ব্যবহারকারী:রঞ্জন দাশগুপ্ত/নতুন নিবন্ধ শুরুকরণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বৃত্র


অর্থঃ বৃত্র এক অসুরের নাম। [সং. √ বৃত্ + র, + অসুর][সম্পাদনা]

পরিচয়ঃ বৃত্র প্রজাপতি ত্বষ্টা দ্বারা সৃষ্ট এক অসুর।

বৃত্রের সৃষ্টি ও মৃত্যুঃ তিনি প্রজাপতি ত্বষ্টার পুত্র এক অসুর। ইন্দ্র ত্রিশিরাকে বধ করলে ত্বষ্টা ত্রুদ্ধ হয়ে ইন্দ্রকে বিনষ্ট করার জন্য অগ্নিতে আহুতি দিয়ে বৃত্রাসুরকে উৎপন্ন করেন। ত্বষ্টার নির্দেশে বৃত্রাসুর গিয়ে ইন্দ্রকে আতর্কিতে গ্রাস করেন। বৃত্রাসুর মুখ হাঁ করলে ইন্দ্র অবশ্য দেহ সংকুচিত করে বেরিয়ে আসতে পারলেন, কিন্তু বহুকাল যুদ্ধ করেও বৃত্রাসুরকে পারাজিত করতে পারলেন না। তখন বিষ্ণুর সাহায্য চাইতে, বিষ্ণু ইন্দ্রকে উপদেশ দিলেন – ঋষি ও দেবতাদের নিয়ে বৃত্রের কাছে গিয়ে সন্ধি স্থাপন করতে। তারপর ইন্দ্রকে অভয় দিয়ে বললেন যে, তিনি অদৃশ্যভাবে ইন্দ্রের সঙ্গে থাকবেন। ঋষিরা বৃত্রকে ইন্দ্রের সঙ্গে সন্ধি করার প্রস্তাব দিলে বৃত্র বললেন যে, তিনি তাতে রাজি আছেন। কিন্তু ঋষিদের কথা দিতে হবে যে, শুষ্ক বা আর্দ্র বস্তু দ্বারা, প্রস্তর কাষ্ঠ বা অস্ত্রশস্ত্র দ্বারা, দিবসে বা রাত্রিতে ইন্দ্র অথবা অন্যদেবতারা ওঁকে বধ করতে পারবেন না। ঋষিরা তাতে রাজি হলে সন্ধি স্থাপিত হল। একদিন সমুদ্রতীরে ইন্দ্র বৃত্রাসুরকে দেখে ভাবলেন যে, এখন সন্ধ্যাকাল, অর্থাৎ রাত্রিও নয়, দিবসও নয়। আর এই সমুদ্রফেন শুষ্ক কিংবা আর্দ্র নয় – অস্ত্র তো নয়ই। এই ভেবে ইন্দ্র বজ্রের সাহায্যে বৃত্রের ওপর সেই ফেন নিক্ষেপ করলেন। বিষ্ণু সেই ফেনের মধ্যে প্রবেশ করে বৃত্রকে বধ করলেন।

অন্যান্য সংযোগঃ মহাভারতে আছে সপ্তর্ষিদের অন্যতম কশ্যপের এক পুত্র হলেন ত্বষ্টা। দেবরাজ ইন্দ্রের প্রতি বিরূপ হওয়ায় প্রজাপতি ত্বষ্টা ত্রিশিরা নামে পুত্রের জন্ম দেন। তিনটি মাথা থাকায় তাঁর ওই নাম। 'ইন্দ্রত্ব' লাভ করার জন্য ত্রিশিরা ঘোরতর তপস্যা শুরু করেন। 'ইন্দ্রত্ব' শব্দের অর্থ শ্রেষ্ঠত্ব বা সবচেয়ে বড়ো শাসক হয়ে ওঠা।

