বোরা বোরা রাজ্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বোরা-বোরা রাজ্য

Royaume de Bora-Bora
১৯শ শতাব্দীর প্রারম্ভ–১৮৯৫
বোরা-বোরার জাতীয় পতাকা
পতাকা
রাজধানীনুনুয়ে
ভাইতাপে
প্রচলিত ভাষা
ধর্ম
তাহিতীয় ধর্ম, খ্রিস্টধর্ম
সরকাররাজতন্ত্র
রাজা 
• ১৭৭৮–১৮১২
প্রথম তাপোয়া (সর্বপ্রথম)
• ১৮৭৩–১৮৯৫
তৃতীয় তেরিমাইভারুয়া (সর্বশেষ)
ইতিহাস 
• প্রতিষ্ঠা
১৯শ শতাব্দীর প্রারম্ভ
১৯ মার্চ ১৮৮৮
• তৃতীয় টেরিমেভারুয়ার পদত্যাগ
২১ সেপ্টেম্বর ১৮৯৫
মুদ্রাফরাসি ফ্রাঙ্ক
পাউন্ড স্টার্লিং
উত্তরসূরী
ফরাসি পলিনেশিয়া

বোরা বোরা রাজ্য উনিশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বোরা বোরা দ্বীপের একত্রীকরণ এবং ১৮৪৭ সালে জার্নাক চুক্তির মাধ্যমে ফ্রান্সযুক্তরাজ্যের সরকারি স্বীকৃতির সাথে প্রতিষ্ঠিত হয়। উনিশ শতাব্দীতে তাহিতি, হুয়াইন ও রাইয়েতিয়ার পাশাপাশি সোসাইটি দ্বীপপুঞ্জের অনেকগুলি স্বাধীন পলিনেশীয় রাজ্যের মধ্যে এটি অন্যতম ছিল, যেগুলি একই ভাষা ও সংস্কৃতি ধারণ করে এবং যার শাসকরা বিবাহের মাধ্যমে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। বোরা বোরা বাদেও রাজ্যটি টুপাই, মাউপিতি, মাউপিহা, মোটু ওয়ান এবং মানুয়ে দ্বীপগুলো দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলো। রাজ্যটি অবশেষে ১৮৮৮ সালে ফ্রান্সের সাথে সংযুক্ত হয় এবং এর শেষ রানী তৃতীয় টেরিইমেভারুয়া ১৮৯৫ সালে একজন ফরাসি উপ-রাষ্ট্রপতি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।[১]:২১১

প্রাচীনকালে বোরা বোরা: ধর্মীয় ও সামরিক শক্তি[সম্পাদনা]

বোরা বোরার ইতিহাস দুটি গোষ্ঠীর অন্তঃর্দ্বন্দের ইতিহাস, একটি ফানুইয়ের নিকটে অবস্থিত যা মারাই ফারেরুয়ার সাথে যুক্ত পরিবারসমূহ নিয়ে গঠিত এবং অন্যটি মারায়ে ভাইওতাহার আশেপাশে নুনু ও আনাউ পরিবারসমূহ নিয়ে গঠিত যা ছিল পলিনেশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ মারায়েদের মধ্যে দীর্ঘ।

একই ভাবে বোরা বোরা ধর্মীয় ক্ষমতার অন্বেষণে রায়তেয়ার সাথেও একই রকম অন্তর্দ্বন্দ্বে ছিলো। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বোরা বোরা ও রাইতেয়ার প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সমান্তরালতা দেখা যায়, যা থেকে মনে করা যায় যে দুটি দ্বীপ অন্যান্য লিওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জের সাথে যৌথ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অধীন ছিলো। যাইহোক, রায়েতা শেষ পর্যন্ত ধর্মীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে পরিণত হয়, অন্যদিকে বোরা-বোরা অজর্ন করে বিশেষভাবে শক্তিশালী সামরিক ক্ষমতা যা অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দ্বীপগুলির সাথে যুদ্ধ উভয় ক্ষেত্রেই প্রকাশ পেয়েছিল।

