বিষয়বস্তুতে চলুন

ব্যবহারকারী:ইশতিয়াক আব্দুল্লাহ/ইথিওপিয়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

শিক্ষা[সম্পাদনা]

আদ্দিস আবাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বার

1900 এর দশকের গোড়ার দিকে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত ইথিওপিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা বহু শতাব্দী ধরে অর্থোডক্স তেওয়াহেডো চার্চ দ্বারা আধিপত্য ছিল।ইথিওপিয়ান খ্রিস্টান শিক্ষার একটি প্রাচীন রূপ যা যাজকদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, এর মতবাদকে অত্যন্ত জোর দেওয়া হয়েছিল।ছাত্রদের স্নাতক যাজকত্ব উপার্জনের দিকে পরিচালিত করে।1950-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে সম্রাট হেইল সেলাসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে আধুনিক শিক্ষা চালু করা হয়েছিল।আদ্দিস আবাবা ইউনিভার্সিটি 1950 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যখন এটি 1975 সাল পর্যন্ত "হাইল সেলাসি আই ইউনিভার্সিটি" নামকরণ করা হয়েছিল।অতি সম্প্রতি, আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যথেষ্ট বিকাশ করছে। [১]বর্তমান সিস্টেম স্কুল সম্প্রসারণ স্কিমগুলি অনুসরণ করে যা 1980-এর দশকে গ্রামীণ অঞ্চলে সিস্টেমের অনুরূপ, গভীর আঞ্চলিককরণের সংযোজন, প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ভাষায় গ্রামীণ শিক্ষা প্রদান করে এবং আরও বাজেটের অর্থ বরাদ্দ সহ শিক্ষা খাত।প্রাথমিক স্তরে পাবলিক শিক্ষা বিনামূল্যে এবং সাধারণত 7 থেকে 12 বছর বয়সের মধ্যে দেওয়া হয়। [১]ইথিওপিয়াতে সাধারণ শিক্ষার ক্রম হল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছয় বছর, তারপরে চার বছরের নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং দুই বছরের উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। [২]

ইথিওপিয়ায় শিক্ষার প্রবেশাধিকার উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে।1994-95 সালে প্রায় 3 মিলিয়ন মানুষ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছিল কিন্তু 2008-09 সাল নাগাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির সংখ্যা বেড়ে 15.5-এ পৌঁছেছিল। মিলিয়ন - 500% এর বেশি বৃদ্ধি। [৩]2013-14 সালে, ইথিওপিয়া সমস্ত অঞ্চলে মোট তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির সাক্ষী ছিল। [৪]জাতীয় GER ছিল ছেলেদের জন্য 104.8%, মেয়েদের জন্য 97.8% এবং উভয় লিঙ্গের জন্য 101.3%। [৫]

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে: 1994 সালের আদমশুমারি অনুসারে, ইথিওপিয়াতে সাক্ষরতার হার ছিল 23.4%। [৬]2007 সালে এটি অনুমান করা হয়েছিল 39% (পুরুষ 49.1% এবং মহিলা 28.9%)। [৭]2011 সালে ইউএনডিপির একটি প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে যে ইথিওপিয়ায় সাক্ষরতার হার ছিল 46.7%।একই রিপোর্টে আরও ইঙ্গিত করা হয়েছে যে 2004 থেকে 2011 সাল পর্যন্ত মহিলা সাক্ষরতার হার 27 থেকে 39 শতাংশে বেড়েছে এবং 10 বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের জন্য একই সময়ে পুরুষদের সাক্ষরতার হার 49 থেকে 59 শতাংশে বেড়েছে। [৮]2015 সালের মধ্যে, সাক্ষরতার হার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, 49.1% (57.2% পুরুষ এবং 41.1% মহিলা)। [৯]

ইথিওপিয়ার সিংহভাগ এলাকাই তৃণভূমিতে আচ্ছাদিত। উচ্চভূমিগুলিতে ক্রান্তীয় অরণ্যের দেখা মেলে, তবে কৃষিক্ষেত্র নির্মাণের জন্য অনেক অরণ্য নিধন করা হয়েছে। ইথিওপিয়াতে অনেক বিরল প্রজাতির প্রাণী আছে, যেগুলিকে জাতীয় উদ্যান ও সংরক্ষিত অঞ্চল সৃষ্টি করে সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে। এদের মধ্যে ওয়ালিয়া আইবেক্স নামের এক প্রজাতির পাহাড়ি ছাগল, সিমিয়েন প্রজাতির খেঁকশিয়াল ও জেলাদা প্রজাতির বানর উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ইথিওপিয়াতে সিংহ, হাতি, চিতাবাঘ, জেব্রা, মহিষ, গণ্ডারও জিরাফ আছে, যেগুলির অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন।

