয়পক্ষ একটি ব্যাকস্টপে সম্মত হয়েছে যার মানে ব্রেক্সিট নিয়ে বোঝাপড়ায় যাই ঘটুক না কেন এখানে সীমান্ত উন্মুক্ত থাকবে।

কিন্তু তিনবারের চেষ্টায়ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টে চুক্তিটি অনুমোদন করাতে পারেন নি মে । নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টি থেকে তিনি যেমন পর্যাপ্ত সমর্থন পান নি, তেমনি অন্য দলের এমপিরাও এ চুক্তি নিয়ে সন্তুষ্ট নন। ফলে তিন দফা ব্রেক্সিট পিছিয়ে যায়। এ অবস্থায় ২০১৯ সালের জুনে ক্ষমতা থেকে সরে যান মে। তার স্থলাভিষিক্ত হন বরিস জনসন। ক্ষমতায় এসেই তিনি ২০১৯ এর ৩১ অক্টোবরের মাঝে ব্রেক্সিট কার্যকরের ঘোষণা দেন। কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী এ নেতা বলেছিলেন দরকার হলে কোন চুক্তি ছাড়াই তিনি ইইউ ছেড়ে আসবেন। তবে অন্য ব্রেক্সিটপন্থিদের তোপের মুখে তিনি ইইউর সঙ্গে চুক্তি করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালান। বরিস জনসন বিচ্ছেদ কার্যকরে নতুন একটি চুক্তিতে সম্মত হলেও ৩১ অক্টোবরের আগে চুক্তিটি পার্লামেন্টে পাস করাতে ব্যর্থ হন। উপরন্তু পার্লামেন্টে বিরোধীদের উদ্যোগে প্রণীত এক আইনের (বেন এক্ট) কারণে তিনি ইইউ এর কাছে বিচ্ছেদের দিনক্ষণ তিন মাস পেছানোর আবেদন করতে বাধ্য হন। ব্রেক্সিট পেছানো হয় ৩১ জানুয়ারি, ২০২০ পর্যন্ত। এরপর ২০১৯ এর ১২ ডিসেম্বর আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন বরিস। আগাম নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে ব্রেক্সিট ইস্যুতে সংসদে ভোটাভুটির আয়োজন করেন বরিস।

ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন[সম্পাদনা]

বহু রাজনৈতিক টানাপোড়নের পর অবশেষে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ House of Commons এ ব্রেক্সিট বিল পাশ হয়। পরবর্তীতে উচ্চকক্ষ House of Lords এ পাস হলে এটি আইনে পরিণত হয় এবং ৩১ জানুয়ারি, ২০২০ সালে ইইউ থেকে বেরিয়ে যায় যুক্তরাজ্য। তবে এই বিলে ইইউর সাথে একটি আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত যে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তা কোনভাবেই ২০২০ সালের বেশি বাড়ানো যাবে না বলে সময় বেধে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আশা করছেন ইইউ এর সাথে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি ২০২০ সালের মাঝেই করা সম্ভব। তবে সমালোচকরা এই সময়সীমাকে অবাস্তব বলে বর্ণনা করছেন।