বৈজা বাই

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বৈজা বাই ( বাজা বাই এবং বাইজা বাই নামেও পরিচিত) ছিলেন একজন সিন্ধিয়া মহারানি এবং তেজারতি ব্যবসায়ী। তিনি দৌলত রাও সিন্ধিয়ার তৃতীয় স্ত্রী, তিনি তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর সিন্ধিয়া রাজ্যের শাসন প্রক্রিয়ায় যোগ দেন এবং ১৮২৭ থেকে ১৮৩৩ সাল অবধি শাসন করেন। তিনি ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন বিশিষ্ট প্রতিপক্ষ। তাই তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করা হয় এবং তার দত্তক পুত্র জানকোজি রাও সিন্ধিয়া দ্বিতীয়কে সিংহাসনে বসানো হয়।

বৈজা বাই ১৭৮৪ সালে কাগালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতামাতা ছিলেন সুন্দরাবাই এবং সখারাম ঘাটগে (১৭৫০-১৮০৯)। কাগলের সার্জেরাও দেশমুখ, ছিলেন কোলহাপুরের ভোঁসলে শাসকদের অধীনস্থ আভিজাত্যের সদস্য। [১] ১৭৯৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুনাতে, ১৪ বছর বয়সে, বৈজা বাই গোয়ালিয়রের শাসক দৌলত রাও সিন্ধিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাঁর প্রিয় স্ত্রী হয়ে ওঠেন। [২] [১] বৈজা বাই এবং দৌলত রাও বেশ কয়েকটি সন্তানের জন্ম দেন। [১]

তিনি একজন চমত্কার ঘোড়সওয়ার হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তাকে তলোয়ার এবং বর্শা ইত্যাদি হাতিয়ার ও যুদ্ধ করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। তিনি ব্রিটিশদের সাথে মারাঠা যুদ্ধের সময় তার স্বামীর সাথে ছিলেন এবং অ্যাসায়ের যুদ্ধে ওয়েলিংটনের ভবিষ্যত ডিউক আর্থার ওয়েলেসলির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। [৩]

সিন্ধিয়া প্রশাসনিক ও রাষ্ট্রীয় বিষয়ে সাহায্যের জন্য বৈজা বাইয়ের উপর নির্ভর ছিলেন। প্রধান রাজপুত রাজ্য ধ্বংস করা উচিত নয়, এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে তিনি সিন্ধিয়াদের উদয়পুর রাজ্যে দখল করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছিলেন। [৪]

তিনি সিন্ধিয়া আদালতে তার আত্মীয়দের উচ্চ পদে নিযুক্ত করেন। [২] সখারামকে গোয়ালিয়রের দেওয়ান করা হয়। [১] তিনি ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব পোষণ করতেন বলে জানা গেছে, যা তার এবং রাজার মধ্যে ঝামেলার সৃষ্টি করেছিল। দ্বিতীয় অ্যাংলো-মারাঠা যুদ্ধে সিন্ধিয়ার পরাজয়ের পরে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি তাকে গোয়ালিয়রের যে কোনো শাসন সংক্রান্ত ভূমিকা থেকে বিচ্যুত করে। [১] একই চুক্তির শর্ত অনুসারে, বাইজা বাইকে বার্ষিক ২০০,০০০ টাকার জায়গির দেওয়া হয়েছিল। [৪] যাইহোক, তথ্য অনু্যায়ী জানা গেছে যে হয়েছে যে তার স্বামী তার জন্য এই তহবিলগুলি বরাদ্দ করেছেন। [১] ১৮১৩ সালে তার ভাই হিন্দুরাও জয়সিংহরাও ঘাটগেকে গোয়ালিয়রের দেওয়ান করা হয় এবং ১৮১৬ সালে তার কাকা বাবাজি পাটাঙ্করকে এই পদের প্রস্তাব দেওয়া হয়। [১]

বৈজা বাই তার ছোট বেলায় তার পিতার ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব থেকে প্রভাবিত হয়েছিলেন বলে মনে করা হয়। পিন্ডারীদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ অভিযানের সময়, তিনি তার স্বামীকে পেশওয়া দ্বিতীয় বাজি রাওকে সমর্থন করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। দৌলত রাও যখন ব্রিটিশদের দাবির কাছে নতি স্বীকার করেন, তখন তিনি তাকে ভীরুতার অভিযোগ এনে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ছেড়ে দেন। তিনি ব্রিটিশদের কাছে আজমিরের সিন্ধিয়া আত্মসমর্পণের তীব্র বিরোধী ছিলেন। [৫]

১৮০৯ সাল নাগাদ, সার্জেরাও সখারাম ঘাটগে নিজেকে সিন্ধিয়া রাজদরবারের ক্ষমতার বৃত্তে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন যদিও তিনি তখন জনপ্রিয় ছিলেননা। গোয়ালিয়রের সুবাহদার দেবা গাওয়ালি সহ তাঁর বেশ কিছু প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। [১] ১৮০৯ সালে, দৌলত রাওয়ের সাথে বিবাদের কারণে সখারাম ঘাটগেকে হত্যা করা হয়। [১] বৈজা বাই গাওয়ালিকে অপরাধে প্ররোচিত করার জন্য সন্দেহ করেছিলেন এবং সেকারনে দৌলত রাও তাকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করেন। ১৮১২ সালে তাকে হত্যা করা হয়। [১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]