ইথিওপিয়াতে প্রায় ৮০টি ভিন্ন জাতির লোক বাস করে এবং এরা প্রায় ৯০টি স্বতন্ত্র ভাষায় কথা বলে, যেগুলির অনেকগুলির আবার একাধিক উপভাষা আছে। জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ ওরোমো জাতি এবং প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২৭%) আমহারা জাতির লোক। অন্যান্য জাতির মধ্যে সোমালি, তিগ্রে ও সিদামা জাতি উল্লেখযোগ্য। আমহারীয় ও ওরোমো ভাষা দেশটির সবচেয়ে বেশি প্রচলিত দুইটি ভাষা; এছাড়া তিগ্রিনিয়া, গুয়ারাগিঙ্গা, সোমালি ও আরবি ভাষা গুলিও উল্লেখ্য। ওরোমো সর্বাধিক ব্যক্তির মাতৃভাষা হলেও বিভিন্ন জাতির লোক আমহারীয় ভাষাতেই ভাবের আদান প্রদান করে এবং কেন্দ্রীয় সরকারও এই ভাষাই ব্যবহার করে। অন্যদিকে সুপ্রাচীন গে-এজ ভাষা (ও গে-এজ লিপি) ইথিওপীয় খ্রিস্টান গির্জার ধর্মীয় ভাষা হিসেবে এখনও গুরুত্বপূর্ণ। ইথিওপিয়ার জনগণের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ (৬৩%) লোক খ্রিস্টান, এবং এদের সিংহভাগ ইথিওপীয় প্রথাগত খ্রিস্টান মন্ডলীর সদস্য, বাকীরা প্রতিবাদী মন্ডলীর সদস্য। ইথিওপিয়াতে খ্রিস্টধর্মের ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন। তবে বর্তমানে দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লোক ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তিন-চতুর্থাংশ লোক গ্রামাঞ্চলে, বিশেষ করে উচ্চভূমি অঞ্চলে বাস করে। ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ ইতিহাসের অধিকার ইথিওপিয়াতে আফ্রিকার সমস্ত দেশের মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যাক ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে।

ইথিওপিয়া বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলির একটি। মাথাপিছু আয় মাত্র প্রায় ১ হাজার ডলার। দেশের অর্থনীতি প্রায় সম্পূর্ণ কৃষিনির্ভর। কিন্তু অনুর্বর জমি, যুদ্ধের কারণে অবকাঠামোগত ক্ষতি এবং কিছু বছর পর পর ভয়াবহ খরার কারণে কৃষিখাতে প্রবৃদ্ধি দুরূহ। ভুট্টা, আখ, গম, যব ও জোয়ার এখানকার প্রধান খাদ্যশস্য। কিন্তু দেশটি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, বরং খাদ্য সাহায্যের উপর বহির্বিশ্বের উপরে অতি-নির্ভরশীল। ইথিওপিয়াতে উৎপাদিত কফি ও পশুচর্ম বিদেশে রফতানি হয়। গবাদি পশু, ভেড়া ও ছাগল থেকে মাংস ও চামড়ার চাহিদা পূরণ হয়। শিল্পখাতের আয়তন অত্যন্ত ছোট। এখানে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পানীয়, বস্ত্র, চামড়ার দ্রব্য ও রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন করা হয়। এছাড়া খনিতে লবণ, সোনা ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ উত্তোলন করা হয়। ইথিওপিয়ার মুদ্রার নাম বির (১ বির = ১০০ সেন্ট)। ২০১০ সালে এসে দেশটি কেনিয়াকে ছাড়িয়ে পূর্ব আফ্রিকার বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়। এত উন্নতি সত্ত্বেও ইথিওপিয়া বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলির একটি। এখানে দারিদ্র্য, খাদ্যাভাব, দুর্নীতি, দুর্বল অবকাঠামো, মানবাধিকার লঙ্ঘন, শিক্ষা (সাক্ষরতার হার মাত্র ৫১%) ও স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা আজও বিরাট কিছু সমস্যা। মানব উন্নয়ন সূচকে দেশটির অবস্থান দেশের তালিকার শেষ চতুর্থাংশেই ওঠানামা করে।