যাই হোক। এই ঘটনা ইন্দ্রের মনে ভয় জাগায়। তখন তিনি নানা ভাবে ত্রিশিরার তপস্যা ভাঙার চেষ্টা করতে থাকেন। অপ্সরাদেরও পাঠান। কিন্তু ত্রিশিরা তাঁদের সৌন্দর্যেও বিচলিত হননি। তখন ইন্দ্র ত্রিশিরার উপরে তাঁর বজ্র নিক্ষেপ করেন। এতে ত্রিশিরার দেহের মৃত্যু হলেও তিনটি মাথা বেঁচে রইল। মাথাগুলি নানা ভাবে ইন্দ্রকে বিচলিত করতে থাকে।সেই সময় ত্রিশিরার মৃতদেহের কাছে এক সূত্রধর বা চলতি কথায় ছুতোর এসে উপস্থিত হন। তাকে ইন্দ্র বিভিন্নভাবে লোভ দেখিয়ে বশ করেন। এবং তাঁর নির্দেশে ওই সূত্রধর ত্রিশিরার মাথাগুলি কেটে ফেলেন। ওই মস্তিষ্কের ছিদ্র দিয়ে চাতক, তিতির আর শ্যেন বা বাজপাখির দল বেরিয়ে আসে।

পুত্রের মৃত্যুতে ত্বষ্টা রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠেন। যজ্ঞের আগুনে আহুতি দিয়ে তিনি বৃত্র নামে এক অসুর সৃষ্টি করেন। তাঁর নির্দেশে বৃত্রাসুর গিয়ে ইন্দ্রকে আক্রমণ করল।

তার আগে বৃত্রাসুর দেবাদিদেব শিবের কাছে প্রার্থনা করে অমর হতে চেয়েছিল। শিব তাকে অন্য কোন বর চাইতে বলেন। তখন বুদ্ধি করে বৃত্রাসুর বলে তাকে যেন কোন দেবতা বা অসুর হত্যা না করতে পারে। দিন বা রাতে যেন তার মৃত্যু না হয়। ভেজা বা শুকনো, কাঠ বা পাথর বা অন্য কোন অস্ত্র দ্বারা যেন তাকে হত্যা না করে যায়। শিব এই প্রার্থনা মঞ্জুর করেছিলেন।

ইন্দ্র বহু চেষ্টা করেও বৃত্রকে পরাজিত করতে পারলেন না। তখন তিনি প্রথমে শিবের কাছে এবং তারপর শিবের পরামর্শে বিষ্ণুর কাছে যান।

বিষ্ণুর পরামর্শে এক সন্ধেবেলায় ইন্দ্র নির্জন সমুদ্রতীরে বৃত্রকে হত্যা করার পথ খুঁজে পান। তখন ছিল সন্ধেবেলা। অর্থাৎ দিনও নয় রাতও নয়। সমুদ্রতীরে ছিল সমুদ্রের ফেনা। যা কাঠ বা পাথর বা কোন অস্ত্র নয়। ভেজাও নয়, শুকনোও নয়। বজ্রের সাহায্যে ইন্দ্র সেই ফেনা বৃত্রের গায়ে নিক্ষেপ করেন। ইতিমধ্যে স্বয়ং বিষ্ণু ওই ফেনার মধ্যে অধিষ্ঠান করছিলেন।

এইভাবে বৃত্রের মৃত্যু ঘটে।

স্কন্দপুরাণে বৃত্রের ঘটনা অন্যরূপে বিবৃত আছে। রমা ও মহর্ষি ত্বষ্টার পুত্র বৃত্রকে ইন্দ্র মহর্ষি দধিচীর অস্থি থেকে নির্মিত বজ্র দ্বারা তপস্যারত অবস্থায় হত্যা করেন। এর ফলে ইন্দ্রের ব্রহ্মহত্যার পাপ হয়।

উল্লেখঃ ঋগ্বেদে বৃত্রের উল্লেখ আছে। যেমন ঋগ্বেদ ১ম মণ্ডল ৩২ তম সূক্ত ৫-১২ ঋক, ঋগ্বেদ ৮ম মণ্ডল ২৪ নং সূক্তের ২য় ঋক ইত্যাদি।

এছাড়া স্কন্দপুরাণেও বৃত্রের উল্লেখ আছে। স্কন্দপুরাণ নাগরখণ্ড অষ্টম অধ্যায়। এখানে আছে তিনি হিরণ্যকশিপুর কন্যা রমা ও ত্বষ্টার পুত্র।

তথ্যসূত্রঃ     (১) ঋগ্বেদ, গীতা প্রেস,গোরখপুর

         (২)স্কন্দপুরাণ, গীতা প্রেস, গোরখপুর

         (৩) ঋগ্বেদের অনুবাদ, রমেশচন্দ্র দত্ত

         (৪) স্কন্দপুরাণের বাংলা অনুবাদ, বঙ্গবাসী ইলেক্ট্রো মেশিন প্রেস।

         (৫) মহাভারত, কালীপ্রসন্ন সিংহ অনূদিত।