টুপাইয়ার মতে বোরা বোরা আসলে চোর এবং অন্যান্য অপরাধীদের নির্বাসনের জায়গা ছিল। যাইহোক, বহিষ্কৃতরা শেষ পর্যন্ত জলদস্যুতে পরিণত হয় ও বোরা বোরার মত অন্যান্য দ্বীপগুলোতেও আক্রমণ করে। আঠারো শতাব্দীতে একজন বড় সর্দার পুনি (তেইহোতু মাতারুয়া) দ্বীপের অন্যান্য গোত্রের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে সফল হন। তারপরেরায়েতেয়া আক্রমণ করার পূর্বে তিনি তাহা জয় করেন এবং তিন বছর অভিযানের পর ১৭৬৩ সালে রায়েতেয়া জয় করেন। ১৭৬৯ সালে যখন জেমস কুক তাহা ও রায়েতেয়াতে অবতরণ করেন, তখনও এই দ্বীপসমুহে পুনি ও তার বোরা বোরার যোদ্ধাদের আধিপত্য ছিল।[২]

পুনির মৃত্যুর পর তার ভাগ্নে বোরা বোরা, রায়তেয়া এবং তাহা-এর সর্বপ্রধান সর্দার প্রথম তাপোয়া রায়েতেয়াতে স্থায়ী হন, স্থানীয় ক্ষমতা মূলত নুনু ও আনাউ প্রধান সর্দার মাই এবং তেফাওরার হাতে ছেড়ে দেন যারা ভাইওতাহার মারের ও সদস্য ছিলো।

এই দ্বীপের প্রথম স্পষ্ট উল্লেখ করেছিলেন ডাচ অভিযাত্রী জ্যাকব রোগেভিন ১৭২২ সালে।[৩] জেমস কুক ১৭৬৯ সালে দ্বীপটি দেখেন এবং ১৭৭৭ সালে সেখানে অবতরণ করেন।

ইঙ্গো-ফরাসি ঔপনিবেশিক লালসার মাঝে স্বাধীনতা[সম্পাদনা]

তাহিতিতে থাকাকালে ১৮তম শতাব্দীর শেষ ও ১৯তম শতাব্দীর শুরুতে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের ধর্মপ্রচারক এবং ঔপনিবেশিক লক্ষ্যের কারনে বোরা বোরা দুটি ইউরোপীয় শক্তির ক্ষমতার লড়াই থেকে তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ সময়ের জন্য নিজেকে রক্ষা করে চলতে পেরেছিল। যাইহোক, তাদের প্রভাব অনুভূত হয়েছিল বিশেষ করে দ্বীপে ধর্ম প্রচারের মাধ্যমে।

১৮১০-এর দশকে সর্দার মাই ও ২৬২ জন যোদ্ধা তেভা গোত্রের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় পোমারের যুদ্ধে যোগ দেন। ১৮১৫ সালে, তাহিতি দ্বীপে অবস্থিত পুনাউইয়াতে ফে'ই পির যুদ্ধে ঐতিহ্যপন্থীদের বিরুদ্ধে প্রোটেস্ট্যান্ট পন্থীর (১৮১২ সালে দ্বিতীয় পোমারে প্রোটেস্ট্যান্ট এ ধর্মান্তরিত হয়েছিল) বিজয় হয়। খ্রিস্টধর্ম তাই বিজয়ীদের ধর্মে পরিণত হয় এবং ১৮১৬ সালে বোরা বোরাতে ফিরে আসার পর যোদ্ধারা এই নতুন ধর্ম সম্পর্কে তাদের জ্ঞান বাকি জনগোষ্ঠির মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। তাদের সাফল্য এমন ছিল যে ১৮১৮ সালে দ্বীপবাসী মুরিয়া ও হুয়াইনের মিশনারিদের কাছে দ্বীপের জন্য বই এবং যাজক পেতে অনুরোধ করে। রেভারেন্ড ওরসমন্ড ঐ বছরই প্রথমবারের মতো সেখানে আসেন এবং ১৮২০ সালে বোরা বোরাতে স্থায়ী হোন।