ইথিওপিয়াতে জীবাশ্মবিদরা সবচেয়ে প্রাচীন কিছু মানুষ বা মানুষ-সদৃশ প্রাণীর জীবাশ্ম খুঁজে পেয়েছেন। লুসি নামের একটি এপ-জাতীয় প্রাণীর যে অস্থিগুলি পাওয়া গেছে, সেগুলির বয়স ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ বছর। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে আধুনিক মানব প্রজাতি এই ইথিওপিয়া অঞ্চল থেকেই প্রথমে মধ্যপ্রাচ্য ও পরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ভাষাবিজ্ঞানীদের মতে নব্যপ্রস্তর যুগে এখানে আফ্রো-এশীয় ভাষা পরিবারের আদি ভাষাগুলিতে কথা বলা মানুষেরা বসতি স্থাপন করে।খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে এলাকাটিকে কুশ হিসেবে উল্লেখ করা আছে। একদা এটি প্রাচীন মিশরীয় রাজার অধীনে ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দ থেকেই ইথিওপিয়াকে বিভিন্ন স্থানীয় রাজবংশ শাসন করে এসেছে। মৌখিক সাহিত্য অনুযায়ী শেবার রাণী ও রাজা সলোমনের উত্তরসূরী রাজা ১ম মেনেলিক এখানে সর্বপ্রথম রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন, যে রাজ্যের নাম ছিল আবিসিনিয়া। খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতকে এখানে গে-এজ ভাষাভাষী ও কৃষিনির্ভর দা-আমাত রাজ্যের শাসকেরা শাসন করতেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতক নাগাদ এখানে আকসুম রাজ্য ছিল। ৪র্থ শতকে আকসুম যখন খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে, তখন এটি ছিল রোম ও গ্রিসের বাইরে প্রাচীন যুগে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণকারী অন্যতম প্রধান রাজ্য। খ্রিস্টীয় প্রথম শতকগুলিতে আকসুম রাজ্য অঞ্চলটিতে একটি একীভূত সভ্যতা বজায় রাখে।নিকটবর্তী আরব দেশ থেকে খ্রিস্টীয় ৭ম শতকে যখন ইসলাম ধর্ম ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, তখনও ইথিওপিয়ার জনগণের অংশবিশেষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। আফ্রিকাতে মুসলমানদের সর্বপ্রাচীন বসতি নেগাশ এই ইথিওপিয়াতেই অবস্থিত। পরবর্তীতে ১১৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ইথিওপীয় সাম্রাজ্যদেশটিকে একত্রিত রাখে। ১৫শ শতকে পর্তুগিজদের আগমনের সাথে সাথে ইউরোপের সাথে ইথিওপিয়ার সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ১৬শ শতকে আরব সেনারা ইথিওপিয়া আক্রমণ করলে পর্তুগিজেরা ইথিওপীয়দেরকে সেই যুদ্ধে জয়ী হতে সাহায্য করে। সম্রাট ২য় তেওদোরোসসের অধীনে ইথিওপিয়ার জাতিগুলি একত্রিত হয় একটি সংঘবদ্ধ দেশে পরিণত হয়। ১৯শ শতকের শেষভাগে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি যখন আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল দখলের লড়াইয়ে লিপ্ত ছিল, তখন কেবলমাত্র লাইবেরিয়া ও ইথিওপিয়া তাদের সার্বভৌমত্ব ধরে রেখেছিল। সেসময় ইতালি সমগ্র ইথিওপিয়াকে একটি উপনিবেশ বানাতে চেয়েছিল, যার উদ্দেশ্যে তারা দেশটির উপকূলীয় অংশে উপনিবেশ স্থাপন করে। কিন্তু সম্রাট ২য় মেনিলেকের নেতৃত্বে ইথিওপীয়রা আক্রমণকারী ইতালীয় সেনাদেরকে পরাজিত করে এবং ১৮৯৬ সালে তাদেরকে উৎখাত করে। ইতালীয়রা আবা

  1. "Education in Ethiopia"Britannica। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  2. Teferra, Damtew; Altbach, Philip G. (২০০৩)। African Higher Education: An International Reference Handbook। Indiana University Press। পৃষ্ঠা 316–25। আইএসবিএন 978-0-253-34186-0 
  3. Engel, Jakob। "Ethiopia's progress in education: A rapid and equitablension of access – Summary" (পিডিএফ)Development Progress। Overseas Development Institute। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০১৫ 
  4. IIEP-UNESCO (২০১৭)। "Search Result: Ethiopia's plans and policies"Planipolis 
  5. UNESCO (২০১৫)। National EFA review, 2015 (পিডিএফ)। UNESCO। পৃষ্ঠা 8। 
  6. "Languages of Ethiopia"Ethnologue। SIL International। ১৮ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 
  7. "Literacy" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে in The World Factbook. cia.gov.
  8. "National Human Development Report 2015 Ethiopia | Human Development Reports"hdr.undp.org। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  9. UIS। "Education"data.uis.unesco.org