১২ই মে, ১৮২০-এ রাইতেয়ার প্রধান তৃতীয় তামাতোয়া তাহিতির আইন (পোমারের আইন) দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ২৫টি ধারার সমন্বয়ে গঠিত মিশনারি আনুগত্যের একটি কোড স্থাপন করেন এবং ন্যায়বিচার প্রয়োগের প্রক্রিয়া চালু করেন। একই বছর গোষ্ঠীপ্রধান মাই বোরা বোরাতে এই আইনশাস্ত্র প্রবর্তন করেন এবং এটি মাউপিতি পর্যন্ত প্রসারিত করেন। ১৮২২ সালে নুনুয়া জেলার ভাইতাপেতে বোরা-বোরা খ্রিস্টমণ্ডলীর উদ্বোধন করা হয়েছিল।

১৮২০ এর দশকের শেষের দিকে,ল বোরা বোরার জনসংখ্যার একটি বড় অংশ মামাইয়া আন্দোলনে যোগ দেয়। রাইয়েতিয়া দ্বীপে উৎপত্তি হওয়া সহস্রাব্দের এই আন্দোলন পুরানো বিশ্বাস ও নতুন ধর্মকে একত্রিত করে এবং মিশনারিদের কর্তৃত্বের বিরোধিতা করে। ১৮২৬ সালে যখন আন্দোলনের প্রধান নেতাদের রাইয়েতিয়া থেকে নির্বাসিত করা হয় তখন ধর্মদ্রোহিতা বোরা বোরা সহ সমস্ত লিওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। মামাইয়া সম্প্রদায় তাহা ও বোরা বোরার উপর এমন প্রভাব বিস্তার করে যে ১৮৩৩ সালে দ্বীপ দুটি নিজেদের বাহিনী একত্রিত করে রাইয়েতিয়া ও হুয়াইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে করার জন্য যারা মিশনারিদের প্রতি অনুগত ছিল। জোটের নেতা ও তাহার প্রধান সর্দার দ্বিতীয় তাপোয়া অবশ্য পরাজিত হন এবং তার স্ত্রী তাহিতির রানী চতুর্থ পোমারেকে ১৮৩৪ সালে তার থেকে আলাদা করা হয়। এরপর তিনি মাই এবং তাফাওরা গোষ্ঠীর অনুরোধে দ্বীপের প্রধান সর্দার হিসেবে বোরা বোরাতে বসতি স্থাপন করেন। দ্বিতীয় তাপোয়া অবশ্য তার প্রাক্তন স্ত্রী চতুর্থ পোমারের সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন এবং ১৮৪৫ সালে তিনি তার এক কন্যা টেরিমেভারুয়াকে দত্তক নেন যাকে তিনি উত্তরাধিকারী হিসাবে মনোনীত করেছিলেন।

১৮৪২ সালে তাহিতি রাজ্য যখন ফ্রান্সের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয় বোরা বোরা তখনো উদ্বিগ্ন ছিল না এবং দ্বীপটি এর প্রভাবে কোন সমস্যার সম্মুখীন হয় নি। যাইহোক, বোরা বোরা প্রিচার্ড ঘটনার পরিণতিতে লাভবান হয়েছিল যেহেতু ফ্রাঙ্কো-ব্রিটিশ ঝগড়ার অবসান ঘটাতে লুই ফিলিপ ১৯ জুন ১৮৪৭ সালের জার্নাক চুক্তি অনুমোদন করে যা বোরা বোরা সহ লিওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়। শক্তিধর দুই ঔপনিবেশিক শক্তি এই দ্বীপগুলির দখল না নেওয়ার এমনকি তাদের আশ্রিত রাজ্যের অধীনে রাখারও উদ্যোগ নেয়নি। তাই দ্বিতীয় তাপোয়া ১৮৬০ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একটি স্বাধীন দ্বীপে রাজত্ব করেন।

৩০শে জুলাই, ১৮৬০-এ তার দত্তক কন্যা তেরিমাইভারুয়া, দ্বিতীয় রেভারেন্ড প্ল্যাট কর্তৃক বোরা বোরার রানী হিসাবে মুকুট লাভ করেন। ১৮৭৩ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দ্বীপ রাজ্যটি পরিচালনা করেন। কোন সন্তান না থাকায় তেরিমাইভারুয়ার মুকুটটি তার ভাইঝি রাইয়েতেয়ার রাজা পঞ্চম তামাতোয়ার কন্যা এবং চতুর্থ পোমারের নাতনী তৃতীয় তেরিমাইভারুয়ার কাছে চলে যায়। ৯ই জানুয়ারি ১৮৮৪-এ তিনি রাজপুত্র হিনোইকে বিয়ে করেন, যিনি চতুর্থ পোমারের নাতিও ছিলেন।

স্বাধীনতার অবসান[সম্পাদনা]

তৃতীয় তেরিমাইভারুয়া শাসনামলে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়। প্রকৃতপক্ষে, জার্নাক চুক্তিতে লিওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জের স্বাধীনতার গ্যারান্টি দেয় শুধুমাত্র তার দুটি স্বাক্ষরকারী দেশ ফ্রান্স ও গ্রেট ব্রিটেন যারা ছিল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যাইহোক, ১৮৭৮ সাল থেকে জার্মানি লিওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জের প্রতি গভীর আগ্রহ প্রকাশ করে। ১৮৭৯ সালে জার্মানরা রাইয়েতিয়া ও বোরা বোরার সাথে জোট গঠনের চেষ্টা করে। উভয় দ্বীপই প্রত্যাখ্যান করে এবং তেরিমেভারুয়া তৃতীয় ফরাসি সরকারকে জার্মানদের প্রচেষ্টার কথা জানায়। ফ্রান্সের জন্য তার উপনিবেশের দোরগোড়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির ঘাঁটি স্থাপন রোধ করার জন্য জার্নাক চুক্তি বাতিল করা জরুরি হয়ে উঠে বিশেষ করে পানামা খালের প্রত্যাশিত চালুর এর সাথে সোসাইটি দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান কৌশলগত হয়ে উঠে।

জার্মান প্রচেষ্টার মোকাবিলা করার জন্য রাইয়েতিয়া ও তাহা ১৮৮০ সালে ফ্রান্সেকে তাদের সুরক্ষা প্রদানের জন্য অনুরোধ করে। ১৮৮০ থেকে ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত এই দ্বীপ দুটি ফ্রান্সের অস্থায়ী আশ্রয়ে রাখা হয়েছিল। ব্রিটিশ চুক্তি সাপেক্ষে প্রথমত গোষ্ঠিপ্রধানগণ ও বোরা বোরার রানী ফরাসি আশ্রয় গ্রহণ করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত বলে ঘোষণা করেছিলেন যারা ফ্রান্স কর্তৃক তাদের স্বাধীনতার প্রশ্নে নিজেদেরকে দ্বীপসমূহের পক্ষে সমর্থন দেখিয়েছিলেন। ইতোমধ্যে, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ড জার্নাক চুক্তি বাতিল করার জন্য দরকষাকষি করছিলো। ১৮৮৭ সালের অক্টোবরে চুক্তি বাতিল করা হয় এবং ১৯ মার্চ, ১৮৮৮ সালে ফ্রান্স কর্তৃক লিওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জকে সংযুক্ত করার সাথে, বোরা বোরা একটি ফরাসি অঞ্চল হয়ে ওঠে। তাহিতির প্রাক্তন রাজ্যের বাসিন্দাদের মতো বোরা বোরার বাসিন্দাদের ফরাসি নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি। রেজিম ডি ল'ইন্ডিজেনাটের শর্তানুসারে লিওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জের অন্যান্য বাসিন্দাদের মতো তাদেরও ফরাসি প্রজার মর্যাদা ছিল।

রাজাদের বংশলতিকা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Newbury, Colin W. (১৯৮০)। Tahiti Nui: Change and Survival in French Polynesia, 1767–1945University Press of Hawaiiআইএসবিএন 978-0-8248-8032-3ওসিএলসি 1053883377। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৩ 
  2. Salmond, Anne (২০১০)। Aphrodite's Island। University of California Press। পৃষ্ঠা 36,218,286আইএসবিএন 9780520261143 
  3. Tahiti et ses archipels par Pierre-Yves Toullelan, éditions Karthala, ১৯৯১, আইএসবিএন ২-৮৬৫৩৭-২৯১-X, p. 61.